নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধার্ত বাঘ অথবা প্রেমময়ী নারী

০৬ ই মে, ২০২১ সকাল ৯:২৯

ক্ষুধার্ত বাঘ অথবা প্রেমময়ী নারী
১.
প্রিয় পাঠক, আজকের গল্পটি অনেক দিন আগেকার পটভূমিতে রচিত। এক দেশে এক রাজা ছিল। একরোখা। যখন তিনি কিছু করবেন বলে ভাবতেন, তা করতেন। যখন তার প্রজারা তার কথা বিনা দ্বিধায় মেনে নিত, তখন রাজা দিল দরিয়া হয়ে যেতেন। আর সামান্য এদিক ওদিক হলে রক্ষা নেই। ব্যাপারটা এমন প্রজারা একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে, যা রাজা তৈরী করে দিয়েছিলেন, সে পথে যদি চলে তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সব রকমের সাহায্য পাবে আর কখনও যদি কক্ষচ্যুত হয় তবে এক অভিনব ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হতো।

পাঠক, আমরা এই রাজার মুখোমুখি হবার আগে একটু অন্যদিক থেকে ঘুরে আসি।

২.
একটা সময় ছিল পৃথিবীতে যুদ্ধের পর যুদ্ধ চলতেই থাকতো। বর্বরতার সে সময়ে যুদ্ধে যারা বন্দী হতো তাদের বানানো হত ক্রীতদাস।

যুদ্ধে বন্দী লক্ষ লক্ষ দাস এবং রোমের অধীন প্রদেশগুলোয় নিষ্ঠুর অত্যাচার চালাবার ফলে রোমে দাসের সংখ্যা পরিমানে বেড়ে যায়। ফলে শত শত দাসদাসী কেনাবেচার বাজার গড়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় বাজার ছিল ইজিয়ান সাগরের মধ্যে দেলোস দ্বীপ। এই বাজারে দিনে দশ হাজার পর্যন্ত দাসদাসী ক্রয়-বিক্রয় হত। আর তাদেরকে ব্যাবহার করা হত কৃষিকাজে, খনিতে, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বা জাহাজের মাঝিমাল্লা হিসেবে।

এসব দাসদের মধ্যে যারা ক্ষিপ্র, চটপটে ও শক্তিশালী ছিল তাদেরকে রোমবাসীগণ অস্ত্রচালনা শিক্ষা দিত এবং পরে তাদের একজনকে অন্যজনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য করত। এই দাসদের বলা হত গ্লাডিয়েটর (Gladiator)।

গ্লাডিয়েটরদের দ্বন্দ্বযুদ্ধ দেখার জন্যে অ্যাম্ফিফেয়াত্রোন বা অ্যাম্ফিথিয়েটার (Amphitheatre) তৈরী করা হয়েছিল, দেখতে ছিল সার্কাসের মঞ্চের মত। এর কেন্দ্রস্থলে থাকত বালুময় খোলা জায়গা যাকে বলা হত আরেনা (arena)। এই আরেনার চারদিকে ধাপে ধাপে দর্শকরা বসত। উৎসবের সময়ে এই গ্লাডিয়েটরদের দ্বৈরথ অনুষ্ঠিত হত বিনোদনের জন্যে। দাস মালিকেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ঐ পৈশাচিক মল্লযুদ্ধ উপভোগ করত। যে সব দাস যুদ্ধে হেরে যেত কিন্তু তখনও বেঁচে থাকতো – এ ধরণের গ্লাডিয়েটরদের ভাগ্য দর্শকদের উপর নির্ভর করতো। দর্শকেরা হাত তুললে তার জীবন রক্ষা পেত, আর যদি তারা হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল নীচের দিকে করত, তাহলে বিজয়ী তাকে হত্যা করত। পরে ভৃত্যেরা আঙটা পরানো লাঠি দিয়ে মৃতদেহকে আরেনার বাইরে টেনে নিয়ে যেত।

সিংহ, বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র পশুদের সাথেও গ্লাডিয়েটরদের এধরণের যুদ্ধ করতে হত।

৩.
আমাদের এই গল্পের রাজা এই বর্বরোচিত মল্লযুদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত হয়ে এক অভিনব বিচারব্যবস্থা চালু করেন। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার। যখন কোন বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্তে আসেন তা বাস্তবায়ন হতো।

তিনি একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার গ্যালারী তৈরি করেছেন। জনগনের গ্লাডিয়েটরের পাশবিকতার মহাকাব্যিক উত্তেজনায় কাঁপানোর সুযোগ দিতে চান না তিনি। তিনি বিচারের এক উত্তেজনাকর কাব্য রচনা করেছিলেন। এখানে তার মত করে অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করা হত। আর যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি ভাগ্যগুণে নির্দোষী হত তাকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন।

