নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এমএল গনি

এমএল গনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেশাজীবীদের জবাবদিহিতা ও লাইসেন্সিং =

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৪৭

কানাডাসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফার্মাসিস্ট, নার্স, স্কুল শিক্ষক, এবং এজাতীয় অনেক পেশাজীবীদের নিজ নিজ পেশায় কাজ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ হতে লাইসেন্স বা, অনুমতি নিতে হয় | তার মানে, কেউ একজন এমবিবিএস পাশ করলেন বলেই চেম্বার খুলে রোগী দেখা শুরু করে দেবেন, বা বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন বলেই পাবলিক স্কুলে মাস্টারি শুরু করে দেবেন, ব্যাপারটা তেমন না | প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের পর রেগুলেটরি বোর্ডের কাছে পেশাজীবী হিসেবে কাজ করার জন্য লাইসেন্সের আবেদন দাখিল করতে হয় পৃথকভাবে | তাঁরা শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনা করে দেখার পর সব শর্ত পূরণ হলে তারপরই কেবল লাইসেন্স ইস্যু করেন | কোনো পেশাজীবীর একাডেমিক ডিগ্রীগুলোকে দেহের সাথে তুলনা করলে তাঁর প্রফেশনাল লাইসেন্সকে প্রাণ বলা যেতে পারে |


একজন আবেদনকারীকে পেশার শুরুতেই নিজ পেশায় দায়িত্বপালনের ফুল লাইসেন্স, বা অবারিত ক্ষমতা দিয়ে দেয়া হয় না | প্রথমে কয়েক বছরের জন্য শিক্ষানবিস বা, প্রভিশনাল লাইসেন্স, এবং এভাবে ধীরে ধীরে একসময় সম্পূর্ণ লাইসেন্স দেয়া হয় | প্রভিশনাল লাইসেন্স দেয়ার পরে এ পেশাজীবির কর্মকান্ডের উপর নজর রাখা হয়, যাতে অপেশাজীবী কোনো আচরণ তাঁকে দিয়ে না ঘটে | একটা দৃষ্টান্ত দেই এখানে | আমার সহধর্মিনী এখানে (কানাডা) একজন লাইসেন্সড স্কুল টিচার | টরোন্টোর এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর নানা পদক্ষেপ পেরিয়ে তাঁর পুরো লাইসেন্স পেতে তিন বছর লেগেছে | প্রাইভেট স্কুলগুলোর (যেমন, ইসলামিক বা, ক্যাথলিক স্কুল) নিয়ম আলাদা; তবে, পাবলিক স্কুল বোর্ডের অধীনে শিক্ষকতা করতে গেলে এ লাইসেন্স সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক | প্রাইভেট স্কুলে নিয়ম শিথিল করার কারণ হলো, সেখানে এতো কড়াকড়ি আরোপ করলে ওই বিশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে |

একই কথা একজন প্রকৌশলীর ক্ষেত্রেও খাটে | প্রফেশনাল লাইসেন্স না থাকলে একজন প্রকৌশলী আইনের দৃষ্টিতে তাঁর নামের আগে প্রকৌশলী শব্দ ব্যবহারই করতে পারেন না, তা তিনি যতোবড়ো ডিগ্রিধারীই হউন | কেউ করলে তা প্রফেশনাল মিসকন্ডাকট বা, পেশাগত অসদাচরণের পর্যায়ে পড়ে | এ ছাড়া প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার সীল না থাকলে একজন প্রকৌশলী কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ডকুমেন্টেও স্বাক্ষর করতে পারেন না | প্রফেশনাল লাইসেন্সিং এর মর্যাদা বা, ক্ষমতা এমনই |

কোনো পেশাজীবী কতোটা পেশাদারিত্বের সাথে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব দেশে | সেকারণে পেশাজীবীদের বাড়তি সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে হয় যাতে নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটে | এতোকিছুর পরেও অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি যে হয় না তা নয় | কোনো পেশাজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তা তাঁর রেগুলেটরি বোর্ড পর্যালোচনা করে দেখে দ্রুততম স্বল্প সময়ে | অনিয়ম বা, দোষত্রুটির গুরুত্ব বিবেচনা করে রেগুলেটরি বোর্ড ওই পেশাজীবীকে নানা মাপের "শাস্তি" দিতে পারে | যেমন, তাঁকে অন্য কোনো প্রফেশনালের তত্বাবধানে কিছুকালের জন্য কাজ করার আদেশ, সাময়িকভাবে লাইসেন্স স্থগিত করে এ অবসরে কোনো কোর্স সম্পন্ন করার নির্দেশনাপ্রদান, বা স্থায়ীভাবে লাইসেন্স বাতিল করতে পারে | এতো কাঠখড় পুড়িয়ে অর্জন করা লাইসেন্স কোনো কারণে বাতিল হয়ে গেলে বুঝুন মনের অবস্থা!

