নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো আধারির মানুষ আমি , আলো আধারিতেই ডুবে থাকি।

রাজিউল ইসলাম

আমি মানুষ। সবাই তো আর মানুষ হতে পারে না।মানব গর্ভে জম্মিলেই কি মানুষ হওয়া যায়?

রাজিউল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

:| দু কাপ কফি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৯

বৃষ্টি হচ্ছে।
আমি বারান্দায় কফি নিয়ে বসে আছি।বৃষ্টি দেখছি।দুরের ওই কাল মেঘের বিষন্ন কাল রংটাই ধীরে ধীরে ঘিরে রাখতে শুরু করেছে হৃদপিন্ডটাকে।কম্পন বাড়ছে যন্ত্রটার!!

হ্যা,যন্ত্রই তো বটে।যে জিনিসটা এতটা ধকল সহ্য করে আছে সেটা তো একটা যন্ত্রই বটেই।মাঝে মাঝে নিজের নিজের জীবনের প্রতি নিজেরি বিতৃষ্ঞা চলে আসে।রাগ হয় আমার নিজের বেচে থাকার উপরে।

আমার হাতের কফিটা শেষ হয়ে গেছে।
এখন আরেকটা কফি খেতে হবে।
আমার জন্য না।আমার তো কফি খাওয়া শেষ।এই কফিটা অনন্যা'র জন্য।সেদিন বিকেলে আমি যে ওকে কথা দি্যেছিলাম যখন এই বারান্দাটায় বসে কফি খাব তখন ওর জন্যও এক কাপ কফি খাওয়ার।

বৃষ্টি তো প্রায়ই হয়।কিন্তু সেদিনের বৃষ্টিটা ছিল অন্যরকম।

আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা ক্রাইম সিরিজ দেখছিলাম।বৃষ্টি্র দিন গুলোতে কাথা গায়ে দিয়ে ক্রাইম সিরিজগুলো পড়ার মজ়াটাই আলাদা।অন্যরকম একটা ফিলিংস।ঠিক যেন কৈশোরের অদ্ভুত গা শিরশিরানির মত!!

হঠাৎ কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে আমার বুকের উপরে শুয়ে পড়ল অনন্যা।ছোট বাচ্চার মত মত বৃষ্টিতে ভেজার বায়না করতে শুরু করল।

-চলো না গো;একটু ছাদে যাই...

- না ছাদে যাওয়া যাবে না এখন।দেখছ না বৃষ্টি হচ্ছে এখন।বৃষ্টি কমুক তারপর তারপর যাব।কেমন?

-না আমি যাব যাব যাব যাবই।আর এখুখুখুনিনি যাব...

-পরে যাই লক্ষীটি।একটু বস না।আমি আমার এই বইটা শেষ করি।৫ মিনিট লাগবে আমার শেষ করতে...

-তোমাকে আসতে হবে না।তুমি থাক তোমার বই নিয়ে।আমি গেলাম।

এইবার কিন্তু উঠতেই হবে।তা না হলে মহারানী আবার অভিমান করবেন।ওর এই অভিমানটাকেই প্রচন্ড ভয় করি আমি।অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছি মহারানীর অভিমান হলে আমার কপালে খারাবী আছে।একবার তো অভিমান করে পাক্কা তিনঘন্টা কথা বলে নি আমার সাথে।অনেক কষ্টে মহারানীকে কথা বলিয়েছিলাম।

বারান্দায় একা একা দাড়িয়ে ছিল পাগলীটা।দুহাতে হাত দুই কফি নিয়ে বারান্দায় গিয়েছিলাম।কাধের উপরে হাত রাখতেই ফোপানির শব্দ।তারপর আমার বুকে মাথা রেখে আধা ঘন্টা ধরে কেদেছিল পাগলীটা।

আমার হাতের কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে ততক্ষনে।কিন্তু ওই মায়াবী মুখটার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না।

আমার হাতে জুড়িয়ে যাওয়া কফির মগ দেখে মিটি মিটি হাসছিল অনণ্যা।

-অপু চলো, একটা কাথা আর দু কাপ কফি নিয়ে আসি।আজকে না কাথা গায়ে দিয়ে কফি খেতে ইচ্ছে করছে...

আমি কিচ্ছু বলেনি তখন।জানতাম পাগলীটার মাথায় আজ ভুত চেপেছে।ভালবাসার ভুত।
সেদিন চোখে জল চলে এসেছিল।আজও মাঝেমধ্যে কফি খেতে বসলে চোখে জল চলে আসে।তবে ওইদিনেরটুকু ছিল ভালবাসার আর আজকেরটা বেদনার।

সেদিন ছিল অনন্যা আর আমার শেষ একসাথে কফি খাওয়া।এর পর থেকে বারান্দায় দাড়িয়ে একা একা দুকাপ কফি খাই আমি।একটা আমার আর একটা অনন্যার।
সাড়ে তিন মাস আগে বিয়ে করেছিলাম আমরা।অনন্যা বিয়ে করতে চায় নি কিন্তু আমিই ওকে বাধ্য করেছিলাম আমাকে বিয়ে করতে।

তখন আর চারমাস সময় ছিল ওর।অসুখটা ধীরে ধীরে বাসা বাধছিল ওর ভিতরে।আমরা কেউ বুঝতে পারি নি।না ওর বাবা-মা,না আমি।বুঝতে দেয় নি ও।

সেদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে বাবাকে জ়ড়িয়ে ধরে অনন্যা যখন বলেছিল "আব্বু,আমি তো আর কিছুদিনই আছি।এই কটা দিন আমাকে অপুর সাথে থাকতে মানা কর না প্লিজ..." তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারি নি।ছুটে গিয়ে হাত ধরে বলেছিলাম-"আমাকে বিয়ে করবে অনন্যা?"

বিয়েটা আমার আর ওর বাবার জোড়াজুড়িতেই হয়ে গিয়েছিল।প্রতিটা মোমেন্টস আমাকে ওর পাশে চাইত পাগলীটা।আর আমিও সব ভুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যেতাম সবকিছু।

তাপরের কটা দিন ছিল আমার জীবনের সব চাইতে মধুর জীবন।আমি ভুলে গেছিলাম কে আমি?আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল অনন্যার ভালবাসা।

চলে যাবে বুঝতে পেরেই হয়ত সেদিন ওই সাদা বিছানাটার দিকে তাকিয়ে বলেছিল-"অপু,এখন থেকে বারান্দায় দাড়িয়ে কফি খেলে আমার জন্যও এক কাপ খেও কেমন?"
আমি কিছু বলতে পারি নি।বোবা চোখে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।চিতকার করে কাদতে ইচ্ছে করছিল।কিন্তু আমি কাদি নি।ছেলেদের কাদতে নেই।

আমি প্রতিদিন সকালে অফিসের যাওয়ার পথে আগে ওকে একনজর দেখে পাশের কফিশপে বসে একা একা দু কাপক ফি খাই।এক কাপ আমার আর এক কাপ অনন্যার...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.