![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখি, ছবি তুলি আর সিনেমা বানাই ।
একটা রাষ্ট্র কেবল ভূখণ্ড নয়, এটা একটি চিন্তার রূপরেখা। রাষ্ট্র মানে কেবল সীমান্তরেখা টেনে নাগরিকদের আটকানো নয়, রাষ্ট্র মানে সেই জায়গা যেখানে নাগরিকরা মুক্ত চিন্তা করতে পারে, মত প্রকাশ করতে পারে, ভালোমন্দ নিয়ে বিতর্ক করতে পারে। কিন্তু যখন কোনো রাষ্ট্র ধর্মীয় বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তি করে, তখন সে রাষ্ট্র ব্যক্তি স্বাধীনতার, বহুত্ববাদ এবং বৈচিত্র্য সহ্য করতে পারে না। সে তখন আদিম গোঁড়ামির কারাগারে বন্দি হয়ে পড়ে।
আজকের পৃথিবী যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে অগ্রসর হচ্ছে, সেখানে ধর্মীয় রাজনীতি বা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটি গুরুতর প্রত্নতাত্ত্বিক চিন্তা। এটি কেবল রাষ্ট্রকে পশ্চাৎপদ রাখে না, এটি তরুণদের মধ্যে সহিংস, অগণতান্ত্রিক ও জঙ্গিবাদী মানসিকতা সৃষ্টি করে, যা একটি জাতির উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা; আধুনিক রাষ্ট্র চিন্তার প্রধান শত্রু:
- ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র মানেই হল – রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, আর বাকি ধর্মবিশ্বাস বা অবিশ্বাসের লোকদের রাষ্ট্র দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করবে। উদাহরণস্বরূপ:
পাকিস্তান: ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণার পর থেকেই তারা বহুসংখ্যক শিয়া, আহমদিয়া, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর দমন-পীড়ন শুরু করে। একসময় শেখ মুজিবের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে একের পর এক সামরিক জান্তা ধর্মীয় উগ্রবাদীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাড়িয়ে তোলে। যার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও বাঙালি নিধন।
ইরান: ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত "ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান" একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হলেও আজ তারা নারীর হিজাব না পরা কিংবা সমালোচনা করাকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করে। ফলাফল, রাষ্ট্র জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, প্রতিবাদ দমন করে, ভিন্নমতকে জেলে পুরে।
আফগানিস্তান: তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ, সংস্কৃতি হারাম, বিজ্ঞান অবিশ্বাস্য—রাষ্ট্র চালিত হয় ধর্মের কট্টর ব্যাখ্যা অনুযায়ী। যে দেশ এক সময় কবিতা, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র ছিল, আজ তা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদ।
ধর্মীয় রাজনীতি কীভাবে জঙ্গিবাদ জন্ম দেয়:
- ধর্মীয় রাজনীতি নিজেই একটি সাংঘাতিক বিপজ্জনক প্রক্রিয়া। কারণ, এটা মানুষের ইমান, বিশ্বাস ও আবেগকে পুঁজি করে। এটি যুক্তি নয়, বরং অন্ধ আনুগত্য চায়। ফলে তরুণেরা খুব সহজে এই রাজনৈতিক ধর্মীয় ব্যাখ্যার শিকার হয়। আরেকটু চূড়ান্ত রূপ পেলে এটাই জঙ্গিবাদ হয়ে ওঠে।
একবার যদি কাউকে বোঝানো যায়, “তুমি যা করছো সেটা আল্লাহ/ঈশ্বরের পক্ষ থেকে জিহাদ”—তাহলে সে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ করতে দ্বিধা করে না।
এইসব ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তরুণদের মাঝে ‘আদর্শ শহীদ’ হবার ফ্যান্টাসি তৈরি করে।
জাতিসংঘের Counter-Terrorism Implementation Task Force (CTITF)-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, “ধর্মীয় আইডিওলজির মোড়কে পরিচালিত রাষ্ট্র বা দলগুলোর দ্বারা তরুণদের র্যাডিকালাইজেশন রেট সবচেয়ে বেশি।”
তরুণ প্রজন্মকে জঙ্গিবাদী ধর্মীয় রাষ্ট্রচিন্তা থেকে মুক্ত করতে যা দরকার:
১. ইতিহাসচর্চা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম। পাক হানাদাররা “ইসলামের শত্রু” বলে বাঙালিদের হত্যা করেছিল। এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে বারবার মনে করাতে হবে।