কেউ কোন একটি বিষয়ে অভিযুক্ত হলে বিষয়টি যদি রাজার আগ্রহ তৈরি করতো তখন জনসাধারণকে ঢোল পিটিয়ে তারিখ-সময় জানিয়ে দেয়া হতো। সেই নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত হতো অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাগ্য।

সকল লোকজন গ্যালারীতে সমবেত হলে রাজা তার সভা পরিষদ নিয়ে আসতেন। সবচেয়ে সুন্দর স্থানটিতে রাখা রাজসিংহাসনটিতে রাজা বসতেন। তার পরিষদ তাকে ঘিরে থাকত। রাজার ইশারায় একদিকের দরোজা দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আরেনায় ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তার উল্টো দিকে থাকত পাশাপাশি দুটি বন্ধ দরোজা। এই বিচারের ফয়সালা এই যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি এই দরজা দুটির দিকে এগিয়ে যাবে এবং যে কোন একটি দরজা খুলবে।

সে তার ইচ্ছামতো একটি দরজা খুলবে। কেউ তাকে কোন গাইড করবে না বা কেউ তাকে প্রভাবিত করবে না। যেই একটি দরজা খুললো। হতে পারে, একটা ক্ষুধার্ত বাঘ বেরিয়ে আসবে, হিংস্র আর খুবই নিষ্ঠুর, যাকে দীর্ঘদিন না খাইতে দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে। বাঘটি মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পরবে, টুকরো টুকরো করে বিদীর্ণ করে ফেলবে। অপরাধীর এই শাস্তি!

একটা দুরন্ত লোহার ঘন্টা বেজে উঠবে। অরোনায় নিয়োজিত ভাড়াটিয়া লোকেরা উল্লাস করে উঠবে। বিশাল গ্যালারীর লোকেরা মাথা নিচু করে থাকবে। তাদের হৃদয় ব্যথিত হবে। তারা আফসোস করতে থাকবে, লোকটি কি প্রাণবন্ত ও সুন্দর ছিল কিম্বা কত বয়োবৃদ্ধ আর সম্মানিত ব্যক্তি ছিল। ভাগ্য কি নির্মম ভাবে শাস্তি দিল!

কিন্তু যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি অপর দরোজাটা খুলত তবে সে একজন মেয়ের সামনে পড়তো, সুশ্রী, লাবণ্যময়ী তরুণী। এটা মহামান্য রাজার পক্ষ থেকে উপহার, যাকে বিয়ে করে নিতে হতো দ্রুত। এটা কোন বিষয় নয় অভিযুক্ত ব্যক্তিটি বিবাহিত কিনা কিম্বা তার কোন পছন্দ ভালোবাসা আছে কিনা। রাজার কাছে এ ধরণের অজুহাতের কোন মূল্য নেই। অন্য একটা দরজা খুলে গেছে, রাজা তার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিয়ে আরেনার ভিতর হাজির হতো। তার পিছনে কাজী হাজির। একদল কুমারী মেয়ে নাচতে নাচতে, ফুল ছিটাতে ছিটাতে, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে এগুতো থাকতো। অনেক আনন্দের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি নববধূ নিয়ে বাড়িতে ফিরত।

রাজার এই বিচার ন্যায় বিচার হিসাবে স্বীকৃত ছিল। কোন রূপ বিতর্কহীন। আসামী জানত না কোন দরোজায় সুন্দরী অপেক্ষা করছে। কোনরূপ পূর্ব ধারণা ছাড়াই সে দরজা খুলছে। সে জানত না কোন দরোজায় সে গ্রাস হবে আর কোন দরজায় বিয়ে। এই বিচার কার্যক্রমকে শুধু ন্যায্য দাবী করত তা নয় এটা সাথে সাথে বাস্তবায়ন করা হত। যে দোষী চিহ্নিত হত তাকে শাস্তি দেয়া হত আর যে নিরপরাধ তাকে পুরস্কৃত করা হতো। এই বিচার কার্যক্রম থেকে কিম্বা রাজার আরেনা হতে বের হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না।

এই পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। এই বিচারের দিন যখন সকলে সমবেত হতো তখন কেউ জানত না কে জবাই হবে বাঘের হাতে বা অধিকার করবে সুন্দরী। ব্যাপক আলোচনা হতো এ বিচার নিয়ে। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের কারণে এই পদ্ধতিতে কোন প্রশ্ন উঠত না কোনদিন। কেননা অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই তার পরিণতির জন্য দায়ী ধরে নেয়া হতো।

