নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মু, আমজাদ হোসেন

মানুষ পশুকে তখনই ছাড়িয়ে যায় যখন সে অন্য মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে ভাবে । আমি একজন মানুষ ।

মু, আমজাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ (গল্প) ।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫০


‘কি শেয়াল, আদব কায়দা ভুলে গেছিস নাকি? পৃথিবীর সবচে’ ভয়কংর ও হিংস্র পাণী আমি । আমার সামনে দিয়ে সালাম না দিয়ে চলে যাচ্ছিস যে বড় ! সাহসতো তোর কম না !’
রাগে গরগর করতে করতে বললো বাঘ ।

শেয়াল পন্ডিত কাঁচুমাঁচু কন্ঠে বললো,
'জ্‌জ্‌জ্বী বাঘ মামা, বড্ড ভুল হয়ে গেছে । ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না । তবে.........’
শেয়ালকে দ্বিধা করতে দেখে বাঘ হুংকার ছেড়ে উঠলো, ‘তবে আবার কী ? কী বলতে চাস্‌ ?'

শেয়াল আগের মতোই কাঁচুমাঁচু কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ইয়ে, না মানে, মামা, বলছিলাম যে ঐ একটু আগে বললেন না যে আপনি হচ্ছেন গিয়ে পৃথিবীর সবচে’ ভয়ংকর ও হিংস্র প্রাণী । মানে ক্‌কথাটা ঠ্‌ঠিক না ।'

বাঘের ক্রুদ্ধ হুংকারে সমগ্র বনভূমি প্রকম্পিত হয়ে উঠলো,
‘কী, কী বললি, তুই ? আমি সবচে’ ভয়ংকর ও হিংস্র প্রাণী নই ? হতভাগা, আমার চাইতে ভয়ংকর ও হিংস্র প্রাণী আর কে আছে এই পৃথিবীতে আমাকে এক্ষুনি বল । নইলে তোর মুন্ডু চিবিয়ে খাবো আমি আজ ।'

শেয়াল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, ‘আছে মামা, আছে । আমি নিজ চোখে ওদেরকে দেখেছি । ওদের নাম মানুষ।'

এখন হয়েছে কি, এই বাঘটি তার জীবনে কোনদিন মানুষ দেখেনি । তাই সে একটু বিভ্রান্ত বোধ করলো । নিজের ক্রোধ খানিকটা সংবরন করে কৌতুহল নিয়ে শেয়ালকে প্রশ্ন করলো,
‘মানুষ ? এটা আবার কী প্রাণী রে ? আগেতো কোনদিন দেখিনি । দেখতে কেমন, কোন বনে থাকে?'

এরপর শেয়ালের কাছ থেকে বাঘ একে একে জানতে পারলো যে অনেক অনেক দূরে ইট কাঠ পাথরের গোছালো ও পরিচ্ছন্ন এক বনে এই মানুষেরা দল বেধে থাকে । কিন্তু বাঘ যখন জানতে পারলো যে মানুষের মাথায় লম্বা শিং নেই, হাতে পায়ে ধারালো নখ নেই, মুখে মূলোর মতো দাঁত নেই, ছোট ছোট দাঁত যাও আছে সেগুলিতে বিষ নেই, পা মাত্র দু’টি, সে পায়েও শক্ত খুর নেই, গায়েও নেই তেমন শক্তি—তখন সে হো হো হাসিতে ফেটে পড়লো । বললো,

‘শেয়াল, তুই কি আমাকে বোকা পেয়েছিস ? এসব না থাকলে কোন প্রাণী আবার ভয়ংকর হয় কীভাবে ?'

শেয়াল বিব্রত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘না মামা, হাসবেন না । বিশ্বাস করুন, ওরা পৃথিবীতে আমার দেখা সবচে ভয়ংকর ও হিংস্র প্রাণী । ওদের রয়েছে ভীষন বুদ্ধি । এই বুদ্ধি হচ্ছে পৃথিবীতে সবচে বড় অস্ত্র ।'

বাঘের তখন বেজায় জেদ চেপে গেল এই মানুষ প্রাণীটি দেখার । মানুষের সামনে গিয়ে নিজের ভয়ংকর দাঁতমুখ ভেংচে পিলে চমকানো এক হুংকার দিয়ে সে দেখতে চায় মানুষ ব্যাটার কত সাহস । দেখতে চায় মানুষ কতটা ভয়ংকর ও হিংস্র ওর তুলনায় । দেখতে চায় মানুষের বুদ্ধির জোর কত । শেয়ালকে নিয়ে তাই সে তক্ষুনি রওয়ানা হয়ে গেল মানুষের দেশের উদ্দেশ্যে ।

সাত দিন সাত রাত কখনো হেঁটে কখনো দৌড়ে বাঘ ও শেয়াল বনের শেষ প্রান্তে এক গ্রামের কাছে এসে হাজির হলো অবশেষে ।

ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে পাঁচ ছ বছরের এক শিশুকে দেখে বর্ণনার সাতে মিল পেতেই বাঘ টিটকারি মেরে উঠলো,
‘শেয়াল, ঐ যে মনে হয় তোর ভয়ংকর মানুষ । হুহ !'

