নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলার গান গাই

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

আমি যে কি সেটা এখনও অনাবিষ্কৃত। কেউ এসে যদি আমায় আবিষ্কার করতো ! [email protected]

মোহাম্মদ ওমর ফারুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপলক্ষ্য (১৮++++ )

১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭

মিথ্যাগুলোকে সত্য ভাবি ভুল করে। সত্যগুলোকে এড়িয়ে চলি মিথ্যা ভেবে। ছন্নছাড়া জীবনটা এভাবেই কি কেটে যাবে ! জিজ্ঞাসাগুলো মনের গলিতে চলা ফেরা করছে ইদানীং। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সর্বজনগ্রাহ্য নেতা কে রহমান সিকদারের সর্বকনিষ্ট পুত্র যুবায়ের। বিষন্ন মনে প্রকৃতির নিষ্ঠুর দুপুর উপভোগ করছিল। ভ্যাপসা গরম। জীবিকার তাগিদে যে মানুষগুলো মিষ্টি সকালে ঘর ছাড়ে সে মানুষগুলোকে এসময়টাতে বড় বেশি অসহায় মনে হয়। সূর্য জিনিসটা বিধাতা কেন সৃষ্টি করেছেন যুবায়ের ভেবে পায় না। গরমের জন্য, নাকি আলোর জন্য ! দু’টিই যদি সূর্য সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে তবে তার বাবার মত মানুষগুলো কেন আলো থেকে দূরে থাকে ? অন্ধকারের মত এমন কালো সিকদারদের এত প্রিয় কেন ! অথচ, গাধা সম মানুষগুলো কে রহমান সিকদারদের আলোকিত বলে ভুল করে। যে কারণে এ দেশটার আজ এমন করুণ পরিণতি।
- যুবায়ের, শুনলাম চাকরি পেয়েছিস। সেলিব্রেট করবি না।
- যাহ্ শালা। চাকরী সবাই পায়। ব্যাপার না। দেখিস না সকাল সাতটায় ফুটপাতে কত চাকরিজীবি দাঁড়িয়ে থাকে।
- তবুও। প্রথম চাকরি পেলি। মজাই আলাদা।
- চাকরিটা আমি পাইনি। আমার বাপকে ওরা চেনে বলে করুণার আঁচলে বেঁধেছে মাত্র। এই বাঁধাবাঁধির ব্যাপারে চাকরী পেয়ে আমি বরং ভীত।
- তুই শালা বেশি বকিস। পাঁচ বছর পর একটা চাকরি পেয়েছিস।
- চাকরি আরো একবার পেয়েছিলাম। কিন্তু সেবারটা ফসকে গেল।
- যেটা ফসকে গেছে সেটা হিসেবের বাইরে। এটা হিসেবের মধ্যে। আজ একটা হুইস্কি দু’জনে মিলে শেষ করে দিই আয়। দাম আমি দেব।
- কেন, তুই দিবি কেন ? চাকরি তো তুই পাসনি।
- আরে একই কথা। তুই পেলে যা আমি পেলেও তা। তুই আর আমি কি আলাদা ! একটা হুইস্কি মেরে বুদ হয়ে বসে থাকি আয়। সাথে চিকেন ফ্রাই নিবি ?
- না আমার ইচ্ছে হচ্ছে না।
- তুই কি শালা শেষমেষ সাধু হয়ে যাবি ?
- বাজে বকিস না। সাধু হওয়ার কি দেখলি ?
- দোস্ত, তোর লক্ষণ তো ভালো মনে হচ্ছে না। বেটা নেতার পোলা মুক্তোর মালা গলায় দিয়ে জন্মেছিস, তোর তো অনেক বোতল ব্র্যান্ডি খেয়ে বসে থাকার কথা। কেন যে শালা আমাদের সাথে মিশতে আসিস ! নষ্ট হওয়ার ইচ্ছাতেই তো দোস্তি পাতলি। তাই বলে ভালো মত নষ্ট হবি না ? হুইস্কি আবার ইচ্ছে করছে না কী রে ?
- তুই শালা মাদারচোত। দুনিয়ায় যাই ঘটুক সেই উপলক্ষ্যে তোর গেলা চাই। কাওয়া আন্ডা পাড়লেও হুইস্কি, যুবায়ের সিকদার দুই হাজার টাকা মাইনের কেরানীর চাকরি পেলেও হুইস্কি।
- কি যে বলিস দোস্ত। আসলে কি জানিস, একটা অকেশনে খেলে মনের ভেতরে দ্বিধাদ্বন্ধ থাকে না। ডাক্তারের বারণ। আগের মত মাল হজম হয় না। একটা উপলক্ষ্য পেলে সেটা আর হয় না। তখন মনকে বোঝানো সহজ, নেশার জন্য তো নয়, এই একটা আনন্দের ব্যাপার ঘটলো তাই একটু ফুর্তি করা আর কি।
- আরে তুমি শালা মালের পাগল। অভিনয় করো ?
