নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামী সমাজ বিপ্লব বা ইসলামপন্থীদের উত্থানের প্রতি পশ্চিমারা কেন এত বিরুপ এবং শত্রুভাবাপন্ন ? কেন বারবার বিশ্ব রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থায় ইসলামপন্থীদের সামান্যতম উত্থানেও পশ্চিমারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রতিরোধে আগুয়ান হয় ? নীচে এরই কিছু কারন বিশ্লেষনের সামান্য চেষ্টা করা হলো ।
▓ প্রথমতঃ ঐতিহাসিক শত্রুতা ।
============================
মুসলমানদের রয়েছে সমৃদ্ধ ও গৌরবময় এক ইতিহাস । বিশ্বব্যাপী একদিন তাদের ছিল দূর্দন্ড প্রতাপ ও প্রতিপত্তি । শিক্ষায়, শিল্পে, বিজ্ঞানে, অর্থনীতিতে, রাজ্য পরিচালনায়, যুদ্ধবিদ্যায়, জনকল্যানে তারা পৌঁছে গিয়েছিল উন্নতির চরম সোপানে । এক মহান সভ্যতার ধারক ও বাহক ছিল তারা একদিন । অর্ধেক বিশ্বকে তারা সফলভাবে শাসন করেছে বহুকাল । হু হু করে বিস্তার ঘটেছিল তাদের সামাজ্র্যের ।
মুসলমানরা যখন সভ্যতার স্বর্ণশিখরে, আজকের পশ্চিমা খৃষ্টানরা তখন এক ভয়কংর অন্ধকার সময় পার করছে । অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, বিশৃংখলা, অন্যায়, অনাচার, রক্তপাত, বর্বরতায় আচ্ছন্ন ছিল তাদের সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্র । তাদের এই অন্ধকার ও কুখ্যাত সময়টিই ইতিহাসে মধ্যযুগ বলে পরিচিত আজ ।
মুসলমানদের উন্নত ও আলোকিত সভ্যতার সর্বগ্রাসী প্রভাব ও বিস্তারে আতংকিত হয়ে উঠে ইউরোপের তৎকালীন অনগ্রসর ও বর্বর খৃষ্টানরা । নিজেদের রাজ্য ও অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে তারা । ইতিহাসে এই যুদ্ধ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ নামে পরিচিত ।
শুরু হয় এক ঐতিহাসিক শত্রুতা ।
ইতিহাস সচেতন পশ্চিমারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের পুরানো সেই শত্রুতা ও ঘৃণা আজও মনে মনে লালন করে সযত্নে । তাই বিশ্বব্যাপি পতিত ইসলামী সভ্যতার পুনরুত্থানের ক্ষীন সম্ভাবনাটিকেও অংকুরেই বিনাশ করার জন্য তারা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে থাকে ।
▓ দ্বিতীয়তঃ বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থায় নিজস্ব কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রনক্ষমতা খর্ব হওয়ার আশংকা ।
=============================================
জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, অর্থনীতিতে সীমাহীন উৎকর্ষ সাধন করে বিশ্ব সভ্যতার অন্যতম নিয়ন্ত্রক ও কর্তা সেজে বসেজে আজ পশ্চিমারা । তারা যেভাবে চাইবে বিশ্বকে আজ সেভাবেই চলতে হবে । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তারাই এখন বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি ।
নিজেদের সভ্যতার চাইতে বহুগুনে শ্রেষ্ঠ মুসলিম সভ্যতার সর্বগ্রাসী প্রভাবের ব্যাপারে আগে থেকেই পশ্চিমাদের রয়েছে চরম আতংক ও অনীহা । মুসলমানরা তাদের অতীতের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আদর্শের চেতনায় নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন করে যে খেলাফত কায়েমের স্বপ্ন দেখে তা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমাদের একচ্ছত্র অধিপত্যের প্রতি এক প্রচ্ছন্ন ও পরিস্কার মৃত্যু ঘন্টা । তাই পশ্চিমারা মুসলমানদের এই চেষ্টাকে সর্বশক্তি দিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে এটাইতো স্বাভাবিক ।
▓ তৃতীয়তঃ বিশ্বের তেলসম্পদের অবাধ ও সহজ ব্যবহারের সুযোগটিকে স্থায়ীভাবে করতলগত রাখা ।
=====================================================
