নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

#Reader #Writer #Secular #Humanist #Democreatic #FilmWatcher #Socialist & Trying To be A Filmmaker.

জিপসি রুদ্র

লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।

জিপসি রুদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম নয়, রাষ্ট্র হওয়া উচিত ন্যায় ও বিবেকের ভিত্তিতে; ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অকার্যকারিতা ও ভবিষ্যতের পথ...

২৩ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৮:৩৬

ধর্ম মানুষের আত্মার মুক্তির পথ, রাষ্ট্র মানুষের শারীরিক, সামাজিক ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের প্রতিষ্ঠান। এই দুইয়ের মেলবন্ধন যতটা রোমান্টিক মনে হয়, বাস্তবে ততটাই বিপজ্জনক।

বিশেষ করে ইসলামি দলগুলো যেভাবে বাঙলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ‘শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর, তা একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতাকে পিছনের দিকে ঠেলে দিতে চাওয়া।

তবে প্রশ্ন হলো, এই শরিয়া বা ইসলামি শাসনব্যবস্থা বাস্তবে কতখানি কার্যকর? পৃথিবীর ৫৫টির বেশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের মধ্যে ক’টি দেশ আসলে শরিয়া ভিত্তিক চলে? এবং যেসব চলে, সেখানকার মানুষের অবস্থা আসলে কেমন?
৫৫টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে পুরোপুরি শরিয়া ভিত্তিক দেশ মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি।

সৌদি আরব: সবচেয়ে কঠোর শরিয়া আইন প্রয়োগকারী রাষ্ট্র।
ইরান: শিয়া ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা।
আফগানিস্তান (তালেবান শাসিত): ইসলামের নামে চরম গোঁড়ামি।
মরিশানিয়া, পাকিস্তান, সুদান ইত্যাদি: আংশিক বা নির্বাচিতভাবে শরিয়া চালু। অন্যদিকে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আলবেনিয়া, কাজাখস্তান, আজারবাইজান, বাঙলাদেশ, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, ইত্যাদি রাষ্ট্র ধর্মীয় পরিচয় রাখলেও মূলত "ধর্মনিরপেক্ষ" প্রশাসনিক কাঠামোর উপর নির্ভর করে চলে।

তাহলে প্রশ্ন হলো, অধিকাংশ মুসলিম দেশই যদি ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গভাবে গ্রহণ না করে, তাহলে বাঙলাদেশের ইসলামি দলগুলো কেন বারবার এই ব্যর্থ মডেলকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়?

ইসলামি শাসনব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণগুলো
১. ধর্মীয় ব্যাখ্যার দ্বন্দ্ব:
ইসলামে ‘শরিয়া’ বললে তা একক ও অভিন্ন কিছু নয়। বিভিন্ন মাযহাব, তাফসির, ইজতিহাদ অনুসারে শরিয়া ভিন্ন ভিন্ন। শিয়া, সুন্নি, আহলে হাদিস, হানাফি, সালাফি প্রত্যেকের শরিয়া ব্যাখ্যা আলাদা। তাহলে কোনটা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত হবে?- এই দ্বন্দ্বই মূলত ইসলামী রাষ্ট্র বানাইতে চাওয়ার ইচ্ছাকে একটি তাত্ত্বিক বিভ্রান্তিতে ঠেলে দেয়।

২. মানবাধিকার লঙ্ঘন:
শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোতে নারীর অধিকার মারাত্মকভাবে হরণ হয়। সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার মিলেছে সাম্প্রতিককালে। ইরানে হিজাব না পরলে নারীদের উপর নির্যাতন হয়। তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষা কার্যত নিষিদ্ধ। এগুলো কোনোভাবেই আধুনিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার সংগত হতে পারে না।

৩. রাজনীতি ও ধর্মের অপবিত্র জোট:
যখন রাষ্ট্র চালাতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়, তখন সেই ধর্ম ক্ষমতার একটি হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ইমাম, ওলামা, মৌলভিরা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের অংশ হয়ে ওঠে, এবং যেকোনো ভিন্নমতকে ‘কুফরি’, ‘মুরতাদ’, বা ‘নাস্তিকতা’ বলে দমন করে।- এই মনোভাব মুক্তচিন্তা, গণতন্ত্র, সমালোচনা এবং বৈচিত্র্যের পরিপন্থী।

