![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথ ধরে আমরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গমন করি,পথ দিয়েই আমাদের জীবনযাত্রা এগিয়ে চলে। এই পথ কখনো সোজা আবার কখনো বাঁকা, সোজা রাখা হয় দ্রুতগতিতে সহজে এবং স্বল্পসময়ে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য । বাঁকা পথ মূলত খারাপ পথকে বোঝায় যা আমাদের কুপথে পরিচালিত করে থাকে ।তাই মুরুব্বীরা সর্বদাই ছোটদেরকে বাঁকা পথে চলতে নিষেধ করে থাকেন। কথা সত্য ,আমাদের বিশ্বাস বাঁকা পথে শয়তানের বাস , নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি থাকায় সবারই বাঁকা পথের প্রতি আগ্রহ বেশি, এটা প্রথম মানব আদমের সময় থেকেই প্রতিষ্ঠিত । তবে এই বাঁকা পথ সেই বাঁকা পথ নয়, কথা হচ্ছিল চলার জন্য মানুষ কর্তৃক নির্মিত পিচঢালা পথ নিয়ে।চলার পথ যদি বেশি সোজা, মসৃণ আর সমতল হয় তবে তা বাঁকা পথকেও হার মানাতে পারে।
এ নিয়ে এক চালকের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে যিনি এরকম আরামের রাস্তায় চলন্ত গাড়ির সিটে বসেই গভীর রাতে গান শুনছিলেন আর ড্রাইভ করছিলেন। গানটি ছিলো "হাওয়া মে উড়তা যায়ে মোরা লাল দুপাট্রা.......।" শীতল হাওয়ার পরশে তিনি সত্যিই উড়ে উড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন,তারপর কি ঘটেছিলো তার ভাগ্যে ? তার নিজের মুখ থেকেই শুনি:
"হঠাৎ দেখি চারিদিক অন্ধকার , কিছুই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না । গাড়ীর সামনে একটা কুকুর দেখে কুকুরটাকে সাইড দিলাম, আসলো একটা পাগল তাকেও সাইড দিলাম, সবশেষে আসলো একটা কালভার্ট তাকেও সাইড দিলাম।"
অতঃপর কি হলো ? তা আমরা সবাই কমবেশি জানি। ঐ রাস্তা যদি একটু আঁকাবাঁকা থাকতো আর একটু অমসৃণ হতো তবে গাড়িতে কাঁপুনি ধরতো ,তাহলে হয়তো এরকম নিদ্রাতুর হয়ে গাড়ি চালাতে পারতেন না। তাই বড় ব্রীজ ডিজাইন করার সময় এর পথ বা এলাইনমেন্ট একটু বাঁকা রাখার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়,এতে দূর্ঘটনা হ্রাস পায়। আমাদের গ্রামীণ রাস্তা কিন্তু যথেষ্ঠ আঁকাবাঁকা, ড্রাইভার যতই হাওয়ায় ভাসুক আর গান শুনুক তিনি সহসাই গতি বৃদ্ধি করতে পারেন না।
তারপরও এইসব রাস্তাতে কোন দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের চাপের কারণে গতিরোধক নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেক সময় সরকারীভাবে এর ব্যবস্থা না করলেও অতি উৎসাহী জনগণ দূর্ঘটনার স্পটে নিজেরাই যেমন খুশি তেমন স্পিড ব্রেকার বা স্পিড হাম্প মনগড়া ডিজাইনে নির্মাণ করে দিচ্ছেন যা দিয়ে কম উচ্চতার গাড়ি বা মোটরসাইকেল চলাচল করতে কষ্ট হয়, এদের তলদেশে আঘাত লাগে এবং তা এড়ানোর জন্য অনেক যানবাহনকে রাস্তার আড়াআড়ি মুভ করতে হয় যাতে এক চাকা করে ধীরে স্পিড ব্রেকার পার করা যায়।কোন সতর্কতামূলক মার্কিং না থাকায় এগুলো রাতের অন্ধকারে মরণফাদে পরিণত হয়।বিশেষ করে অপরিচিত চালকের জন্য এটা নিশ্চিত আনলাকি থার্টিনে পরিণত হয়।
এগুলো মূলত দূর্ঘটনায় আহত বা নিহত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য এক প্রকারের স্মৃতিসৌধ হিসেবে নির্মাণ করা হয়ে থাকে। কোন স্মৃতিসৌধ যখন আরো সমাধিসৌধ তৈরির অবতারণা করে তখন এইসব স্পিড ব্রেকার নির্মাণ না করাই উত্তম। তাই বলে প্রয়োজনে অবশ্যই নির্দিষ্ট ডিজাইনে তা সংযোজন করতে হবে। বিশেষত পিচঢালা পথ নিজেই যখন এক প্রকার গতি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে তখন দীর্ঘ ক্লান্তিকর সোজা পথে এসবেরও প্রয়োজন আছে।
রাস্তার সাথে মানব জীবনের অনেক মিল থাকার কারণেই রাস্তার মতো জীবনে চলার পথ সোজা আর মসৃণ হলেও নেমে আসতে পারে খারাপ পরিণতি।আমরা ,যারা অতি আবেগপ্রবণ, সর্বদাই চেষ্টা করি সন্তানের ভবিষ্যত চলার পথকে সর্বোচ্চ মসৃণ করে নির্মাণ করার।মসৃণ করতে করতে অনেকক্ষেত্রেই নিজের অজান্তেই তা পিচ্ছিল করে তুলি। এতে সন্তান পরনির্ভরশীল হয়ে পরে এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে হিমশিম খায়। যেমন সন্তানকে ছোটবেলাতে মাত্রাতিরিক্ত টিউটর প্রদান করা বা ছোটবেলা থেকে শারিরীক পরিশ্রমের কাজের সাথে পরিচিত না করা হলে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে উঠে। তাই সন্তানের চলার পথও মাঝে মাঝে বাঁকা বা প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ করে দিতে হয়।
যেমনটি করা হয়ে থাকে আমাদের গণতান্ত্রিক সমাজে শক্তিশালী বিরোধীদলের ভূমিকা ,এখানে বিরোধীদল সরকারের পথকে সর্বদাই বাঁকা বা কন্টকাকীর্ণ করে তোলা, আর সরকারও সেটাকে স্বাগত জানিয়ে বাঁকা পথেই চলেন। কারণ সহজে প্রাপ্য জিনিস সহজেই হারিয়ে যায় ,এটা যেমন টেকসই হয় না তেমনি এতে জয়েরও আনন্দ নেই।এর জন্যেই হয়তো কবিতা আর গানের মধ্যেও বাঁকা পথের জয়গান চলে :
"ওরে হাইলা লোকের লাঙ্গল বাঁকা,
জনম বাঁকা চাঁদ রে ... জনম বাঁকা চাঁদ
তার চাইতে অধিক বাঁকা, হায় হায়
যারে দিসি প্রাণ রে ... দুরন্ত পরবাসী।"
©somewhere in net ltd.