নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের নিগূঢ় সত্যটি হচ্ছে, কখনো এমন কোনো আবেগকে প্রশ্রয় না দেয়া যা অশোভন।

মোস্তফা অভি

আমি ফেরী করি, আমি ফেরীওয়ালা।

মোস্তফা অভি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ঝড়ের রাতে,,,

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৯

একটি ঝড়ের রাতে,,,,
অভি,,
অবসরে কয়েকদিন নীরবে নির্জনে ভেবে কূল কিনারা করতে পারিনা। মনে ভীষণ রকম ভাব আনার চেষ্টা করি। ফেইজবুকে কবিতা পোস্ট করে দু'হাজার যুবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই,- শুধুমাত্র দেখতেই আমি সুন্দরী নয়, মাথায় কবিতা লেখার ভাবও আছে ঢের। রাতে আহার সেরে যখন খাতা কাগজ নিয়ে বসে পড়ি তখন কবিতার লাইন বারংবার মাথায় ঘুরপাক খায় কিন্তু কলমের অগ্রভাগে আর কিছুই আসেনা। অবশেষে ফেবুর কারো কারো ভাব চুরি করে চৌর্যবিদ্যায় নিপুণতার সাথে একটা কবিতা কোনো রকমের লিখে ফেললাম।
পরদিন বাড়ীতে কিসের যোগারযন্ত্র চলছে। আমি কোনোরূপ কিছু বুঝে উঠতে পারিনা। বিকালে মা আমার হাতে একটা শাড়ী কাপর দিয়ে বললেন,- তোমাকে দেখতে আসছে, দেরী করোনা, সেজেগুজে তৈরী হয়ে নাও। আমি অন্দরে ঢুকে মনে মনে এই ফন্দি বের করলাম, বর পক্ষের আমাকে পছন্দ হোক আর না হোক, বরের মুখখানি ভালো করে নীরিক্ষণ করে সাময়িক সময়ের জন্য তার প্রেমে পড়ব। রাতের নিভৃতে সে প্রেমকে মনের উত্তাপে জ্বালিয়ে একটি করুণ রসের কবিতা লিখব। কাল সকালে পোস্ট করে যুবকদিগের মাথা ঘুরিয়ে দেব। হাই হ্যালো করে যখন একটার পর একটা ম্যাসেজ আসবে তখন কায়দা করে উত্তর দিয়ে বুঝিয়ে দেব যাঁরা আমাকে এতদিন সুন্দরী লক্ষ্মী দেবী ভেবছ তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি চেয়ে দেখ, কবি হিসেবেও আমি কতটা সিদ্ধ হস্ত।
রাত গভীর হল, মনে ভাব নিলাম। আকাশ পাতাল এক করে ভাবলাম কিন্তু কবিতার দেবী স্বরস্বতী মাথায় আর ভড় করে না। বার বার ঘুড়েফিরে মনের মধ্যে নদী পাড়ের ঝুপরি ঘরে বসবাসরত কিশোরের কথা মনে আসে। আমার আর সে রাত্রে কবিতা লেখা হয়নি। সারা রাত কিশোরকে নিয়ে বিভোর স্বপ্নে কাটিয়ে দুপুরের আগেক্ষণে ঘুমথেকে উঠলাম।
ঘুমের ঘোর কাটার পরে রাতের স্বপ্নের বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি গদ্য হোক কিংবা পদ্য হোক কিছু একটা লেখার ফন্দি করলাম। বুঝতে পারলাম, বিদ্যাদেবী দূরে কোথাও বসে বিদ্রুপ করছেন। মনে হলো আমি তার অট্টহাসির কলতান কিছুটা শুনতে পেলাম।
পড়ন্ত বিকেল প্রতিদিনের থেকে অনেকটা সুপ্রসন্ন মনে হল। কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা বাদ দিয়ে ক্যামেরা সম্বলিত মোবাইলটা নিয়ে বাড়ীর পশ্চিম দিকের বাগান অভিমূখে যাত্রা করি। ডজন খানেক ভঙ্গিমা করে ছবি তুললাম। তার কোনটিতে নিজকে রাজ কন্যা, কোনটিতে বাগানের সুন্দর ফুল বলে মনে মনে আবিষ্কার করলাম। অবশেষে ফেরার পথে শরীরের বসন কিছুটা আলগা করে নিজকে নতুনরূপে ছবির মাঝে দেখতে পেলাম। মনে মনে এই বলে কিছুটা সহাস্যে কৌতুক বোধ করলাম, এবার ছবিখানা পোস্ট দিয়ে নবীন, তরুন, যুবকের হৃদয় স্পর্শ করে বয়ো:বৃদ্ধ গোছের ফেবু পুরুষের মনে যৌবনের উন্মাদনা জাগিয়ে তুলব। এই ছবির দিকে তাকিয়ে যুবক বৃদ্ধের মনে উত্তাপ বাড়বে। কমেন্টস বক্সে রাশি রাশি রোমান্টিক ভাব জমা হবে। হাজার লাইক আসবে। বন্ধু মহলে আমার সমাদর এবং কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।