৪. অবৈজ্ঞানিক ও অগ্রসরতা-বিরোধী চিন্তা:
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, নারীর অংশগ্রহণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে ভয়াবহ রক্ষণশীল অবস্থানে থাকে। এই রাষ্ট্রগুলোয় শিল্প-বিজ্ঞান, গণমাধ্যম, ফ্যাশন, বিনোদন, সাহিত্য সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়ে। ফলে একটি মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর ইচ্ছা দিয়ে গোটা জাতিকে নিয়ন্ত্রিত করা হয়।

৫. আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক:
আধুনিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা, মানবাধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, নারী-পুরুষের সমতা, আইনের শাসন। শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা এই মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেকারণেই এটি একবিংশ শতাব্দীতে প্রায় ব্যর্থ হয়েছে।

ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা বারবার কেন ভুল প্রমাণিত হয়েছে?

পাকিস্তান:
ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন করলেও বিভাজিত হয়েছে। ইসলামের নামে রাষ্ট্র চালাতে গিয়ে বাঙালিদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে।

ইরান:
ধর্মীয় স্বৈরাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ, তরুণরা আজ ধর্ম নয়, অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে।

আফগানিস্তান:
তালেবান শাসনে আফগান জনগণ চরম হতাশ, দেশ থেকে পালাতে চাইছে।

সুদান:
ইসলামি আইন চালুর পর পরেই গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা ও রাষ্ট্রীয় ভাঙন শুরু হয়।

ভবিষ্যতের পথ: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা।
একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র মানে এই নয় যে, ধর্মকে নিষিদ্ধ করা হবে। বরং তার মানে হলো, রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পক্ষ নেয় না; সকল ধর্ম সমানভাবে স্বাধীনতা পায়; ব্যক্তিগতভাবে যে যার ধর্ম পালন করতে পারে;
যেখানে ধর্ম নয়, সংবিধান ও মানবিক মূল্যবোধ রাষ্ট্র পরিচালনার মাপকাঠি হয়ে উঠে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থাই মানুষকে তার বিশ্বাসে স্বাধীন রাখে এবং রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার কাঠামোতে আনে।

বাঙলাদেশে জামায়াতে ইসলামি সহ প্রায় সকল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এখনো শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর। অথচ ইতিহাস বলছে, এই চিন্তাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
আজ যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে, তাদের রাজনৈতিক শিকড় পাকিস্তানি ভাবধারায় প্রোথিত।
বাঙলাদেশের অস্তিত্ব, চেতনা, মুক্তি ও আধুনিকতার পরিপন্থী এই দলগুলোকে তাই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পরাজিত করতেই হবে।

ধর্মের ব্যবহার হোক আত্মশুদ্ধির জন্য, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নয়। বাঙলাদেশ একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এখান থেকে পিছু হটা মানে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা। আমাদের ভবিষ্যৎ পথ হোক যুক্তি, ন্যায়, বিজ্ঞান ও মানবিকতার আলোকে গঠিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা। যেখানে কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না, আবার রাষ্ট্রও কারও ধর্মকে ব্যবহার করে অপর দমন করবে না।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:৪০

কামাল১৮ বলেছেন: রাষ্ট্র হবে গনতান্ত্রিক।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৪২

ইএম সেলিম আহমেদ বলেছেন: রাসূল মুহাম্মদ (সা.) যখন মদীনায় হিজরত করেন, তিনি কেবল একজন ধর্মীয় নেতা ছিলেন না, ছিলেন রাষ্ট্রনেতা, বিচারক এবং সর্বোপরি সমাজসংস্কারক। তিনি যে ইসলামি রাষ্ট্র গড়েছিলেন, সেটি কেবল শরিয়াভিত্তিক আইন দিয়ে পরিচালিত হয়নি—বরং ছিল একটি ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধনির্ভর রাষ্ট্র। তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় যে নীতিগুলো প্রয়োগ করেছিলেন, তা আজও সর্বজনীন—যেমন সত্যবাদিতা, ন্যায়ের শাসন, দুর্বলদের অধিকার রক্ষা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং জবাবদিহিতা।

