নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

-অপরিপক্ষ দেশপ্রেম এবং বানোয়াট গল্প-

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি বীর উত্তম এর ডায়রী থেকে সংগ্রহকৃত। তিনি লিখেছেন, বিএনপির অবরোধ প্রত্যাহার এবং দেশের প্রয়োজনে যার সাথে বসলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব, সরকার যেনো তার সাথেই বসেন। এই ছোট দুটি দাবি নিয়ে মতিঝিলের ফুটপাতে গত ২৮শে জানুয়ারী ২০১৫ইং তারিখে থেকে অবস্থান শুরু করেন। কত বিপদ আপদ মসিবত গেলো গত হয়ে যাওয়া এই ৫৭ দিনের প্রতিটি মুহুর্তে, যা এই ফুটপাতে না বসলে কোনদিনও বুঝতে পারতাম না। হয়তো এর ভেতরেও মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজ কুদরতি ছায়ায় সব প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে চলেছেন। তিনি আরো যা বলেন, ৩০শে জানুয়ারী রোজ শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে নামাজে গিয়েছিলাম। সেদিন আওয়ামী লীগের গায়েবানা নামাজের জানাজা ছিলো। তাই মন্ত্রীরা ছিলেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও নাস্তিক নেতা রাশেদ খান মেননের মাঝে নামাজ আদায় করেছিলাম। এরপর আরো ছয়বার বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ আদায় করলাম, একবারো কোনো মন্ত্রীর দেখা পেলাম না। তাই মনে হয়, রাজনৈতিক প্রয়োজন ছাড়া আওয়ামী লীগ মসজিদে যায় না! দেখতে দেখতে নিজের বয়সও কম হয়নি। ছেলেবেলা থেকেই ঠান্ডার দোষে ভুগছি। যদিও আল্লাহর পরম দয়ায় এখনো চলবার মতো আছি। কিন্তু তবুও কম-বেশি যে কষ্ট হয় না, তা নয়। তারপরেও শরীর ও মনের সাথে এক রকম যুদ্ধ করে চলেছি প্রতিনিয়তই।

আমার বয়স যখন সাত-আট বছর বয়স, তখন মারাত্মক হুপিংকাশিতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। গ্রামের বাড়ি ছাতিহাটিতে থাকতাম। চিকিৎসাব্যবস্থা তেমন ভালো ছিলো না। রাতে এক মুহুর্তে ঘুমাতে পারতাম না। শ্বাস নিতে বুক ফেটে যেতে চাইতো, কখনো বুকভরে শ্বাস নিতেও পারতাম না। গলায় সাঁই সাঁই আওয়াজ হতো, দম বন্ধ হয়ে যেত, কাশতে কাশতে বাঁকা হয়ে যেতাম কখনোবা। মা কাছে থাকলে কোলে নিয়ে বুকে-পিঠে চেপে দিতেন, যাতে কষ্ট কমে। কত যে হাতে পায়ে বুকে পিঠে চুন-তেল মালিশ করতেন; কখনো আরাম পেতাম, কখনো পেতাম না। গ্রামের মানুষের ধারণা, শিশুদের ঠান্ডা লাগলে গলায় হাতে পায়ে বুকে পিঠে গরম চুন-তেল ঘষলে ভালো হয়-এখন ডাক্তারদের কাছে শুনছি তার উল্টো। কত দিন, কত রাত মা শিয়রে জেগেছে আর আল্লাহর কাছে কেঁদেছে, ‘হে আল্লাহ! ওর অসুখ আমাকে দিয়ে বজ্রকে ভালো করে দাও’! জানি রাজা-বাদশাহদের কর্মকান্ড ইতিহাস হয়। সাধারণ ঘরের বাবা-মায়ের ত্যাগ খুব একটা ইতিহাসে জায়গা পায় না। তাই আমার মায়ের প্রার্থনা ইতিহাসে জায়গা পায়নি। আমি না বললে বা না জানালে এক আল্লাহ ছাড়া জগৎ সংসারে কারো জানার সুযোগও ছিল না। রোগশয্যায় পতিত বাদশাহ বাবরের সন্তান হুমায়ুন কোনো মতেই যখন আরোগ্য হচ্ছিল না, তখন বাদশাহ বাবর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, ‘আমার আয়ু হুমায়ুনকে দিয়ে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দাও’! তার প্রার্থনায় নাকি স্বাভাবিকভাবে হুমায়ুন কিন্তু সু্স্থ হয়েছিলেন। তার ক’দিনের মধ্যেই সম্রাট বাবর ইন্তেকাল করেন! আমার ক্ষেত্রেও তেমনি-আমি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠি, ধীরে ধীরে আমার সুস্থ মা হাঁপানিতে আক্রান্ত হন। ৮০-৮৫বছর বয়সে মা মারা যান, হাঁপানি সাথে করে নিয়ে! আমার বিশ্বাস তিনি হাঁপানিতে আক্রান্ত না হলে এখনো সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকতেন। এই কলামটি সংগ্রহ করার সময় আমার দু’চোখ দিয়ে গলগল করে অশ্রু গড়িয়ে নীচে পড়তে শুরু করলো। কোনো রকমে দু’চোখের পানি থামাতে কিংবা সংযত করতে পারিনি। তা যেনো শুধুই অনুপস্থিত বাবা-মায়ের কথায় খেয়াল করে দিয়েছে বলে হয়তো।

