নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খোলা জানালা

ঘুম হ্যাপি

রাত দু গুনে চৌদ্দ

ঘুম হ্যাপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডিম

২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৮

(অ্যান্ডি উইয়ার এর লেখা “দি এগ” গল্পের বাংলা অনুবাদ। মূল রচনাঃ Click This Link)





যেদিন তুমি মারা গেলে সেদিন তুমি তোমার বাড়ি ফিরছিলে।



তুমি একটা কার দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলে। সাধারণ একটা দূর্ঘটনা, কিন্তু তোমার আঘাতটা মারাত্মক ছিলো। তুমি স্ত্রী এবং দুই সন্তান রেখে গিয়েছিলে। মৃত্যুর সময় তুমি খুব বেশি ব্যথা পাওনি। হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সরা মিলে তোমাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বিশ্বাস করো – তোমার শরীর এমনভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো যে তোমার জন্যে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াটাই ভালো হয়েছে।



এরপরই তোমার সাথে আমার দেখা হয়



“কী… কী হয়েছে?” তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে। “আমি কোথায়?”

“তুমি মারা গিয়েছো,” আমি নিরাবেগভাবে বললাম। এটা কথা নিয়ে খেলার সময় ছিলোনা।

“একটা… একটা ট্রাক আসছিলো এবং সেটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এগিয়ে আসছিলো…”

“হ্যাঁ,” আমি বলেছিলাম।

“আমি… আমি মারা গিয়েছিলাম?”

“হ্যাঁ। কিন্তু এটা নিয়ে মন খারাপ কোরো না। সবাইকেই মরতে হয়,” আমি বলেছিলাম।



তুমি চারদিকে একবার চোখ বুলালে। চারদিকে ছিলো শুধু শুন্যতা। শুধু তুমি আর আমিই ছিলাম সেখানে। “এটা কোন জায়গা?” তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে। “এটাই কি মৃত্যুর পরের জীবন?”

“সেটা বলতে পারো,” আমি বলেছিলাম।

“তুমি কি ঈশ্বর?” তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে?

“হ্যাঁ,” আমি জবাব দিয়েছিলাম। “আমি ঈশ্বর।”

“আমার সন্তানরা… আমার স্ত্রী,” তুমি বলেছিলে।

“কেন, তাদের কী হয়েছে?”

“ওরা কি ভালো আছে? ওরা আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে?”

“আমি এটাই দেখতে চেয়েছি,” আমি বলেছিলাম। “তুমি এই মাত্র মারা গেলে আর তোমার প্রথম চিন্তা হচ্ছে তোমার পরিবার নিয়ে। চমৎকার।”

তুমি খুশি হয়ে আমার দিকে তাকালে। তোমার কাছে আমাকে ঈশ্বর মনে হচ্ছিলো না। আমাকে একজন সাধারন মানুষ মনে হচ্ছিলো তোমার কাছে। হয়তো পুরুষ, কিংবা মহিলা। কোনো শক্তিশালী কেউ যাকে তুমি চেননা। কিংবা একজন স্কুল শিক্ষক, কিন্তু কোনোভাবেই ঈশ্বর নয়।

“চিন্তা কোরোনা,” আমি বলেছিলাম। “তারা ভালো থাকবে। তোমার সন্তানদের কাছে তুমি একজন চমৎকার মানুষ হয়ে থাকবে। তারা এখনো মানুষ হিসেবে তোমার দোষত্রুটি বুঝার মতো বড় হয়নি। তোমার স্ত্রী তোমার জন্যে অনেক কাঁদবে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে আসলে একটা বিশাল ভারমুক্ত হবে। সত্যি কথা বলতে কি – তোমাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়ছিলো। জানিনা এটা শুনে কি তুমি খুশি হবে কিনা – কিন্তু তোমার স্ত্রী ভারমুক্ত হবার কারণে নিজেকে দোষী ভাববে।”

“ওহ্‌,” তুমি বলেছিলে। “তাহলে এখন কী হবে আমার? আমি কি বেহেশতে যাবো নাকি দোজখে যাবো?”

