নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“আমি আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি কিন্তু আপনার কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে জীবনও উৎসর্গ করতে পারি”

রুপম হাছান

‘‘আত্মত্যাগ সব সময় ভালো কিন্তু মাঝে মাঝে বিরক্তিকরও বটে...’’

রুপম হাছান › বিস্তারিত পোস্টঃ

-ক্ষমতার ভারসাম্যহীন প্রয়োগ-

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

নীতির রাজাকে অথবা রাজার নীতিকে মেরে পারিষদেরা রাজনীতি দখল করে নিয়েছে। বিশ্ব, রাষ্ট্র, বিচার, সমাজ যার ওপরে সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল তিনি যথাক্রমে-‘বিশ্বপতি’, ‘রাষ্ট্রপতি’, ‘বিচারপতি’, ‘সমাজপতি’ নামে খ্যাত গুণবাচক বিশেষণেরা। নারী সবচেয়ে বেশি যার ওপর নির্ভরশীল তিনিই হচ্ছেন ‘নারীরপতি’ বা ‘স্বামী’। এই ধরনের ‘পতি’ একাধিক হলে সঙ্ঘাত অনিবার্য। আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের অনানুষ্ঠানিক পতির সংখ্যা অনেক। আনুষ্ঠানিক পতির ‘ইয়েস’, ‘নো’, ‘ভেরিগুড’ ছাড়া শুধু কবরে যাওয়ার দায়িত্বটুকু অবশিষ্ট আছে। রাষ্ট্রে পত্তন হয়েছে জনসংখ্যা, ভুখন্ড, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব নামে উপাদানগুলোর ভিত্তিতে। সেই পরিকল্পিত রাষ্টেপ্র রাষ্ট্রপতিই সর্বেসর্বা। সরকার এর এক-চতুর্থাংশ উপাদান। সরকার কখনো সার্বভৌম নয়। রাষ্ট্রের এক-চতুর্থাংশ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নই আসে না। রাজ্য সরকার, স্থানীয় সরকার, গ্রাম সরকার ‘সরকার’ বটে, কিন্ত সার্বভৌম নয়। সার্বভৌম হয় রাষ্ট্র যার প্রধান ও একমাত্র প্রতিনিধি ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি’। সরকার কোনো বিশেষ ব্যক্তি নয়। চৌকিদার থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত কালেকটিভ বডিকে সরকার বলে। প্রধানমন্ত্রী বা বিশেষ মন্ত্রী বা চৌকিদার সরকারের কার্য সম্পাদনের একটি অংশ মাত্র। সার্বভৌমত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান বাদে বাকি সব রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপতি, সংবিধান ও জনগণের অধীন ও আজ্ঞাবহ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কিঞ্চিৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ নামে তিনটি বিভাগ থাকে। ক্ষমতার স্বাতন্ত্রীকরণ, পৃথকীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য নীতির ভিত্তিতে তিনটি বিভাগ পরষ্পর নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাব মুক্ত থেকে আইনের অধীনে পরষ্পরের সাথে তথা জনগণের সাথে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ তারা মোটেই স্বাধীন নয়। জনগণের অভিপ্রায় ও রাষ্ট্রীয় আইন যদি তাদের নিজেদের গলায় ফাঁসি ঝুলাতে বলে তারা তা করতে বাধ্য। জনগণের অভিপ্রায় ও রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আইনের নামই হচ্ছে সংবিধান।

সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে বিশৃঙ্খল, বিতর্কিত এবং পরষ্পর নির্ভরশীল করা হয়েছে যাতে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপতি, প্রধান নির্বাহী, সার্বভৌমত্ত্ব, সংখ্যাগরিষ্ট দলীয় প্রধান, সংসদ নেত্রী একাকার হয়ে গেছে। সম্প্রতি র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের আইজি, থানার দারোগাদের নর্দন-কুর্দন দেখলে মনে হয়, তিনিই রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা। রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রটি এখন আর তার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা চলে গেছে বাহুশক্তির নিয়ন্ত্রণে। মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে বসিয়ে জনগণের ভালোবাসার সম্পর্কের সিঁড়ি কেড়ে নিয়েছে সংসদীয় গনতন্ত্রের প্রধান নির্বাহী। রাষ্ট্রপতির হাতে কবর জিয়ারত ও আমিন বলা ছাড়া অন্য কোনো কাজ অবশিষ্ট নেই। আইন প্রণয়নের বইখানা সংসদের হাতে থাকায় তারা নিজেদের মতো করে আইন লিখে ক্ষমতার ভারসাম্য নীতিকে উপেক্ষা করে সব কিছু নির্বাহীর কব্জায় কেড়ে নিয়েছে। সরকারের তিন বিভাগের একটি হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ। বাকি দু’টি আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। প্রধান নির্বাহী বাদে রাষ্ট্র ও সরকারের বাকি অঙ্গগুলো প্রায় অকার্যকর হয়ে সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি স্বেচ্চাচারী ক্লাবে রুপান্তরিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে চলে গেছে। জনগণের প্রতি দায়িত্ব স্থানান্তরিত হয়ে ওই ক্লাবকেন্দ্রিক লোকদের অনুকূলে চলে গেছে।

সংসদীয় পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠনের ক্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া কোনোভাবেই রিপেক্ষ হতে পারে না। চারটি উপাদানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের একটি উপাদানের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রের মৃত্যু হয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে পুরনো সরকার ভেঙ্গে নতুন সরকার গঠন করার পদ্ধতি বিদ্যমান। এই ভাঙ্গাগড়ার মাঝখানে সরকারবিহীন মুহুর্তে কি রাষ্ট্রের মৃত্যু হয়!?

