নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।
গ্রামের মানুষ এখনো ঝাঁড়ফুকে বিশ্বাস করে।
ছোট খাটো অসুখ থেকে শুরু করে প্যারালাইসিস রোগীকেও ঝাঁড়ফুকের চিকিৎসা দেয়। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম আমার মায়ের কাছে নিয়মিতই দুই-একজন মানুষ আসতো চিকিৎসা নিতে। তাদেরকে ঝাঁড়ফুক করতেন। বিশেষ করে সকাল বেলা। ফজরের পরপরই খালিপেটে চিকিৎসা করতেন। তারা নাকি ভালোও হয়ে যেত। এখনো এরকম চিকিৎসা করে চলছেন। কারো কাছ থেকে মা কখনো টাকা নেন না। চিকিৎসা শেষে বলে দেন যদি ভালো হয় তাহলে যেন ভিক্ষুকদেরকে অথবা মসজিদে দান করে দেয় সাধ্যমত। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও না করতাম না কখনো। ঝাঁড়ফুকের সরঞ্জাম আমাকেও আনতে বলতো মাঝে মাঝে। আমি এনে দিতাম।
অনেকগুলো রোগের চিকিৎসা করেন আমার মা।
কিছু রোগ আছে রোগী ছাড়াই চিকিৎসা দেন দেখি। এতেও নাকি কাজ হয়। যে সব রোগের চিকিৎসা করেন তার মধ্যে অন্যতম হলো:
(১) সাপের বাতাস
(২) হাড় মচকানো
(৩) কোন কিছু দেখে ভয় পেয়ে জ্বর আসলে
(৪) স্যুত উঠা
(৫) কাটা বিঁধলে বের করা
(৬) সলম
সাপের বাতাস: এক ধরনের সাপ আছে যে সাপের নি:শ্বাস শরীরে লাগলে নাকি এমন রোগ হয়। আসলেই এমন কোন নাম আছে কি না আমার জানা নেই। এর কোন বৈজ্ঞনিক ভিত্তিও আমি জানি না। আমার মনে হয় সবটাই চলে বিশ্বাসের উপরে। এই রোগের চিকিৎসা করা হয় কচুপাতায় পানি ভরে তাতে কোরআনের আয়াত পরে ফুক দেয়ার মাধ্যমে। পড়া পানি রোগীকে খাওয়াতে হয়। রোগীকে না খাওয়ালেও চলে। যিনি রোগের সংবাদ বলেন সে খেলেই নাকি ভালো হয়ে যায় রোগী। ফোন করে বললে কবিরাজ নিজেই পান করে নেন পড়া পানি। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো:
- হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়াই বমি
- বমির সাথে পাতলা পায়খানা হওয়া
- স্যালাইন খাবার পরেও পাতলা পায়খানা ভালো না হওয়া।
হাড় মচকানো: এই রোগ মূলত শরীরের হাড়ের স্হানচ্যুতি থেকে হয়। কোথা থেকে পড়ে গিয়ে হাতে বা পায়ের জয়েন্টে ফুলে গেলে বা ব্যাথা হলে এর চিকিৎসা করা হয়। এর চিকিৎসা পদ্ধতি দুইটা। একটা হচ্ছে চুলার বাসি ছাই কাঠাল পাতার কোকড়ানো পাতার মধ্যে নিয়ে তার সাথে পিঁপড়ার মাটি মিশিয়ে নিতে হয়। সবগুলো উপকরণ মিশিয়ে কি পড়ে যেন ফুক দেয় আমি জানি না। তিন দিন এই চিকিৎসা করলেই নাকি ভালো হয়ে যায়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো শরীরের সাথে এক ধরনের গাছের শিকর বেঁধে রাখা হয়। গাছটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।
কোন কিছুর ভয় পাওয়া: এই রোগের চিকিৎসার অভাব নেই। কখনো দুইটা বাঁশের ছেট কঞ্চি দ্বারা কখনো বা পানি পড়া দিয়ে। প্রথমে পানি পড়া দেয়া হয় না সাড়লে বাঁশের দুইটা কঞ্চি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। যদি আসলেই ভয় পেয়ে থাকে তাহলে একটা কঞ্চি আরেকটা থেকে বড় হয়। ভয় পেলে না সারা পর্যন্ত রোগীর গায়ে জ্বর থাকে।
স্যুত উঠা: এই রোগের এমন নাম কেন আমি জানি না। এর উপসর্গ হলো তলপেতে গুড়গুড় ডাকে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, বার বার পাতলা পায়খানা হয়। ভারী জিনিসপত্র তুলতে গিয়ে এই রোগ হয় বলে শুনেছি। এর চিকিৎসা নিতে আসে বেশি মানুষ। প্রায় প্রতিদিন সকালেই আসে। দুই হাতেই কোরআনের একটা আয়াত পড়ে ফুক দেয়া হয় আর মধ্যমাঙ্গুলি ধরে হাতে টানতে হয়। একবারের চিকিৎসাতেই নাকি রোগী ভালো হয়ে যায়।
পায়ে বা শরীরেরর কোন স্থানে কাটা বিঁধলে বের করার জন্য এক বিশেষ ধরনের ভেষজ গাছ বেঁধে দেয়া হয়। তিন দিনেই কাটা বের হয়ে যায়। ভেষজ গাছটি আগে থেকেই ঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন আমার মা।
