নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গোলাম রব্বানী ৮৪

আমি গোলাম রব্বানী,পেশা-ব্যবসায় (আই,টি)

গোলাম রব্বানী ৮৪ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার গল্প-আমি আর তুমি এবং সে

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

জীবন নাকি মৃত্যু?অতীত নাকি বর্তমান?
তিশা নাকি নিপা?
জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে বসে আছে নাহিদ,সামনে একগাদা ঘুমের ট্যাবলেট।যে কোন সময় ওষুধগুলো খাবে ও।তারপর লম্বা একটা ঘুম,হয়ত আর জাগবেনা ও কিন্তু যদি আবার ও জেগে উঠে তাহলে কোনটি বেছে নেবে নাহিদ?অতীত নাকি বর্তমান?নিপাকে কি অতীত বলা ঠিক হচ্ছে?সে তো এখন বর্তমানের চেয়েও বড় সত্য।
তিশা নাহিদের সবচেযে কাছের বন্ধু।চারদিন হল ওদের বিয়ে হয়েছে,আজ তাদের থাকার কথা ছিল হানিমুনে,কক্সবাজার।প্ল্যানটা ছিল তিশার,সারারাত হাত ধরাধরি করে বসে থাকবে ওরা সাগরপারে।সূর্যোদয় দেখে ঘুমাতে যাবে।।হানিমুনে আর যাওয়া হয়নি বরং জীবনের ভয়ংকর এক খেলায় জড়িয়ে গেছে তিনজনই।সকলেই হারের দ্বারপ্রান্তে।জিতবে কে তাহলে?
নাকি তিন প্রতিপক্ষের খেলায় সবাই হারবে এটাই নিয়ম।
নিপার সাথে নাহিদের ছিল দীর্ঘ চার বছরের প্রেম,ভালবাসাবাসি,খুঁনসুটি।দুজনের জমত ও বেশ।আড্ডা যেমন জমত ঝগড়াও তেমন,ঘোরাঘুরি যেমন মারামারিও তেমন।শুধু একটা জায়গায় এসে খেই হারিয়ে ফেলত সব।বিয়েটা কবে হবে?
নাহিদের পক্ষ থেকে অবশ্য কেনো সমস্যা ছিলনা।সমস্যা ছিল নিপার বাবা-মা’র পক্ষ থেকে ।মিরপুর ডি,ও,এইচ,এস এর পাঁচতলা বাড়ির বিপরীতে পল্লবীর ভাড়া করা ফ্ল্যাটের পার্থক্য মেয়ের নজরে না এলেও বাবা-মা’র চোখে ছিল অনেক বড় কিছু।তবে চাকরিটা কিন্তু খারাপ ছিলনা নাহিদের,শীর্ষস্থানীয় আই,টি ফার্মের প্রোডাক্ট ম্যনেজার,বেতনও ঈর্ষনীয়।মেয়ে এগুলোকে বাঁধা না মনে করলেও বাবা-মা মনে করত।শুধু তাই নয়,নাহিদের সবসময়ই মনে হত,নিপার বাবা তাকে কেমন যেন একটা সন্দেহের চোখে দেখে।তাদের হয়ত মনে হয় কোটালপুত্র রাজকন্যাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করে রাজত্ব দখলের চিন্তায় আছে।
গত একবছর ধরেই নাহিদ নিপাকে চাপ দিচ্ছিল বিয়ের জন্য,নিপাও তার বাবা-মা কে কিন্তু ওনারা রাজি হচ্ছিলেননা।আর নিপাও তাদের অমতে বিয়ে করবেনা।তাকে খুব একটা দোষও দেয়া যাবেনা কারণ সে ই তার বাবা-মা’র একমাত্র মেয়ে,স্বভাবতই খুব আদরের।তাছাড়া নাহিদ যখন ওকে প্রপোজ করে তখনই নিপা তাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছিল,তার সাথে সাথে তার বাবা-মা’র মনও জয় করতে হবে।যেটা নাহিদ পারেনি।
অবশেষে মন জয়ের মিশনে রণেভঙ্গ দিয়ে নাহিদ মাস দেড়েক আগে গিয়েছিল নিপাদের বাসায় ফাইনাল কথাবার্তা বলতে।আংকেল তখন তাকে হ্যা বা না কিছুই জানাননি।নিপার সাথে কথা বলেই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন,এ কথাটা শুনে অনেকটা ভরসা নিয়েই নাহিদ বাসায় ফিরেছিল।
সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিপা আসল পাক্কা তিনদিন পর।অসম্ভব লম্বা তিনটা দিনের পর।
‘নাহিদ বাবা-মা রাজি হচ্ছেনা।’
‘সেটা তো আগে থেকেই জানতাম,তুমিও জানতে।’
‘জানতাম,তবুও চেষ্টা করে গেছি দিনের পর দিন, তবে এর বাইরে নাটক বা সিনেমার মত কোনো কিছু করে ফেলা আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণ প্রেমের ছবিগুলোতে বড়লোক নায়িকাদের বাবারা থাকে ভিলেন আর অমার জীবনে বাবা হচ্ছে হিরো।’
‘তাহলে ভিলেনটা কে,আমি?আমাকেই কি ছেঁটে ফেলতে চাইছ?’
‘তুমি আমার জীবনের ভিলেন নও,হিরোও নও,তুমিই আমার জীবন।আর তোমাকে আমি ছেঁটে ফেলতে চাচ্ছিনা বরং অর্জন করার মত দূরত্বটুকু অতিক্রম করতে পারছিনা।আজকের পর আমাদের আর দেখা হবেনা নাহিদ।’
কথাগুলো বলেই নিপা দ্রুত হেটে চলে গেল নাহিদের দিকে একবারও না তাকিয়েই।তাকালে নাহিদ দেখতে পেত নিপার দুটো গালই ভেজা।এরপর অবশ্য নাহিদ অনেক চেষ্টা করেছে নিপার সাথে কথা বলার,দেখা করার কিন্তু পারেনি।নিপার চরিত্রের এই দিকটা খুব ভালভাবেই জানে ও।প্রচন্ড একগুঁয়ে আর জেদী মেয়ে ও।দিন পনের পর নিপার একটা এস,এম,এস আসল যে “ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে ওর দু:সম্পর্কের এক চাচাত ভাইয়ের সাথে।নাহিদ যেন দয়া করে কোন সিনক্রিয়েট না করে।”
এরপর যা হওয়ার তাই হল। এসব ক্ষেত্রে বাঙ্গালী যুবকদের হিরো দেবদাস সাহেব পুনর্জন্ম নিলেন নাহিদের ভিতর।শুরু হল ছন্নছাড়া,বাঁধনহারা,মদ্যপ জীবনযাপন।তবে পরিণতিটা দেবদাসের বরণ করতে হয়নি নাহিদের, কারণ তার ছিল একজন অকৃত্রিম বন্ধু, তিশা।তার বাড়ানো হাত ধরেই খাদ থেকে উঠে এসেছিল নাহিদ।নতুনভাবে তাকে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিল তিশাই।
তিশার ইচ্ছেতেই বিয়েটা হয়।নতুবা নাহিদের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা চিন্তা করার কিংবা বলার সাহস কোনোটাই ছিলনা।
বিয়ের রাত পুরোটাই কাটিয়ে দিয়েছিল ওরা গল্প করে।কত কথা,কত পরিকল্পনা।কখন যে রাত পার হয়ে ভোর হয়ে গেছে ওরা কেউ টেরই পায়নি।নাহিদই আগে টের পেল এবং বেশ বড়সড় একটা ধাক্কাও খেল যখন তার মোবাইলের স্ক্রীনে নিপার বাবার কলটা দেখতে পেল।
‘নাহিদ একটু ল্যব এইডে আস।ইমারজেন্সী।’
আংকেলের গলার স্বরে কি যেন ছিল যে নাহিদের পুরো অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।এক ঘন্টার মধ্যেই সে ল্যাব এইডে পৌছল।
নিপা তার হাতের ধমনী কেটে ফেলেছে।আজ ভোর পাঁচটায় ও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।ওর মা ফজরের নামাজের জন্য উঠে ওর চাপা গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখে এই অবস্থা।
দুপুরের দিকে নাহিদ নিপার কেবিনে ঢুকল সাথে আংকেল।
‘নিপা, কেন?সব তো তোর মতামত নিয়েই করছিলাম।ওর বাবার কন্ঠে রাগ নাকি উৎকন্ঠা বুঝা যাচ্ছিলনা।’
‘মতামত নিয়ে না বাবা,আমাকে জানিয়ে করছিলে।আর কাউকে কোনোকিছু জানানোর মানে কিন্তু এই না যে,এতে তার মত আছে।’
