নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার আমি ছাত্র

ঘুটুরি

একজন অতি সাধারন

ঘুটুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্টেশন

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩১



ভালো ঘুম হয়েছে। শরীর থেকে ম্যাজম্যাজে ভাবটা আর নেই৷ শরীর ভালো তো মন ও ভাল। বহুদিন পর একটা সপ্ন ও দেখা হয়েছে আজ৷ সপ্নটা এমন, ট্রেনে দুলুনিতে চা খাচ্ছি। বগির জানালা দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। মাঝে মাঝে দুলুনি বেশি হচ্ছে কাপ উপচে চা পড়ে যাবার উপক্রম হচ্ছে।

ওভাবেই চা খেতে হবে, ভারসাম্য রেখে। ১০টা বাজে মাত্র। রেলস্টেশনের দিকে আজকের যাত্রা শুরু। ওখানে গিয়েই মুগডাল আর পরোটা দিয়ে নাস্তা সাড়ার ইচ্ছে। মাঝে মাঝে মুগডালের মধ্য মুরগীর দুই একটা ছিটে ফোটা পাওয়া যায়। ভালোই লাগে খেতে। রেলস্টেশন পৌছে, নাস্তা শেষ করতে করতে প্রায় দুপুর ১২ টা মত বেজে গেল। এখন এক কাপ চা খেতে খেতে ট্রেনে চড়ে কোথায় যাবে তা ঠিক করা হবে। চিন্তা করবার জন্য যথেষ্ট সময় আছে। কারন ট্রেন আসা বা ছেড়ে যাবে ২টা থেকে ৩টার মধ্য। অবশ্য গন্তব্য নির্ধারনের থেকে ট্রেন দেখে পছন্দ করাটা একটু জটিল। এক এক ট্রেনের এক এক নাম। যেটা পছন্দ হবে সেটাতেই উঠে পরবে হোসেন।
ফাকা রেলস্টেশন দেখতে ভালো লাগছে। মাথার ভেতরটাও কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে। প্লাটফর্ম গুলো কেমন পরিস্কার। একটু পরেই লোকে লোকারন্য হবে, হয় গন্তব্যর দিকে যাত্রা শুরু হবে অথবা গন্তব্যে এসে পৌছাবে। মাঝে কত স্টেশন পেড়িয়ে যাবে, কত সীমানা, কত মানুশ উঠবে, নামবে।

এই ট্রেনটাই একটা জীবন। এক জীবনে কত মানুষ আসে, যায়, ক্ষনিকের জন্য অথবা শেষ গন্তব্য পর্যন্ত। রেললাইনের ওই সমান্তরাল লাইনের মত। একটা ব্যবধান রেখে চলার মত।অনেক দূর পর্যন্ত দেখলে মনে হয় এক বিন্দুতে মিলিয়ে গেছে। আসলে না। কখন ও মিলে যায় না। যে মিলনে ধবংস অনিবার্য, সে মিলনে ব্যবধান রেখেই চলতে হয়।

এই ট্রেন জিনিস টা দারুন, সবাই কে গন্তব্যে পৌছে দেয়, কিন্তু নিজের কি আদৌ কোনো শেষ ঠিকানা আছে? এই স্টেশনে স্টেশনে ক্ষনিকের থাকা, এই চলে যাওয়া, বগি ভর্তি করে একগাদা অপেক্ষা, সপ্ন কে গন্তব্যে পৌছে দেয়া ছাড়া আর কিছু নেই। ভাগ্যিস ট্রেনের অনুভূতি বলে কিছু নেই। নইলে একটা প্রশ্ন করা যেতে পারত। এই ছুটে চলাই কি জীবন। কোথাও প্রহর না গুনে থেমে থাকার কি অর্থ নেই।
যাক গে।
স্টেশন ভীড় বাড়ছে। ফাকা স্টেশন টা ক্রমেই লোকে লোকারন্য হয়ে যাচ্ছে। যাত্রি ছাড়াও , জীবিকার তাগিদে আরো অনেক মানুষ আসছে।
ঝালমুড়িওয়ালা,
আইস্ক্রিমওয়ালা,
পেপার ওয়ালা,
চকলেট আর চিপসওয়ালা
সিদ্ধডিম ওয়ালা
পান, বিড়ি, সিগারেট সাথে ফ্লাক্স ভর্তি লাল চা।
খাজা,মোয়া।
হঠাৎ একটা ডাক, সবার থেকে ভিন্ন।
"দো... লো... না...... এই দোলনাআআআ, সব দুলবেএএএ...
নেবেন দো... লো... না...."
হোসেনের মনে হচ্ছে, তার ভেতরে আসলেই সব দুলছে, ট্রেনের দুলুনির মত। এই দোলনা ওয়ালার ডাকে একটা কিছু আছে। সবাই তাকাচ্ছে, কিন্তু দোলনা কিনার ইচ্ছে নেই কারোর ই।

