নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগ ভিত্তিক সাহিত্য চর্চায় অনুগল্প

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২০

ব্যস্ততা কেড়ে নিচ্ছে আধুনিক মানুষের সময়। এত বেগ, এত কম আবেগ কম দেখা গেছে এর আগে। হাতে হাতে চলে এসেছে স্মার্ট ফোন, ঘরে ঘরে কম্পিউটারে ইন্টারনেটে কাজ করার সুযোগ। অতি কথন শুনার বা বলার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে গেছে। মানুষ এখন omg দিয়ে oh my god বুঝে নেয়, লোকেরা এখন hru ব্যবহার করে।

কিন্তু থেমে থাকেনি সাহিত্য চর্চা। এখানেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মহাকাব্যের যুগ আর নেই। কবিতায় অতিকথন এখন প্রসংশিত নয়। বৃহৎ পরিসরে পুরো ইতিহাস ঘেটে কল্পনার মাধূর্যতা মাখিয়ে বড় বড় মহাকাব্যিক কাহিনী এখন আর বর্ণিত হতে দেখা যায় না। উপন্যাসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও ছোট গল্প এসেছিল রবীন্দ্র যুগে বরং বলা চলে তার হাত ধরে।

কিন্তু পাঠকের হাতে সময় কম। তারা এখন ছোট গল্প পড়ার অবসর পান না। লেখকরাও কম যান না তারা ছোট গল্পকে আরও ছোট করে নিয়েছে অনুগল্পে। ব্লগ, ফেসবুকে অনুগল্পের ব্যাপক চর্চা করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে এখন অনুগল্প লিখছেন।

আকস্মিক ‘শুরু’ এবং ‘শেষ’ এর দিয়ে কত কিছুই না বলা হয়ে যায়! একটা গল্প? গল্পও কি হয়? হয়ই তো! পরিবর্তনশীল এ পৃথিবীর সাহিত্য জগতেও সময়ের সাথে যুক্ত কিংবা বিযুক্ত হয়েছে নতুন অনেক সাহিত্য-ধারণা। অতি ছোট ক্যানভাসে তীব্র কিংবা আটপৌরে ভাষায় গল্প বলার এই ধরণটি ইদানিং বেশ প্রচলিত। চিরাচরিত সাহিত্য যা গ্রন্থ-ভিত্তিক, সেখানে গল্প বা গল্পের ধরণ মোটামুটি একই আছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক সাহিত্য জগতেই মূলত অনুগল্পের এই নতুন ধরণটি যুক্ত হয়েছে।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অনুগল্পের প্রধানতম লেখক হলেন বনফুল (১৮৯৯-১৯৭৯)। বর্তমান বিশ্বে অনুগল্প লিখে ‘ম্যান অব বুকার’ পুরস্কার পেয়েছেন মার্কিন লেখক লিডিয়া ডেভিস (জ. ১৯৪৭)। ডেভিসের গল্পের দৈর্ঘ্য এক লাইন থেকে শুরু করে দু-তিন পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তার গল্পকে আদর্শ অনুগল্প বা ফ্লাশফিকশন বলা যায়। ছোটগল্পের পাশাপাশি অনুগল্প লিখে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন আরেক মার্কিন কথাসাহিত্যিক রবার্ট ওলেন বার্টলার (জ. ১৯৪৫)। তবে বার্টলার এবং ডেভিসের অনেক আগে ছোটগল্পের পাশাপাশি অনুগল্প লিখে বিখ্যাত হয়েছেন জাপানের প্রথম নোবেলজয়ী লেখক Yasunari Kawabata (১৮৯৯-১৯৭২)। অনুগল্প লিখেছেন কাফকা, হেমিংওয়ে, আর্থার সি ক্লাক, রে ব্রাডবুরি, নগিব মাহফুজ, ডোলান্ড বার্থলেম, আমব্রুস বিয়ার্স, কেট শপা, শেখবের মতো প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকরাও।

উল্লেখ্য যে, অনুগল্প সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে আমেরিকায়। সেখানে অনুগল্প এখন ছোটগল্প থেকে কিছুটা সরে এসে সাহিত্যের স্বতন্ত্র বিভাগ (genre) হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু হয়েছে।