৪.
রাজার এক কন্যা সন্তান ছিল। ফুটন্ত গোলাপ। তার সৌন্দর্য কল্পনাকে হার মানাত। রাজার চোখের মনি। সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে রাজা তাকে ভালোবাসতেন। সেই রাজ্যে উচ্চ বংশীয়, পদমর্যাদায় উন্নত এক সুদর্শন যুবক রাজ কন্যাকে ভালোবাসত। রাজার কন্যা এই যুবকের ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছিলো। কারণ যুবক শুধু দেখতেই সুন্দর ছিল না অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা ছিল সে, কয়েকটি যুদ্ধ জয়ের তিলক ছিল তার ললাটে। অনেক মাস যাবৎ যুবক যুবতীর প্রণয় চলছিল নির্বিঘ্নে। কিন্তু যখন ঘটনাটি রাজার দৃষ্টিতে আসে তখন তিনি কোন ধরনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়া তাকে দোষী সাব্যস্ত করলেন এবং জেলে বন্দী করলেন। একটি তারিখ প্রচার করা হলো যেদিন রাজার বিচারালয়ে তার বিচার হবে।

এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রাজার জন্য, প্রজাদের জন্যও বটে। কারণ এর আগে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। রাজার মেয়েকে ভালোবাসার মত দুঃসাহস কেউ দেখায়নি।

বাঘের খাঁচায় সবচেয়ে হিংস্র, নির্দয় পশুকে না খাইয়ে রাখা হয়েছে যা বিচারের দিন আরেনার এক দরজার ও পাশে রেখে দেয়া হবে। আর যদি যুবক নির্দোষ দরোজা খোলে, তার সাথে মানানসই ভারসাম্যপূর্ণ কুমারী নির্বাচন করা হয়েছে। সকলেই জানে যুবকের অপরাধ রাজ কন্যাকে ভালোবাসা কিন্তু রাজা তার বিচার ব্যবস্থাতে কোন ধরনের শৈথিল্য পছন্দ করেন না। অনেক অনন্দ আর সন্তুষ্টির সাথে তিনি তার প্রবর্তন করেছেন। এটা কোন ঘটনা নয় যে, কন্যার ভালোবাসার পরিণতি কি হবে, তিনি সমস্ত ঘটনাটিকে উপভোগ করছেন। তিনি তার বিচার ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। এটা তিনি তার ভাবনাতে আনতে রাজি নন যে, তার কন্যাকে ভালোবেসে যুবক কিছু অপরাধ করেছে কিনা।

নির্দিষ্ট দিনে জনসমাগম হতে থাকলো বিচারালয়ের কাছে। আরেনা টইটম্বুর, যারা প্রবেশের অনুমতি পায়নি তারা দেয়ালের বাইরে ভিড় জমাতে থাকলো, চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো। রাজা যমজ দরোজা দুইটার বিপরীতে তার রাজকীয় আসনে বসলেন।

সবকিছু ঠিকঠাক। সংকেত দেয়া হলো। রাজকন্যার প্রেমিককে আরেনার ভিতর ঠেলে দেয়া হলো। দর্শক স্তম্ভিত হয়ে দেখল সুদর্শন, বলিষ্ঠ গড়নের সুঠাম দেহের অধিকারী এক যুবককে ঠেলা দেয়া হচ্ছে বিচারের মুখোমুখি। অনেকে এই যুবককে দেখেনি আগে কিন্তু এমন ছেলেকে ভালোবেসে রাজকন্যা কোন ভুল করেনি এটা মেনে নিতে কারো কোন দ্বিধা থাকলো না। অথচ তার সামনে কি ভয়ানক সময় অপেক্ষা করছে।

৫.
যুবককে আরেনায় প্রবেশ করানো হল। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাজাকে মাথা নোয়ায়ে সমানে এগিয়ে যাবার কথা। কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে রাজার ডানদিকে বসা রাজকন্যার দিকে তাকিয়ে রইল। রাজকন্যা এই মহিমান্বিত বিচারে আগ্রহী নয় মোটেই। কিন্তু আজ তাকে এখানে আসতেই হলো। এই বিচারটি যে তারই কর্মফল।

বিচারের ফরমান যখন সামনে এলো তখন থেকে দিনরাত সে কিছুই ভাবল না। কিন্তু যা কখনো কেউ করতে সাহস পায় নাই তাই সে করল। সে ঐ দুইটি রুমের খোঁজ নিল। নিজের ইচ্ছা, ক্ষমতা, প্রভাব পরিচিত আর স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে সে জেনে নিয়েছে কোন দরোজা খুললে তার প্রেমিক বাঘের মুখোমুখি হবে আর কোনটা খুললে সুন্দরী মেয়ের মুখোমুখি হবে।

