নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার আমি ছাত্র

ঘুটুরি

একজন অতি সাধারন

ঘুটুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন সুখী মানুষ

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৪



রাত। নগর ঘুমালো মাত্রই। সারাদিনের কোলাহলের পর একরাশ নীরবতা।

হাল্কা শীত শীত ভাব, দিনের বেলায় অতটা বোঝা যায় না। খানিক কাচুমুচু হয়ে দুহাত দিয়ে গরম চায়ের কাপ নিয়ে উষ্ণতা নিতে নিতে এদিক ওদিক দেখছে। ফাকা রাস্তা। রাস্তার বিভাজকে একজন প্রায় মধ্যবয়স্ক লোক বসে আছে হাত পা ছড়িয়ে। পোশাকে রুচির ছাপ৷ ঘটনা কি? ছিনতাই এর ভুক্তভোগী নাকি অসুস্থ? বোঝা যাচ্ছে না ঠিক। স্থির হয়ে বসে আছে প্রায় অনেকক্ষন।
হোসেন ধীর পায়ে আগাতে থাকে। লোকটির সামনে এসে দাড়ালো। লোকটা একবার মুখ তুলে তাকিয়ে আবার নামিয়ে নিল।
হোসেন এবার জিজ্ঞেস করে
- আপনার কোনো সমস্যা?
- আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে, ভাত খাওয়াতে পারেন?
এমন উত্তর অবশ্য আশা করেনি হোসেন। পরক্ষনেই ভাবল, আশা করাটাই আসলে বোকামি হয়েছে। জীবনটাই যেখানে আশায় বাধিনু ঘর বেদনার বালুচরে সেখানে আশা আর কতক্ষন টেকসই হবে।
- চলুন।
লোকটি কোনো উত্তর না দিয়েই উঠে দাড়ালো, হোসেনের পিছু পিছু হাটা শুরু করল। সারা রাস্তায় আর কোনো কথা নেই।
মতি মিয়ার দোকান সারা রাত ই খোলা থাকে। মতি মিয়ার দোকানে ঢুকতেই মতি মিয়া হুকুম জারি হোলো কর্মচারির দিকে
- ২টা খানা লাগাও।
হোসেন বলল, যান হাত মুখ ধুয়ে আসুন।
লোকটি হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বসে পড়ল। আয়োজন তেমন কিছু নয়। সরিষার তেল মাখা আলু ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, ধনিয়া পাতা আর পাচফোড়নের ডাল, আর একদম গরম ভাত।
লোকটি খাচ্ছে, খুব সুন্দর করে গুছিয়ে, একপাশ থেকে মেখে মেখে, কোন খাবার প্লেটের বাইরে পড়ছেও না। তাড়াহুড়ো নেই। খাবারের মাঝে হোসেন জিজ্ঞেস করল কি নাম আপনার?
- বকুল
আবার কোনো কথা নেই। খাওয়া শেষ করেই বকুল বলল, খুব শান্তি করে খেলাম, নিজেকে খুব সুখী মানূষ এর মত লাগছে।
- তাই?
- হ্যা।
-মানুষ সুখী কিভাবে হয়?
- হুম, এর উত্তর চা খেতে খেতে না হয় দেই?
হোসেন, বকুল কে নিয়ে চায়ের দোকানের দিকে যেতে থাকে, আজ সুখের সংজ্ঞার একটা ক্রসচেক যাবে।
চায়ে চুমুক দিয়েই বকুল বলল,
দেখুন, সুখ আসলে একটা শব্দই কেবল নয়, সুখী হতে সবকিছু লাগে।
- যেমন?
- মনও লাগে, আবার ভালোবাসাও লাগে আবার টাকাও লাগে। ত্যাগও লাগে, আবার স্বার্থও লাগে। সবকিছু লাগে, সব মানে সব। এটা একটা কেবল শব্দের অর্থ না, এটা একটা প্যাকেজ। অনেক জটিল। মানুষ নিজেও জটিল কিন্তু ভাবে তারা খুব সহজ, সব কিছু সহজে নিতে চায়, সহজে ভাবতে চায়, আসলে এভাবে হয় না।
- মানুষ কি সুখী হয়?
- হয়, আবার হয় না।
- কেমন?
- মানুষ না জোড়াতালি দিতে ভালোবাসে, আর ভালোবাসে রিপ্লেসমেন্ট। মানুষ ভাবে, ভালোবাসতে তো পারলাম না টাকা তো দিলাম, তাতেই চলবে। আবার ভাবে, কাছে তো আসতে পারলাম না তাই কিছু ত্যাগ স্বীকার করে দিলাম, এভাবে না একটার বদলে আরেকটা দিয়ে সবসময়ই একটা প্রসেসিং এর মধ্যে দিয়ে চলা শুরু করে দেয়। তাতে আসলে ধোকাই হয়। সুখ আর আসে না জীবনে, আসবেই বা কেন? সুখ তো আর কোনো কিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করে আসে না। তার একটা আলাদা সত্তা আছে। তাকে পেতে আপনাকে তার প্রসেস এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
-বকুল, আপনি কি সুখী?
- নাহ, আমি নই।
- কেন? কিছুক্ষন আগেও বলছিলেন, সুখী মানুষের মত লাগছে।
- যখন থেকে সুখ খুঁজতে শুরু করেছি, সারাজীবন নিজেকে সহজ ভাবে মেলে ধরা, সবকিছু সহজ ভাবে নেয়া এই আমার কাছে সুখ খুব জটিল মনে হতে শুরু করে। সুখী হতে হবে এটা ভাববার আগেই আমি আসলে সুখী ছিলাম। খাবার পর সেই অনূভুতিটাই আমার কাজ করছিল কারন আমার কোনো আশা ছিল না। কি খাবো, কি দিয়ে খাবো? আদৌ খাবো কিনা?
জানেন, আপনি যদি ভাবেন আপনাকে ছাড়া আপনার আশে পাশের মানুষ সুখী হতে পারবে না তাহলে আপনি বড্ড অসুখে ভুগছেন। মানুষ মূলত একা। আপনি ছাড়াও দিব্যি চলে যাবে সব। আপনার সুখ আসলে আপনি নিজেই।
কি বুঝলেন? হবেন নাকি সুখী মানুষ?
হোসেন হাসল।
চা খেয়ে বকুল বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
মাঝ রাত। ঘুমন্ত শহরে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে এক পথে একজন হেটে চলছে। ল্যাম্পের আলোয় সেই মানুষের ছায়া দীর্ঘ হচ্ছে। কুয়াশার মধ্যে দিয়ে হেটে সেই কুয়াশার মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে একজন সুখী মানুষ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:১০

