নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার আমি ছাত্র

ঘুটুরি

একজন অতি সাধারন

ঘুটুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি

২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:১২



গুনে গুনে পাক্কা ২৫ মিনিট পেড়িয়ে গেছে, তবু আবু মিয়ার কোনো খোজ খবর নেই, অথচ তাকে বলা হয়েছে খিদায় পেটে ছুচো ডাকছে, ডাল ভাত যা ই আছে যেন তাই এক্ষুনি দিয়ে দেয়া হয়। আবু মিয়া বলে গিয়েছিল একটু বসেন ভাইজান, অক্ষুনি নিয়া আইতেসি। বলে উধাও। উধাও বলতে একেবারে তার কোনোরকম জোড়াতালি দেয়া খাবারের দোকান থেকেই উধাউ। দোকানে কর্মচারি তিন জন। একজন বাবুর্চি ( প্রায় ৪০-৪২ বয়স), একজন থালাবাটি ধোয়া মুছা করে আরেকজন খাবার পরিবেশন করে ( পিচ্চি, নাম বুলেট)
বুলেট কে বললাম,
- আবু মিয়া কই, খাবার দিচ্ছিস না কেন?
উত্তরে, -ওস্তাদ কই গেসে, জানিনা। আপ্নের খাওন দিতে না কইরা গেসে।

মেজাজ খারাপ হচ্ছে হোসেনের।

আবু মিয়ার ভাতের হোটেলে কালেভদ্রে যাওয়া হয়, বেশির ভাগ সময়ে মাসের শেষের দিকে। যখন ই যাওয়া হয়, তখনি সে আমার জন্য নিজের ঘরে আলাদা রান্না করে, নিজের ঘরে বসিয়ে খাওয়ায়। প্রতিবারই কোনভাবেই আমার না সে শোনে না, আজ খুব ক্ষুধা লেগেছে, অনুরোধ করেছিলাম, ওই আয়োজন যেন না করে, নিজের কাছেও কেমন কেমন জানি লাগে। কিন্তু আবু মিয়া ঠিকই উধাও। হোটেল থেকে আবু মিয়ার বাসা কয়েক কদম দূর৷ হোটেলের যাবতীয় কাজ কর্ম বাসা থেকেই হয়।

টিনের চাল দেয়া, কোনোরকম বেড়া দিয়ে ঘর তোলা হয়েছে। মূল ঘর থেকে একটু আলাদা করে ছোট খুপরি করে আরো একটি ঘর। ওখানে আবু মিয়ার বৃদ্ধ বাবা থাকেন, বয়স প্রায় ৭০ এর মতন, একদম সাদা দাড়ি আর জলজলে দু চোখ। কথা কম বলেন।আবু মিয়া, তার বউ আর এক স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট মেয়ে নিয়ে মূল ঘরে আবু মিয়ার ছোট্ট সংসার।

পাক্কা ৩৫ মিনিট পর আবু মিয়া হাজির, হোসেন প্রায় বের হয়েই যাচ্ছিল, আবু মিয়া এসে খপ করে ধরল,
-আরে ভাইজান, মেজাজ খারাপ করসেন? আসেন খাওন রেডি
- আবু, তুমি খুব বাড়াবাড়ি কর, বললাম আজ বাদ দাও
- কি যে কন, কই বেসি বেসি করি, আসেন না, বেসি কিচ্চু করি নাই ত ভাইজান, বুজচি খিদা লাগসে বেসি, হইয়া গেসে ত, আসেন ঘরে আসে।
মুখ ভর্তি হাসি মাখা মুখ নিয়ে এমন আবেদন উপেক্ষা করার শক্তি হোসেনের নেই। এগিয়ে চলল আবু মিয়ার ঘরের দিকে।
আয়োজন বেশি কিছু না, খিচুরি মুরগীর তরকারি, মরিচ এই। ঘি এর গন্ধ। হোসেন আসলেই এই বাড়িতে একটু ভাল রান্না হয়। আবু মিয়ার মেয়ে পরিপাটি হয়ে বসে অপেক্ষা করছে, খুব খিদা তার ও লেগেছে। হোসেন দেরী করল না। হাত মুখ ধুয়ে এসেই বসে পড়ল। আবু মিয়া এখন খাবে না। আবু না বসলে, তার বউ ও বসবে না। সুতরাং খাবারের সাথি হোসেন আর আবুর মেয়ে। আবুর বাবা দড়জার বাইরে বসা।
টেবিল ফ্যান টা ঘড় ঘড় করে চলছে, আবুর মেয়ের মুখে হাসির ঝিলিক, আবুর মুখে আত্ন তৃপ্তি। খাবার নেবার আগেই মন ভরে গেছে তাদের, হোসেন দেখছে, ভালো লাগছে।
গোগ্রাসে খেল হোসেন, বেশ খুদা লেগেছিল, মাসের শেষ, টাকা পয়সা একদম কম, আবু জানে। গ্লাসে পানি ঢেলে দিতে দিতে আবুর বউ বলল
- ভাইজান আরেকটু নেন
-উহু আর সম্ভব না।
পানির গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিল হোসেন, সেই সময়েই
বাবা, খাইসেন ঠিক মত?
আবুর বাবার কন্ঠটা তীক্ষ্ণ হয়ে কানে বাজল হোসেনের।
আহ, বাবা ডাক। কতদিন পর।
-জি খেয়েছি।
গামছা এগিয়ে দিতে দিতে আবু বলল
-ভাইজান বেসি কিসু করবার পারি নাই
- যথেষ্ট করেছ আবু, আমি শুধু তোমাকে ভেজালে ফেলি
- না, ভাইজান,কথা এইডা সত্য না।
- তাহলে সত্যি কি? বলতো আবু
- ভাইজান, আমাগো হয়ত অনেক কিছুই নাই, কিন্তু আমরা এক সাতে আসি, ভাল মন্দ মিলাইয়া, ভাগযোগ কইরা সান্তিতেই আসি, এক লগে কোন কিসুই ভেজাল না।
-হুম, আসি আবু, ভালো থেকো