- দোস্ত রাতের বেলা অমন করিসনা। এসময় নিজেকে ভারী সর্বহারা সর্বহারা লাগে। আমার জীবনটা কেমন দুঃখের তা তো জানিস।
- লাথি খেলে দুঃখ টুঃখ পালাবে।
- যুবায়ের, তুই কি মাদক বিরোধী আন্দোলন করবি ? আমি তোর লক্ষণ ভালো দেখছি না রে।
- আমার ভিতর দুশ্চিন্তায় ভরা।
- দুশ্চিন্তা কিসের ? চাকরি পেয়েছিস। খরচা পাতির পরিধি বাড়লো। রিয়্যালি ইউ আর এ হ্যাপি ম্যান।
- আই অ্যাম নেভার এ হ্যাপি ম্যান।
- তাই তো বলি, সাধু-সন্ন্যাসী হয়ে যাবি নাকি ? তোর জন্য বড্ড চিন্তা হয় রে।
- ঘুষি খাবি শালা।
- আচ্ছা তুই-ই বল। দুঃখিত হওয়ার কি আছে ?
- তুই মাল খাওয়া ছাড়া আর কি বুঝিস বলতো, দুঃখের প্রকার কি একটা ? তোর মত মাতাল সেটা বুঝবে না।
- মাতালও লোকে দুঃখে হয়। দেবদাসের কথা ভুলে গেছিস ! তবে এটা ঠিক আমি কখনও সাধু হবনা আবার সন্ন্যাসীও হব না। কিছু হওয়ারই কোন মানে হয় না। কারণ, কেউ এদেশের কিছু করতে পারবে না। চারিদিকে শালার এত দুঃখ ঢেউ তুলছে যে মনটা হুহু করে। তাই বুদ হয়ে বসে থাকি। মাল খেয়ে যাওয়া ছাড়া কারও কিছু করার নেই বুঝলি।
- বুঝলাম। তুমি শালা আসলেই সন্ন্যাসী হইবা। মাল খোর সন্ন্যাসী।
- সন্ন্যাসীরাও কি মালের কথা বলে, দোস্ত ?
- তাই তো মনে হচ্ছে।
- ফরগেট ইট। হুইস্কিটা কি হবে দোস্ত ?
- নারে। আজকাল পেটে সয় না। বমি বমি লাগে।
- যুবায়ের। তুই আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছিস।
- রাগ করার কি হল !
- আমি মালের বিরোধিতা সইতে পারি না।
- তুই খা না !
- আমি তো খাবোই। মাল খেয়ে মরার জন্যই আমার জন্ম। কিন্তু তুই ভালো হয়ে যাবি। এরকম তো কথা ছিল না।
- আমার কপালের কোথাও ভালো শব্দটা নেই রে। আই মিন আই হ্যাভ নো চান্স টু বি এ গুড পারসন।
- কেনরে শালা ? এই যে তুই মাল খেতে চাইছিস না। মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। তাছাড়া আজ তোকে দেখে আমার আত্নবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
- আরে আমি ভালো হবো কিভাবে ? নেতার ঘরে জন্ম। শ্রমিকের রক্তচোষা পয়সা খেয়ে বড় হয়েছি। আমার রক্ত অন্যায়কারীর রক্তের মিশ্রণ মাত্র।
- তাহলে এরকম করছিস কেন ? মাল খাবি, এখানে সেখানে পড়ে থাকবি, একেই তো বলে জীবন। যুবায়ের তোর পায়ে পড়ি। ভাল হয়ে যাসনে ।
- মাথা ব্যাথা করছে।
- এই তো ভাল লক্ষণ। কয়েক পেগ পড়লে ব্যাথা পালাবে।
- পালাবে বটে। কিন্তু আরো কথা আছে।
- আরো কথা কিসের ?
- মন ভালো নেই।
- সেটা কি রকম ?
- মন ভালো নেই বলে গত রাতে অনেক্ষণ টেনেছি। তাতেই গোলমাল।
- গোলমাল না হলে কোন পাগলে মাল খায় ? এত দাম দিয়ে খাওয়ার মানে হয় না। হে খোদা সব গোলমাল করে দাও। দুঃখ ভুলিয়ে দাও, চতুর্দিক স্বপ্নীল করে দাও, প্রভু।
- আসলে ব্যাপারটা অন্যরকম।
- তুই শালা নিজেই অন্যরকম। তোর সঙ্গ নেওয়াই আমার ভুল হয়েছে।
- দেখ মিঠু, আমার সমস্যা অনেক প্রকট।
- দূর, তোর কোন সমস্যা নেই। বানোয়াট কথা বলে লাভ কি ? চারিদিকে কেমন হাহাকার দেখছিস ? পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, মিথ্যে বলার প্রতিযোগিতা, আবর্জনা, অসুখ। দম বন্ধ হয়ে আসছে। উহ !
- শালা, লাথি এখন খাবি ? দে পাছাটা দে।
- আজকাল লাথি লাগে না রে। ভাগ্যের লাথি, পুলিশের লাথি, তথাকথিত প্রেমিকার লাথি, কুত্তা-বিলাইর লাথি, জীবনটা যেন লাথিময়। লাথি দিয়ে কোন কাজ হবে না বন্ধু।
- হাঁড়-গোড় তো ভাঙ্গা যাবে।
