লাখ টাকার স্বপ্ন যেভাবে সত্যি হয়নি

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫১

"ব্রুম, ব্রুম, ব্রুম" মোবাইলের ভাইব্রেশন যেন ভুমিকম্প সৃষ্টি হয়ে যাবে, ভুমি না কাপলেও মোবাইলে ভাইব্রেশন সৃষ্টি হলে আমার হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়ে যায়। হৃদয়ের কম্পন থামাতে মোবাইল পকেট থেকে বের করে রিসিভ বাটনে চেপে ধরে "হ্যালো" বলতেই ওপাশ থেকে বলতে শুরু করল.....



-"আমি গ্রামীনফোন কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছিলাম। আপনি কি গ্রামীনফোনের বোনাস পেয়েছেন?"



আরে গ্রামীনফোন থেকে কল! মনে মনে কই "আমিতো ভি আই পি হয়ে গেলামরে মনু।"

তারপর ভদ্র পোলার মত জিজ্ঞাইলাম

-"না, কিসের বোনাস?"



ওই পাশ থেকে কইল......

-"গ্রামীন ফোন থেকে আজ পর্যন্ত যারা কোন বোনাস পায়নি তাদের নাম্বারগুলো বাছাই করে লটারির মাধ্যমে কয়েকটি নম্বরে বোনাস দেওয়া হচ্ছে। আপনার নম্বরটি লটারির মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছে এবং আপনি ১৮৭৫০০ (আঠারো লক্ষ পচাত্তর হাজার) টাকা পেয়েছেন।"



কথা শুইন্যা আমিতো সাগড়ের নিচ থেইকা ঝাম দিলাম, "আরে এই লোক কই কি!! আমি লটারি পামুনা ভাইব্যা জীবনে কোনদিন লটারি কেনার কথা চিন্তাও করলাম না আর ঐ লোক কয় আমি এত্ত টাকা পাইছি" মনে হয়তাছিল আমি শুধু ভিআইপি না এবার আমার কপালও খুলছে। এত্ত টাকায় কি কি করুম সেটারও মনে মনে একটা হিসাব করা শুরু কইরা দিলাম।



ঐ লোকের কথা কওয়া চলতাইআছে..........

-"এখন আমাদের ফোন কলটি কেটে যাবে, আপনি এই নম্বরে আবার ফোন দিয়ে আমাদের জানান টাকা কিভাবে পেতে চান, কোন মাধ্যমে টাকা পেতে আপনার সুবিধা হবে।"



ওরে আমিতো গেলাম.... ঠান্ডা হইয়া আমি ওরে কইলাম

-"আরে বলছেন কি, কসম লাগে লাইন কাইটেন না। আমার মোবাইলে ব্যলান্স নাই কল করতে পারুম না। এক কাজ করে আপনার মোবাইলে টাকা না থাকলে আমার ঐ টাকা থেকে কিছু টাকা নেন তবুও লাইন কাইটেন না।"



ঐ ব্যাটা বিরক্ত হয়ে কইল

-"তাহলে মোবাইলে টাকা ঢুকান, তারপর ফোন দেন।"



ব্লিং ব্লিং ব্লিং ব্লিং



আমার এতটুকু আবদার ঐ ব্যাটা না শুনে নিষ্ঠুরের মত সে ফোনকলটি কেটে দিল, আর আমারো ১৮৭৫০০০ টাকা পাওয়া হলো না।

---------------------------------

উপরেরটি কথোপকথনটি আমার সাথে ০১৭৭৭৩৫৯২১১ নম্বর থেকে কল করা এক ব্যাক্তির। এটি ছিল একটি ফাঁদ। এই ফাঁদে পা দেওয়াদের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি ফোনটি কেটে দেওয়ার পর আমি যদি উক্ত নম্বরে কল ব্যাক করলে ওরা আমাকে একটি বিকাশ অথবা ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর একটি নম্বর ধরিয়ে দিয়ে বলত এই নম্বরে এত পরিমান টাকা পাঠান তারপর কোথায় থেকে টাকা সংগ্রহ করতে হবে তার ঠিকানা দেওয়া হবে। এবং যদি কেউ লোভে পড়ে বোকামি করে ঐ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেন তাহলেও ধরা খাইলেন। আপনার লাখ টাকাও পাওয়া হবে না আর যে টাকা মাত্র পাঠালেন তাও পাওয়া হবে না।



যারাই লোভে পড়ে তারাই ধরা খায়। ঐ টাকা আপনার পরিশ্রমলব্দ নয় যে তা আপনাকে পেতেই হবে। যাকে আপনি দেখেননি, চিনেননা, জানেননা বিনা পরিশ্রমে লাভের আশায় কেন তাদের টাকা দিয়ে দিবেন। জেনে রাখা উচিত লটারির মাধ্যমে যদি আপনি টাকা পেয়েও থাকেন তাহলে ঐ টাকা আনার জন্য আপনাকে কেউ টাকা পাঠাতে বলবেনা যদি তা সত্যিকারের হয়। আর গ্রামীনফোন থেকে যদি কল আসে তবে সেই নম্বরটি হবে ১২১ অন্যকোন নম্বর থেকে কল করে এসব বোনাসের কথা বললেই বুঝতে হবে তা ভুয়া।



এসব ভুয়া তথ্যে বিশ্বাস করে অনেকেই তাদের দেখানো পথে টাকা দিয়ে দেয় এবং ধরা খায়, শেষে আমও যায় বস্তায় ভরে গাছটিকেও নিয়ে পালায়। মোবাইল ফোনের এসব ডিজিটাল প্রতারক সরল লোকদে ফাঁদে ফেলে ধোঁকা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসবের বিরুদ্ধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। ধোঁকাবাজদের প্রশয় না দিয়ে আমাদের উচিত নিজের কাজ সন্তুষ্ট চিত্তে করে যাওয়া।

৬ টি +০/-০