সন্ধ্যার আগেক্ষণেই দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর ঝড় শুরু হলো। নদী পাড়ের ঝুপরি ঘরের বসবাসরত কিশোর পরিবার আমাদের ঘরে আশ্রয় নিল। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ের বেগ তুমুল আকার ধারণ করে। নদীর বাঁধ ছুটে জোঁয়ারের পানি প্রবল বেগে জন বসতিতে যাত্রারাম্ভ করে। মধ্য রাতের পূর্বেই আমাদের ঘরের চালা ছুঁই ছুঁই পানি হয়ে গেল। একটা দমকা হাওয়ায় ঢেউ তুলে খুঁটির থেকে আমাকে আলাদা করে কিশোরের বুকের দিকে ধাবিত করল। রাতের অন্ধাকারে ঢেউ আমাদের দুজনকে কোথায় নিয়ে গেল তা অনুমান করতে পারিনি। রাতের শেষ ভাগে তীব্র ঠান্ডার মাঝেও শরীরে কিছুটা উত্তাপ অনুভব করি। প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ের বেগ আমাদের কোথায় নিয়ে গেছে তা আমি জানিনা। জ্ঞান ফিরে দেখি জামা কাপর ছেঁড়া অর্ধনগ্ন অবস্থায় কিশোরের বুকের উপর শুয়ে আছি। নিজের শরীর আবৃত করার ব্যস্ততায় লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে দিলাম। শরীরে অন্য রকম কিছু একটা অনুভব করলাম। মনে হল ঝড়ের রাতের প্রভাতের আগেক্ষণে আরেকটি ঝড় আমার শরীরের উপর বয়ে গেছে। শরীরে বয়ে চলা ঝড়ের সাথে ইতো:পূর্বে আর পরিচিত হইনি। কিশোর কোথায় চলে গেছে সেদিকে আর খেয়াল করিনি। বুঝতে পারলাম, বাবা মা আর কেউ বেঁচে নেই। আমি গাছের গুড়ি ডলপালা সড়িয়ে নিজের ভিটায় চললাম। ঘরহীন উন্মুক্ত ভিটায় একা মেঘময় আকাশে তাকিয়ে রইলাম।
একদিন যে রূপের আলোর বিচ্ছুরণ চারদিক আলো করে যুবক ও মধ্য বয়সীদের হৃদয় আলোকিত করত। সে রূপ এখন আর নেই। শরীরের যেসব ভাজে যৌবন উঁকি দিত সেখনে মলিনতার কালো দাগে ভরে গেছে। মুখের লাবন্য কোথায় হারিয়ে গেছে সে আজ ইতিহাস। বুকের সুঢৌল গঠণ নমিত হয়ে যেন বুকের সাথে সমান হয়ে লেপ্টে গেছে। মলিন বস্ত্রে নিজর একুশ বছরের যুবতী বেশকে ত্রিশের পরের গৃহ পরিচারিকার ন্যায় আবিষ্কার করলাম।
জগতে এমন কিছু দান আছে যা আমরা কখনো ফিরিয়ে দিতে পারিনা, দান গ্রহণ করার সময় পরিনতির কথা কেউ ভাবিনা। তবে সেই দান একদিন এসে আমাদের এমন হেনস্থা করে তোলে তখন মনে হয় এমন দান গ্রহণ না করলেই ভালো হত। কিশোরের ছেলে আমাকে মা মা বলে উতলা করেছে। তাকে আর খুঁজে পাইনি। সেই যে চলে গেছে আজও তার কোনো প্রকান সন্ধান পাই নি। একজন কুমারী মা হয়ে জগৎ সংসারে কোলের শিশুকে বুকে চেপে অপেক্ষা করছি।
জীবনে কবি হওয়া আমার হয়ে ওঠেনি। মোবাইল সেই ঝড়ের রাতে কোথায় গেছে আর খোঁজার চেষ্টা করিনি। কিশোরের অপেক্ষায় এক পিতৃহীন শিশুকে বুকে নিয়ে সমাজের গঞ্চনা সহ্য করে বেঁচে আছি। কিশোর কোনদিন ফিরবে কিনা সে কথা হলফ করে পাঠক মহোদয়কে বলতে পারিনা।
অভি,,,
বরিশাল,
৩০.১১.১৬[link||view this link]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৮

মোস্তফা অভি বলেছেন: মন্তব্য করে অবশ্যই মতামত জানাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.