- ওসব নাই হয়ে গেছে রে। মেরুদন্ড পর্যন্ত নাই। যাক। মনে হয় চাকরিটা পেয়ে এবার পুরোপুরি ভালো হয়ে যাচ্ছিস। মানে আমাদের বিদায় জানাচ্ছিস। একটা ফেয়ারওয়েল নিয়ে নে। হুইস্কি দিয়েই সেটা সেরে ফেলি, কি বলিস ?
- না রে মিঠু, আজ থাক। পরশুদিন অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়েছিলাম। এক আত্নীয় দেখেছিল বলে রক্ষা হয়েছিল।
- তোর কপালটাও মাশাল্লাহ ! আমার কোন আত্নীয় আমার সাথে সম্পর্ক রাখে না।
- কেন ?
- মনে হয় ভয়ে।
- ভয় কিসের ?
- ওই যে মাঝে মাঝে ওলটপালট হয়ে যাই। বুঝলি, আমার জীবনটা বড় দুঃখের। এই দুঃখে চল একটা হুইস্কি শেষ করি।
- মনে হয় তোর পকেটে আজ অনেক টাকা। কোথায় পেলি ?
- শালার পুত। আমি ফকিরনীর পোলা বলে পকেটে টাকা থাকতে নেই নাকি ?
- না তা নয়। প্রতিদিন বাংলার পোটলা গিলিস। অথচ, আজ এক লাফে হুইস্কির জিকির। ঘটনা কি ?
- মাঝে মাঝে একটু আপার ক্লাস নেশাখোর হতে মন চায় তো !
- সেটা আজ কেন ?
- বড় দুঃখ রে। চিকেন ফ্রাই সাথে নিলে বেশ জমত।
- তোর বড্ড খিদে পেয়েছে নাকি ? আমার আজকাল খিদে পায় না। মনে হয় আগুন জ্বলে। খনি থেকে গ্যাস উদ্গীরণ হয়।
- এন্টাসিড খা, নিওটেক খা, নাহলে আরো উপরে যা।
- তোর মাথা।
- আরে মাল খাবি আর এন্টাসিড-নিওটেক খাবি না তা কি হয় ?
- আমি বেরুবো। তোর ভেদর ভেদর থামাবি ?
- কেন, কোথায় যাবি ?
- কাজ আছে। একজনের কাছে যেতে হবে।
- কার কাছে যাবি ?
- চিনবি না।
- শালা। পিরিত মারাস। এইটা আবার কোন পাবলিক। আমি চিনবো না কেন ?
- সবাইকে তোমার চিনে কাজ নেই।
- তুই প্রেমিকার কাছে যাবি। এই উছিলায় চল এক বোতল হুইস্কি শেষ করি আয়।
- মানুষের বাচ্চা কোথাকার। আমি খাব না বললাম না।
- হা হা হা। শালা গালি দেওয়াতেও ভুল করছিস।
- ঠিকই দিয়েছি। সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীবও কিন্তু মানুষ-ই।
যুবায়ের বেরিয়ে পড়ে। মিঠু হাল ছাড়ে। বোধ হয় বাংলা খেয়েই দিনটা কাটাতে হবে। যুবায়ের সাথে থাকলে বার-এ গিয়ে হুইস্কি খাওয়া যেত। নেতার পোলার সাথে বার-এ গিয়ে হুইস্কি খাওয়ার মজা-ই আলাদা।
- শালারা ভং ধরে। নিজের বাপকে ঘৃণা করে। শেষমেষ বাপের সম্পদেরই কেয়ারটেক করে। কত যুবায়েরকে দেখলাম শেষ পর্যন্ত দি এনাদার কপি অব কে রহমান হয়ে দিব্যি নেতা বনে যায়। হারামজাদা !
বাংলা পোটলার নিয়মিত খদ্দের মিঠু মনের দুঃখে আজ তিন পোটলা কিনে ফেলে। প্রতিদিনের সুখের ঘরটাতে আজ সুখ একটু বেশিই হবে। তাও ভালো। আজ অন্তত মুখোশধারী মানুষগুলোর সাথে থাকতে হবেনা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

রানা আমান বলেছেন: আপনার এই পোস্টটিতে কয়েকটা জায়গায় সংলাপগুলোর মাঝে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপধ্যায় এর লেখা দূরবীন উপন্যাসের প্রভাব পেলুম মনে হচ্ছে ।

২| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: ভাল লাগল ভাই..

+++

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
গল্পে ও সংলাপে কিছুটা নতুনত্ব আছে।

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: নতুন ধারার লেখা
পড়তে ভালোই লেগেছে
তবে ১৮+ এর তকমা
না পড়ালেও পারতেন

৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
লেখায় কিছু সমস্যা আছে। অথচ সমস্যা পুরোপুরি ধরতে পারছি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.