নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
শেষ বিকেলে বাড়িতে মেহমান এসে হাজির হলো । বেশ কয়েকজন ছোকরা বয়সী যুবক । গৌরবর্ণ নধরকান্তি দেহ তাদের । তাকালে চোখ ফেরানো যায় না । যৌবনের স্ফূরনে আপাদমস্তক লাবন্যের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে ।
একেবারে মূর্তিমান বিপদ !
বাড়ির কর্তা হকচকিয়ে গেলেন অস্বস্থি ও আতংকে ।
হুট্ করে এতগুলো মেহমানকে আপ্যায়ন করা কি চাট্টিখানি কথা ! তাছাড়া দিনকালও ভালো না । চারপাশে অসংখ্য লোলুপ চোখ ।
না জানি খবর পেয়ে কখন এসে হামলা চালায় বাড়িতে সব দু’পেয়ে জানোয়ারের দল ।
ভেতর বাড়িতে চলে গেলেন তিনি । ব্যস্ত হয়ে হৈচৈ শুরু করলেন,
--‘কই গো, কোথায় গেলে, বাড়িতে মেহমান এসেছে । তাড়াতাড়ি রান্নাবান্নার কী আছে যোগাড় করতো দেখি ।’
এমন সময় বাইরে থেকে প্রচুর চীৎকার চেঁচামেচী শুনা যেতে লাগলো । বাড়ির কর্তা দুরু দুরু বক্ষে বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এলেন । সংগে সংগে ভয়ে মুখ চূন হয়ে গেল তার । যা ভয় করেছিলেন ঠিক তাই হয়েছে । হাজির হয়ে গেছে সব শয়তানের দল । ছোট বড় ধেড়ে বুড়ো ।
ভিড় থেকে গাট্টাগোট্টা ও ষন্ডামতো একজন এগিয়ে এলো । দু’ চোখে তার নোংরা লোভ চকচক করছে । ঠোঁটের একপাশ বেয়ে কষ গড়িয়ে পড়ছে ।
‘কী মিয়া, সুন্দর সুন্দর মেহমান পাইয়া মনে হয় হেগো খাতির যত্নে খুব ব্যস্ত হইয়া গেছ । খুবই ভালো কথা ।’ -চিবিয়ে চিবিয়ে উচ্চারন করলো সে । ‘তয় প্রতিবেশী হিসাবে আমাগোওতো কিছু হক আছে । নাকি কও মিয়া সচ্চরিত্রবান?’
আমতা আমতা করতে লাগলেন বাড়ির কর্তা হযরত লূত আঃ ।
‘আল্লাহ্র দোহাই লাগে আপনাদের ভাইয়েরা । এরা আমার সম্মানিত মেহমান । ওদের দিকে কু নজর দিবেন না দয়া করে । আপনারা যা চান আমি তাই দিতে রাজি আছি । তবুও ওদেরকে রেহাই দিন । ওদের অসম্মান আমি করতে দেব না । কক্ষনোই না’ ।
রাগে মুখ টকটকে লাল হয়ে গেল ষন্ডামতো লোকটির । পেছনের জনতাও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে । আস্তিন গুটাতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে অনেকে ।
হাত তুলে ওদেরকে নিরস্ত করলো সে । তারপর চিকন কন্ঠে লূত আঃ কে বললো, ‘মনে হয় খুব বাড় বাইরা গেছে তোমার । আমাগো কী দিবার চাও তুমি ? অ্যাঁ ? আমরা কী চাই বুঝবার পারতাছো না ? আমাগো নজর কু নজর ? ব্যাটা....’
