![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
instagram.com/fatih.solaiman facebook.com/Fatihsolaimanofficial
ঐতিহ্যে উজ্জ্বল জামা মসজিদ, দিল্লী।
মসজিদ-ই-জাহান-নুমা, স্থানীয়রা একে বলেন জামা মসজিদ। ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে পরিচিত জামা মসজিদের অবস্থান দিল্লীতে, চাঁদনী চকে। অনেক গড়িয়েছে সময়ের জল, কিন্তু মসজিদটি আজও সমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক গল্প আছে মসজিদের দেয়ালে দেয়ালে, আছে সেসন নিয়ে অনেক বিতর্কও। ইতিহাসের সাক্ষী প্রচীন এই স্থাপনাটি আমার দেখার সুযোগ হয় ইন্ডিয়ান হাই কমিশনের আয়োজনে বাংলাদেশের শত যুবার ভারত ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে প্রতি বছর ১০০ জন বাংলাদেশি কৃতী তরুণকে ভারত সফরে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতি বছর।
ইন্ডিয়ার প্রথম ১০টি পর্যটক আকর্ষণের মধ্যে জামা মসজিদ একটি। মোগল সম্রাট শাহ জাহানের শেষ স্থাপনা এটি। ইতিহাসকে জানা প্রয়োজন নিজের শেকড়কে জানার প্রয়োজনে। একটা সময়, সে সময়ের মানুষের রুচি, জীবনযাপন, বিশ্বাস সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য বহন করে এক একটি স্থাপনা। ভারতের এই সকল স্থাপনা আমাদের উপমহাদেশের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের সাথে জড়িত। তবে দেখার সাথে জানা তখনই পরিপূর্ণতা পায় যখন আপনি তার সম্পর্কে আগে থেকে কিছু পড়াশোনা করেন। নাহলে শুধু একটি দালান দেখে আমরা তার কারুকার্যে পুলকিত হতে পারি মাত্র। ছুঁতে পারি না সময়টাকে।
স্থাপনাটির কারুকার্য যতই দেখতে থাকলাম, অবাক হতে লাগলাম। মসজিদের বিশাল আঙিনায় নিজের জায়গায় দাঁড়িয়েই একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম। এরপর এগিয়ে গেলাম মূল ভবনের দিকে।
সাদা মার্বেল পাথরে খচিত আছে অসংখ্য আয়াত।
যতই মসজিদের দেয়াল হাত বুলিয়ে দেখছি ততই জানার আগ্রহ বাড়তে লাগলো। আমাদের গাইড আমার সহায় হলেন। তার কাছ থেকে জানা গেল, জামা মসজিদ মানে আসলে শুক্রবার মসজিদ। শুক্রবারে জুম্মার নামাজে অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষের আগমণ ঘটত এই মসজিদে। মসজিদের মূল ভবনের সামনের বিশাল আঙিনায় একসাথে ২৫ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন!
জামা মসজিদ নির্মাণে কাজ করেছেন ৫ হাজার কারিগর। পাথরের দেয়ালে তাদের নিখুঁত কারুকাজ জ্বলজ্বল করছে এখনো। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল এক মিলিয়ন রুপি।
জামা মসজিদের নির্মাণ শৈলী মোগল ঘরানার। লাল বালুকা পাথর আর সাদা মার্বেলের সমন্বয়ে বিশাল এই স্থাপনাটি তৈরি করা হয়েছে। জামা মসজিদের ৩টি গেট, ৪টি টাওয়ার এবং ৪০ মিটার লম্বা ২টি মিনার আছে। পশ্চিমের নামাজের ঘরটির পিলারের সংখ্যা ২৬০টি, এটির নির্মাণের ধরণ হিন্দু এবং জৈন উপাসনালয়ের আদলে। তাই বলা হয়, মসজিদটির স্থাপত্যে বিচিত্র সংস্কৃতির অনুপ্রেরণা রয়েছে। সাদা মার্বেল পাথরের টেবিলে খচিত শিলালিপিটি বর্ননা করছে শাহ জাহানের রাজত্ব সম্পর্কিত তথ্য।
মসজিদের আঙিনায় একসাথে নামাজ পড়তে পারেন ২৫০০০ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
জামা মসজিদ ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশেষ শ্রদ্ধা পেয়ে আসছে এর অনন্য কিছু সংগ্রহের কারণে। এখানে মহানবী (সাঃ) এর পায়ের ছাপ সংরক্ষিত আছে, আছে তাঁর ব্যবহৃত জুতা। তার সময়ের হরিণের চামড়ায় লিখিত কোরআনের একটি অংশ দেখতে পাবেন এখানে।
১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা মসজিদটিকে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। এখানে তাদের সৈন্য ঘাটি স্থাপিত হয়। আরও নানান ভাবে মসজিদের যৌলুস ধ্বংস করার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু আজও ভারত উপমহাদেশের ঐতিহ্যের তাৎপর্য্যপূর্ণ অংশ হয়ে গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।
©somewhere in net ltd.