নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মু, আমজাদ হোসেন

মানুষ পশুকে তখনই ছাড়িয়ে যায় যখন সে অন্য মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবে । আমি একজন মানুষ ।

মু, আমজাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুঃখিত, ............. এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না । (ছোট গল্প)

০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:২৪

(১)
এশার নামাজ পড়ে বাসায় আসতেই বিদ্যুৎ চলে গেল । আইপিএসটাও সমস্যা করছে । তাই অন্ধকারে বসে আছি । ইচ্ছে করছে না উঠে গিয়ে মোমবাতি জ্বালাতে । অন্ধকারটাই ভালো লাগছে এ মুহূর্তে । অলসভাবে ফোনবুকটা স্ক্রল করছি । মাঝে মাঝে লোড কমাতে পুরানো এবং অপ্রোয়জনীয় কনটাক্টগুলি ডিলিট করে দিচ্ছি ।

একটা নামের উপর হঠাৎ চোখ আটকালো । মনোয়ার আংকেল ।

সম্পর্কে আমার চাচা । আব্বার দুঃসম্পর্কের ভাই । আমাদের বাসায় আগে প্রায়ই আসতেন । বুড়ো হলেও অত্যন্ত রসিক মানুষ । দুই ছেলে দুই মেয়ে তার । অঢেল সম্পত্তির মালিক । ক্রিকেট পাগল ছিলেন বলে আমার সাথে চাচার খুব বনতো । তাই ক্রিকেট নিয়ে প্রায়ই দীর্ঘ আলোচনা করতাম । মাঝে মাঝে একসাথে বসে খেলাও দেখেছি ।

ফোনে কথাবার্তা হতো আগে নিয়মিত । কিন্তু মনে হয় বছর খানেক হয়ে যাবে কোন ফোন টোন করেন না তিনি । আমিও নতুন চাকরীর কারনে বাড়িছাড়া হয়ে আর প্রচন্ড ব্যস্ততায় তার খোঁজ নিতে প্রায় ভুলেই গেছি ।

অন্ধকারে বসে আছি । হাতে কোন কাজে নেই । তাই ফোন লাগালাম তাকে । অনেকক্ষন ধরে রিং হতে থাকলো । ধরছে না । একেবারে শেষ মুহূর্তে কল রিসিভ করলেন তিনি ।
--হ্যালো ।
কেমন যেন ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত কন্ঠ ।

--আসসালামু আলাইকুম, আংকেল । কী খবর ? কতদিন হয়ে গেল কোন ফোন-টোন করেন না । ব্যাপার কী ? ভুলে গেলেন নাকি ?
--ক্যামনে ফোন করুমরে ভাইস্তা, আমি আছি মহা আজাবের ভেতরে । আমার খবর কেউ রাখে ? জ্বইলা পুইরা মরতাছি আমি ।
--মানে, কী হয়েছে চাচা ?
--কী আবার হয় নাই ? জীবনে যত ভুল আর পাপ করছি এইগুলার শাস্তি পাইতাছি এখন । পোলা মাইয়ারা সহায় সম্পত্তি পাইয়া আমার কথা গেছে ভুইলা । কেউ একবার মনেও করে না । যত্তোসব বেঈমান পুলাপাইন জন্ম দিছি । ওদের জন্যই জীবনটা শেষ করছি । কত হারাম কামাইছি । কত মানুষের হক নষ্ট করছি । নামাজ কালাম পড়ার সময় পাই নাই । নিজের যত্ন নিতে পারি নাই ঠিকমতো । সব এই বেঈমান পুলা মাইয়াগো লাইগা । এখন তারা আমার কথা ভাববার সময়ও পায় না । বুঝবো একদিন । সময় হোক ওরাও বুঝবো আল্লাহ্‌র বিচার ক্যামন ।

এক নিঃশ্বাসে অনেকগুলি দুঃখের কথাগুলি বললেন তিনি ।

আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম । কী বলে সান্ত্বনা দেবো এই বয়স্ক মানুষটিকে বুঝতেই পারছিলাম না । তাও বললাম,
--কী করবেন আংকেল ? দুনিয়াটাই খারাপ হয়ে গেছে ।
--আর দুনিয়া ।
আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি । তারপর বলতে লাগলেন,
--এই দুনিয়া দুনিয়া করতে করতে ভাইস্তা আখিরাতটা হারাইছি । পেছনের জিন্দেগীর কথা মনে পড়লে এখন মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হয় । জাইনাও জানি নাই বুইঝাও বুঝি নাই । আল্লাহ্‌র দেওয়া লম্বা হায়াতটারে নষ্ট করছি শয়তানের ধোঁকায় পইরা । জীবনে মসজিদের ধারে কাছেও যাই নাই, কুরআন হাদিস ছুঁইয়াও দেখি নাই । এখন বুঝি কী ভুল করছি ।