হোসেন বের হয়ে আসতে আসতে আবুর বাবার দিকে তাকায় একবার, মনে পড়তে থাকে আবছা কিছু স্মৃতি,
বাসের জানালার বাইরে দিকে মুখ বের করে, কাচা পাকা দাড়ি নিয়ে একটা মানুষ খুব করে বলে যাচ্ছে........

ভালো থাকিস বাবা, আই এম সরি বাবা, ভালো থাকিস।

হোসেনের চোখ আবছা, হয়ত হোটেলের রান্নার ঝাজের কারণে অথবা অসংগত, অযথা ভাবনার অন্য কোন কারনে।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:২৫

শায়মা বলেছেন: হোসেনের বাবা কোথায়?

২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৪৩

ঘুটুরি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। আছে কোথাও হোসেনের বাবা। দেখি হোসেন কখনো বলে কিনা!

২| ২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৪৬

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া তোমার এই নিকের কারণ কি??

মানে নামাকরণের সার্থকতা বলো ... :)

২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১০

ঘুটুরি বলেছেন: ঘুটুরির আভিধানিক অর্থ যেটা আছে সেটা হোলো “ঘুটুরি একটি নিম্ম শ্রেণিদের বসবাসের ঘর বিশেষ”। তবে আমার নিজের নামকরনের পেছনে যে ব্যাখা তা বলছি, ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়াই, ঘাট বলতে এখানে আমি জীবন যাত্রায় প্রতিটি ঘটনা, স্থান, অভিজ্ঞতা থেকে শিখবার চেষ্টা করি। সামু ব্লগে আমি প্রচুর কিছু শিখছি, ব্লগের লেখা গুলি আমার কাছে এক একটি ঘাটের মত, আমি সেই ঘাট গুলিতে ঘুরে ঘুরে বেড়াই আর এই নামে এক প্রিয়জন আমায় ডাকে তাই ই আমি ঘুটুরি।

৩| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:০৯

নৃ মাসুদ রানা বলেছেন: আয়োজন বেশি কিছু না, খিচুরি মুরগীর তরকারি, মরিচ এই। ঘি এর গন্ধ। হোসেন আসলেই এই বাড়িতে একটু ভাল রান্না হয়। আবু মিয়ার মেয়ে পরিপাটি হয়ে বসে অপেক্ষা করছে, খুব খিদা তার ও লেগেছে। হোসেন দেরী করল না। হাত মুখ ধুয়ে এসেই বসে পড়ল। আবু মিয়া এখন খাবে না। আবু না বসলে, তার বউ ও বসবে না। সুতরাং খাবারের সাথি হোসেন আর আবুর মেয়ে। আবুর বাবা দড়জার বাইরে বসা।

অসাধারণ লাগলো...