“তুমি বেহেশত বা দোজখ এর কোনোটাতেই যাবা না,” আমি বলেছিলাম। “তোমাকে আবার জন্ম দেয়া হবে।”

“ওহ্‌,” তুমি বলেছিলে। “তাহলে হিন্দু ধর্মের কথাই ঠিক,”

“সব ধর্মই আসলে তাদের মতো করে সত্যি,” আমি বলেছিলাম। “হাঁটো আমার সাথে।”



তুমি আমার সাথে সাথে হাঁটতে শুরু করেছিলে। “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

“বিশেষ কোথাও না,” আমি বলেছিলাম। “আমার হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে ভালো লাগে।”

“তাহলে ঘটনা কী দাঁড়ালো?” তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে। “আমি যদি আবার জন্ম নিই তাহলে সবকিছুই আবার শুন্য থেকে শুরু হবে? একটা নবজাতক শিশু হয়ে আমি জন্ম নিবো। অতএব আমার এই জীবনের সব অভিজ্ঞতার কোনো মূল্য থাকবেনা।”

“সেটা ঠিক না,” আমি বলেছিলাম। “তোমার মধ্যে এই মুহুর্তে তোমার অতীত সব জীবনের অর্জিত সব জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আছে। শুধু তুমি এই মুহুর্তে সেগুলো মনে করতে পারছোনা।”

আমি হাঁটা থামিয়ে তোমার কাঁধে হাত রাখলাম। “তোমার আত্মা আসলে তোমার কল্পনার চাইতেও অনেক বড়, সুন্দর, এবং মহান। মানুষের মন আসলে তার সম্পূর্ণ সত্ত্বার একটা ক্ষুদ্র অংশ ধারণ করতে পারে। এটা অনেকটা একটা গ্লাসে একটা আঙ্গুল রেখে দেখার মতো যে গ্লাসের পানি ঠান্ডা না গরম। তুমি তোমার একটা ক্ষুদ্র অংশ সেখানে ছোঁয়াও, এবং এরপর যখন তুমি সেটা বের করে আনো এর সবকিছু ততক্ষনে তুমি জেনে যাও।

গতো ৪৮ বছর ধরে একজন মানুষের জীবন যাপন করছো কিন্তু তুমি এখনো তোমার অস্তিত্বের একটা বড় অংশ দেখতে পাওনি। আমরা যদি এখানে দীর্ঘ সময় ধরে থাকি, তাহলে তুমি আস্তে আস্তে সব মনে করতে পারবা। কিন্তু তোমার বিভিন্ন জীবনের মাঝখানে এটা করার কোনো মানে হয়না।”

“আমাকে কতোবার জন্ম দেওয়া হয়েছে?”

“অনেক বার। অসংখ্য বার। একেক বার একে ধরণের জীবন তোমাকে দেয়া হয়েছে।” আমি বলেছিলাম। “এবার তোমাকে ৫৪০ খ্রিস্টাব্দের এক চীনা কৃষক মেয়ে হিসেবে জন্ম দেওয়া হবে।”

“দাঁড়াও, কী বললে?” তুমি তোতলাতে তোতলাতে বলেছিলে। “তুমি আমাকে সুদূর অতীতে পাঠিয়ে দিচ্ছো?”

“টেকনিকালি সেটা তুমি বলতে পারো। তোমরা যেটাকে সময় বলো সেটা শুধু তোমাদের জগতেই আছে। আমি যেখান থেকে আসছি সেখানে সময়ের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।”

“তুমি কোথা থেকে আসছো?” তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে।

“আমি কোনো এক জায়গা থেকে আসছি। অন্য কোনো জায়গা থেকে। এবং আমার মতো আরো অনেকে আছে। আমি জানি তোমার জানতে ইচ্ছা করবে আমাদের জায়গাটা কেমন কিন্তু বিশ্বাস করো তুমি সেটা বুঝবেনা।”

“ওহ্‌,” একটু মন খারাপ করে তুমি বলেছিলে। “কিন্তু… আমি যদি বিভিন্ন সময়ে এভাবে জন্ম নিয়ে থাকি তাহলে হয়তো এক সময় আমার নিজের সাথে আমার দেখা হয়েছে?”

“অবশ্যই। এটা প্রায়ই ঘটে থাকে। কিন্তু যেহেতু তোমার সেই জীবনগুলো প্রত্যেকে নিজের জীবনকাল এর বাইরে কিছু জানেনা তারা জানেওনা যে তারা আসলে একই ব্যক্তি।”

“কিন্তু এসব কিছুর মানে কী?”

“হাহা, তুমি আমাকে জীবনের মানের কথা জিজ্ঞেস করছো?” আমি বলেছিলাম। “সবাই কি জানতে চায়না তাদের জীবনের মানে কী? উদ্দেশ্য কী?”

“কিন্তু এটা একটা খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন,” তুমি তোমার প্রশ্নে অনড় থাকলে।

আমি তোমার চোখের দিকে তাকালাম। “জীবনের মানে হচ্ছে, এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে তুমি পরিণত একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারো।”

“তুমি বলতে চাচ্ছো মানবজাতির কথা? তুমি চাও পুরো মানবজাতি পরিণত হোক, বুদ্ধিমান হয়ে উঠুক?”