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার চাকাটি ঘূর্ণায়মান যে জ্বালানি তেলের কল্যানে তার সিংহভাগই হচ্ছে মুসলিম দেশসমূহের হস্তগত। তাই বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ ও বিভেদ তৈরী করে এবং তা জিইয়ে রাখার জন্য তারা যারপরনাই চেষ্টা করে থাকে । মুসলিম শাসক শ্রেণীর একটি বিরাট অংশকে ছলে বলে কৌশলে অনুগত ও তাঁবেদার বানিয়ে রাখার মাধ্যমে তাদের তেল সম্পদ থেকে অবাধ সুবিধাভোগের ব্যবস্থাটিকে চিরস্থায়ী করে রাখার জন্য পশ্চিমারা বিনিয়োগ করে থাকে ব্যাপক অর্থ, বুদ্ধি, শ্রম ও সময় । এজন্য তারা তাদের আরেক ঐতিহাসিক শত্রু ইহুদিদেরকেও দুধ-কলা দিয়ে নিয়মিতভাবে পুষতে দ্বিধা করছে না ।
বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা পুরানো ধর্মীয় জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুনভাবে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হলে পশ্চিমাদের সেই স্বার্থ হানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে শতভাগ । মুসলমানদের দয়া ও করুনার উপর তখন পশ্চিমা সভ্যতার ভাগ্য ঝুলে থাকবে । তাই স্বার্থের অনিবার্য্য প্রয়োজনে মুসলিম পুনর্জাগরন প্রতিরোধ করা পশ্চিমাদের জন্য অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রামের মতো ।
▓ চতুর্থতঃ অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার এবং নৈতিক উচ্ছৃংখলতার সংস্কৃতিটিকে অক্ষুন্ন রাখা ।
==================================================
ইসলাম মানুষের আচরন ও নৈতিক ক্ষেত্রে শৃংখলা ও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুন্দর সমাজ বিনির্মানের প্রতিশ্রুতি দেয় । তাই নগ্নতা, বেহায়াপনা, অবাধ ও বিকৃত যৌনাচারে অভস্ত এবং নৈতিকভাবে চরম অধঃপতিত পশ্চিমাদের কাছে ইসলাম এক মূর্তিমান আতংকের নাম । ইসলামের উত্থান তাদের স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী পাশবিক প্রবৃত্তির জন্য এক অশুভ বিপদ সংকেত । আর এ কারণেই মুসলমানদের পুনর্জাগরন ও উত্থান দমিয়ে রাখতে সদা মরিয়া পশ্চিমা পশুরা ।
▓ পঞ্চমতঃ মিথ্যা জুজুর ভয় বা ভ্রান্ত ধারনা ।
===============================
সর্বশেষ কারনটি তুচ্ছ এবং বিতর্কিত হলেও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না ।
আধুনিক পশ্চিমারা ইসলামের শাশ্বত, সুন্দর ও শান্তিপূর্ন জীবনব্যবস্থাটির সাথে মোটেও পরিচিত নয় । তারা দেখেছে জিহাদের নামে কিছু হঠকারী, স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন ও উগ্রপন্থী মুসলমানদের বিশ্ব শান্তি নস্যাতের অপপ্রয়াস । ইসলামী পূনর্জাগরন মানেই পশ্চিমাদের কাছে আজ নাশকতার নাম । ইসলামী চেতনা মানেই পশ্চিমা স্বার্থে আঘাত হানার এক উন্মত্ত মানসিকতা । একটি নাইন ইলাভেন ।
যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি ইহুদি ও ব্রাহ্মন্যবাদী ষড়যন্ত্রের ফসল, তথাপি এসব ব্যাপারে মুসলমানদের প্রতিক্রিয়াহীন নির্লিপ্তি বা আনন্দপ্রকাশ মুসলমানদেরকে প্রচ্ছন্ন শত্রু ভাবতে পশ্চিমাদের প্রবলভাবে উৎসাহিত করে থাকে । ইসলামী পুনর্জাগরনে অতি উৎসাহী এবং ভাবাবেগে আক্রান্ত যে সকল মুসলমানরা বুঝে না যে জলে বাস করে কুমীরকে টেক্কা দিতে হলে শক্তিতে বা কৌশলে কুমীরকে ছাড়িয়ে যেতে হয়, পশ্চিমারা টেরোরিস্ট বা ফান্ডামেন্টালিস্ট আখ্যায়িত করে তাদেরকে সমূলে দমন করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযানসহ সামরিক অভিযানেও পিছপা হয় না ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, পশ্চিমাদের কাছে ইসলাম শব্দটি আজ যেন জঙ্গীবাদের সমার্থক । আর উগ্র ও নির্বোধ কিছু মুসলমানরা তাদের এই ভ্রান্ত ধারনাকে আরো বদ্ধমূল করতে বিরামহীন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ।
----------------------------
আমজাদ হোসেন
৪ আগষ্ট ২০১৩ খৃষ্টাব্দ ।
©somewhere in net ltd.