অনুগল্পে অল্পকথনের ভেতর দিয়ে অনুভবের বিষয়টি উঠিয়ে আনা হয়। প্রখ্যাত ফরাসি কবি বোদলেয়ার (১৮২১-১৮৬৭)-এর মতো অনেক কবি ক্ষুদে গদ্য-কবিতা (prose poetry) লিখেছেন যেগুলোকে অনুগল্প হিসেবে চিহ্নিত করা চলে। অন্যদিকে হালের জনপ্রিয় মার্কিন কবি ও গল্পকার স্টুয়ার্ট ডাইবেক (জ. ১৯৪২)-এর অনেক অনুগল্প গদ্য-কবিতা হিসেবে কবিতার কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, কবিতা এবং ছোটগল্প দু’য়ের বৈশিষ্ট্যই অনুগল্পে বিদ্যমাণ।

কবিতার মতো অনুগল্পকে নানামাত্রিক অবস্থান থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। একটি কাব্যিক দ্যোতনা বা ভাবমুদ্রা এখানে থাকে। ভাষা হয় ঘন, রূপকাশ্রিত। ফলে মার্কিন কবি ও কথাসাহিত্যিক গ্রেস পালে (১৯২২-২০০৭) বলছেন, ‘অনুগল্প কবিতার মতোই ধীরে পড়া উচিত।’ অন্যদিকে অনুগল্প গল্পের মতোই সমাজ বাস্তবতার কোনো সুপ্ত চেতনাকে ইঙ্গিত করে। চরিত্র থাকে, কথোপকথন (ডায়লগ) থাকে। একটা চমৎকার সমাপ্তিও থাকে। কেবল বলাটা হয় দ্রুত- বিদ্যুৎ চমকের মতন ঝলক দিয়েই শেষ। এক মুহূর্তে বর্ণিত বাস্তবতার এক ঝলক দেখে নেয়া।

অনুগল্পের একটা বড় অংশ লেখা হয়েছে ‘কথারূপক বা ফেবল’ ও ‘উপরূপক বা প্যারাবল’ হিসেবে। মোটাদাগে ফেবলের সঙ্গে প্যারাবলের পার্থক্য হল, ফেবলে সরাসরি হিউম্যান বা মানবচরিত্র থাকে না, কিন্তু প্যারাবলে থাকে। ফেবলের চরিত্ররা হয় জীবজন্তু বা পশুপাখি। এই গল্পের চরিত্ররা হল খরগোশ, নেকড়ে ও প্রতিবেশি অঞ্চলের জীবজন্তুরা। লেখক মানবজগতের কোনো বিশেষ বিষয় বা দিক তুলে আনতে এ ধরনের গল্প লিখে থাকেন। সাধারণত এ ধরনের গল্প শিশুদের জন্য লেখা হয়ে থাকে। তবে বড়দের জন্যও কেউ কেউ ফেবল লিখে থাকেন। সমাজ বা রাষ্ট্রের কিছু বিষয় সমালোচনা করার জন্যে প্রতীকী উপস্থাপনের পথ বেছে নেন। ফেবলের সব সময় একটা নীতিবাক্য বা মোরাল থাকে।

অনুগল্পের সঙ্গে গল্পের মূল পার্থক্যটা হল, গল্প তৈরি হয় কতগুলো মুহূর্ত নিয়ে; এখানে কতগুলো ঘটনা কতগুলো দৃশ্যকে আশ্রয় করে প্রকাশ ঘটে। আর একটি সার্থক অনুগল্পে একটি বিশেষ মুহূর্ত একক দৃশ্যপটের ভেতর দিয়ে উপস্থাপিত হয়। কিছু পরিষ্কার করে বলা হবে না, কেবল একটা ইঙ্গিত দিয়েই ছেড়ে দেয়া হবে।

ব্লগ এর দারুণ কিছু সুবিধাও আছে। যেমন এটি অতি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেই সকলের প্রবেশযোগ্য। আরও একটি বিশাল সুবিধা হচ্ছে এটি বিনামূল্য; পাঠক এবং প্রকাশক, উভয়ের জন্য।

