নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। জেলখানার জিন্দেগী ।।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:০৫

প্রায় সকল মানুষেরই জেলখানা লইয়া কম বেশি ভয় আছে। আমার ভেতরও ছিলো । কিন্তু আমার এখন সেই ভয়টা নাই । কারণ আমি জেলখানার ভয়রে কমপ্লিট জয় কইরা আসছি । জেলখানা কিন্তু বেশ মানবিক । অবশ্য অমানবিক কিছু কিছু ব্যাপার আছে । তবে তা খুবই কম ।

জেলখানার প্রক্রিয়াটা হলো , কেউ যখন গ্রেফতার হয় তখন তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । এই গ্রেফতার প্রক্রিয়াটা দুই ধরনের হইতে পারে । এক, মামলা আছে এই কারনে গ্রেফতার । দুই , আগে গ্রেফতার পরে মামলা ।

থানায় ২৪ ঘন্টা রাখার পর আসামিকে কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কোর্ট অপরাধ বিবেচনা করে জামিন দিলে দিলো নইলে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয় । থানায় যে ২৪ ঘন্টা রাখে সেই সময় গুলোতে পুলিশের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার হইলে তখন করে নেয় ।

থানায় থাকাকালীন যদি দেনদরবার ( টাকা পয়সা অথবা হ্যালো) করে বাইরে চলে আসা যায় তাইলে সবচাইতে ভালো । আর না হইলে জেলেখানা ।

জেলখানায় ঢুকার লগে লগে সকল আসামিকে ফাইল করে ফেলা হয় । ফাইল মানে হইলো, এক লাইনে চারজন করে বসাইয়া ফেলা । বসারও একটা নিয়ম আছে । পায়খানা করতে যেইভাবে বসে ঠিক সেইভাবে । তারপর গুইনা নেওয়া হয় টোটাল কয়জন আসামি । তারপর একজন লোক জিজ্ঞাস করে , কারো কাছে টাকা পয়সা আছে কি না । থাকলে তা যেনো "পিসি কার্ডে" জমা দিয়ে দেয় । এই টাকা পরে আসামিরা জেলখানায় খরচ করতে পারে ।

এই প্রক্রিয়া শেষে , সকল আসামির কাপড় চোপড় যা আছে তা চেক করে । কোন অবৈধ জিনিষ পাত্তি আছে কি না ।

চেক প্রক্রিয়া শেষে সকল আসামিকে দ্বিতীয় গেইট দিয়া জেলখানার ভিতরে ঢুকাই "কেইস টেবিলে" নিয়ে আসে । এইখানে আসামিদের একজন একজন করে ছবি তোলা হয় । এবং একজন লোক সকল আসামির কাপড় চোপড় চেক করে । এই চেকে যদি কারো কাছে কোন টাকা ক্যাশ পায় তাহলে তা নিয়ে ফেলে ।

"কেইস টেবিল"- এর কাজ শেষে সকল আসামিকে "আমদামী" করা হয় । "আমদামী" মানে হইলো এই আসামিগুলো নয়া আইছে । আমদামী ঘরটা বেশ বড় । এইখানে সকল নয়া আসামিকে একরাইত থাকতে হয় । এইখানেই অসহায় লাগে বেশি । জেলখানার প্রথম খাবার খায় আসামিরা এইখানে । খুবই জগন্য টাইপ লাগে খাইতে । ঘুমাইতে হয় এক হাত সমান জায়গায় ।

সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে তোলে দেওয়া হয় । তারপর "ফাইল" করা হয় । এক লাইনে চারজন করে বসানো হয় । গুইনা দেখা হয় রাইতের বেলায় যেকজন আসামি আইছে সকালেও ঠিক সে কয়জন আছে কিনা । তারপর গরম ভাত দেওয়া হয় । ভাত খাওয়ার পর আসামিদেরকে জেলখানার নিয়ম কানুন সম্পর্কে হালকা ব্রিফিং দেওয়া হয় । ব্রিফিং শেষে মেডিকেল টিম এসে সকল আসামির স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে । দেখে শরীরে সনাক্ত করণ চিহ্ন । যেমন তিল , কাঁটা দাগ এইসব ।