হোসেন বসে বসে, ট্রেনের বগি গুনছে। সব বগির সামনেই ভীর। একজনের বিদায়ে একের বেশি মানুষ। দেখে মনে হোলো সব বিদায় ই নিভৃতে হয়না। একান্তে বিদায় সহজ কোনো ব্যাপার না।
একদল সদ্য তরুন, দল বেধে হয়ত বেড়াতে যাচ্ছে, পুরো বগি মাত করে রেখেছে। এই হাসছে, গান গাইছে, একে অপরের সাথে মজা করছে, সিগারেটের প্যাকেট স্টক করছে, ট্রেনে বগির দরজায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়াটা একটা আর্ট এর পর্যায়ে পড়ে। বাতাসে চুল উড়বে, আগুন বাচিয়ে সিগারেটের ধোয়া উড়ানো একটা বিশেষ ভাব পর্যায়ের মধ্য পড়ে হয়ত।

এক বগি পড়ে, সাদা শার্ট পড়া এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় কাঠিন্যে। দূর থেকে ভাংগবো তবু মচকাবো না এমন একটা ব্যাক্তিত্ত বহন করছে বলে অনুমান করল হোসেন। যুবকের সামনে ব্যাগ। জানালায় এক তরুনী। আধখানা মুখ বের হয়ে আছে, হোসেন যেখানে বসা সেখান থেকে পুরো চেহারা দেখা যায় না। হাতে সোনার চুড়ি, মিলিয়ে যাবার আগে মেহেদির যেমন একটা ফ্যাকাশে ভাব থাকে ঠিক তেমন। ছেলের বাম হাতে, ঘড়ি, চেইনের বেল্ট, ঝিলিক দিচ্ছে, আংটি। খুব সম্ভবত সদ্য বিবাহিত। হয়ত বিদায় দিতে এসেছে। যুবক বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, তরুনীর চোখে চোখ রেখে কথা না বলে, উত্তর দিচ্ছে যথাসম্ভব কাঠিন্য ধরে রেখে।
যুবক টা খুব সম্ভবত কিছু লাগবে কি না বার বার জিগ্যেস করছে, আর প্রতিবার ই মেয়েটা অসম্মতি জানিয়া জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে যুবকের হাত আকড়ে ধরে থাকতে চাইছে। আর কিছুক্ষন। হোক না বিদায়ের কালে খানিক সান্নিধ্য।
হুইসেল বাজিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন এসে লাগল বগির সারির সাথে।
ট্রেন খানিক এগিয়ে আসে, আর এগিয়ে আসতেই সেই জানালা হোসেনের চোখের সামনে পড়ে। স্টেশন এ এখন বেশ তাড়াহুড়ো, একটু পড়েই ছেড়ে যাবে, কারো কারো কাছে হয়ত বিদায় বা কারো কাছে গন্তব্যে পৌছানোর আবেগ। কুলি গুলি তাড়াহুড়ো করে মালপত্র তুলে দিচ্ছে, ওই দল বেধে কোলাহল করে রাখা তরুনগুলির উত্তেজনা বাড়ছে। যুবক তরুনীর দিকে খানিক তাকিয়ে কি যেন আনতে বলার কথা বলে চলে গেল দ্রুত।
হোসেন তরুনীর মুখ দেখতে পারল, সবকিছু ছাপিয়ে যেন মুখমন্ডলে এক অভিব্যক্তি ফুটে উঠছে " মানুষটার কি আবেগ বলে কিছু নেই? একটু ও কি খারাপ লাগছে না ছেড়ে থাকতে?"
যুবক দ্রুত ফিরে এলো। হাতে পানির বোতল, জানালা দিয়ে দিতেই ট্রেন ছেড়ে দিল।
একটু ধীরে ধীরে, দুরত্ব বাড়ছে, একটু করে। যুবক দাড়িয়েই।
গতি আগের থেকে একটু বাড়ছে।
দূরত্ব বেড়েই চলেছে।
যুবক দাঁড়িয়ে।
তরুনী তখনো তাকিয়েই।
হোসেন ভাবছে, সে ট্রেনে উঠবে কি না।
চা খাবার কথা ট্রেনে উঠে। অজানা কোনো গন্তব্য এ যাবার কথা। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, সাদা শার্ট পড়া যুবক পেছনের সারির এক বগিতে দৌড়ে উঠে পড়ছে।

হোসেন পা বাড়াল, জানেনা এই ট্রেনে তার ওঠা হবে কিনা। তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। কোনো স্টেশন নেই, তাই পৌছাবার কোনো তাড়াও নেই অথবা যেখানে পৌছাবার কথা সেখানে অপেক্ষায় কেউ নেই
তাই কোনো তাড়াহুরো ও নেই

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: হোসেন এঁর সমস্যা কি?
তার কি ঘর বাড়ি নেই। পরিবার নেই?

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো

কেমন যেন বুকের ভিতর ফাঁকা ফাঁকা লাগে এমন গল্প পড়লে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.