সাহিত্যকে বর্তমানে দুই ফরম্যাটে দেখা যায়। প্রচলিত সাহিত্য এবং ই-সাহিত্য। প্রচলিত সাহিত্য হচ্ছে বই ভিত্তিক। আর ই-সাহিত্য হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক; মিনি-গল্প, মাইক্রো-গল্প এবং ন্যানো গল্প। ইন্টারনেট ভিত্তিক এই সাহিত্যকে সাধারণত এই ভাবে বিভাজিত হতে দেখা যায়।

মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্পের আবির্ভাব মধ্যযুগের গ্রীসে হলেও, এর বিস্তার হয়েছে এই আধুনিক যুগে। ইন্টারনেটের হাত ধরে, ব্লগের মাধ্যমে। আকারে সংক্ষিপ্ত হলেও, সাহিত্য মান যদি অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়; তাহলে এটি সহজেই পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়। বিশ্বজুড়ে উন্মুক্ত সাহিত্য বাজার আর এর সহজলভ্যতার গুণে আজকের সাহিত্যাঙ্গনে অনুগল্পের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা! আধুনিক এ জটিল কর্মব্যস্ত জীবনে সাহিত্যের এই দ্রুত-পঠন বিভাগটি খুব সহজেই আজ পাঠকের আপন হয়ে উঠেছে। যদিও ‘সময়’ই সব কিছু নির্ধারণ করে। সাহিত্য জগৎকেও নির্ধারণ করে ‘সময়’। তাই মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা কেবল ভবিষ্যতের পাঠকই জানে। তবে অদূর ভবিষ্যতে অনুগল্পই যে সাহিত্যাঙ্গনে রাজত্ব করবে না, তাও বা কে বা নিশ্চিত করে বলতে পারে?

ব্লগগুলোতে অনুগল্পের পাঠক বেশি হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে কবিরা এই মাধ্যৃমটি বেছে নিতে পারেন এবং পাঠক নন্দিত ও ব্যাপক প্রশংসিত হতে পারেন।

তথ্যসূত্রঃ

বিশ্বসাহিত্যে অনুগল্প
মোজাফ্ফর হোসেন।

অনুগল্প নিয়ে অনুকথা
জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা

http://www.galpopath.com/2015/07/blog-post_64.html.

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৯

আবু তালেব শেখ বলেছেন: অনু গল্পে বাংগালিরা কোন পুরস্কার পেয়েছে? নাকি মার্কিনিদের দখলে?

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: অনুগল্পে বাঙালিরা তেমন কোন পুরস্কার না পেলেও বনফুল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার একটি গল্প শেয়ার করলাম

নিমগাছ
বনফুল

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউ বা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে। চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ। কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে। এমনি কাঁচাই..... কিংবা ভেজে বেগুন- সহযোগে। যকৃতের পক্ষে ভারী উপকার। কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক...। দাঁত ভালো থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন। বলেন- নিমের হাওয়া ভাল, থাক, কেটো না। কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না। আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে। শান দিয়ে বাধিয়েও দেয় কেউ- সে আর এক আবর্জনা। হঠাৎ একদিন একটা নূতন ধরনের লোক এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙ্গলে না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু। বলে উঠলো, বাঃ কি সুন্দর পাতাগুলো.....কি রূপ। থোকা থোকা ফুলেরই বা কি বাহার....এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাঃ! খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল। কবিরাজ নয়, কবি। নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না। মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে। ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মী বউটার ঠিক এই দশা।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: প্রিয় মালেক ভাই,
আপনার মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি মন দিয়ে পড়লাম। অনেক তথ্যসমৃদ্ধ লেখা এটি।
আমার খুবই ভাল লেগেছে।
আমি আপনাকে সম্মান জানাই।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০১

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫০

আবু তালেব শেখ বলেছেন: ভালো লাগলো গুরু

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৪

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল।

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৯

সুমন কর বলেছেন: অণুগল্প নিয়ে অণুকথা ভালো লেগেছে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার জন্য একটি চমৎকার অনুগল্প....

