![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’
একটি অজপাড়া গাঁয়ের নাম পাটাচোরা। তিন দিকে কুলকুল করে বইছে নদী। গ্রামটির ভেতর দিকে খালের পাড় ধরে মাটির রাস্তা শহরমূখী। আর নদী পেরিয়ে পাকা রাস্তা। পাখির গানে মুখরিত সারা গ্রাম। নদীর তীর ঘেঁষে পাটাচোরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সাহিত্য ও শীর্ষ (কাল্পনিক নাম) এ স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওরা। একই গাঁয়ে থাকে তারা। একজন আরেক জনকে ছাড়া থাকতেই পারে না। অথচ এবারের বার্ষিক পিকনিকে সাহিত্য যায়নি। শীর্ষ একাই গিয়েছে। খুব রাগ জমেছে সাহিত্যের। তাই তো স্কুলে এসেই শীর্ষ বলল সাহিত্যকে, কাল তুই পিকনিকে না গিয়ে হুট করে নানারবাড়ি গেলি কেনো!? সাহিত্য মনের কোণে ব্যথা জমা রেখে মুচকি হাসার চেষ্টা করলো।
জানিস, পিকনিকে গিয়ে কত আনন্দ করলাম? কত কিছু দেখলাম?
-সত্যিই, মুজিবনগর খুব সুন্দর?
-সুন্দর মানে কী? ওখানে না গেলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেতো।
-তাহলে বল না ঐতিহাসিক মুজিবনগর সম্পর্কে? খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। বল না শীর্ষ?
-তাহলে বলছি মন দিয়ে শোন।
পিকনিকে যাওয়ার আগে তোদের বাড়িতে গিয়ে তোর কথা খালাম্মাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তোর মা বললেন, তুই সকালেই তোর নানা বাড়ি গেছিস। ‘মনটা ভার করে স্কুলে চলে এলাম। এরপর সবাই স্কুল থেকে দল বেঁধে নৌকায় করে নদী পার হয়ে পিকনিকের জন্য ভাড়া করা বাসে উঠলাম। বার্ষিক পিকনিকে যাচ্ছি কত আনন্দ! পাকা রাস্তার দুই ধারে গাছগাছালিতে ভরা। দূরে সবুজ শ্যামল মাঠ, মায়াবী নীল চাদর মুড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে চলল বাস। আর আমরা চলন্ত বাসে আনন্দে আত্মহারা। মুজিবনগর স্পটে ঢুকতেই সুউচ্চ গেট পেরিয়ে বাস পার্কিংয়ে দাঁড়াল। নামতেই দেখতে পেলাম সারি সারি বাস, ট্রাক, ছোট ছোট যানবাহনে ঠাসা; লোকে লোকারণ্য।
প্রথমে সড়কের বাম দিকে মনোরম লোকেশনে সজ্জিত বিশাল পার্ক। বিনোদনের জন্য নির্মাণ করেছে ফুলের ছায়ায় গোলটেবিলে বসার স্থান। ভেতরে আম বগানের ছায়া। পাখদের গানে মুখরিত আম বগানে আড্ডার সুন্দর পরিবেশ। শহীদ মিনারের দর্শনীয় স্তম্ভ। চার পাশে সজ্জিত বিভিন্ন নকশার ভবন যেনো এক একটি চমক। পোষ্ট অফিস, থানা, মসজিদ, পিকনিকে আসা লোকজনের রান্না করার স্থান। এক কথায় অপূর্ব। কী নেই মুজিবনগরে? হরেক রকম ফুলে ফুলে সাজানো বিস্তীর্ণ এক আকর্ষণীয় ভূমি। হেলিপ্যাড, বিশাল আকৃতির বাংলার মানচিত্র। কী আঁকানো নেই সেখানে? বঙ্গোপসাগর, নদী-নালা আর ভেতরে সৌন্দর্যের বিবরণ। জেলাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দারুণভাবে চিত্রিত হয়েছে ছবিতে।
-
জানিস সাহিত্য, তোকে একটি কথা না বলে আর পারছিনে। ওখানে এমনভাবে বাংলাদেশের স্থপতির ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যা তাকালেই স্মৃতির দুয়ার খুলে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের চিত্রসহ বিভিন্ন বৈঠকের নান্দনিক রুপের এক একটি ভাস্কর্য আছে সেখানে। শীর্ষের কথা শুনতে শুনতে সাহিত্যের দুই চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে!
-কী রে সাহিত্য তুই কাঁদছিস কেনো?
-কাঁদবো না কী করবো? আমারও খুব যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু...
-কিন্তু কী হলো সাহিত্য?
-তুই যখন সকালে আমাদের বাড়িতে আমাকে ডাকতে গিয়েছিলি, তখন আমি ঘরের চাটাইয়ের ফাঁক দিয়ে তোকে বারবার দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম!
-তাহলে তুই আমার সাথে কথা বললি না কেনো!?
-কী করে বলব? তুই তো জানিস, আমার বাবা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। একদিন তিনি কাজে যান তো পাঁচ দিন বসে থাকতে হয়। অসুস্থতার কারণে রোজ কাজ করতে পারেন না। ঘরে দু’টি বোনই তো প্রতিবন্ধী। একজনের চোখ অন্ধ, আরেকজন পঙ্গু। আর মা পরের বাড়িতে কাজ করেন। কোনো রকমে খেয়ে না-খেয়ে আমাদের দিন চলে। অভাবে অনটনে, রোগে শোকে আমাদের সংসার! পিকনিকে যাওয়ার খরচই তো নেই! তবে যাবো কী করে!?
-আর কাঁদিসনে বন্ধু। সামনের বার্ষিক পিকনিকে আমিই তোকে নিয়ে যাবো। এ কথা বলে শীর্ষ বুকে জড়িয়ে ধরে সাহিত্যকে।
©somewhere in net ltd.