লূত আঃ খানিকটা পিছিয়ে গেলেন অসহায় ভঙ্গীতে ।
মিনতি জানালেন তিনি আবারও, ‘দেখো ভাই, ঘরে আছে আমার সুন্দরী কণ্যারা । আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাদেরকে হালাল করেছেন । তোমরা যারা যারা চাও এই মুহূর্তে তোমাদের কাছে তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেবো আমি । বিশ্বাস করো । আল্লাহ্কে স্বাক্ষী রেখে কসম কাটছি’ ।
হো হো করে আট্টহাসিতে ফেটে পড়লো পালের গোদা । পেছনের জনতার মাঝেও সংক্রমিত হলো সে হাসি ।
‘আরে উল্লুক টা কী কয় হুনছো মিয়ারা ?’ আরেক চোট হেসে নিল সবাই ।
তারপর কটমট করে পালের গোদা তাকালো দুশ্চিন্তায় প্রায় ভেঙে পড়া হযরত লূত আঃ এর দিকে ।
‘শোন মিয়া ভদ্দরনোক নবী, আইজকার রাইতটা সময় দিয়া গেলাম তোমারে । যতো খুশী মেহমানগো আপ্যায়ন কইরা লও। সকালে আমরা ফিরা আসমু । পোলা গুলিরে আমাগো হাতে তু্ইলা দিবা । কাইলকা সারাদিন মউজ করমু এইগুলার লগে । মিয়া, খাঁটি জিনিস আমদানী করছো । দেখলেই একেবারে.......’ নীচের দিকে তাকিয়ে অশ্লীল ভঙ্গিতে ইঙ্গিত করলো সে ।
জনতার মাঝে আবারও হাসির হল্লা উঠলো ।
রাগে ঘৃণায় সারা শরীর শিউরে উঠলো লূত আঃ এর । দড়াম করে জনতার মুখের উপর সদর দরোজা সজোরে বন্ধ করে দিলেন তিনি ।
বাইরে থেকে আবারো চীৎকার শুনা গেল গোদাটার, ‘সকালে আসমু । ভুইলো না কইলাম । আর অন্য কোন মতলব থাকলে ছাড়ান দিও । শহরের চাইরদিকে পাহারা বসামু আমরা । আবারো কইয়া যাই, কালকে সকাল পর্যন্ত টাইম ।
জনতার গুঞ্জন আস্তে আস্তে দুরে মিলিয়ে গেল ।
দরোজার ফাঁকে চোখ রেখে দেখলেন লূত আঃ । দু’চোখ বেয়ে তার অশ্রু গড়িয়ে পড়লো । নিজের জাতির এই নিকৃষ্ট আচরনে কষ্টে তার বুক ভেঙে যাচ্ছে । এতোটা কাল ধরে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন এদের সংশোধন করার । কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না । দু’চারজন ছাড়া তাদের অধিকাংশেরই ঘৃণ্যতম স্বভাবটিকে দূর করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি । লাজলজ্জা ভুলে একেকজন মানুষরুপী পশুতে পরিনত হয়েছে তারা । এখন কী করে মুখ দেখাবেন তিনি মেহমানদের কাছে ।
দু’চোখ মুছে দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন তিনি । তারপর পেছন ফিরতেই একেবারে তরুন মেহমানদের সামনাসামনি পড়ে গেলেন । বিব্রত হয়ে শুকনো মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলেন লূত আঃ ।
‘ইয়ে ম্মানে........’
যুবকেরা তাকে আশ্বস্ত করলো ।
‘দুশ্চিন্তা করবেন না আল্লাহ্র নবী । ওরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না । আসুন শান্ত হয়ে এইখানটায় বসুন । আপনাকে এইবার আমাদের আগমনের আসল কারনটি খুলে বলছি, শুনুন হে আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা’ ।
হযরত লূত আঃ অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন ।
যুবকদের একজন বলতে থাকলো, ‘হে আল্লাহ্র নবী, আমরা আল্লাহ্র প্রেরিত ফেরেশতা । মানুষের ছদ্মবেশ ধারন করে আল্লাহ্র আদেশে আমারা আপনার কাছে এসেছি । আপনার জাতি নাফরমানির সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে । আমাদের মালিক তাদেরকে অনেক অবকাশ দিয়েছেন । কিন্তু তারা সংশোধনের অযোগ্য । তাই আমাদের মালিক তাদেরকে ধ্বংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।
আজ রাতই এই জনপদের শেষ রাত । এই জনপদ ধ্বংশের জন্যই আমাদের আগমন’ ।
বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠলো লূত আঃ এর । ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলো ।
হায়রে দুর্ভাগা জাতি ! পারলেন না তিনি । পারলেন না তাদেরকে সত্য ও সুন্দরের পথে আনতে ।
যুবক থামলো না । বলেই যেতে লাগলো ।
‘রাত ভোর হওয়ার অনেক আগেই আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের আর আপনার হাতেগুনা অনুসারীদের নিয়ে এই এলাকা ত্যাগ করবেন । আর...’ একটু ইতস্তত করলো যুবক, ‘আর আপনার স্ত্রীকে পেছনে ফেলে যাবেন । সেও ধ্বংশপ্রাপ্তদের একজন ।
আরোও একটা কথা । চলে যাবার সময় কেউ যেন ভুলেও পেছন দিকে না তাকায় । যতো কোলাহলই কানে যাক না কেন । সাবধান !’