অনুবাদ ও সম্পাদনা : মোজাফফর হোসেন


খরগোশ, যারা সকল সমস্যার কারণ ছিল
জেমস থার্বার

সবচেয়ে অল্প বয়সী শিশুটার মনে আছে- নেকড়ে অধ্যুষিত এলাকায় খরগোশদের একটা পরিবার বাস করতো। নেকড়েরা জানিয়ে দিলো যে, খরগোশদের জীবন-যাপনের রীতি-নীতি তাদের পছন্দ না। এক রাতে ভূমিকম্পের কারণে একদল নেকড়ে মারা পড়লো। আর দোষ গিয়ে পড়লো খরগোশদের ঘাড়ে। কেননা সবার জানা যে, খরগোশরা পেছনের পা দিয়ে মাটি আচড়িয়ে ভূমিকম্প ঘটায়। আরেক রাতে বজ্রপাতে নেকড়েদের একজন মারা পড়লো। আবারো দোষ গিয়ে পড়লো ঐ খরগোশদের ওপরে। কারণ সবাই জানে যে, লেটুস পাতা যারা খাই তাদের কারণেই বজ্রপাত হয়।

একদিন খরগোশদের সভ্য ও পরিপাটি করার জন্যে নেকড়েরা হুমকি দিলো। ফলে খরগোসরা সিদ্ধান্ত নিলো যে, তারা নিকটবর্তী দ্বীপে পালিয়ে যাবে। কিন্তু অন্যান্য জন্তু-জানোয়াররা যারা খানিক দূরে বসবাস করতো তারা ভর্ৎসনা করে বলল- তোমরা যেখানেই আছ বুকে সাহস বেঁধে সেখানেই থাকো। এ পৃথিবীটা ভিতু-কাপুরুষদের জন্যে নয়। যদি সত্যি সত্যি নেকড়েরা তোমাদের ওপর আক্রমণ করে আমরা এগিয়ে আসবো তোমাদের হয়ে।

কাজেই খরগোশরা নেকড়েদের পাশে বসবাস করতে থাকলো। এরপর এক ভয়াবহ বন্যা হল, সেই বন্যায় আবার নেকড়েদের অনেকেই মারা পড়লো। এবারও যথারীতি দোষ গিয়ে পড়লো ঐ খরগোশ পরিবারের ওপর। কারণ সবাই জানে যে, যারা গাজর কুরে কুরে খায় এবং যাদের বড় বড় কান আছে তাদের কারণেই বন্যা হয়। নেকড়েরা দল বেঁধে খরগোশদের, তাদের ভালোর জন্যেই, ধরে নিয়ে গেল এবং তাদের নিরাপত্তার জন্যেই তাদের একটি অন্ধকার গুহার ভেতরে আটকে রাখলো।

যখন কয়েক সপ্তাহ ধরে খরগোশদের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। সাড়া শব্দ না পেয়ে অন্যান্য জন্তু-জানোয়াররা নেকড়েদের কাছে জানতে চাইলো খরগোশদের ব্যাপারে। নেকড়েরা জানালো যে, খরগোশদের সাবাড় করা হয়ে গেছে। যেহেতু তারা সাবাড় হয়ে গেছে সেহেতু এটা এখন তাদের একান্ত নিজেদের বিষয়। কিন্তু অন্যান্য জন্তুরা হুমকি দিয়ে জানালো, যদি খরগোশদের খাওয়ার উপযুক্ত কোনো কারণ না দেখানো হয় তাহলে তারা সব একত্রিত হয়ে নেকড়েদের বিপক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুতরাং নেকড়েদের একটি যুৎসই কারণ দশাতেই হল। তারা বলল- খরগোশরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল এবং তোমরা ভালো করেই জানো যে পলাতক-কাপুরুষদের জন্যে এ দুনিয়া না!

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৪

নূর আলম হিরণ বলেছেন: অনুগল্প আমার কাছে ভালোলাগে। মাঝেমাঝে নিজেও চর্চা করার চেষ্টা করি।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার জন্য একটি নমুনা অনুগল্প...


