নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চোখে অঞ্জলি নামের কি যেন একটা উঠেছে, তাই ভালভাবে পাতাটা পর্যন্ত ফেলতে পারছে না হোসেন। চোখ বুজে থাকলে শান্তি মত লাগে, কিন্তু চোখ বুজে থাকলে পথ চলা তো আর সম্ভব নয়। আধোখোলা রেখেই জমজমাট এক বাস স্ট্যান্ড এর সামনে এসে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছে৷ সন্ধ্যা থেকে হাটতে হাটতে এখন রাত প্রায় ১১ টা৷ ক্ষুধা পেয়েছে বেশ, টং দোকানে এক কাপ চা আর বাসি রুটি অর্ডার দিয়ে, বেঞ্চি তে বসে আছে৷
সিরিয়াল ধরে তিনটি বাস দাঁড়ানো। তিনটি বাস একি গন্তব্যে যাবে। সিডিউল মিস করায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও এখন একই সাথে। কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়ত ছেড়ে যাবে। মাঝবয়সি লোক একজন নিচে দাঁড়িয়ে প্রায় তরুনী মত একজন কে কখনো পানির বোতল, কখনো চিপ্স এর প্যাকেট,খানিক বাদে আচার কিনে কিনে দিচ্ছে, সম্ভবত স্ত্রী হবে লোকটার। নিজে হয়ত যাচ্ছে না, বিদায় বেলায় মুখ কালো করে আছে বিদায় বিরহে।
আহা! সব বিরহই কস্টের নয়, কিছু বিচ্ছেদ মধুর ও বটে।
আরেকটু সামনে একজন প্রায় বৃদ্ধ মত একজন লোক।সুঠাম দেহ। বয়সের ছাপ প্রকট নয়। তার সাথে মাঝ বয়সি একজন তরুন। দুজনে দাঁড়িয়ে কথপোকথন চলছে৷ সম্ভবত বৃদ্ধ টি বাসে যাত্রা করবে, তরুন বিদায় জানাতে এসেছে। মনে হচ্ছে অভিমান পর্ব চলছে। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না।কিন্তু কথপোকথন চলছে। সম্পর্কটা বাবা ছেলের বলে মনে হচ্ছে। অনেক মাল পত্র নিয়ে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ কিছু কথা হয়ত হচ্ছে। দুজন ই কথা বলার মধ্য দীর্ঘ বিরতি নিয়ে কথা বলছে, যেন মনে হচ্ছে অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু বলতে পারছে না। স্কুলে কাছের বন্ধুরা যেমন কাধে হাত দিয়ে ঠেশ দিয়ে দাড়াত, লোকটা ঠিক তেমনি হয়ত ছেলের কাধে হাত দিয়ে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সুপার ভাইজার এসে তাড়া দিতেই ব্যস্ততা বেড়ে গেল দুজনের, একি ভাবে অস্থিরতা বেড়ে গেল সেই হয়ত সামী স্ত্রীর।
এখন বিচ্ছেদ পর্ব।
হোসেন বেঞ্চে এ বসে দেখছে, বাস একটু একটু করে এগুচ্ছে। মধ্য বয়সী লোকটাও একটু একটু করে মাথাটা উচু করে জানালার দিকে তাকাতে তাকাতে এগুচ্ছে, কি কি যেন বলছে, দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা কেবল আচ্ছা, আচ্ছা বলে যাচ্ছে৷ সুতোয় টান পড়ছে, কি যেন ছিড়ে চলে যেতে চাইছে। মাঝ বয়সি তরুণ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, বৃদ্ধ লোকটি বাসের দরজাতেই দাঁড়ানো, সুপারভাইজার বলেই চলেছে স্যার গিয়ে বসেন, অনুরোধ সত্তেও দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। চারিদিকে এত কোলাহল কিন্তু এই দুইজন মানুষের যেন শীতল নিরবতা, যেন কোন শব্দ আর নেই, কেবল তাকিয়ে থাকা ছাড়া। বাস এগুচ্ছে, মধ্যবয়সি এবার একটু জোরে হাটছে, তরুন দাড়িয়েই আছে, কেউ কাউকে দেখছে না
দুটি বাস ছেড়ে চলে যাচ্ছে, বাসস্ট্যান্ডের শত শত লোক জনের ভীরে মাথা উচু করে বাসের দিকে তাকিয়ে হাটতে থাকা লোকটা হঠাৎই আছড়ে পড়ে তরুনের গায়ের ওপর। দুজনেই ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে, কিন্তু তবুও তাকিয়ে থাকে বাস গুলির দিকে, যতক্ষন না অদৃশ্য হয়ে যায় চোখ থেকে।
সুতো ছিড়েই গেল।
-মামা চা লন
- মামা রুটি টা লন।
ক্ষুধা কেন জানি মরে গেছে হোসেনের। কিছু না বলেই চা, রুটি ফেলেই উঠে হাটা শুরু করল। কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে।
পেছন থেকে দোকানদার বলে উঠছে।
- কি মামা, চা খাইবেন না? কইলেই তো পারেন, টেকা নাই, নস্ট হইব না এখন, বিল দিয়া যান।
হোসেন নিরুত্তাপ, নিরুত্তর। বিল?
জীবনের বিল ই কত পাওনা থেকে গেছে, আর চায়ের বিল।
পকেট হাতরে, খুচরো বের করে মিটিয়ে দিয়ে হাটতে শুরু করে আবার। অঞ্জলির ব্যাথার কারনে হয়ত চোখ ভিজে যাচ্ছে না। পেছনে বাস স্ট্যান্ড, কোলাহল, আবেগ, বিরহ ছুয়ে ছুয়ে যায় কেবল।
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১০
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
২| ২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০২
আহমেদ জী এস বলেছেন: ঘুটুরি,
সুন্দর বলেছেন -- জীবনের কতো বিলই তো পাওনা থেকে গেছে ...................
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১০
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৩| ২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৮
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আমিও মানুষ দেখি, দু:খ সুখ অনুভূতি খুঁজি
জীবনের কত বিল পাওনা থেকে গেছে হুমম
সুন্দর লিখেছেন
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১০
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৪| ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি ভালো লাগলো।
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩২
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪
মিরোরডডল বলেছেন:
ঘুটু এতদিন পর !!!
কোথায় ছিলো এতদিন । সেই করোনার শুরু থেকে হাওয়া ।
সবকিছু ঠিক আছেতো ?
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৮
ঘুটুরি বলেছেন: বেচে আছি এখন পর্যন্ত। মরে যাইনি যে তারই জানান দিয়ে গেলাম এই আর কি
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:৩২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর লেখনী ।