২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১১

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: আরেকটু ডিটেইলে হলে ভালো হতো। আবু মিয়া অহেতুক খাওয়াবে কেনো বোঝা গেলো না।

২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩২

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। আসলে হোসেন চরিত্রটির, কারনবিহীন অনেক গুলি চরিত্রের সাথে পরিচয় আছে। আমার পূর্বের লেখাগুলি যদি কিছু সময় হয় বা যদি খানিক অবসরে পড়ে দেখবার অবকাশ হয়ে তাহলে দেখতে পাবেন। অনেক সময় শেকড়বিহীন সম্পর্কগুলি অনেক গভীর হয়। আবু মিয়ার সাথে হোসেনের এমন ই কিছু সম্পর্ক। কিভাবে পরিচয় হোলো, কেন খাওয়ালো আসলে আমি এসব বেশি গুরুত্ত দিতে চাইনি। আলো ফেলতে চেয়েছি তাদের আন্তরিকতায়, তাদের নিখাদ সম্পর্কে।
আমি জানিনা আমি ঠিকমত আমার বক্তব্য বোঝাতে সক্ষম হয়েছি কিনা। সামনে আমার চেস্টা থাকবে আরো পরিস্কার করে উপস্থাপন করবার।

৫| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩০

মা.হাসান বলেছেন: হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো— বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেবো
কালীদহে বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।

২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৪২

ঘুটুরি বলেছেন: দারুন লাগল লাইনগুলি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৬| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৪১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা

২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৪২

ঘুটুরি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৭| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


এ্যাবসট্রাক্ট?

২৮ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫২

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। আশা রাখছি সুস্থ আছেন। জি এবস্ট্রাক্ট

৮| ২৮ শে জুন, ২০২০ সকাল ৮:১২

আমি সাজিদ বলেছেন: হোসেনের বাবা কোথাও চলে গেছিল?

২৮ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৮

ঘুটুরি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। মানুষের জীবনে কত কিছুইতো ঘটে। কত মানুষ আসে আবার চলেও যায়। হোসেনেরও একধরনের স্মৃতিচারন করার ঘটনা তুলে ধরবার চেষ্টা করেছিলাম। অনেক সময় অনেক স্মৃতি মনে স্লাইড এর মত করে অতিক্রম করে। হোসেনেরও এমন একটা চলে যাবার স্মৃতি মনে পড়বার ঘটনাই এইখানে তুলে ধরবার প্রয়াস হয়েছে।্

আপনার প্রোফাইলের ছবির সাথে আমার প্রোফাইলের ছবির মিল আছে। চায়ের কাপ!

৯| ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৩

আমি সাজিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগার আপনাকে। আমার এই ছবিটি আমার অসম্ভব প্রিয় একটি ছবি। আমার ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়ার পেছনে থেকে তোলা দৃশ্য ছবিটা।

আপনার ছবির পেছনের গল্পটা শুনতে চাই।

২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৬

ঘুটুরি বলেছেন: আমি একজন ভ্রমনপ্রেমিক। বাইকিং এক ধরনের নেশা আমার। মোটরবাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়ে বেড়াতে ভালো লাগে। ছবিটা আসাম বস্তি রোড, রাঙামাটিতে এ তোলা। এই রোড ধরে যেতে থাকলে পথের পাশে খানিক বসার জায়গা আছে, আর আছে একটা খুপড়ীর মত চায়ের দোকান। সামনে কর্নফুলি। সারারাত বাইক জার্নি শেষে এককাপ চা খেতে খেতে ছবিটা তোলা হয়েছিল। আমার খুব প্রিয় একটা জায়গা।

১০| ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৭

আমি সাজিদ বলেছেন: অদ্ভুত সুন্দর নেশা আপনার। ছবিটিও খুব সুন্দর।

২৮ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০২

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ

১১| ২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ঘুটুরির আভিধানিক অর্থ জেনে ভালো লাগলো।

২৮ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০২

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ

১২| ০১ লা জুলাই, ২০২০ রাত ৮:০৩

মিরোরডডল বলেছেন:



বেশি কিছু না মানে, এতো বিশাল আয়োজন । খিচুরি মুরগীর তরকারি, মরিচ, ঘি আর কি চাই, অমৃত !

হোসেন আর বাবার মাঝে আছে এক অদৃশ্য বন্ধন যেটা হোসেন ভীষণ মিস করে ।
মায়ার বাঁধন থেকে দূরে থাকা , ভুলে থাকা সবচেয়ে কঠিন ।

কোথাও অনাত্মীয়র কাছ থেকে পাওয়া আন্তরিকতা অথবা ভালোবাসা মনে করিয়ে দেয় সত্যিকার সম্পর্কের অপূর্ণতা । যেটা পাবার জন্য মন হয়ে থাকে অস্থির ।

০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪৮

ঘুটুরি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। প্রতিবারের মতই আপনার বিশ্লেষন অসাধারন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.