ক্ষুধা‬
ভাস্কর চৌধুরী

তিনটে লোক কোদাল আর শাবল হাতে রাতে বাড়ি ফিরছে। তারা কৃষক। সহজ সরল মানুষ। বাড়িতে মাঝরাতে ভাত পাবে এমন আশা নেই অথচ পেটে ক্ষিধে। তারা একে অন্যকে বললো- কি করি রে ? খিদা যে। আরেকজন বললো- ঘরে ভাত নাই। বলতে বলতে এক মহাজনের বাড়িতে এলো। শীতের রাত। নিশ্চয় কেউ জেগে নেই। সীমানা দেয়ালটা নরম ইটের। একজন বললো- চল সিঁদ কাটি। তারা সিঁট কাটতে বসলো। ধীরে গুতো দিতেই দু-চারটে ইট সরে গেলো। তখন তাদের একজন ইট ধরে রাখে আরেকজন কাটে। প্রায় অল্পতেই ফাঁক পাওয়া গেলো। রান্নাঘরটা উঠোনে মাঝখানে। খড়ের ছাউনি। ভেজানো কপাট। বিড়ি খাওয়া ম্যাচ জ্বালিয়ে তারা ভাতের হাঁড়ি পেলো। ডালিতে পেঁয়াজ মরিচ। মুচিতে লবণ তারা একটা করে থালা নিয়ে নিঃশব্দে পান্তা ভাত পেঁয়াজ দিয়ে নিঃশব্দে খেলো। পেট টুবটুব করছে। তারা যেমন এসেছিলো, রান্না ঘরে শেকল তুলে দেয়ালে ফুটো দিয়ে বেরিয়ে গেলো। একজন বললো- আহা, বড় খিদা ছিলো রে। আরেকজন বললো- চুরি করিনি। চাইলেই দিতো। এতো রাইতে কে ডাকে ? তৃতীয়জন বমি করতে করতে বললো, কামটা ঠিক হইছে কি?

৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


চমৎকার বিষয়ে অনেক কিছু জেনে নিলাম। তথ্য সমৃদ্ধ লেখা পেলে খুব ভাল লাগে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার জন্য তিনটি অনুগল্প লিখেছেন..মোসাদ্দেক আহমেদ


বিড়াল

বিড়ালটা বেশ জ্বালায়। ফাঁক পেলেই সিঁড়ি কী বারান্দাঘেঁষা পাইপ বেয়ে ঘরে ঢোকে। খাবার তছনছ করে। কিন্তু আজ লিমিট ছাড়িয়ে গেছে। তাড়িয়ে দিলেও ফিরে ফিরে আসছে। খোলা জানালা দিয়ে ফের ঢুকল। তহমিনা স্বামীকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলেন। ঘড়ি ধরে আফজাল সাহেবকে খাবার দিতে হয়। ইনসুলিন নেয়ার আধঘণ্টার মধ্যে খাবার দিতেই হয়। ডাইনিংয়ে ঢুকে পড়া বিড়ালের দিকে তাকিয়ে মেজাজ খিঁচরে গেল, হুংকার দিতে যেয়ে হঠাৎ থেমে গেলেন, ‘না, বড্ড বিরক্ত করছে। বিড়ালটার আজ হল কী? ঠিক খাওয়া জোটেনি। দাঁড়া, আগে তোকেই খেতে দিই।’

ডাইনিং টেবিলে বসে আফজাল সাহেব স্ত্রীর কাণ্ড দেখছিলেন। একটু অবাকও। বিড়াল তহমিনার দু’চোখের বিষ; কিন্তু সিঁড়ির গোড়ায় বোনপ্লেটে এঁটোকাঁটা ঢেলে দেয়ার সময় তাকে অপ্রসন্ন দেখাল না। ক্ষুধার্ত বিড়াল চেটেপুটে সব খেয়ে নিল। এরপর দুদিন বিড়ালটার দেখা নেই। খুব খিদে পেলেই তবে আসে। আগের মতো জ্বালাতনও করে না। এর চেয়ে তাদের মেজো জামাইটাই বরং বেশি জ্বালাচ্ছে!