এই প্রক্রিয়া শেষে জেলার আসে । জেলার মানে জেলখানার সবচাইতে বড় কর্মকর্তা । সে এসে কার মামলার হাজিরা কবে তা আসামিদের জানিয়ে দেয় ।

এরপর চলে , আসামি বেচা কেনা । "আমদামি" থেকে আসামিদের বেঁচে দেওয়া হয় ওয়ার্ডে । এই বেঁচে দেওয়া প্রক্রিয়াকে বলে "সিসি মারা" । ওয়ার্ডের "মেট"রা গিয়ে আসামিদের জিজ্ঞাস করে মামলা কি । মামলার ধরন দেখে দাম নির্ধারন হয় । যে মামলার জামিন সহজে হয় না সেই মামলার আসামিদের বেশি দাম দিয়ে কিনে নিতে হয় ওয়ার্ডের "মেট"দের । মেট মানে হইলো , যে লোকের নামে ওয়ার্ডটি বরাদ্ধ । মানে ওয়ার্ডের সর্বসর্বা । যার কথায় ওয়ার্ড চলে । মেট কম টাকায় আসামি কিনবে আমদামি থেকে আর আসামি থেকে বেশি টাকা নিবে ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে । যদি কোন আসামি টাকা দিতে না পারে তাহলে তার উপর শুরু হয় নির্যাতন । যেমন মেটের হাত পা টিপতে দিবে । বাথরুম পরিস্কার করতে দিবে । নিচ থেকে পানি টানতে দিবে । ওয়ার্ড ঝাড়ু দেওয়াবে । আর যে আসামি মেটকে টাকা দিতে পারবে তাকে দেওয়া হবে সিট । সিট মানে হইলো, আপনাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়া হবে । যে জায়গায় আপনি কম্বল বিছিয়ে যতোদিন জামিন হইবে না ততোদিন থাকবেন ।

এই আসামী বেচা কেনা প্রক্রিয়াটা অবৈধ । কিন্তু জেলখানায় এইটা অলিখিত বৈধ হইয়া গেছে । যদি কোন আসামির সুপারিশ থাকে তাহলে তাকে কেউ বেচতে পারে না । সে ওয়ার্ডে গিয়া একটা সিট নিয়া আরামেই থাকবে । আর সরকারি খাওন খাবে । যার সুপারিশ নাই তাকে কেনা বেচা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওয়ার্ডে যাইতে হবে ।

ওয়ার্ডে দুইভাবে খাওনের ব্যবস্থা আছে । এক , সরকারি ভাবে যা দে তা । দুই, মেটের সাথে চুক্তি করে আলাদা টাকা দিয়ে নিজেরা পাক করে খাওয়া । সরকারি ভাবে খাইলে টাকা পয়সা দিতে হয় না । আর মেটের সাথে চুক্তি করে খাইলে দৈনিক দুইবেলা ভাত একশো টাকা । দুপুরে আর রাইতে । রাইতে যদি ভাত বেঁচে যায় তাহলে তা সকালে পানি ভাত হিসাবে খাইতে পারবেন । তবে তরকারি নিতে পারবেন না । তরকারি পাইবেন দুপুরে আর রাইতে । সকালে তরকারি পাইবেন না । সকালে ভাত খাইতে হইলে আপনাকে আলাদা ভাবে ডাল অথবা তরকারি কিনে খাইতে হবে । এইটা চুক্তির বাইরে ।

