নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরো একটা বর্ষা গেল, শরৎ, হেমন্ত চলেই গেল৷ শীত ও যাই যাই করছে, অথচ সেই রাত জাগা মানুষটার কোনো দেখা নেই। এই যে ফুটপাথের কোল ঘেষে হাটত, ল্যাম্পপোস্ট টার নিচে কখনো দাঁড়িয়ে থাকত, কখনো বসে থাকত, আজ অনেক দিন হোলো মানুষটার দেখা নেই। গলির মুখে চায়ের যে দোকান ছিল, দোকানটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে কি যেন সুপার শপ ধরনের কিছু হবে। এসব টং দোকান চলবে না। চা দোকানী প্রতিদিন দোকান বন্ধ করবার আগে অপেক্ষা করত, মানুষটা আসবে, এসে বলবে, এককাপ কড়া লীকারে চা বানাও তো, এটুকুই কথা। অপেক্ষায় থাকত দোকানী টা। আসবে আসবে বলে ৩০ মিনিট বেসি অপেক্ষায় থাকত,কিন্ত মানুষটা আসত না। যেদিন দোকান টা উঠিয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবে সেদিন খুব করে মনে চাইছিল আজ মানুষটা আসুক। চা না খাক, অন্তত একবার দেখা দিক। মানুষটা রাতে শুধু তার দোকানেই চা খেত, অমন করে স্পেশাল চা আর কে বানিয়ে দেবে? মানুষটা না এলো না। এরপর ও নতুন জায়গায় দোকান বসানোর পরও বাড়ি ফিরবার সময় আগের জায়গায় কিছুক্ষন দাড়াত, যদি দেখা হয়ে যায়। না তাও দেখা মেলে না মানুষটার। হারিয়েই কি গেল? দীর্ঘশ্বাস লম্বা হয়।
মতি মিয়া রাতের ট্রিপ বের হয় প্রতিদিন, একটা হতাশা কুড়ে কুড়ে খায়, মানুষটার কই? রিকশায় চড়ে কত কথা হোতো। সুখ দুখের, জীবনের, ভালোবাসার, মানুষটা কথা বলত কম, কিন্তু যতটুকুই বলত, খুব সুন্দর বলত। প্রতিদিন দেখা হোতো না। শহরের এই গলি অই গলিতে হঠাৎই দেখা মিলত, যেন এক রাতের পাখি খুজে পেত আরেক রাতের পাখি কে। আজ বহুদিন হয় মানুষটার দেখা নেই। এ কারনেই মতি মিয়ার মায়ায় জড়াতে ভালো লাগে না। বাধন ছিড়ে গেলে কস্ট পেতে ভালো লাগে না। লাগবেই বা কেন, ব্যাথা পেতে কার ই বা ভালো লাগে। তাছাড়া ব্যাথার জায়গায় সামান্য ছোয়াও পুরোনো ব্যাথাকে তার ইতিহাস সহ জাগিয়ে তোলে। জেগে ওঠা ওই জোয়ারে ভাটা আর নামতে চায় না।
পাড় ভাংতে ভাংতে কত কিছু বিলীন হয়ে যায়, তবু কোথাও নতুন পাড় গড়ে না। এ কারনেই মায়ার বাধনে জড়াতে ভাল লাগে না
কিন্তু এই মানুষটার জন্য কিভাবে যেন একটা টান জমে গেছে। ধুর! এই প্রকৃতি না এমন এক জাদুকর, তার খেলা বোঝা এই মানুষের পক্ষে সম্ভব না। সময় বদলায়, বদলায় মানুষ। আচ্ছা মানুষ কি আসলেই বদলে যায়? আজ যে মানুষ, গতকাল ও কি সে আজকের মত ছিল? বা আগামিকাল ও কি সে আজকের মত থাকবে? আচ্ছা এত ভেবে কি লাভ, বদলে গেলেই বা ক্ষতি কি? কেন বলি বদলে গেছে? আসলে কি বদলায়? ব্যবহার? চিন্তা ভাবনা? দৃস্টিভংগি? "আমি আগের মত আছি, তুমি বদলে গেছ" কি বদলে গেছি। সময় কি নিয়তই বদলে যাচ্ছে না, যে সময় চলে যাচ্ছে আর যাকে আমরা অতিবাহিত করছি এই যে সময়কালটা, তা আমাদের বদলে দিচ্ছে বলেই তো সময় পার হয়ে যাচ্ছে, বদলে যাওয়াটাই যেখানে নিয়তি সেখানে বদলে যাওয়াতে কি দোষ? এমন অদ্ভুত সব প্রশ্ন নিয়ে যুবক টা আসত, চিন্তা ভার চেহারা নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকত, আমি প্রায় ই খোকা বলে কাছে টেনে আনতাম, জিজ্ঞেস করতাম, অনেক প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলত, কত সময় পেরিয়ে যেত এভাবে। যুবকটা আজ অনেকদিন দেখা দেয় না। না আমি আশায় নেই, আশা, বাধন, মায়া কিছুই আমায় টানে না। শুধু ভাবি, যুবক টি তার প্রশ্নের উত্তর যথার্থ পেল কি না? না পেলেও কিছু আসে যায় না আমার। সে কেবল ই আমার কাছে এক অভ্যাস, আবশ্যিকতা নয়।
আজ বেশ কয়েক মাস ৬ তলার ভাড়াটে বাসা ভাড়া দেয় না। অথচ নামমাত্র ভাড়ায় চিলেকোঠা টা ভাড়া দেয়া। এই সামান্য টাকাটাও দিচ্ছে না। মানুষের এই এক সভাব। সহমর্মিতা বোধ কে নিজের অধিকারবোধ বানিয়ে ফেলে। বাসা ছাড়ার আল্টিমেটাম দিতে হবে এখন।