সেদিন প্রধান বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অনেকেই অনেক রকম আশা করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার মতো যা বলার বলেছেন। আমিও গত ৪৮দিন এতো কষ্ট করে এই বয়সে এসে ফুটপাথে বসে থেকে বুঝেছি, বড় দলগুলো আর জনগণের না-তারা তাদের নিজেদের, নিজেদের গোষ্ঠীর দল। তাই নিজেদের বাইরে কোনো চিন্তা তারা করেন না। ইংল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের বিজয়ে সারা দেশ মেতে উঠেছিলো। হঠাৎই ১২ ঘন্টার অবরোধ-হরতাল স্থগিত করে ২০ দলীয় জোট আনন্দ মিছিল করল। সরকার তাতে যোগ দিলো, মানে তারাও আনন্দ করলো। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জয় যদি বিএনপি-আওয়ামীলীগ জোটের হয়, তারা যদি একসাথে বিজয় মিছিল করতে পারে; তাহলে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপন করে, কেনো শান্তির মিছিল করতে পারে না? শান্তির চেয়েও বড় বিজয় পৃথিবীতে আর কি কিছু আছে? তার মানে তারা দেশপ্রেমিকের মতো দেশকে ভালোবাসেন না! নিজেদের সুবিধামতো ভালোবাসে বা ভালোবাসার চেষ্টা করে। ইংল্যান্ডের সাথে জিতে আনন্দে মেতে উঠেছিলো, তাহলে সেদিন নিউজিল্যান্ডের সাথে হেরে শোক মিছিল করে চোখের পানিতে বন্যা বইয়ে দিলো না কেনো!? খেলাধুলা নিশ্চয়ই জাতীয় আনন্দের এক মস্তবড় উপাদান। কিন্তু ১৫লক্ষ ছাত্রছাত্রী এসএসসি স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা দিতে পারলোনা! প্রতিনিয়তই গুম, হত্যা, অপহরণ, অগ্নিদগ্ধ কিংবা বন্দুকযুদ্ধের নামে স্বাভাবিক জীবন দুষিয়ে তোলা! তাহলে মানুষের জীবনের চেয়েও কি খেলা বড়!?

ক’দিন আগে বাংলাদেশ টিভির ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের জম্ম ৪৪ বছর হয়েছে। বাংলাদেশ রেডিওর ৭৫ বছর পূর্তি পালন করা হলো, কিন্তু বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী অসাধারণ বয়ান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অথচ এর একটিও সত্য নয়! আর যা কিছুই হোক পিতার জম্মের আগে পুত্রের জম্ম হয় না। বর্তমান অপ্রিয় বিটিভির বয়স নিশ্চয়ই ৫০ বছর হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ পিটিভি হিসেবে নয়। ঢাকার ডিআইটিতে ১৯৬৪ সালে টিটিভি হিসেবে প্রথম ১০ মাইল সীমা নিয়ে ১-২ ঘন্টা, তারপর আস্তে আস্তে ৪০ ফুট বাঁশের ওপরে এন্টেনা বেঁধে তখনকার টিভি দেখতে হতো। পাকিস্তানের সেই টেলিভিশনের নাম বদলে বিটিভি রেখে সেই আজম্মা জম্মদিন পালন করলে, সেটা বাংলাদেশের অঙ্গ হতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধের সময় পাকিস্তান টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রে রেকর্ড করা অনুষ্ঠানগুলো এখনো দেখলে প্রত্যেক বাঙ্গালির গা জ্বালা করবে। তখন ঢাকা রেডিওর প্রধান পরিচালক ছিলেন মুক্তাগাছার শামছুল হুদা, যিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর আমলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বছর পূর্তি-সেটাও ঠিক নয়! ৭৫ বছর হয়েছে অল ইন্ডিয়া রেডিওর, তারপর পূর্ব পাকিস্তান রেডিও; সবশেষে বাংলাদেশ বেতার। কেনো যে আমরা আমাদের মূল রাখতে চেষ্টা করি না, তা বুঝতে পারছিনা। যে দিন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সে দিন থেকে বাংলাদেশ বেতার হতে পারে, কালুরঘাটে যে দিন বিপ্লবী বেতার চালু হয়েছিলো সে দিন থেকেও হতে পারে। তবে বাংলাদেশ টিভির জম্মদিন বাংলাদেশ হওয়ার আগে কোনো মতেই হতে পারে না। কারণ, স্বাধীনতাযুদ্ধের ৯মাস রেডিও-টিভির কলঙ্কজনক অধ্যায় আমরা বয়ে বেড়ালে, সেটা হবে আমাদের জাতির জন্য সবচেয়ে বড় কলঙ্ক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.