আপনি যদি পানি না তুলেন নিচ থেকে তাহলে আপনাকে প্রতি সাপ্তাহে একশো টাকা করে দিতে হবে । নইলে আপনার হাগা মুতার পানি আপনাকেই তুলতে হবে । যদি ওয়ার্ডে গোসল করেন তাইলে আপনাকে সাপ্তাহে একশো বিশ টাকা দিতে হবে । নইলে নিচে হাউসে গিয়া লাইন ধইরা গোসল করতে হবে ।

জেলখানায় যদি কোন আসামি অসুস্থ হইয়া পড়ে তাহলে তারজন্য হাসপাতাল আছে । ফ্রি চিকিৎসা এবং ফ্রি ঔষুধ ।

জেলখানায় যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে অন্যায় করে তাহলে আপনি "কেইস টেবিল" এসে বিচার দিতে পারবেন । এবং এই বিচার খুব দ্রুত করে দেওয়া হইবে । অবশ্য জেলখানায় সহজে কেউ "কেইস টেবিল" এসে বিচার দিতে চায় না । ওয়ার্ডের মেট দিয়ে সমাধাণ করাই ফেলতে চায় । "কেইস টেবিল" বিচার বড়ই কড়া । অপরাধ প্রমাণিত হইলে মাইর কারে কয় তা বুঝাইয়া দিবে । মাইরের পর আছে "পানিশমেন্ট ওয়ার্ড" নইলে "সেল" । "পানিশমেন্ট ওয়ার্ড" মানে হইলো, যেসব আসামি বড় বড় ক্রিমিনালি কাজ করে জেলের ভেতর তাদের যেখানে রাখা হয় । যেমন ধর্ষন , চুরি , বাটপারি টাইপ অপরাধ যারা করে । এইখান থেকে কোন আসামি বাইর হইতে পারে না । সারাদিন ওয়ার্ডেই থাকতে হয় । আর সেল মানে হইলো , জেলের ভেতর আরেক জেল । বড়ই কষ্ট সেল ।

জেলখানায় যদি কোন আসামি মাসিক ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে পারে তাইলে জেলখানা তার জন্য কিছুই না । থাকবে খাইবে ঘুমাবে । আর তার সাথে যদি কারো সুপারিশ থাকে তাইলেতো কথায় নাই । জেলখানা তার জন্য আরামখানা ।

আর যে আসামির টাকাও নাই সুপারিশও নাই সেই আসামির জেলখানার জিন্দেগী বড়ই কঠিন । বড়ই নির্মম ।

ভাগ্য ভালো আমার টাকাও ছিলো সুপারিশও ছিলো । তাই জেলখানায় আমি খারাপ ছিলাম না । আরামেই ছিলাম । খাইছি , বই পড়ছি , সিনেমা দেখছি আর ঘুমাইছি ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: বড় মর্মান্তিক।
আমি চাই পৃথিবীর কোনো দেশে যেন জেলখানা না থাকে।

২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কেনো গেছিলেন সেই শ্বশুরবাড়িতে?

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১০

জিপসি রুদ্র বলেছেন: ৫৭ (২) ধারায় ।

৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কেনো গেছিলেন সেই শ্বশুরবাড়িতে?

হয়! ৫৪ না ৫৭ ? ;)

বড়ই কষ্টকর জিন্দেগী। শুধূ োখানেইতো শেষ নয়.. বাড়ী ফিরেও কি সেই আগের ইজ্জত টা থাকে!
ট্যারা চোখে চাইবে জেলখাটা আসামী...
আর যদি পলিটিক্যাল ঞয় তাইতো পোয়াবারো!
গ্রেডিং আপ হয় তরতর কইরা ;)

৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ৫৭ ধারার অপরাধ কি তা-তো জানি না

৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩০

সোহানী বলেছেন: অনুসরনে আসলাম বাকি জেলখানার জীবন জানার জন্য........... চলুক!!! +++++++

৬| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৩

আরিফ রুবেল বলেছেন: ৫৭ ধারা খাইছিলেন কি কারণে ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.