চোখদুটির নিচে কালি পড়ে গেছে, চোয়াল বের হয়ে এসে চেহারায় রুক্ষ একটা ভাব, ঘোর লাগা চোখ দুটি লাল হয়ে আছে। প্রথম দর্শনেই মনে হবে বোধহয় মাদকাসক্ত। শরীরের প্রতি চরম অবহেলার প্রতিফলন সরুপ এমন হাল। সমাজে বাস করে অসামাজিক প্রানি হয়ে বেচে থাকে কিছু মানুষ। মনে পড়ে স্কুলে থাকতে সামাজিক বিজ্ঞানে অমুক বিজ্ঞানী সমাজ বলতে বুঝিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে লিখতে হোত।সেই বিজ্ঞানি বেচে থাকলে এই মানুষ নামের সামাজিক প্রানির অবস্তা দেখে কি বলতেন কে জানে? কখনো কখনো মানুশের ব্যাং এর মত শীতনিদ্রার প্রয়োজন হয়। সবাই অবশ্য বোঝে না। জীবনের যাতাকলে প্রাত্যাহিক নিদ্রাই যেখানে দুস্প্রাপ্য সেখানে আবার শীতনিদ্রা! জীবন যেখানে সর্বক্ষন তার হিসাব বুঝে নিচ্ছে সেখানে হিসাববীহিন বেচে থাকতে হলে এক্টাই উপায়, সবার কাছে মরে গিয়ে নিজের কাছে বেচে থাকা।
যার বাধন যত কম, তার শীতনিদ্রা দেবার সুযোগ বেশি। দড়জায় অনেকক্ষন কড়া নাড়ার শব্দ হচ্ছিল। যুবকের গভীর ঘুম ভেদ করতে পারে নি সেই কড়া নাড়ার শব্দ। যেন জাগতিক কোন কিছুই তাকে জাগাতে পারবে না, সেচ্ছায় জেগে ওঠা ছাড়া। সন্ধ্যা পার মধ্যরাত্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সময়, যে দু চোখে ঘোর লেগে ছিল সে দু চোখ হঠাৎই চোখ মেলে উঠল যেন বহুকাল বিস্রাম নেয়া হয়েছে, ঘুম ভেংগে যাবার পর আবার যে ঘুমানোর ইচ্ছে জাগে, যুবকের তা জাগছে না। শরীরে কেমন যেন জাগরনের ডাক৷ আধশোয়া হয়েই জানালা দিয়ে দেখল রাত্রির রুপ। বাইরে কোলাহল কম, তার মানে মাঝরাতের কাছাকাছি এখন, শীত শীত করছে।রাস্তা ডাকছে। কতদিন, আহ কতদিন পর।
গলির মাথায় মনা মিয়া ধীর প্যাডেলে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ বড্ড কুয়াশা, ঠিক ঠাক দেখা যাচ্ছে না সব কিছু, গলির মুখে একটা অবয়ব দেখে ধক করে উঠল মনা মিয়া, পরিচিত চলার ধরন, পরিচিত শরীরের গঠন, দ্রুত এগিয়ে গেল, তবে কি! ফিরে এলো?
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০১
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য।
২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১৪
মিরোরডডল বলেছেন:
চা দোকানির মতো আমরাও কিন্তু অনেকদিন হোসেনকে দেখি না ।
মায়ায় যত কম জড়ানো যায়, ততই মঙ্গল ।
মায়ার মোহে পরা মানেই কষ্ট পাওয়া ।
সময় আলাদা করে বদলায় না , সময়ের সাথে মানুষ বদলায় ।
হ্যাঁ মানুষ আসলেই বদলে যায় । আর একজনের এই বদলে যাওয়া আরেকজনের জীবনে ভীষণ প্রভাব ফেলতে পারে ।
স্পেশালি যে বদলায় না তার জন্য এটা মেনে নেয়া অনেক কষ্টের ।
বদলে যাওয়া দোষের কিছু না যদি না সেই বদলে যাওয়ায় অন্য কেউ সম্পৃক্ত থাকে ।
সময়ের প্রয়োজনে মানুষ বদলায় ।
সে ফিরে এলো কিনা জানিনা কিন্তু যাক এট লাস্ট ঘুটু ফিরে এসেছে, এটাই শান্তি ।
ওয়েলকাম ব্যাক ঘুটু । আবার ডুব না দিয়ে লেখা কনটিনিউ করা হোক ।
কতদিন আমরা ঘুটুর এই গভীর আবেগি লেখাগুলো পড়ি না ।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:০৭
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য। ফিরে আসবে হোসেন। দারুন প্রতিউত্তর দিয়েছেন হোসেনের প্রশ্নগুলির। আশা রাখছি লেখা কনটিনিউ হবে।
৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: মতি এবং মনা মিয়ার গল্প ভালো লাগলো।
০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪৪
ঘুটুরি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য
৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৪
মেহেদি_হাসান. বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে
০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪৫
ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য, অনুপ্রানিত হলাম
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: জীবনের সরল ও বাস্তব ছবি।এই আমাদের জীবন, মানব জীবন।