এবং সে শুধু জানল না কোন রুমটাতে সুন্দরীকে রাখা হয়েছে বরং কাকে রাখা হয়েছে তাও জেনে গেল। এখানে এই রাজ্যের সবচেয়ে সুন্দরীতমা, লাবণ্যময়ী কুমারী নারীকে রাখা হয়েছে উপহার হিসাবে তাকে রাজকন্যা পূর্ব হতে চিনত। দুই একবার তার প্রেমিকের সাথে এই মেয়েকে কথা বলতে দেখেছে। আর নারীসুলভ দৃষ্টিতে রাজকন্যা ঐ মেয়ের চোখে যুবকের প্রতি ভালোবাসা দেখেছে। এটা সেই মেয়ে যে রাজকন্যার ভালোবাসার দিকে মন দিয়ে তাকিয়েছিল। রাজকন্যার ভিতর বইয়ে বেড়াচ্ছে রাজার বংশধারা। রুমের ভিতর জড়োসড়ো হয়ে লজ্জিত মুখে বসে থাকা নারীর প্রতি রাজকন্যার ঘৃণা প্রবাহিত হতে থাকলো।

এদিকে, এই হট্টগোলের মাঝেও যখন যুবক রাজকন্যার দিকে অপলক ভাবে প্রচণ্ড নির্ভরতা নিয়ে তাকিয়ে রইল, তখন রাজকন্যা প্রেমিকের চোখে চোখ রাখল, তার মনে হলো এক প্রেমময় আর নিষ্পাপ চাহুনি! তারা দু’জন বুঝতে পারল তাদের দু’টি আত্মা এক হয়ে গেছে। একটা তীক্ষ্ণ চাহুনি যখন রাজকন্যার কাছে জানতে চাইল ‘কোনটি’, রাজকন্যার এর উত্তর দেয়া ছাড়া কোন পথ খোলা থাকল না।

রাজকন্যার ডান হাত কুশনের উপর রেখে তাকিয়েছিল। তার হাত একটু শুইয়ে দিয়ে ইশারা দিল ডান দিকে, কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পেল না কিছুই কিন্তু প্রেমিক ছুটল প্রেমিকার ইশারায়। সমস্ত গ্যালারী স্তব্ধ হয়ে রইল, যুবক এগিয়ে গেল ডানদিকে, ডানদিকের দরোজার হাতল ছুঁলো এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে খুলে ফেলল ডানদিকের দরোজা।

৬.
গল্পের এইখানে এসে আমি থমকে গেলাম। কি অপেক্ষা করছে দরোজার ওপাশে। ক্ষুধার্ত বাঘ নাকি প্রেমময়ী নারী?

রাজকন্যা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না এমন এক দৃশ্য যেখানে তার প্রেমিক তার প্রতিদ্বন্দ্বীর হাতে হাত রেখে ফুল বিছানো পথে হেঁটে যাবে। তার রক্তে বইছে পিতার রক্ত। ঈর্ষা থেকে না হোক প্রাচীন বিশ্বাস থেকে সে চাইতে পারে ওপারের জগতে গিয়ে অপেক্ষা করুক, তারপর রাজকন্যা পিতার সামনে নিজেকে হত্যা করে চলে যাবে তার কাছে। তবে কি ডানদিকের দরোজায় অপেক্ষা করছে ক্ষুধার্ত বাঘ?

এখানে আর একটা পয়েন্ট আমার মনে উকি দিচ্ছে, যতই ঈর্ষা কাতর হোক রাজকন্যা অনেক আগে থেকেই জানত কোথায় অবস্থান করছে সেই প্রতিদ্বন্দ্বী নারী। সে হয়ত শান্ত মাথায় নিজের ভালোবাসাকে উৎসর্গ করে দিল। সে ক্ষেত্রে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত বলে দিতে পারি গল্পটি বলছে, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না দূরেও সরিয়ে দেয়। তবে কি ডানদিকের দরোজায় অপেক্ষা করছে প্রেমময়ী নারী ?

কিন্তু পাঠক আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না গল্পের ইতি টানতে। তাই এই গল্পের ইতি আমি একা টানতে চাই না। তোমাদের কাছে জানতে চাই। প্রিয় পাঠক, তবে তোমরাই বলো, ডান দিকের দরোজায় কি অপেক্ষা করছে, ক্ষুধার্ত বাঘ নাকি প্রেমময়ী নারী?

