নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর।

নিরন্তর যাত্রা

Be a positive thinker..

নিরন্তর যাত্রা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার রাজনৈতিক প্রেক্ষিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কিছু ভাঁড়!

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১১

কিভাবে লিখবো বুঝে উঠতে পারছিনা। মনটা বেদনায় ভরা, ইচ্ছে করছে যদি সব কিছু উটে দিতে পারতাম! কিন্তু ইচ্ছে আছে সেই শক্তি নেই, তাই প্রতিবাদের নিম্নতম পর্যায়ে গিয়ে দুকলম লিখতে বসলাম। কখনো এই লিখাটা যে লিখবো ভাবনায়ও ছিলনা, কিন্তু নিউজটা পড়ে চমকে উঠলাম। দু চোখের পানি ধরধর করে গড়িয়ে পড়লো। “ঢাবির শামসুন নাহার হলে ফজরের নামাজ পড়ার কারণে তিন ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার”! কোন সাধারণ মুসলমান কি ভাবতে পারে এই রকম একটা নিউজের কথা! তাই স্মৃতির পাতা থেকে দুকলম লিখতে বসলাম। জানি আমার দৌড় লিখা পর্যন্ত, তবুও লিখতে বসলাম।

৫১২ টেপ রেকর্ডারে রাস্তার পাশে কোন মাইকে বাজানো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে দেশকে ভালবাসতে শিখেছি, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ হিসাবে জেনেছি। আমার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি ছিল এখান থেকেই। আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, আমার ৭/৮ বছর বয়েসের দিকে ভোটের সময় আমার সম বয়সি সবাই দলবেঁধে শুধুমাত্র ধানের শীষের পোস্টার নিয়ে “ধানের শীষ- ধানের শীষ” বলে রাস্তায় রাস্তায় গলা পাঠিয়ে ফেলতো। কিন্তু দেখেছি সেই বয়সে নৌকার শ্লোগান দেওয়ার মত কেউ ছিলনা। যেহেতু আমার রাস্তায় যাওয়ার অনুমতি ছিল না, পোস্টারের সেই বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে পুলকিত হয়ে একা একা পুরো উঠান জোড়ে শ্লোগান দিয়ে বেড়াতাম, আজও তা ষ্পষ্ট মনে পড়ে।

প্রাইমারি স্কুলের সবাই আমাকে “আমামী লীগ” “হিন্দু” নামে ডাকতো, কারণ এলাকার অধিকাংশ হিন্দুরা আওয়ামীলীগ কে সাপোর্ট করতো। বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসতাম বলে কারো সাথে আমার তেমন বন্ধুত্ব হয়ে উঠতো না। কেউ বঙ্গবন্ধুকে ব্যঙ্গ করে ডাকলে থাকে মেরে নাক ফাটিয়ে দিতাম। পঞ্চম শ্রেণি পাশ কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম, সেই পরিবেশে গিয়েও এককভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসার কথা, তার দেশ প্রেমের কথা গর্ব করে সবার মাঝে বলতাম। সেখানেও অধিকাংশ বন্ধুরা আমাকে “আমামী লীগ” “হিন্দু” নামে ডাকতো। যার রাজ সাক্ষী আমার বন্ধু তাকী উসমানী।

এরপর ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণি পড়া বাদ দিয়ে একলাফে ৯ম শ্রেণিতে গিয়ে সরকারি মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম। নতুন প্রতিষ্ঠানে এসেই কিছুদিনের মধ্যে ভাল ছাত্র হিসাবে সুনাম কুঁড়িয়ে নিলাম। হঠাৎ একদিন শুনলাম আমার মাদ্রাসায় শিবিরের কমিঠি করা হবে, সমন্বয় কমিঠিতে আমাকেও রাখা হবে। ঘোর বিরোধিতা শুরু করলাম, এবং অবশেষে সেই কমিঠি আর হয়নি। যার রাজ সাক্ষী পাভেল মোস্তফা। এবং সেই সময় রসায়ন ক্লাস করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসির “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস” লেখা গ্রন্থটি পড়ে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার যুদ্ধের ভূমিকা ও বীরত্ব সম্পর্কে জেনে থাকে হৃদয়ে স্থান দিয়। বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি মেজর জিয়াকে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করি। সেই সময় থেকে রাজকার, আল বদর, আল শামস ও দেশ বিরোধীদের ভূমিকা সম্পর্কে জেনে তাদের মনে প্রাণে ঘৃণা শুরু করি।