শিশুশিক্ষা

বিকেল হলেই মায়ের ডাক, তানিয়া বর্ণমালা পড়তে বসে। মায়ের চোখে অনেক স্বপ্ন, টানা পড়িয়ে যান; কিন্তু রাত নটা নাগাদ তানিয়ার চোখ ঢুলুঢুলু, যেন ঘুম যাবে বইয়ের ওপর। বাবার মায়া হয়, অনুনয় করেন, ‘অনেক হয়েছে, আর কত।’

মায়ের হুঁশ ফেরে, সস্নেহে মেয়েকে কোলে তুলে আদর করেন। কিন্তু পরদিন পড়াতে বসলে একই গল্প, মায়ের চোখে স্বপ্ন নামে, রাত অব্দি পড়ান। আবারও বাবার অনুনয়বিনয়-‘আহা, অতটুকুন মেয়ে...।’ মেয়ে সেদিনকার মতো ছুটি পায়, মায়ের আদরও।

ক’দিন বাদে বাড়িতে গৃহশিক্ষক এলেন। গৃহশিক্ষকের চোখেও সেই দিগন্তজোড়া স্বপ্ন। পড়তে পড়তে তানিয়া এবার হাই তোলে।

চার বন্ধু

ওরা চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুটো সোফায় চারজন মুখোমুখি বসে। সবার মুখ অর্ধনমিত, চ্যাটিংয়ে এমন মজে আছে যে, উপস্থিত কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছে না।


আরও দেখুন। Click This Link

৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১২

করুণাধারা বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন। ক্রিকেটে যেমন এসেছে টি টোয়েন্টি তেমনি সাহিত্যেও অনু গল্প আসার প্রয়োজন। তবে অনু গল্প লেখা কঠিন।

পোস্টে ভাল লাগা।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার ক্রিকেটের উদাহরণটি একেবারে সঠিক। অনুগল্প লিখা কঠিনই বটে....

প্রহেলিকা বলেন.....

না ছোটগল্প না কবিতার মাঝামাঝি এ অণুগল্পের প্লাটফর্ম৷ অনুগল্প প্রসঙ্গে বলা হয় আসলে না কবিতা, না ছোট গল্প। অর্থাৎ একদিকে এর দৈর্ঘ্যকে অন্যদিকে কাব্যময়তার বিষয়টিকেও ইঙ্গিত করে। অনুগল্পে অনুভবের বিষয়টি প্রকটতর। একে সবদিক দিয়েই বিশ্লেষণ করা যাবে। অর্থাৎ একটি লাইনের অর্থ হয়ত একাধিক হতে পারে। অনুগল্প অপ্রাসঙ্গিকতা বর্জিত এবং সুশৃঙ্খল ভাবে বিন্যস্ত। বলা হয় ছোট গল্প যদি নৃত্য হয় তাহলে অনুগল্প হবে তার একটি সার্থক ভাব মুদ্রা অথচ নৃত্যের পুরো টুকুই স্বাদ আস্বাদন করা যাবে। অনুগল্পে সরাসরি বলা হয় না, ইঙ্গিত দেওয়া হয় আর সে ইঙ্গিত থেকে পাঠক তার চিত্রকল্প আবিষ্কার করেন। বলা হয়, অনুগল্প কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, সু নিয়োজিত ঘটনার ওপর এক সারি অর্থবহ শব্দের টেরাকোটা। এর থেকে বোঝা যায় অনুগল্পে কাব্যময়তার বিষয়টি।

অনুগল্পে গল্প বলাটা অনেকটা আকাশে বিদ্যুত ঝলকানির মত; যেন মুহূর্তে সমস্ত আকাশে দেখে নেওয়া যা অবাক এবং মোহিত করার মত বিষয় হবে। অনুগল্পের ভাষা হতে হবে সংক্ষিপ্ত অথচ ঘনত্ব সমৃদ্ধ। অনুগল্পের শব্দকে অবশ্যই প্রতীকী হতে হবে। প্রতিটি শব্দ থেকে মূর্ছিত হবে অসংখ্য গুঞ্জন, পাঠকই খুঁজে নেবেন কিভাবে শব্দটি লেখক ব্যবহার করেছেন।


দেখুন। Click This Link

৮| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: অতি মনোরম পোষ্ট।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার জন্য অতি মনোরম একটি অনুগল্প...