২. সমাজে যুক্তির জায়গা তৈরি করা: শিশুদের ধর্মের পাশাপাশি যুক্তিবাদ, মানবতা, বিজ্ঞানমনস্কতা শেখাতে হবে।
৩. ধর্মকে ব্যক্তিগত পরিসরে ফেরত পাঠানো: ধর্ম হোক ব্যক্তি এবং ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক। রাষ্ট্রের সংবিধান, শিক্ষা বা বিচারব্যবস্থায় ধর্মের জায়গা নেই।
৪. ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে জনপ্রিয় করা: তরুণদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নয়, রাজনৈতিক মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে শেখানো দরকার—যেমন মুজিববাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা কেন আধুনিক রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ:
১. মানবাধিকারের স্বীকৃতি: জাতিসংঘ ঘোষিত Universal Declaration of Human Rights ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সমর্থন করে। কারণ, তা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করে।
২. বহুত্ববাদ এবং সহনশীলতা: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা সব ধর্মাবলম্বীকে সমানভাবে দেখতে শেখায়। এতে সমাজে সহাবস্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতা বাড়ে।
৩. উন্নয়নের সহায়ক পরিবেশ: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও শিল্পের চর্চা বাধাহীন হয়। ইতিহাস দেখায়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলো উন্নত—যেমন জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত।
৪. শান্তি ও স্থিতিশীলতা: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সংঘাত কমায়। কারণ, রাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষ নেয় না, ফলে কেউ বঞ্চিত বোধ করে না।
তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে—আধুনিক রাষ্ট্র মানে সহনশীলতা, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র, যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান ও মানবতা। ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা অতীতের পচা ধারণা। এটি দাসত্ব আর বিভাজনের সেতু।
রাষ্ট্র যেন কোনো ধর্মের হয়ে কথা না বলে—এটাই হলো ধর্মনিরপেক্ষতার মৌল কথা। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।
তাই তরুণদের স্লোগান হওয়া উচিত:
“আমরা ধর্মে নয়, মানবতায় বিশ্বাস করি। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই, যাতে সবাই সমান হয়।”
“আমরা শাসন চাই জ্ঞান আর যুক্তির, মোল্লাতন্ত্রের নয়।”
“ধর্মের নামে রাজনীতি নয়, ধর্ম হোক মন্দির-মসজিদে; রাষ্ট্র হোক নাগরিক অধিকার আর মানবতার উপর।”
জয় বাঙলা।
তথ্যসূত্র:
United Nations: Universal Declaration of Human Rights
Pew Research Center: "Religious Restrictions by Country"
UN CTITF Reports on Radicalization
Freedom House Reports on Theocratic States
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও একাত্তরের দলিলপত্র
"Why Secularism is a Must for a Modern State" – Oxford Political Review
২| ২৫ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: সঠিক।
৩| ২৫ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪
কাঁউটাল বলেছেন: হাউয়ামী লীগের অসমাপ্ত মিশন। চাঘলের দল
৪| ২৫ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: দেশের জনগণ যা চায় সেটাই হবে।
৫| ২৫ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১১
মেঘনা বলেছেন: দেশের জনগণ কি চায়, সেইটা জানার জন্য সুষ্ঠ নির্বাচন দরকার। সুষ্ঠ নির্বাচন করার মত যোগ্যতা কি বাংলাদেশের হয়েছে ???
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৩১
মেঘনা বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রয়োজন। এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা যদি বন্ধ করা যায় তাহলেই বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষতার পথে এগোতে পারবে।