| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাকপাখী
Better to reign in Hell than to serve in Heaven"
আমার জন্মটা নিতান্ত নিম্নবিত্ত পরিবারে ।সোনার চামচ তো দুরের কথা পুরো বাড়ীতে ভাত রান্না করার একটা চামচ ছিল কিনা সন্দেহ !অন্যান্য বাচ্চারা যখন লেট্রোজেন,মাই ওয়ান,মাই বেবী খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছিল আমি তখন সুজি আর চালের গুড়া খেয়ে কোনমতে শ্বাস টিকিয়ে রেখে চলেছি ।গোল পাতার ছাউনি দেয়া এক রুমের সংসার আমার বাবা মায়ের ।বাবা সারাদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যখন বাড়ী ফিরতেন তখন প্রায় মধ্যরাত ।পরিশ্রান্ত মানুষটির একটু ঘুম প্রয়োজন ছিল ।আর আমি তখন বিকট চিতকারে কান্নাকাটি শুরু করতাম ।বাবা মাঝে মাঝে বিরক্ত হতো,রাগ করত ।একটাই ঘর তাই মা আমাকে কোলে নিয়ে উঠানে নেমে আসত ।যতক্ষন না ঘুমাতাম ততক্ষন কোলে নিয়ে হাটত ।কখনও কখনও ভোর হয়ে যেত ।আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েই তিনি নেমে পড়তেন দৈনন্দিন জীবনের যুদ্ধে ।
খুব ছোটবেলায় যখন বিছানায় হিসু করে দিতাম ।ঠান্ডা লাগবে বলে মা পাশ বদলে নিজে হিসুর উপর ঘুমিয়ে আমাকে শুকনা জায়গায় রাখতেন । যখন সেই দিকেও নোংরা করতাম মা তখন নিজের বুকে উপর শুইয়ে দিতেন ।আমি দেখতে গাল টিপে আদর করার মতো সুশ্রী নই ।ছোটবেলাও তেমন ছিলাম না ।তাই অহেতুক আদর আহলাদ কারো কাছ থেকেই পেতাম না মা ছাড়া ।তারপর এক সময় ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে ।গোলপাতা সরিয়ে টিনের চালা হয় তারপরও একসময় ছাদের উপর ছাদ হয় ।আমরা ইটের গাথুনী দেয়া চকচকে নতুন বাড়ীতে উঠি ।জন্মের নাড়ী পোতা সেই বাড়ীটি হয়ে যায় পুরানো বাড়ী ।আমার বাবা মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা একেবারেই নাই বললে চলে ।তবে আমার মা সব সময় স্বপ্ন দেখতেন তার ছেলেকে তিনি উচ্চ শিক্ষিত করবেন ।আর্থিক অনটন সত্ত্বেও তিনি আমাকে সব ভাল ভাল স্কুল কলেজে পড়িয়েছেন ।বাবা যখন চাইতেন ছেলে আই এ পাশ করে ব্যাবসায় ঢুকুক মা তখন জেদ ধরেন ছেলেকে আরো শিক্ষিত করবেন ।অবশ্য ততদিনে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে,বেশ ভালো ভাবেই ফিরেছে ।
ছোট ভাইটা মারা যাবার পর আমার বাবার মধ্যে একটা আমুল পরিবর্তন আসে ।যে বাবা প্রতিদিনে ফজরে আমাদের নামাযের জন্য জাগিয়ে নিজে ঘুমিয়ে পড়তেন সেই বাবা এখন তাহজ্জুদ নামায পড়েন ।যাকে হ্বজে করার কথা বললে ইনিয়ে বিনিয়ে এড়িয়ে যেতেন তিনি গতবছর নিজ উদ্দোগেই হ্বজ পালন করে এসেছেন ।আমি ছোটবেলা থেকৈই দেখেছি মা তাবলীগ করেন ।বাড়ীতে মহিলাদের নিয়ে ইসলামী আলোচনা করেন ।আমার মায়ের খুব সুপ্ত একটা ইচ্ছা আছে আমি জানি,তা হলো হ্বজ পালন করা,নবীর রওজা মোবারক জিয়ারত করা ।তিনি কখনও মুখ ফুটে বলেন নি ।এমনকি গতবছর বাবা যখন যান তখনও বলেন নি বললে যদি বাবা আবার টাকার কথা চিন্তা করে নিজের যাওয়াই বাদ দিয়ে দেন তাই ।যারা আমাকে ব্যাক্তিগত ভাবে চেনে তারা জানে আমি কেমন ছন্নছাড়া আর ক্ষেপাটে একটা মানুষ ।দেড় বছর আগে চাকরীর এপোয়েনমেন্ট লেটার ছিড়ে ফেলেছিলাম চাকরী করবো না বলে ।বাড়ী থেকে রাগ করে চলে গেছি বাবার ব্যাবসায় বসব না বলে ।অথচ আজ আমি খুব শান্ত ।আদর্শ মানুষের মতো নয়টা পাচটা ডিউটির স্বপ্ন দেখি ।চাকরী নামক দাসত্বের জীবন গ্রহন করেছি ।শুধু একটাই কারন, আমার মা টাকে আমি আমার নিজের উপার্জনের অর্থ দিয়ে হ্বজ পালন করাবো ।মায়ের দায় কিংবা ঋন শোধ করার কথা বলাও পাপ ।সেটা সম্ভব নয় আমি শুধু চাই আমার মাকে আমি হজ্বের প্লেনে তুলে দেব আর তিনি আমাকে হাত জোর করে বলবে "বাপ বেশী রাইত কইরা ঘুমাইস না ,শরীল খারাপ হইয়া যাবে ।মায়ের জন্য এতটুকো তো করাই যায় !
আগামী কাল মা দিবস ।পৃথিবীর সবগুলো মাকে তার এই সন্তানের পক্ষ থেকে জানাই শুভেচ্ছা ।
২|
১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩
আদনান মাননান বলেছেন: Click This Link
৩|
১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:২২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
প্রতিটি সন্তানের ভাবনাগুলো যেন তোমার মতই হয়। আমার মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করছে। খুব অল্প কথায় বললে বলতে হয় অমানুষিক পরিশ্রম করে আমাদের ৪ ভাই-বোন কে পড়ালেখা করিয়েছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:১২
আরমিন বলেছেন:
ফেসবুকে সকালেই আপনার লেখাটি পড়ে চোখ ভিজে উঠেছিলো, মনে পড়লো ঠিক এক বছর আগে আমিও আমার মা কে নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম!
মামুনিকে ফোন করলাম !
আণ্টিকে সালাম, দোয়া করি আল্লাহ যেনো আপনার মনের আশা পূর্ণ করার তৌফিক দেন! শুভকামনা রইলো ।