নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মু, আমজাদ হোসেন

মানুষ পশুকে তখনই ছাড়িয়ে যায় যখন সে অন্য মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবে । আমি একজন মানুষ ।

মু, আমজাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার শৈশবের শবে বরাত ।

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

শৈশবের বেশ কিছুটা কাটিয়েছি ঢাকার মুগদায় । ঐ এলাকায় তখনও পুরান ঢাকার ফ্লেভার ছিল ।



শবে বরাত মানে আমাদের মতো শিশুকিশোরদের জন্য তখন আতসবাজি পুড়ানোর রাত । দোকানে দোকানে পসরা সাজিয়ে বসতো লাল, নীল, হলুদ, কমলা, সবুজ ইত্যাদি রঙের পটকা । কোনটি ছোট্ট গোলআলু আকৃতির, কোনটি কালোজামের মতো ছোট । মাটিতে জোরে আঘাত করলে সশব্দে বিস্ফোরিত হতো সেগুলি আধুনিক ককটেলের মতো । কিছু পটকা থাকতো এক হাত দীর্ঘ কঞ্চির মাথায় । দেয়ালে বাড়ি মেরে ফাটাতাম ওসব ।



শক্তিশালী পটকাগুলি ছিল শাদা রঙের । দেখতে হোয়াইট বোর্ড মার্কারের মতো । আকৃতিতে একই রকম কিংবা আরও কয়েকগুন বড় । পটকার মাথায় লেজের মতো বেরিয়ে থাকতো ফিউজ । সে ফিউজে আগুন লাগিয়ে দূরে ছুঁড়ে দিয়ে কানে আঙুল ঢুকাতাম আমরা ।



বুম্ । পিলে চমকানো শব্দে ফাটতো ওগুলো । নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকলে স্মোক বম্বের মতো হুশশ্ করে বেশ কিছু ধোঁয়া উগড়ে দিয়ে নিস্ক্রীয় হয়ে যেতো ।



আরেকটি আকর্ষনীয় বস্তু ছিল তখন ‘তারাবাতি’ নামে । সিলভার কালারের দাহ্যবস্তুর মিশ্রনের প্রলেপ লাগানো কয়েক ইঞ্চি দীর্ঘ দন্ড । মাথাটিকে আগুনে উত্তপ্ত করলে হাজারো স্ফুলিঙ্গ চতুর্দিকে ছড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন তা অন্ধকারে আলোক বিকিরন করতে করতে জ্বলতো । নিভে যাওয়ার আগে আমরা সেই সব স্ফূলিঙ্গস্ফুরিত দন্ডগুলিকে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিতাম কার মাথায় পড়বে তা সামান্যতম চিন্তা না করে ।



সে সময় নরসীংদি ছিল এসব পটকা বানানোর জন্য বিখ্যাত । পটকার অসংখ্য দোকান ছিল নরসিংদী বাজারে । সারা বছরই পটকা বিক্রী হতো সেগুলিতে । বিয়ে শাদী জন্মদিন উপলক্ষ্যে মানুষ সেসব কিনে নিয়ে যেতো ।



আমার দাদাবাড়ি নানাবাড়ি ওদিকে হওয়াতে শবে বরাতের আগে আগে আমি কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চেপে নরসিংদী যেতাম কেবলমাত্র পটকা কেনার উদ্দেশ্যে । কারন শবে বরাতের আগে আমাদের ডানপিটে গ্রুপের বিরাট প্রস্তুতি নেয়ার ব্যাপার ছিল ।



শবে বরাতের রাতে লোকেরা মসজিদে যেতো । আমরা দুষ্ট ছেলের দল রাস্তার পাশে অন্ধকারে আচমকা পটকা ফাটিয়ে তাদের পিলে চমকে দিয়ে পালিয়ে যেতাম । মানুষকে ভয় দেখানোতে মনে হয় শিশুদের বিরাট আনন্দ ।



সে বয়সেই আমরা টাইম বোম্বের প্রচলন ঘটিয়েছিলাম । ফিউজ লাগানো সাদা ও লম্বা পটকাগুলির ফিউজের সাথে জ্বলন্ত আগরবাতি জুড়ে অন্ধকার রাস্তায় নিরিবিলি কোন স্থানে সুবিধামতো যায়গায় পেতে রেখে আলগোছে সট্‌কে পড়তাম । তারপর দূরে গিয়ে দুরুদুরু বক্ষে অপেক্ষা করতাম সেসব ফাটবার আশায় ।



ওগুলি ফাটতো এবং আচানক আতংকিত পথচারীদের মুখ থেকে ছোটা গালির তুবড়ি শুনে আমরা খিক খিক করে শয়তানের হাসি হাসতাম । মানুষের গালি খেয়েও সে বয়সে মজা পেতাম ভীষন ।



মুগদাপাড়ার কাছ দিয়ে গেলে পুরানো সেসব দিনের কথা আজও মনে পড়ে । ঢাকা এখন অনেক বদলে গেছে । যদিও পুরানো ঢাকা নিজেদের পুরানো কিছু ঐতিহ্যকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭

সুফিয়া বলেছেন: অনেক সুন্দর একটা লেখা। আমাকেও মনে করিয়ে দিলেন আমার শৈশবের শবে বরাতের কথা।

আমার শৈশবটা যতটা গাঁয়ে কেটেছে ঠিক ততটাই শহরে কেটেছে। আব্বার চাকুরীর সুবাদে আমরা ভৈরব রেলওয়ে কলোনীতে থকতাম। আর কলোনী মানেই এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে বুঝতেই পারছেন। যে কোন পালা-পার্বনে আমরা সবাই একযোগে মেতে উঠতাম। শবে বরাতের কথা যেহেতু বলছেন তাই আমিও সে ব্যাপারে আমার স্মৃতিপাটের কিছু চিত্র তুলে ধরতে চাই।

একটা উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করত সবার ঘরে ঘরে এই শবে বরাতের দিন আসার আগ থেকে। আমরা আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতম এই দিনটি উদযাপনের জন্য। আতশবাজি, পটকা তো আছেই। প্রতি শবে বরাতে আমাদের প্রধান আকর্ষণীয কাজ ছিল প্রচুর মোমবাতি কিনে সবার বাসার চাঁদের উপর লাইন করে জ্বালিয়ে রাখা। সারি সারি প্রতিটি বাসার ছাদে মোমবাতির আলোর দৃশ্য দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যেত।

তাছাড়া বিকেল বেলা থেকেই এবাসা-ওবাসায় রুটি হালুয়া বিতরণের কাজটিও করতাম অতি উৎসাহের সাথে।

সত্যি দিনগুলো কত মধুর আর উপভোগ্য ছিল আমাদের শৈশবকালে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.