‘তুই আমাকে স্পষ্ট করে বললিনা কেন?’
‘আমি তোমাকে পরিষ্কার করেই বলেছিলাম যে,নাহিদকে আমি কোনোদিনও ঠকাবনা তবে তোমার অবাধ্যও হবনা।তোমার কথামতই আমি তাকে বলেছি আমার জীবন থেকে সরে যেতে।আমার মিথ্যা বিয়ে ঠিক হওয়ার খবরও তাকে দিয়েছি যেন আমাকে ও খুব দ্রুত তার মন থেকে মুছে ফেলতে পারে।প্রথম প্রথম ও খুব চেষ্টা করত যোগাযোগ করার কিন্তু গত একমাস আর যোগাযোগ করেনি।’
‘তোমার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর পাওয়ার পর আমি চাইনি তোমাদের আর বিব্রত করতে।’এ কথাগুলো বলতেই নাহিদের গলা ধরে এল।তার মনে হচ্ছে সে যেন একটা চোরাবালিতে পড়ে গেছে এবং আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে।ও চেষ্টা করছে স্থির থাকতে কিন্তু মনের ভেতর তুফান বয়ে যাচ্ছে।ওদের বাপ মেয়ের কোনো কথাই আর কানে যাচ্ছেনা ওর।হঠাৎ আংকেলের একটা কথায় ও সম্বিত ফিরে পেল
‘ঠিক আছে তুই সুস্থ হ,তারপর তোদের বিয়ে দিয়ে দিব।আমার আর আপত্তি নেই।’
‘সম্মতিও তো নেই বাবা।’
‘তোর এটেম্পট টু সুইসাইড এ ও তো আমার সম্মতি ছিলনা,তারপরও তো করেছিস ,নাকি? সুইসাইডের চেয়ে বরংবিয়েটা আমার জন্য ঢের ভাল অপশন।আর আমি মনে করি একজন বাবা হিসেবে মেয়ের জন্য বেটার অপশন চুজ করার অধিকার আমার আছে।’
নাহিদ আর দাঁড়াতে পারলোনা,দৌড়ে বের হয়ে গেল।
বাসায় ফিরে তিশাকে সব খুলে বলা ছাড়া উপায় ছিলনা।তিশা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বাসা থেকে বের হয়ে গেল,এরপর থেকে ওর ফোন বন্ধ,ওর খোঁজও কেউ দিতে পারছেনা।
নাহিদের ফোনটা বাজছে,হাতে নিতেই স্ক্রীনে তিশার নামটা ভেসে উঠল।কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করল ও
‘ল্যাব এইডে নিপার কেবিনে আস।’
নিপার কেবিন।নাহিদ,নিপা,তিশা আর নিস্তবতা।
নিপাই নিস্তবতা ভাঙ্গল।
‘নাহিদ,গত দুদিন নিপা এখানেই ছিল,বলছিল আমাদের জীবন থেকে সরে যাবে।এরপর অনেক যুক্তিতর্ক আর কথা কাটকাটি পর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,সেটাই এখন তোমাকে বলব।
জীবন আমাদের যে বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছে সেখানে আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।কেউ কাউকে ছাড়া ভাল থাকতে পারবনা।যদি তিশা চলে যায়তুমি কখনও ওকে ভুলতে পারবেনা আর যদি আমি তোমার লাইফে না থাকি থাহলে সারা জীবনই তুমি একটা অপরাধবোধে ভুগবে,যে কি হত আর একটা মাস অন্তত অপেক্ষা করলে?’
‘কি বলতে চাইছ তুমি?’
‘নিপা বলতে চাইছে,আমরা তিনজনই একসাথে থাকব।তুমি নিপাকেও বিয়ে করবে’
‘হোয়াট?’
‘ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ বৈধ।সমাজের একটু ভ্রƒকুটি হয়ত থাকবে কিন্তু যদি এখন এটা উপেক্ষা করার সাহসটুকু না দেখাতে পার তাহলে সারা জীবন বিবেক ও আত্মার ভ্রƒকুটি সইতে হবে, এটা নিশ্চিত।’

নাহিদের দৃষ্টি এখনও ভাবলেশহীন তবে ঠোটের কোণের হাসির রেখাটুকু কিছুতেই আড়াল করতে পারছেনা ও।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.