“না, শুধুমাত্র তুমি। আমি এই পুরো বিশ্বজগৎ শুধুমাত্র তোমার জন্যে বানিয়েছি। একেকটা জীবন পার হওয়ার পর তুমি আরো পরিণত হয়ে উঠো, আরো বুদ্ধিমান, এবং প্রজ্ঞাবান হয়ে উঠো।”

“কেবল আমি? বাকি সবার কী হোলো?”

“আর কেউ বাকি নাই,” আমি বলেছিলাম। “এই বিশ্বজগতে আছি শুধু আমি আর তুমি।”

তুমি হতবুদ্ধের মতো আমার দিকে তাকালে। “কিন্তু পৃথিবীর আর সব মানুষ…”

“তারা সবাই আসলে তুমি। তোমার ভিন্ন ভিন্ন জন্ম।”

“দাঁড়াও… পৃথিবীর সবাই আসলে আমি?”

“এইতো তুমি বুঝতে পারছো,” আমি বলেছিলাম তোমার পিঠ চাপড়ে।

“পৃথিবীতে যতো মানুষ জন্ম নিয়েছে তারা সবাই আমি?”

“এবং ভবিষ্যতে যারা নিবে তারাও…”

“আমি আব্রাহাম লিংকন?”

“এবং তুমিই তার আততায়ী জন ওয়াইলক্স বুথ,” আমি যোগ করেছিলাম।

“আমি হিটলার?” তুমি অবিশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে।

“এবং তুমিই সেই লক্ষ লক্ষ মানুষ যাদেরকে হিটলার মেরেছিলো।”

“আমি যিশু খ্রিস্ট?”

“এবং তুমিই তার সব অনুসারী খ্রিস্টান মানুষ।”



তুমি কথা হারিয়ে ফেলেছিলে। “যতোবার তুমি কাউকে আঘাত করেছো তুমি আসলে নিজেকেই নিজে আঘাত করেছো। মানুষের প্রতি দেখানো তোমার সব ভালোবাসা আসলে তুমি তোমার প্রতিই দেখিয়েছো। পৃথিবীতে জন্ম নেয়া প্রতিটি মানুষের সব সুখ আর দুঃখের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এক সময় তুমিও যাবে।”

তুমি দীর্ঘ সময় নিয়ে ভাবলে।

“কেনো?” তুমি জিজ্ঞেস করলে। “এসব কিছু করার কী দরকার ছিলো?”

“কারণ – একদিন তুমি আমার মতো হয়ে যাবে। সেটাই তোমার আসল পরিচয়। তুমি আমাদেরই দলের। তুমি আমার সন্তান।”

“কী বললে?” তুমি চরম অবিশ্বাস নিয়ে তাকালে। “তুমি বলছো আমি ঈশ্বর?”

“না, এখনো না। তুমি এখনো একটা ভ্রূণ। সে ভ্রূণ এখনো বড় হচ্ছো। যখন তুমি সব কালের সব মানব জন্ম পার করবে, তখন তোমার জন্ম নেয়ার সময় হবে।”

“তাহলে এই পুরো বিশ্বজগৎ,” তুমি বলেছিলে, “এটা শুধু…”

“একটা ডিম।” আমি বলেছিলাম। “এখন তোমার পরবর্তী জীবন শুরু করার সময় হয়েছে।”



এবং এরপর আমি তোমাকে তোমার গন্তব্যের পথে পাঠিয়ে দিলাম।



(কালেক্টেড)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৪

এহসান সাবির বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪২

ঘুম হ্যাপি বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: অনুবাদ প্রাঞ্জল হয়েছে :)

আচ্ছা , আমার শেষ পোষ্টে আপনি মন্তব্য করেছেন অফলাইনে আমার প্রোফাইলে শো করল । কিন্তু সকালে লগইন করে মন্তব্যটা আর দেখতে পাচ্ছি না ! B:-) B:-)

ভালো থাকবেন ।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০০

ঘুম হ্যাপি বলেছেন: অনুবাদ টা ও কালেক্টড।


(-_-)(-_-)। সার্ভারের সমস্যার কারনে হতে পারে। ধন্যবাদ

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৫২

এহসান সাবির বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল।

৬| ২৩ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯

সুলতানা রহমান বলেছেন: ভাল লাগলো।

৭| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৪

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: নিন্মলিখিত লিখাটি সমাজ সচেতনতায় পড়ুন এবং শেয়ার করুণঃ

http://www.somewhereinblog.net/blog/mrahim04/30112183

ধন্যবাদ।

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

ঘুম হ্যাপি বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৮| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮

নকীব কম্পিউটার বলেছেন: নাইস

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬

ঘুম হ্যাপি বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৯| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৩২

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: গভীর দার্শনিকবোধসম্পন্ন একটি গল্প। শুনেছি সাধনার এক পর্যায়ে নাকি মনেহয় আমিই তিনি, তিনিই আমি।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৫২

ঘুম হ্যাপি বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.