আইনের দরজায়
ফ্রানৎস কাফকা

আইনের দোরগোড়ায় অপেক্ষমান এক দারোয়ান। এই দারোয়ানের কাছে গ্রাম থেকে আগত এক লোক এসে প্রবেশ অনুমতির প্রার্থনা করে। কিন্তু দারোয়ান বলে যে, সে তাকে ঠিক এই মুহূর্তে ভেতরে ঢুকার অনুমতি দিতে পারছে না। লোকটা ক্ষণিক ভেবে জিজ্ঞাসা করে, খানিক পরে ঢুকতে দেওয়া যায় কিনা। ‘তা সম্ভব’, দারোয়ান বলে, ‘তবে এই মুহূর্তে নয়’। যেহেতু আইনের দরজাটা খোলায় আছে এবং দারোয়ান এক পাশে সরে আছে, উৎসুক লোকটি উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখার চেষ্টা চালায়। এটা দেখে হেসে উঠে দারোয়ান বলে- ‘যদি তোমার এতই ইচ্ছে হয়, আমার বাধা না মেনে ভেতরে চলে যেতে পারো। তবে মনে রেখ, আমি ক্ষমতাবান। এবং আমি হচ্ছি সবচেয়ে নিচুপদের দারোয়ান। ভেতরে হল থেকে হলে একজন করে দারোয়ান আছে। প্রত্যেকে তার আগের জনের থেকে শক্তিধর। তৃতীয় দারোয়ানের চোখেই আমি চোখ রাখতে পারি না।’ গ্রাম থেকে আসা লোকটি এতসব জটিলতার কথা ভেবে এখানে আসেনি। সে ভেবেছে, নিশ্চয় আইনে সবার সব সময় সমান প্রবেশাধিকার আছে। কিন্তু এখন সে যখন দারোয়ানকে আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করল- ফারের কোট পরা, লম্বা সরু নাক, লম্বা-পাতলা-কালো তাতারদের দাড়ি, সে সিদ্ধান্ত নিল- সে বরং অপেক্ষা করবে। দারোয়ান তাকে একটা মুড়া দিয়ে দরজার একপাশে বসার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। সে ওখানে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর বসে কাটিয়ে দেয়। মাঝে সে বেশ কয়েকবার ভেতরে প্রবেশের জন্যে আর্জি করেছে। প্রতিবারই দারোয়ান কিছু না কিছু জিজ্ঞেস করেছে, জানতে চেয়েছে তার বাড়ি-ঘর সম্পর্কে, আরও অন্যান্য সব বিষয় নিয়ে। এগুলো খালি পদস্ত লোকদের একটু ভাব ধরে কিছু কথা বলার মতোই। এবং প্রতিবারই শেষ করেছে এই বলে যে, এখনও তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার সময় আসেনি। লোকটি তার ভ্রমণের জন্য যতকিছু সঙ্গে এনেছিল, দামি অদামি সব, আস্তে আস্তে ঘুষস্বরূপ দারোয়ানকে দিয়ে দিল। দারোয়ান প্রতিবারই এটা গ্রহণ করে বলেছে- ‘আমি শুধু এটা গ্রহণ করছি, যাতে তুমি নিজেকে নিজে বলতে পারো সব চেষ্টা তুমি করেছিলে।’ এই অনেকগুলো বছরে দারোয়ানের দিকে লোকটির মনোযোগ প্রায় আটকে গিয়েছিল। সে অন্যান্য দারোয়ানদের কথা ভুলেই গিয়েছিল। এই প্রথম দারোয়ানকেই তার কাছে আইনের পথে মূল বাধা বলে মনে হচ্ছিল। শুরুর বছরগুলোকে সে তার মন্দ ভাগ্যকে গাল-মন্দ করছিল- ভীষণ রেগে আর উচ্চবাচ্যে। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে খালি নিজেকে তার অসন্তুষ্টি বিড়বিড় করে জানান দিচ্ছিল। বাচ্চা বনে যায় সে। দারোয়ানকে এতটা কাল ধরে দেখতে দেখতে তার কোর্টে বসা মাছিগুলোও পরিচিত হয়ে ওঠে। মাছিগুলোর কাছেও সে বিনতি করে দারোয়ানের মন পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার জন্যে। শেষমেশ তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। সে বুঝে উঠতে পারে না, তার আসে পাশে ঐগুলো অন্ধকার নাকি চোখের ধোকা। তবে ঐ অন্ধকারের ভেতর থেকেই সে উপলব্ধি করতে পারে, আইনের দরজা থেকে একটা অনির্বান দীপ্তি ভেসে আসছে। আর বেশি দিন বাঁচবে না সে। মৃত্যুর আগে, এতদিন ধরে সংগৃতি সকল অভিজ্ঞতা তার মাথায় জড় হয়ে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়- একটা প্রশ্নে যেটা সে এখনও দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করেনি। সে হাত নাড়িয়ে দারোয়ানের দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করে, যেহেতু উঠে দারোয়ানের কাছে যাওয়ার মতো শক্তি আর অবশিষ্ট নেই তার দেহে। দারোয়ানকে এগিয়ে আসতে হল। তাকে ঝুকে আসতে হয় কেননা দুজনের শরীরের উচ্চতার ফারাকে অসুবিধা হচ্ছিল। ‘এখন আবার তুমি কি জানতে চাও? দারোয়ান জানতে চাইল। তোমার তৃপ্তি কোনোদিনই মেটানো সম্ভব না। প্রত্যেকেই তো আইনের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করে’। লোকটি বলল, ‘এটা কি করে সম্ভব হল যে এতকাল ধরে আমি ছাড়া আর কেউ আইনের কাছে যাওয়ার জন্যে এলো না?’ দারোয়ান বুঝতে পারলো যে, লোকটি তার জীবনের চরম সীমায় চলে এসেছে। সে আর ঠিক মতো শুনতে পাচ্ছিল না, দারোয়ান কানের কাছে চেঁচিয়ে বলল, ‘যেহেতু এই দরজা শুধু তোমার জন্যে তৈরি করা হয়েছিল, সেহেতু আর কেউ ভেতরে ঢুকতে পারত না। আমি এখন এটা চিরকালের মতো আটকে দিতে যাচ্ছি।’