খুলনার গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ গাজী মিজানুর রহমানের প্রফেশনাল প্র্যাকটিস'এর ধরণ দেখে দেশবাসীকে সচেতন করতে এ পোস্ট লেখার বিষয় মাথায় এলো | আজকের "আমাদের সময়" পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে একটা রিপোর্ট বেরিয়েছে যা পড়লে দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ধারণা পাওয়া যায় | এ ডাক্তার তাঁর সহকর্মী ডাক্তারদের নিয়ে হেন্ অপকর্ম নাই তাঁর ক্লিনিকে করছেন না | যেমন, বিনা কারণে রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা, আইসিইউ'তে রেখে টাকা আদায়, অননুমোদিত ব্লাড ব্যাংক চালানো, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ, আরো কতো কী | ডিগ্রির পাশাপাশি প্রফেশনাল লাইসেন্সিং এর ব্যবস্থা থাকলে এদের অপেশাদারী কর্মকান্ড রোধ করা অনেক সহজ হতো | দেশের অন্যসব পেশাজীবীদের অবস্থাও যে এর চেয়ে উত্তম কিছু তা কিন্তু নয় | তা নিয়ে বলতে গেলে এ লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে |

বাঙালি বড়ো অনুকরণপ্রিয় জাতি | উন্নতদেশের নাটক-সিনেমা, কালচার হতে শুরু করে অনেক কিছুই বাংলাদেশকে কপি, বা নকল করতে দেখা যায় | এমন কি, বিদেশের স্টাইলে ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে বিবাহ বহির্ভুত যৌনসম্পর্ক বা, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড'এর কালচারও নাকি চালু হয়ে গেছে | কিন্তু, অজ্ঞাতকারণে উন্নতদেশের মতো রেগুলেটরি বডি গঠন করে পেশাজীবীদের লাইসেন্স প্রদান, তথা, তাঁদের জবাবদিহিতায় আনার বিষয়টি কোনো সরকারই অনুকরণ করেন না | প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলাদেশে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,... এসব পেশাজীবীদের নিবন্ধনের জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই তা নয় | তবে, এদের যথাযথ কর্তৃত্ত্ব বা, আইনি ক্ষমতা না থাকায় তারা কেবলই বাহুহীন ঠুঁটো জগন্নাথ | তাই, মাঝে মাঝে ক্ষমতাসীনদের পা'চাটা হবার নির্বাচন, "মিলনমেলা' বা "শাড়ি-গয়না প্রদর্শনীর" আয়োজনের বাইরে এদের করার তেমন কিছু থাকে না |

প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীদের বড়ো অংশই যেহেতু সরকারের দেয়া পদপদবী, পুরস্কার সম্মাননা, পদক, ইত্যাদি গ্রহণ করে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, তাই, দেশের সচেতন সাধারণ মানুষকেই এসব পেশাগত অব্যবস্থাপনা নিরসনের জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি তুলতে হবে; আর, তা এখনই ..

ML Gani on Facebook
October 12, 2016

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৪৮

অর্বাচীন শহর বলেছেন: বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রফেশনাল লাইসেন্স দেওয়ার বিধান আছে । যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের ডিপার্টমেন্ট অনুমোদিত সেখান থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়াররা নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ব্যাবহার করতে পারবে । তারাই হচ্ছে সরকার অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়ার । The Institution of Engineers, Bangladesh (IEB) এদের অনুমোদন করে । বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েট , রুয়েট , কুয়েট , চুয়েট , আহসানউল্লাহ ইউনিভারসিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনলজি , ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি(ইউআইইউ) , ইউনিভারসিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক , অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) এর প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট IEB অনুমোদিত অর্থাৎ তাদের প্রকৌশল বিভাগের গ্রেজুএটরা ইঞ্জিনিয়ার । এছাড়া আরওকিছু ভার্সিটি আছে তাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট IEB অনুমোদিত ।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৫৯

এমএল গনি বলেছেন: বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে প্রচুর নয়ছয় হয়; ব্রিজ ভেঙে যায়, বিল্ডিং ধ্বসে পড়ে ..| এসব কারণে আইইবি কখনো কোনো ইঞ্জিনিয়ারের লাইসেন্স বাতিল বা এমন কিছু করেছে বলে কখনো কি শুনেছেন? আমি শুনিনি | আইইবি'র পক্ষে বর্তমান কাঠামোতে এ ধরণের ব্যবস্থা নেয়া সম্ভবও নয় | কারণ, তাদের সেই আইনি ক্ষমতা নেই | চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এক্ট'এর মাধ্যমে আইইবি'কে সে ক্ষমতা সরকারের পক্ষ হতে দিতে হবে | তাই, বর্তমানে আইইবি কেবল নামেই | সেকারণে আইইবি'র অনুমোদনও খুব বড়ো কোনো অর্থ বহন করে না | আশা করি, বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি | ধন্যবাদ আপনাকে |

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৫৪

এমএল গনি বলেছেন: বাংলাদেশে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,... এসব পেশাজীবীদের নিবন্ধনের জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই তা নয় | তবে, এদের যথাযথ কর্তৃত্ত্ব বা, আইনি ক্ষমতা না থাকায় তারা কেবলই বাহুহীন ঠুঁটো জগন্নাথ | তাই, মাঝে মাঝে ক্ষমতাসীনদের পা'চাটা হবার নির্বাচন, "মিলনমেলা' বা "শাড়ি-গয়না প্রদর্শনীর" আয়োজনের বাইরে এদের করার তেমন কিছু থাকে না |

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.