আজ বলা হয়, ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ। অথচ সত্য হলো, ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ হয়নি—ব্যর্থ হয়েছে মানুষদের দ্বারা ভুলভাবে বাস্তবায়িত বিকৃত রূপটি। আফগানিস্তান, সৌদি আরব কিংবা ইরান—এই দেশগুলো ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত মডেল নয়। কারণ এখানে ধর্মীয় অনুশাসনের নামে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েম করা হয়েছে, মানবিকতা ও ন্যায়ের বদলে ক্ষমতা রক্ষার অস্ত্র বানানো হয়েছে শরিয়াকে। রাসূল (সা.)-এর মদীনা মডেল কখনোই চরমপন্থা, নারীবিদ্বেষ কিংবা মতপ্রকাশের দমনকে অনুমোদন দেয়নি।

অনেকে বলেন, “ধর্ম আত্মার বিষয়, রাষ্ট্র শরীরের বিষয়”—কিন্তু রাষ্ট্র কেবল রাস্তাঘাট বা নিরাপত্তা নয়, রাষ্ট্র মানুষের নৈতিক, মানবিক, ও সামাজিক চেতনারও ধারক। আপনি যদি আইন প্রণয়ন করেন, তার ভিত্তি কোনো না কোনো আদর্শেই করতে হবে। সে আদর্শ যদি মানুষের তৈরি হয়, তবে তা সীমাবদ্ধ ও পরিবর্তনযোগ্য। কিন্তু যদি তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, তখন তা হয় ন্যায় ও শাশ্বত। ইসলাম ঠিক সেটিই দেয়—আল্লাহর দেওয়া এমন একটি পদ্ধতি যা মানুষকে জুলুম থেকে মুক্ত করে, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

ইসলামের শাসনব্যবস্থার নীতিগুলোর সঙ্গে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কোনো সংঘাত নেই—বরং এগুলো একে সমৃদ্ধ করে। একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী যেসব সমস্যায় ভুগছে—নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক ধ্বংস, বৈষম্য, এবং লোভ—সেগুলোর কার্যকর সমাধান ইসলামই দিতে পারে।

আর শরিয়া কোনো একক গোঁড়ামির নাম নয়। এটি একটি জীবন্ত ও গতিশীল কাঠামো—যার মধ্যে ইজতিহাদ (সময়ের প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত) গ্রহণযোগ্য, বিতর্ক রয়েছে, এবং বিকল্প মতের সম্মান আছে। শরিয়া দিয়ে রাষ্ট্র চালানোর অর্থ এই নয় যে সকলকে একই নিয়মে বাঁধা হবে, বরং মানুষের অধিকার ও ন্যায়ের প্রশ্নে এক স্বচ্ছ নীতিমালার প্রয়োগ।

পশ্চিমা মডেল বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নিজে কোনো আদর্শ নয়। ইউরোপ বা আমেরিকার রাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বার্থে একেক সময়ে একেক আদর্শকে আঁকড়ে ধরে। গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধ চাপায়, মানবাধিকারের নামে অন্য দেশের সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ করে।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। আমাদের সংবিধানেও বলা হয়েছে—"আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস" হবে রাষ্ট্রের মূলনীতি। এটি ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বরং একটি ভারসাম্য: রাষ্ট্র কাউকে ধর্ম মানতে বাধ্য করবে না, আবার ধর্মকে রাষ্ট্রচ্যুতও করবে না। ধর্মহীন রাষ্ট্র কখনো নৈতিক হতে পারে না—বরং তা কেবল ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়।

সুতরাং, ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা আজকের যুগে বাস্তবায়ন সম্ভব, তবে শর্ত হলো—এটি রাসূল (সা.)-এর মতো ন্যায়, দয়া, সহনশীলতা, ও পরমত সহিষ্ণুতার ভিত্তিতে হতে হবে। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে যেসব লোক ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে রাজনীতি করতে চেয়েছে।

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম দিয়ে দেশ পরিচালনা করা যাবে না। তাহলে পুরো বিশ্ব পিছিয়ে যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.