৯| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: একটি সুন্দর অনুগল্প। অতি সুন্দর


কথা
স্বপ্নময় চক্রবর্তী

আমি বনগাঁ লাইনের গোবরডাঙা শ্যামসুন্দর বিদ্যামন্দিরের মাস্টার। চারটে ছ’য়ের ডাউন বনগাঁ লোকালে উঠে বাড়ি ফিরি। একটা নির্দিষ্ট কামরা আছে আমাদের। মছলন্দপুর থেকে দুজন মাস্টারমশাই ওঠেন। ওই দুজনের জন্য জায়গা রাখি।

যে কামরায় উঠি, সেই কামরার জানালার ধারে মুখোমুখি সিটে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা বসেন। ভদ্রলোক বই পড়েন, ভদ্রমহিলাও বই পড়েন। ভদ্রলোকটি কী বই পড়েন আড়চোখে দেখেছি। রামকৃষ্ণ কথামৃত, ভারতের সাধক, চৈতন্যচরিতামৃত এইসব। ভদ্রলোকটির বয়েস ষাটের মতো, ভদ্রমহিলারও প্রায় ওরকম। ভদ্রলোকের মাথায় টাক, ভদ্রমহিলার মুখে শ্বেতির চিহ্ন। ওরা দুজনে একই কামরায়, একই ট্রেনে বহুদিন। ভদ্রমহিলাও পড়েন। নব কল্লোল, বুদ্ধদেব গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা। কোনোদিনই কথা বলতে দেখিনি ওদের। ভদ্রমহিলা হৃদয়পুর স্টেশনে নেমে যান। স্টেশনে ট্রেনটা ঢুকবার একটু আগে ভদ্রমহিলা সিট ছেড়ে উঠে রোজই বলেন- এসে গেলাম, আসি। আবার কাল কথা হবে কেমন?

ভদ্রলোক বই থেকে চোখ তুলে বলেন- হ্যাঁ, আবার কাল কথা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.