নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি গর্বিত আমি বাঙ্গালী

নিজের সম্পর্কে লেখার মত কিছুই নেই , খুব ই অগোছালো মানুষ আমি । গোরস্থান পাহারা দেওয়ার বাইরে টুকটাক লেখালেখি করি। গান গাইতে খুব ভালোবাসি !

গোরস্থানের প্রহরী

নিজের সম্পর্কে লেখার মতকিছুই নাই , খুব ই অগোছালো মানুষ আমি । গোরস্থান পাহারা দেওয়ার বাইরে টুকটাক লেখালেখি করি। গান গাইতে খুব ভালোবাসি !

গোরস্থানের প্রহরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মে দিবস এবং শত লাশের মাঝে আমাদের মে দিবস

০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১:০৪



দেখিনু সে দিন রেলে

কুলি বলে এক বাবু সাব তারে

ঠেলে দিল নিচে ফেলে

চোখ ফেটে এলো জল

এমন করে কি জগত জুড়িয়া

মার খাবে দুর্বল।।

…কাজী নজরুল ইসলাম



আজ মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক ঐক্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১২৮ বছর পূর্বে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়িয়া তোলেন। তখন তাহাদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও ছিল না। নামমাত্র মজুরিতে তাহারা মালিকের ইচ্ছামতো কাজ করিতে বাধ্য হইতেন। ১৮৮৬ সালের ৩ মে হে মার্কেটে আহূত ধর্মঘটী শ্রমিকদের সমাবেশে পুলিশের হামলায় ছয়জন শ্রমিক নিহত হন।

তার প্রতিবাদে ৪ মে হাজার হাজার শ্রমিক ফাটিয়া পড়েন বিক্ষোভে। সেইদিনও পুলিশের গুলিবর্ষণে পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেন। ঐ আন্দোলন গড়িয়া তুলিবার অপরাধে কয়েকজন শ্রমিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এইভাবে প্রাণের বিনিময়ে শ্রমিক শ্রেণী কায়েম করে দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের অধিকার।

তবে শ্রমকে ভিত্তি করিয়া সভ্যতার সূচনা হইলেও শ্রমিকের মর্যাদা আজও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহে শ্রমজীবীদের দুর্দশা ঘোচে নাই। বিশ্বায়নের যুগে উদারীকরণ নীতিও শ্রমিক স্বার্থে আঘাত হানছে বলে বিভিন্ন মহলের জোরালো বক্তব্য রয়েছে। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার সংরক্ষণে কী সরকারি, কী বেসরকারি কোন পক্ষই আন্তরিক নয়। মে দিবসের অনুষ্ঠানে কেবল বক্তৃতা-বিবৃতি শোনা যায়। এসব কারণেই শ্রমজীবীদের ভাগ্য আর বদল হয় না।



এবার আসি আমার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে , কেমন যাবে এবারের আমাদের মে দিবস :

স্বজনের অপেক্ষা। ‘লাশ চাই’ দাবি। করুণ-শুকনো মুখ।

ভারী সরঞ্জামের চাপে মিশে যাওয়া মানুষ। যে মানুষের

শ্রমে অর্থনীতির চাকা ঘুরত, সে মানুষ আজ নেই। হাজারো মানুষের

‘বাঁচাও’ আওয়াজ নিমিষে চাপা পড়লো যেখানে, গত বুধবার সকালে,

সে রানা প্লাজা সামনে রেখে, এবার ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে আজ

পালিত হবে মহান মে দিবস।

দিবসটি সামনে রেখে দেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট,

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম

খালেদা জিয়া,এবং দেশের মান্যগন্য ব্যাক্তি ,পৃথক বিবৃতিতে মহান মে দিবসের গুরুত্ব

তুলে ধরে বিবৃতি দিবেন ইনশাআল্লাহ।

দেশে এখন এক শোকাবহ অবস্থা। শত শত মানুষকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়েছে সাভারের রানা প্লাজায়। আগেও এভাবে শ্রমিকের জীবন গেছে। কোনো বিচার হয়নি। এবার কি বিচার হবে?

সরকারের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত, ব্যবসায়ী নেতাদের শ্রমের যথার্থ মূল্য দিতে অস্বীকৃতি আর বিদেশী শক্তির অস্থিরতা তৈরির

চেষ্টার ভেতর দিয়ে চলছে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রম খাত তৈরী পোশাক শিল্প। এ শিল্পে অন্তত ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। বিশ্বের উন্নত দেশে শুল্ক দিয়েই

রফতানি হচ্ছে সে পোশাক। শ্রমের ন্যায্যমূল্য তো পাচ্ছেন ই না এসব শ্রমিক, তার ওপর অনিরাপদ কর্মক্ষেত্র তাদের জীবনকে করেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার।

সাভারের রানা প্লাজার ঘটনা প্রথম নয়। জীবনের এমন বীভৎস-নিষ্ঠুর অপচয় আমরা আগেও প্রত্যক্ষ করেছি।এর আগে স্পেকট্রামে একই রকম ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছিল। বিচারহয়নি।গত বছরের নভেম্বরে আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টে পুড়ে মারা গেছে শতাধিক শ্রমিক। তাদের অনেকের লাশের হদিস মেলেনি।