ঝিম্ মেরে রইলেন হযরত লূত আঃ অনেক অনেকক্ষন । তারপর একটা কথাও না বলে আল্লাহ্র নবী ফেরেশতাদের নির্দেশমতো ভোর হওয়ার আগেই এলাকা ত্যাগের প্রস্তুতি গ্রহনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ।
(২)
ভোর ।
তখনও সূর্য্য পূবাকাশে উঁকি দেয়নি । দূরে কোথাও একটা মোরগের ডাক শুনা গেল । কন্ঠটি কেমন যেন কান্নার মতো । চারপাশে বাতাস হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে । গাছের পাতারাও যেন নড়াচড়া করতে ভুলে গেছে । এক মহা প্রলয়ের আশংকায় সমস্ত চরাচর রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে ।
তারপর । তারপর এলো সেই মুহূর্ত ।
আচানক দোলে উঠলো পৃথিবী ।পায়ের নীচে মাটি থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো ।
চড়চড় করে ফাটতে লাগলো ভূপৃষ্ঠ । ভীষনভাবে দেবে যেতো লাগলো বাড়ি-ঘর রাস্তা-ঘাট এখানে ওখানে । কোথাও কোথাও ভূগর্ভ থেকে প্রবলবেগে লক্ষ কোটি ভারী শিলা উৎক্ষিপ্ত হতে থাকলো শূন্যে । তারপর সেগুলো সজোরে ভেঙ্গে পড়লো মাথার উপরে । নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধের আতংকিত আর্তনাদ, কান্না আর গোঙানীতে যেন রোজ কিয়ামত শুরু হয়ে গেল চারদিকে ।
অনেকক্ষন ধরে চললো এই তান্ডবলীলা । তারপর একসময় থেমে গেল সবকিছু ।
যতদূর চোখ যায় কোন প্রাণ বা জনপদের কোন চিহ্নও রইলো না আর । কেউ কোনদিন বলতেও পারবেনা এইখানে একদিন প্রাণের কোন চিহ্ন ছিল । এইভাবেই নিজ হাতে নিজেরই সৃষ্টি ধ্বংশ করলেন মহান রাব্বুল আলামীন ।
একসময় ভূগর্ভ থেকে কুলকুল করে পানি উঠে ছড়িয়ে গেল আদিগন্ত । ধ্বংশযজ্ঞের উপর তৈরী হলো বিশাল এক সাগর ।
মৃত সাগর যার নাম ।
..............................................
( সুরা আল আ’রাফ এবং সুরা হুদ অবলম্বনে রচিত ।)
২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭
মু, আমজাদ হোসেন বলেছেন: হেডস্যার, আমি উল্লেখিত সুরা দু'টিকে খুব ভালোভাবে স্টাডি করে তারপর গল্পটি লিখেছি । বানোয়াট কিছুই নেই এতে । আপনি যদি নিজে পড়ে নিতেন এই দু'টি সুরার অনুবাদ তাহলে আপনার সন্দেহ নিরসন হতো । ধন্যবাদ ।
৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৫০
আমিনুর রহমান বলেছেন:
ভালো লাগলো সুরা অবলম্বনে আপনার গল্পটি ! সুরার অনুবাদ দুটো পড়লাম।
আপনার কাছে এমন আরো কিছু লিখা আশা করছি !!
৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১১
নীল জোসনা বলেছেন: আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন ।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭
হেডস্যার বলেছেন:
কি লিখব বুঝতে পারতেছি না... ঘটনা কি এরকমই ছিল আসলে??