সরকার একটি চলমান প্রক্রিয়ার চিরজীবি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের আমৃত্যু এটা চলমান। সরকার গঠন বা পরিবর্তন শব্দটিই অবান্তর, অবাস্তব। পরিবর্তন হয় চৌকিদার থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাহী পর্যন্ত কালেকটিভ বডির কিছু শীর্ষ ব্যক্তির। যারা পরিবর্তিত হয় তারা ভ্রান্তভাবে মনে করে সরকারের সবটাই তারা। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনসেবার সুযোগ খয়রাত চেয়ে জনগণের ম্যানডেট নেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই নির্লজ্জভাবে দায়িত্বের পরিবর্তে ক্ষমতার চর্চা শুরু হয়। দেশের মধ্যে বিরাজমান সরকারের বিরোধীদল বা শত্রু থাকে না। বিরোধীদল, শত্রু-মিত্র মিলেই সরকার। সরকারের কোনো অংশের কর্মের বিরোধী বা সমালোচক থাকতে পারে। সংসদ সরকারের একটি অংশমাত্র। সেখানেও বিরোধীদল বা সমালোচকেরা ওই সরকারের অংশ। কোনো বিশেষ বিষয়ের ওপর বিরোধিতা বা সমালোচনা সরকারের বিরোধিতা নয়। ভুল করে সংসদে যাদের বিরোধীদল বলি, তারাও সরকারেরই অংশ। সরকার শুধু সংখাগরিষ্ঠ দল নিয়েই গঠিত হয় না।

আমাদের সংসদীয় পদ্ধতিতে ররাজনৈতিক দল জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠদের অজুহাতে নিজেদের ক্ষমতাসীন দোর্দন্ড সরকারে রুপান্তরিত করে। ওই দলীয় প্রধান সংসদ নেত্রী হয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে। সংসদ চলে যায় একটি রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে। আবার ওই দলের নেতাই নির্বাহী প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী য়ে সমস্ত দায়িত্ব ক্ষমতায় রুপান্তরিত করে সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগকে একাকার করে ফেলে। থোক বরাদ্দ, টিআর, কাবিখা ইত্যাদি বরাদ্দ দিয়ে প্রাইমারি স্কুল, মাদ্রাসা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, মসজিদ ইত্যাদির উপদেষ্টা বানিয়ে সংসদ সদস্যদের নির্বাহী সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আইন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংসদ নেতা হওয়ার সমর্থন আদায় করে। যার ফলশ্রুতিতে নির্বাহী ও আইন বিভাগ প্রকারান্তরে এক ব্যক্তির কবজায় চলে যায়। দলের ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, সংসদ নেত্রীর ঔদ্ধত্যতায় নিজের মতো করে সংবিধান লেখতে শুরু কোনো কিছুকেই যেনো আর পরোয়া করার সময় থাকে না। সেই সংবিধানে মহামান্য বিচারপতিদের অপসারণ পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেয়ার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করে রাষ্ট্রপতিকে একটিমাত্র পরামর্শ দেয়। পরামর্শটি হচ্ছে, ‘আপনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি কবর জিয়ারত ছাড়া কিছুই করিবে না। শুধু ‘ইয়েস’, ‘নো’ আর ‘ভেরিগুড’ শব্দ তিনটি রফত করে নিবেন। যখন, আমি যেটাকে হ্যাঁ বলবো আপনি সেটা ‘ইয়েস’, আমি যেটা না বলব আপনি সেইটা ‘নো’ বলবেন এবং রাষ্ট্রের গুম, খুন, হত্যা, ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার মামলা-হামলাসহ সব কর্মকন্ডের পক্ষে সবসময় ভেরিগুড বলবেন।’

ক্ষমতার ভারসাম্যনীতির কারণে বিচারপতি বা কোনো নির্বাহী কর্মকর্তা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ঠিক তেমনি কোনো সংসদ সদস্য কোনো নির্বাহী কাজে, এমনকি মন্ত্রিত্ব, প্রধানমন্ত্রিত্ব কাজে অংশ নেয়া বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। নির্বাহী প্রধানের আজ্ঞাবহ সংসদের হাতে সংবিধান নামে বিইটি থাকায় তারা রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা, নির্বাহী লাভজনক কর্মকান্ড নিজেদের অনুকূলে লিখে রাষ্ট্রকে ফুটোবস্তায় পরিণত করেছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.