সলম হলো এক ধরনের দাঁদ। শরীরের সাদা সাদা রেশ পড়ে। চুলকায় মাঝে মাঝে। ফিটকিরি আর নারিকেল তেলের সাথে কি একটা উপাদান মিশিয়ে যেন এর মেডিসিন প্রস্তুত করা হয়। আক্রান্ত স্থানে এক সপ্তাহ লাগালেই ভালো হয়ে যায়।
আমাদের বাড়ির আশেপাশে আরো দুই একজন বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করে থাকেন। এই যেমন পেটে পাথর হলে তার চিকিৎসা করেন লেবু দিয়ে। কারো শারিরিক সমস্যার দরুণ বিয়ে বউ না থাকলে চিকিৎসা। জ্বীনে ভুতে ধরলে তারও চিকিৎসা আছে আমাদের গ্রামে। বলা যায় কবিরাজ গ্রাম। লোকজনও আসেন দূরদূরান্ত থেকে। কারো কাছ থেকেই চিকিৎসা বাবদ টাকা নেন না কেউই। দুই একটা ভেষজ যেগুলো কিনে আনতে হয় সেগুলো ছাড়া ঝাঁড়ফুক সবই করেন বিনে পয়সায়।
এই পোস্টটি লেখার উদ্দেশ্য হলো এখনো মানুষ কি পরিমান ঝাঁড়ফুকে বিশ্বাস করেন তার একটা প্রমান দেয়ার জন্য। এইরকম টোটকা চিকিৎসায় আবার রোগী ভালো হয় দেখেও আশ্চর্য লাগে।
ছবি সংগৃহীত
৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২৬
হাবিব বলেছেন: কাজ হয় বলেই তো মানুষ বার বার আসে। একজনের ভালো হয় বলেই সে আরেকজনকে খবর দেই।
২| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৫৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কোরআনের আয়াতের রোগ সারানোর ( শেফা) শক্তি আছে। সুরা ফাতেহা অনেক রোগের ওষুধ বলা যেতে পারে। কোরআনের আয়াত পড়ে ফু দেয়া বা পানিতে ফু দেয়া এগুলির অনুমতি আছে। আপনার আম্মার চিকিৎসায় কাজ হওয়ার মূল কারণ কোরআনের আয়াত। তবে ইসলামে দোয়ার সাথে দাওয়া দুইটাই চালাতে বলা হয়েছে। সামর্থ্য না থাকলে বা দুরারোগ্য রোগ হলে কোরআনের চিকিৎসার সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২৮
হাবিব বলেছেন: অনেকে কোরআনের আয়াত লিখে তাবিজও ব্যবহার করেন দেখেছি। তবে আমার মা কখনো তাবিজ দেননি। লোকজনের উপকার হয় দেখে আমিও না করি না।
৩| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:১০
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
দাদি নানির মুখে শুনেছিলাম। কাজ হয়।
দাওয়াই খাইলে ৭ দিনে ভাল হয়, না খাইলে একসপ্তাহ লেগে যায় সারতে।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২৯
হাবিব বলেছেন: ভেষজ গাছের গুণাগুণ অনেক। আমার দাদা-দাদীও এমন চিকিৎসা করতেন। সাথে ঝাঁড়ফুকও থাকতো। দাদা বলতেন মানুষের মুখই সব কিছু। হারাম খেয়ে মিথ্যা বলে মুখ নষ্ট করলে সেই মুখের কথায় নাকি কোন উপকারই হয় না।
৪| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:১০
নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ভেষজ উপকার আছে শুনেছি। খুব গুছিয়ে লিখেছেন । আপনার মায়ের জন্য শুভ কামনা ।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৭
হাবিব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু মাকে শুভকামনা জানানোর জন্য
৫| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:১১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: (১) সাপের বাতাস
(৪) স্যুত উঠা
(৬) সলম
এই ৩টার কথা আগে কখনো শুনি নাই।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯
হাবিব বলেছেন: এগুলোর অন্য নাম ও থাকতে পারে
৬| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:১১
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন।
মানুষ এখনও কুসংস্কার বিশ্বাস করে। শিক্ষিত লোকজনও জন্ডিস হলে মাথা ধোয়ায়। মাথা দিয়ে নাকি হলুদ পানি বের হয়।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২১