শেয়াল গম্ভীর কন্ঠে বললো,
'না মামা, ও এখনও শিশু মাত্র । মানুষ হতে এখনও ঢের দেরী ওর ।'

কিছু দূর যাওয়ার পর একজন খুন হওয়া মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেল । দেখেই বাঘ বলে উঠলো, 'এটি নিশ্চয় আসল মানুষ ?'

শেয়াল বললো, 'না বাঘ মামা । ও আগে মানুষ ছিল । এখন লাশ । মানুষেরা মরে গেল আর মানুষ থাকে না । ওদেরকে তখন লাশ বলা হয় ।'

অধৈর্য্য হয়ে উঠা বাঘ শেয়ালের সাথে আরও কিছু পথ যাওয়ার পর রক্তমাখা ছুরি হাতে পলায়নপর খুনিকে হনহন করে হাঁটতে দেখলো ।

বাঘ ফিসফিস করে বললো, ‘এটি মানুষ না হয়েই যায় না ।'
শেয়াল হেসে উঠলো, 'না মামা । ও মানুষ নয়, অমানুষ । ও মানুষ হতে পারেনি । সব মানুষ মানুষ হয় না ।'

শেয়ালের হেঁয়ালীপূর্ন কথা শুনে বাঘ ভীষন বিভ্রান্ত বোধ করলো । রাগে একবার হুংকার দিয়ে উঠতে চাইলো । কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো, দেখি না আরেকটু ।

আরও কিছুদূর যাওয়ার পর বন্দুক হাতে এক মেষপালককে গাছের নীচে বসে থাকতে দেখেই শেয়াল ভোঁ দৌড়ে চম্পট দিল মুহূর্তেই । শেয়ালের কান্ড দেখে বাঘ প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেল । একবার ভাবলো, শেয়ালের পিছু পিছু সেও ছুট লাগাবে কিনা । কিন্তু পরক্ষনেই সে তার রাজকীয় মেজাজ ফিরে পেল । ভালো করে তাকিয়ে বুঝলো এইবার সে সত্যিকারের মানুষের নাগাল পেয়েছে ।

ধীরে ধীরে বুক ফুলিয়ে সে গাছের নীচে বসা মানুষটার দিকে এগিয়ে গেল । উদ্দেশ্য ওর ভয়ংকর দাঁতগুলি বের করে পিলে চমকানো এক হুংকার দেবে । দেখবে সে মানুষ ব্যাটা ভয়ে কীভাবে পালায় ।

ঠাশ্‌শ !

হঠাৎ কি থেকে কি যেন হয়ে গেল । কানে তালা লেগে গেল বাঘের । ডান পায়ে মনে হলো কে যেন প্রচন্ড এক গদার বাড়ি বসিয়েছে । দরদর করে রক্ত বের হচ্ছে ওখান থেকে । জোর পাচ্ছে না সে একদম ঐ পা’ টিতে । যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে । মানুষ ব্যাটার হাতে লম্বা লাঠির মতো তাক করা কী যেন একটা বস্তু দেখা যাচ্ছে । ওটার মাথা থেকে ধোয়া বেরুচ্ছে ।

এবার বাঘ সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল । সেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রাণপণে পালাতে শুরু করলো ।

বহুক্ষন ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে বনের অনেক গহীনে এক ঝোপের ভেতরে ঢুকে ধপ করে বসে পড়লো বাঘ । হাপরের মতো হাপাচ্ছে সে । হঠাৎ তাকে ভীষন চমকে দিয়ে কোত্থেকে যেন উদয় হলো শেয়াল । বাঘের করুণ দশা দেখে শেয়াল বলে উঠলো,

‘কি বাঘ মামা, এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন কেন মানুষকে আমি সবচে ভয়ংকর ও হিংস্র প্রাণী বলেছি ? আড়াল থেকে আমি পুরো ঘটনা দেখেছি । বলেছিলাম না, ওদের রয়েছে ভীষন বুদ্ধি । সামান্য লাঠির মাথা থেকেও ওরা আগুন বের করতে পারে ।'

বাঘের তখন এতকিছু বুঝার অবস্থা নেই । মেষপালকের বন্দুক থেকে ছুটে আসা গুলিতে আহত ডান পা থেকে প্রচন্ড রক্তক্ষরনের কারনে বাঘ একদম নেতিয়ে পড়েছে । তবে মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে যে মানুষ নামক এই ভয়ংকর প্রাণীটার ত্রিসীমানায়ও সে আর ইহজন্মে ঘেঁষবে না । বাপস্ ! আরেকটু হলেই প্রাণটা গিয়েছিল !

--------------------------------------
মু, আমজাদ হোসেন ।
২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ খৃষ্টাব্দ ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.