একজন পাঠক এসে আমায় চুপি চুপি বলে গেল, গল্পের এখানে থামবেন না হে প্রিয় গল্পকার, তারচেয়ে নায়ককে দাঁড় করিয়ে দিন বাঘের সামনে, বিপুল বিক্রমে জিতিয়ে দিন তাকে। জনতার ক্রোধকে দিন বাড়িয়ে। বীরযোদ্ধা একনিষ্ঠ প্রেমিক নেতৃত্ব দিয়ে বাঘকে পরাজিত করে ছিনিয়ে আনুক রাজার কাছ থেকে রাজকন্যাকে।
আমি বলি, তাহলে তো ভেঙে পড়বে একটি প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থা।
পাঠক বললো, তবে তাই হোক।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:২১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক দিন পর আপনাকে ব্লগে দেখে ভালো লাগলো। ব্লগে থাকুন। ব্লগ এখন একটু জমজমাট হচ্ছে।

আবার এসে পড়ে কমেন্ট লেখার ইচ্ছে আছে। আপাতত লাইক দিয়ে চিহ্ন রেখে গেলাম।

২| ০৬ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:২৬

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৫৬

ইনদোজ বলেছেন: যুবকের প্রেম যদি খাঁটি হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই সে ক্ষুধার্ত বাঘের দরজাটা খুলবে। আর যদি জীবনের মায়া তার কাছে বড় হয়, তাহলে নারীর দরজা খুলবে। কিন্তু রাজা সবদিক থেকেই জিতে গেল। তার মেয়েকে অন্তত ঐ যুবক জয় করতে পারছেনা।

৪| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:২৬

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনি এই গল্পের ইতি কিভাবে টানতে চান?

৫| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ওরে বাবা---
লেখকরা সব পারে।

৬| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:০২

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: ভয় পাইছেন মনে লইতাছে।

বুকে ফু দিয়ে সামনে এগিয়ে যান। লেখকদের অনুপ্রাণিত করুন।

৭| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:২৮

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আমি এই প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার পক্ষে। এটা কোনো ন্যায় বিচারের ধরণ হতে পারে না।
অফটপিক, আপনি কি কখনো পঞ্চবটির চিহ্ন কম্পিউটার্সে ছিলেন?

৮| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৪৩

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
অফটপিক, নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া সমবায় মার্কেটে চিহ্ন কম্পিউটার এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলাম আমি, এর একটা শাখা করেছিলাম পঞ্চবটিতে গফুর সুপার মার্কেটে। অনেকদিন আগের কথা। এখন আমি এই ট্রেডে নেই।

৯| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৫০

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: পঞ্চবটির শাখায় আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিলো ২০০৯-১০ সালের দিকে। তারপর আর আপনাকে দেখিনি। ফেইসবুকে মেসেজ দিয়েছি আপনাকে।

১০| ০৬ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:২০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




ডান দিকের দরোজায় কি অপেক্ষা করছে, ক্ষুধার্ত বাঘ নাকি প্রেমময়ী নারী? - ডান দিকের দরোজায় যদি ক্ষুধার্ত বাঘ অপেক্ষা করে তাহলে এটি নিতান্ত সাধারণ গল্পে পরিণত হবে! আপনি লেখক হিসেবে কি চাচ্ছেন।

পুরো গল্প পড়ে মন্তব্য করছি - গল্পটি ভালো লেগেছে।

০৬ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০০

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: পুরো গল্পটা পড়েছেন এবং আপনার ভালো লেগেছে। আমার আর কি চাই? কিচ্ছু না। আপনার শুভকামনা করছি।

১১| ০৬ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩২

জটিল ভাই বলেছেন: এখানে থামবেন না হে প্রিয় গল্পকার........

০৬ ই মে, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০০

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: তবে তাই হোক....

১২| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১২:২৮

সোহানী বলেছেন: দেখুন, একটি মেয়ে বা ছেলে যখন প্রেমময় ভুবনে থাকে তখন তার প্রেমকে কোনভাবেই কারো সাথে শেয়ার করতে দেয় না, দরকার হলে বাঘ সিংহের মুখে ছেড়ে দিবে.........হাহাহাহাহা

গল্পে ভালোলাগা।

০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১:১৫

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: এটা মাথায় ছিল। বিশ্বাস করুন। কিন্তু শরৎবাবু বড় প্রেম ইত্যাদি বলে বিভ্রান্ত করেছিল, তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আপনার উপর দিয়েছিলাম দায়িত্বর বোঝা!!!! তার প্রতিদান ভালোভাবেই দিলেন।

ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।

১৩| ২৪ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:৩৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: সার্থকভাবে পাঠকের ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে। প্রেমময় নারীই শ্রেয়। পাঠকের সিদ্ধান্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.