হাবিব বলেছেন: জন্ডিসের চিকিৎসার নামে গ্রামে অপচিকিৎসা চালু
৭| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:০২
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমেরিকাতে ভালো ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব হয় না, ২/৩ মাস পরের এপোয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়, আমি প্রায়ই ডাক্তারের কাছে যাই, বুঝার চেষ্টা করি কি হয়েছে; তবে, নিজের চিকিৎসা নিজে করি।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৪
হাবিব বলেছেন: ডাক্তারের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই শ্রেয়। আপনার মত কজনে বুঝে বলুন
৮| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:১৩
অপু তানভীর বলেছেন: এই রকম চিকিৎসার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি । আমার তখন বয়স কম । একবার আমাকে বেড়লে কামড় দিলো । আমাদের গ্রামে তখন বেড়াল কুকুরে কামড় দিলে চাড়া পড়া দেওয়ার প্রচলন ছিল । ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রতি অনিহা সবার মাঝে । আমাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হল । সে ভাড়ের চাড়া ভেঙ্গে আমার ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের করে সেই ক্ষত স্থানের উপরে দিল । তারপর মন্ত্র পড়ে ফু দিল। তারপর বলল যদি বিষ থাকে তাহলে চাড়া শরীরের সাথে আটকে যাবে । পড়বে না । দেখা গেল সেটা পড়লো না । তারমানে বিষ আছে।
বাসায় এসে আমি বললাম, রক্ত আঠলো তাই চাড়া আটকে গেছে । এখানে বিষ থাকা না থাকার কোন ব্যাপার ন । তারপর আমি নিজেই আবারও একটা কাজটা করলাম । ক্ষত থেকে একটু রক্ত বের করে আরেকটা চাড়া বসালাম । এবং সেটা আটকে গেল।
পরে অবশ্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়েছিলাম ।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬
হাবিব বলেছেন: আপনি সচেতন না হলে বিপদে পড়তেন। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ
৯| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:৪০
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
তাবিজ ও তদবীরের প্রতি বাঙালীর আজন্ম নেশা। এই নেশা এই ঘোর কাটবে বলে মনে হয় না। ভালো লিখেছেন। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। +++
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৮
হাবিব বলেছেন: বেশি আজব লাগে যখন দেখি ভুতে বিশ্বাস করে ।
১০| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪
তারেক ফাহিম বলেছেন: অনেকটা গুচিয়ে লিখছেন।
আমার দাদুও ঝাড়-ফুক করতেন কোরআনের আয়াত পড়ে।
আমার দাদু মুন্সি নামে পরিচিত ছিলেন দু-চার গ্রামে।
সবকিছুিই বিশ্বাসের উপর।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৯
হাবিব বলেছেন: কোরআন এর আরেক নাম শেফা। তবে ঔষধ গ্রহন করা জরুরী।
১১| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চিকিৎসায় কাজ হলে ভালো । ইন্টারেস্টিং। হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে মারা যাওয়ার চেয়ে এসব ট্রিটমেন্ট মন্দ নয়। টর্গেট হলো আরোগ্য লাভ করা ।
৩০ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩১
হাবিব বলেছেন: গ্রামের মানুষ তো ডাক্তার বলতে ঔষধ বিক্রেতা কে বুঝেন। অবশ্য সচেতন মানুষ ও আছে
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:৪৮
ইন্দ্রনীলা বলেছেন: এমন চিকিৎসার কথা আমিও শুনেছি।
কিন্তু সত্যি কি কাজ হয়? নাকি মানুষের অন্ধ বিশ্বাস এখানে কাজ করে?