অতপর ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয় যা ছিল সম্পূর্ন শিবিরের দখলে। আমাকেও বলা হল শিবির করতে ও তাদের সাথে সম্পৃক্ত হতে। কিন্তু আমি না করে দিয়, এবং এরপর তারা আমাকে কোন জোর জবরদস্তী করেনি। যার রাজ সাক্ষী আমার বন্ধু ইসমাইল। ছোটবেলা থেকে কলেজের গাল গল্প শুনে এসে দেখলাম তা ভিন্ন।

২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হলাম, আর আমার সিট বরাদ্দ হল সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। হলে এসেই বুঝলাম এখানে থাকতে হলে রাজনীতি করতে হবে, কিন্তু ছোটবেলা থেকে রাজনীতির প্রতি অনিচ্ছাই নিজেকে সরাসরি রাজনীতির মাঠ থেকে বিরত রাখলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা থেকে ছাত্রলীগের প্রতিটা মিছিলে যেতাম। কিন্তু যেটা আজও আমাকে পীড়া দেয় তা হল, এখানের রাজনৈতিক নেতাদের ধারণা ছিল, যারা নামাজ পড়ে তারা শিবির! যারা গ-ম খায়না তারা শিবির। আর চট্টগ্রাম বিভাগ, সাতক্ষীরা, বগুড়া ইত্যাদি অঞ্চলের ছেলেরা শিবির। যেহেতু কখনো শিবির করিনি তা প্রমাণ করার জন্য নামাজ ছেড়ে দিলাম, গ-ম খাওয়া শুরু করলাম। ব্যাস, ভালই ছিলাম দেড়টা বছর। জীবনের পাপের সোনালি সময় পার করলাম, বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হিটলারের মত হাঁটতাম। ২০১৩ সালে হলে SMPL শুরু হলে কমিঠিতে জুনিয়র সদস্য হিসাবে অনলাইনে বিভাগে সিনিয়রদের মাঝে স্থান পেলাম। আর নিজের ইয়ারের দল FIRE BOX এর নাম মাত্র কোচ হলাম। ১০ই এপ্রিল FIRE BOX আর সিনিয়রদের একটা দলের (নাম স্মরণ নাই) সাথে খেলা চলাকালীন সিনিয়রদের অনৈতিক সুবিধা এবং আমাদের দুই বন্ধুকে শারীরিক ভাবে হেনেস্তার বিচার চেয়ে সামনের সারিতে থেকে তার প্রতিবাদ করলাম। ১১ই এপ্রিল রাতে শুনলাম আমি চট্টগ্রামের ছেলে তাই শিবির করি! ব্যাস, হল থেকে গাঁয়ের কাপড় নিয়ে সকালে বেরিয়ে আসলাম। মনের দুঃখে আজও আর হলে যাইনি। ছোটবেলা থেকে যে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসার কারণে গালি শুনলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নাম ধারী কিছু অমানুষের হাতে বলীর পাঁঠা হলাম।

এবার আসি মূল কথায়, ১৯২১ সালে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় যে মেনোপ্যাস্ট ছিল তাতে উল্লেখ আছে “পূর্ব বাংলার পশ্চাৎ পদ মুসলমানদের শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা”। কিন্তু আজ দেখতেছি শিক্ষক নামধারী নাস্তিক কুত্তা-কুত্তি গুলোর ছত্রছায়ায় কিছু শুয়ার নামাজ পড়লেই শিবির আখ্যা দিয়ে হল থেকে বহিষ্কার করে। আমি আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এদের অধিকাংশ আমার মত নিরপরাধ হয়েও কোন ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে শিবির ট্যাগ খায়। আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে নিজেকে খুব ছোট ও হীন ভাবছি।

(পূর্ব প্রকাশিত) http://www.nirantarzatra.blogspot.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.