মিরোরডডল বলেছেন:




সুখ একটা অনুভূতি।
যেমন এখন আমাকে যদি বলে আমি কি সুখী।
রাইট নাও ইয়েস।
চাওয়া মাত্রই ম্যাজিকের মতো ঘুটুর লেখা পাওয়া এবং এতো সুন্দর একটা লেখা পড়ার পর যদি বলি সুখী না, এ ভারি অন্যায় :)

যদিও কাকতালীয়, হয়তো ঘুটু লেখা রেডি করেছে আর সে সময় আমি মন্তব্য করেছি, তারপরও ভালো লেগেছে।
মনে হচ্ছে টেলিপ্যাথি :)


১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৯

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য। খুব সম্ভবত টেলিপ্যাথিই, তা না হলে অনেকদিন পর আজই কেন লগইন করব, কেন প্রথমেই আপনার কমেন্টস পড়ব? অনেক ধরে লেখা ড্রাফট করে আজই বা কেন পোস্ট করব বলে মনস্থির করব। অবশ্যই টেলিপ্যাথি। ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৯

ঘুটুরি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য।

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৮

মিরোরডডল বলেছেন:




ঘুটুর সৃষ্টি এই হোসেন চরিত্রটা আমার এতো ভালো লাগে, একরাত হোসেনের সাথে কাটাতে হবে।
It must be a full moon night.

মতি মিয়ার দোকানে সরিষার তেলের আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে গরম ভাত খাবো।
সারারাত রাস্তায় হাঁটবো আর হোসেনের জীবনের গল্প, অনুভুতির গল্প শুনে সানরাইজ দেখে তবে ফিরবো।


১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩

ঘুটুরি বলেছেন: বিফোর সানরাইজ নামে একটা মুভিই আছে আমার খুব পছন্দের। সেখানে প্রধান দুটি চরিত্র সারা সময় গল্প করতে করতে সূর্যোদয় দেখে।

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৯

মিরোরডডল বলেছেন:




বিফোর সানরাইজ আমারও প্রিয় মুভি, দুইবার দেখেছি।
এর নেক্সট দুটো মুভি বিফোর সানসেট, বিফোর মিডনাইট দেখেছি কিন্তু প্রথমটার মতো ভালো লাগেনি।



৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: সহজ ভাষায় লেখা কিছু গভীর কথা। ব্লগে এখন এই ধরণের লেখা দেখা যায় না।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:১৯

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য।

৬| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

মিরোরডডল বলেছেন:




কয়েকটা বাবান কারেকশন করে নিবে ঘুটু।

সঠিক বানান হবে, খুঁজতে, বিভাজে, সংজ্ঞা, স্বার্থ।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২৬

ঘুটুরি বলেছেন: ঠিক করে নিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৯

মিরোরডডল বলেছেন:

কারেকশন করতে গিয়ে আমি নিজেই বানান কে বাবান লিখেছি :(

৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬

বাকপ্রবাস বলেছেন: ভাল লেগেছে

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২৬

ঘুটুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.