একটু দম নিলেন তিনি । আমিও তাকে একটু সুস্থির হতে সময় দিলাম ।

তারপর যেন আন্মনেই বলতে থাকলেন,
--ভালো মানুষের সাথেতো চলি নাই সারা জীবন । যত আকাম কুকাম কইরা বেড়াইছি, কত মানুষের হক নষ্ট করছি, বাপ মা’র কথা শুনি নাই । অহন হাড়ে হাড়ে টের পাইতাছি । জানটা তেজপাতা হইয়া গেছেরে ভাইস্তা । আর সহ্য হয় না । মানুষ না হইয়া যদি অন্য কোন প্রাণী হইতাম ।

--আরে অত অধৈর্য্য হন কেন চাচা ? এখনওতো সময় আছে ? তওবা করে………
--আহ্হারে ভাইস্তা, বুকফাটা আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি, সময় কী আর বইসা থাকে ? অনেক দেরী হইয়া গেছে । এখন আর কিছুই করার নাই । আমি জন্মের মতো শেষ ।

শেষের দিকের কথাগুলি কীসের যেন শোঁ শোঁ শব্দে অস্পষ্ট শুনালো । শব্দ বাড়তেই থাকলে আমি আর না জিজ্ঞেস করে পারলাম না,
--চারপাশে কীসের এত শব্দ হচ্ছে, চাচা ?

--ঐ যে আইতাছে, আমার শরীরের হাড্ডি মজ্জা এক করতে । আইজকা খবরই আছে আমার । ভাইস্তা আমার জন্য দোয়া কইরো । আর কথা বলার সময় নাই ।
চাচার কন্ঠে আতংক ফুটে উঠলো ।

--চাচা, চাচা ।
আমি আরো কিছু বলতে গেলাম । কিন্তু ডিসকানেক্ট হয়ে গেল ফোনটা ।
আমি কতক্ষন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইলাম ।

(২)

পরের সপ্তায় ছুটিতে বাসায় ফিরলাম । দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বসে কথাচ্ছলে আব্বার কাছে জানতে চাইলাম,
--আব্বা, মনু আংকেলের খবর কিছু রাখেন ? উনি কি এদিকে আজকাল আসেন না ?

আব্বা ভাত খাওয়া বন্ধ করে ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন ।
--কোন্ মনু ?
--ঐ যে আপনার দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই । টিএন্ড টির সামান্য লাইন ম্যান ছিল । পরে বিশাল সম্পদের মালিক হয়ে যায় ।

আব্বা অবাক হয় ।
--সেতো মাস চারেক আগে স্ট্রোক করে মারা গেছে ? তুই জানিস না ?
--হোয়াট !! মারা গেছে ? মনু আংকেল ?
--হ্যাঁ । অবশ্য তুইতো ঢাকার বাইরে ছিলি জানবি কী করে ?
আব্বার সহজ ব্যাখ্যা ।

আচমকা বিষম খেয়ে ভয়ংকরভাবে কাশতে শুরু করলাম আমি ।
আব্বা তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দিলেন । আমার মাথা ঘুরতে থাকে । একটা কথাও আর না বলে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে আসলাম আমি ।

নিজের রূমে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম । ফোনটা হাতে নিলাম । ভয়ে ভয়ে মনু আংকেলের নাম্বারটাতে আবার কল করলাম ।

দুঃখিত ------------ এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না ।
আবার ট্রাই করলাম । আবার । আবার ।
ফোনটা বন্ধ ।

কম্পিত হাতে কল হিস্ট্রী চেক করলাম ।
নেই ! মনু আংকেলকে কল করার কোন রেকর্ড গত সাত দিনের হিস্ট্রীতে নেই ! অথচ আমি ড্যাম শিওর, মনু আংকেলের সাথে চারদিন আগে সন্ধ্যায় কথা বলেছি আমি ।

-------------------------------------
মু আমজাদ হোসেন ।
৯ই মে ২০১৫ খৃষ্টাব্দ ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ২:০০

অন্যসময় ঢাবি বলেছেন: ভয়াবহ ধরনের অতি প্রাকৃত গল্প। ভাল লাগল।

১০ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:২৮

মু, আমজাদ হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ । আমার ফোনবুকে কয়েকজনের নাম আছে যারা বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছে । নাম্বারগুলি আমি ডিলিট করিনি । ঐ নাম্বারগুলি দেখলেই আমার অনুভূতিটা এমন হয় ।

২| ১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১:৩৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: কমনপ্লটের অতি প্রাকৃত গল্প। কিন্তু গল্পের ভেতরের মূল ম্যাসেজটা ভাল ছিল, অহেতুক এই সম্পদ আর সংসারের পেছনে ছুটে চলা। :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.