রক্ত পানি করে, ঘাম ঝরিয়ে যারা সুতা কাটে, মেশিন ঘোরায়, আয়রন চেপে কাপড় সোজা করে, ফিনিশিং করে সাহেবদের উপযোগী ব্র্যান্ডের দোকানে পৌঁছাতে সহায়তা করে সেই

তৈরী পোশাক শ্রমিকরা আজ বড় বেশি জীবনমরণ সঙ্কটে।

সরকার এর নিজেদের কোমরে অনেক শক্তি আছে, এটা প্রমাণ করতে চায়। তাই তারা সাভারের ঘটনায় বিদেশী উদ্ধার সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে।ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও তাদের সাথে সাধারণ স্বেচ্ছাসেবীরা মিলে এবারের উদ্ধারকাজ করেছেন।সেনাবাহিনীর তদারকিতে কাজটা হয়েছে কেবল। এখনো শেষ হয়নি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল একটি প্রাণের স্পন্দন থাকা পর্যন্ত তারা উদ্ধারকাজ করবে। কিন্তু আমরা দেখলাম

রোববার রাতেই তারা ভারী যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছেন।

পোশাক কারখানা মালিকদের ওপর সরকার আদৌ কি কোন চাপ তৈরি করতে পেরেছে ? আমার তো মনে হয় না বরং সরকারেরই লোকজন তাদের ব্যবহার করতে চেয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মহাজাগরণের পর সরকার নারী জাগরণ দেখানোর জন্য গণজাগরণ মঞ্চকে দিয়ে নারী সামবেশ ডেকেছিল। ২৭ এপ্রিল এটি হওয়ার কথা ছিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে। তার আগেই ২৪ এপ্রিল এ গণহত্যা ঘটলো সাভারে। ডেকে নিয়ে তৈরী পোশাক মালিকরা হরতালের দিন এতগুলো মানুষকে হত্যা করলো, তার পর জীবিতদের উদ্ধারে সরকারের ধীরগতি আর লাশের জন্য অপেক্ষা,

মানুষের জীবনকে নিয়ে সরকারের এমন খেলা সবাইকে স্তম্ভিত করেছে। সতিই কি বিদেশি সাহায্য নিলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হত ?

গত বছরের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। এরপর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ দেখার জন্য বুয়েট অ্যালামনাই

অ্যাসোসিয়েশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

সে সময় তৈরী পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছিল, পর্যায়ক্রমে সব কারখানায় যাবেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিত করে সুপারিশ করবেন। পোশাক

মালিকদের সেই সব সুপারিশ বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেয়া হবে। কর্মযজ্ঞ দেখাতে গত ২৩ ডিসেম্বর গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে নিয়ে সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্ট বা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশসম্পন্ন চারটি কারখানা পরিদর্শন করেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা।

বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে তাৎণিক কিছু সুপারিশও করেছিলেন

তারা। তারপর আরও পাঁচ মাস চলে গেলেও সেই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম

এখনো শেষ হয়নি । জানিনা কোনদিন শেষ হবে ।

আবার আসি সাভারে, ৯তলা ভবনের মালিককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।তাকে জামাই আদরে হেলিকপ্টারে করে চড়িয়ে আনা হয়েছে।কিন্তু তার আশ্রয়দাতা, যার মদদে সেই রানা এতটা বেড়েছে, তার কোনো শাস্তি হবে না, এটা প্রায় নিশ্চিত। রানাও ছাড়া পাবে পরিস্থিতি সামলে উঠলে। তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েক দিন মিডিয়া সরব ছিল, সরকার গরম ছিল, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি ছিল। তারপর সব শেষ।এবারো তাই হবে বলে অনেকেরই শঙ্কা। তবে সেই শঙ্কা মিথ্যে হোক, এবারের শ্রম দিবসে এটাই আমাদের প্রার্থনা।

পারলাম না শাহিনা বোন তোমায় বাচাতে । মাফ করে দিও সেলাই দিদিমনি।তোমার রক্তে আবার আমার সোনার বাংলা আবার কলঙ্কিত হল। কিন্তু এভাবে ক্ষমা চেয়ে আর কত দিন ? ? আর আমার দেশে চাইনা শ্রমিকের রক্ত আর শুনতে চাইনা খেটে খাওয়া মানুষের চিৎকার।

সাভারে ঘটে যাওয়া গনহত্যা হোতা সোহেল রানা সহ জড়িত সকলের কঠোর শাস্তি চাই।সরকারের কাছে জোরালো আবেদন জানাই এসব খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের নিরাপত্তার।



বাংলাদেশের সমস্ত শ্রমিক ভাই-বোনদের জানাই শ্রমিক দিবসের প্রানঢালা অভিনন্দন । ইনশাআল্লাহ জয় আপনাদের হবেই।



সব শেষে এটাই বলতে চাই :-

জোড়হাতে মোনাজাত করি, আয় খোদা! রহমান।

ভেস্ত নসিব করিও সাভারের সকল মৃত্যু¬ব্যথিত প্রাণ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.