![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৩৯ সাল-- ইউরোপ।
সাজগোজপ্রিয়, ভোজনবিলাসী শান্তিপ্রিয় প্রেমিক জাতি ফরাসীরা ভাবতেই পারেনি তাদের আবার যুদ্ধের ঝামেলায় পড়তে হবে উদীয়মান শক্তি হিটলারের জার্মানীর সাথে!
তাদের দাদারা যুদ্ধ করেছে ১৮৭০-৭১ এ, তাদের বাবারা যুদ্ধ করেছে ১৯১৪- ১৮ তে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে--- আবার এখন এই মাত্র ২০ বছর পরে! একই মনোভাব সেনাবাহিনীতেও, ফরাসী সেনাবাহিনীর অফিসারদের মধ্যেও যুদ্ধের প্রতি খানিকটা বিতৃষ্ণা ছিল।
জার্মানী যখন পোল্যান্ডকে প্রায় সম্পুর্ণ দখল করে ফেলেছে তখন জার্মানীর পশ্চিম প্রান্তের ফ্রান্স -জার্মানী বর্ডারে ফ্রান্সের সৈন্য সংখ্যা জার্মানীর তুলনায় বেশীই ছিল, প্রায় ১০০ ডিভিশন আর জার্মানীর ছিল কুল্লে ২৩ ডিভিশন! তখন যদি ফ্রান্স জার্মানীর পশ্চিম দিকটা আক্রমন করে রার উপত্যকার বড় ইন্ডাস্ট্রি গুলো দখল করে, জার্মানীর যুদ্ধ সরন্জাম তৈরী আর সরবরাহে মারাত্মক বিপর্যয় হতো, ভবিষ্যৎ যুদ্ধের মোড়ই হয়ত ঘুরে যেত! অবশ্য এতটা দুরদৃস্টি ফরাসীদের কাছ থেকে আশা করাটা ঠিক হচ্ছে কিনা কে জানে।
যাহোক ফরাসীরা তা না করে ইস্পাত আর কংক্রীট দিয়ে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল বসালো প্রায় বর্ডার বরাবর, নাম মেজিনো লাইন ( Maginot Line)
তাদের পাশে প্রতিরক্ষা অবস্হানে গিয়ে দাড়ালো ৪ টি বৃটিশ আর্মী ডিভিশন। এই বৃটিশ সেনাদের কমান্ডার ছিলেন ১ম বিশ্বযুদ্ধে প্রচুর রক্ত দেখে ক্লান্ত কিছু পোড় খাওয়া জেনারেল।
এই সব ঝুট ঝামেলার মধ্যে যোগ হল ফ্রান্সের রাজনৈতিক দলগুলোর আভ্যন্তরীন গোলমাল। তাদের নিজেদের মধ্যে এত মতপার্থক্য যে তারা সিদ্ধান্তই নিতে পারছিলনা কখন কে কি করবে।
একটা জাতির জন্য এটা বড়ই দুর্ভাগ্য আর দুর্ভোগের।
ফরাসী রাজনীতিবিদদের এই অনৈক্য আর দুরবস্হাটা বুদ্ধিমান এডলফ হিটলার ভালই বুঝলেন, এটাও বুঝলেন ফরাসী জেনারেলরা যুদ্ধ করতেই অনিচ্ছুক! আর এটাই ভাল সুযোগ। তিনি এটাও বুঝলেন ফান্সকে আক্রমন করতে হলে খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, বৃটিশরা তাদের সৈন্য এনে ফরাসী প্রতিরক্ষা আরো শক্তিশালী করার আগেই, জলদি!
ব্যাস হিটলারের জলদি মানে জলদি। ২৭ শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৯, হিটলার তার সিনিয়র জেনারেলদের ডেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফান্স আক্রমন করতে হুকুম দিলেন।
কিন্তু কিছু সমস্যা জার্মান সেনাবাহিনীতেও ছিল।
জার্মানী মাত্র ১ লা সেম্টেম্বর পোল্যান্ড দখল করার মত বিশাল একটা কাজ সুসম্পন্ন করেই বসছে। তবে ঐ জয় দ্রুত শেষ করতে ব্লিৎসক্রীগ আক্রমনের স্টাইল বজায় রাখতে গিয়ে নিজেদের যুদ্ধের সরন্জামাদি প্রায় নিঃশেষ করে এনেছিল। সেগুলোর প্রতিস্হাপন ও সৈন্যদের পুনর্গঠনের জন্য (Regroup, refit, resupply and reorganize) জার্মান জেনারেলদের কয়েকমাস সময়ের প্রয়োজন ছিল।
জার্মান সেনাদের ঐ মুহুর্তে সদ্য দখলকৃত পোল্যান্ড ছেড়ে পশ্চিমে ফরাসী আর বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত প্রস্তুতিই ছিলনা। আর পুর্ণ প্রস্তুতি বিহীন এধরনের যুদ্ধ আক্রমনকারীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল মাত্র এক মাসও হয়নি (১ লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ পোল্যান্ড আক্রমন দিয়ে শুরু) এরই মধ্যে হিটলারের সাথে তাঁর জেনারেলদের কিন্চিৎ মত পার্থক্য দেখা দিল! হিটলার চাইছিলেন ফ্রান্স এর এলাকায় একটা বোল্ড এটাক করবেন কারন তখন ফ্রান্স প্রস্তুত ছিলনা কিন্তু তিনি লজিস্টিকস এর প্রয়োজনীয়তাটা অগ্রাহ্যই করছিলেন, অথচ আর্মী মুভস অন বেলি; খাবার, পানি, জ্বালানী, এম্যুনিশন তথা যথাযথ লজিস্টিকস ছাড়া রনক্ষেত্রে তুখোড় সেনাবাহিনীও অকেজো হয়ে পড়ে। অন্যদিকে জার্মান জেনারেলরা চাইছিলেন বিপুল পরিমানে বেশী শক্তি নিয়ে পোল্যান্ড দখলের মত এক ধাক্কায় ফ্রান্স দখল করতে। আর ঐ প্রস্তুতির জন্য তারা একটা লম্বা গ্যাপ চাইছিলেন।
হিটলার নিজ দেশে আর পার্টিতে তার পক্ষে জনমত সৃস্টির জন্য রাইখস্টাডে (সংসদে) এক ভাষন দিলেন। তিনি বললেন 'ফ্রান্সের বিরুদ্ধে
জার্মান রাইখস্টাডে (সংসদে) হিটলার
জার্মানীর কোন অভিযোগ নেই, এংলো জার্মান বন্ধুত্বও তারা চায় কিন্তু ভার্সাই চুক্তির পোল্যান্ডের ব্যাপারে কোন কথা চলবেনা....যদি যুদ্ধ বাধে .. এই জার্মানী ১৯১৮ এর জার্মানী নয়..'। তারপর জার্মানী অপেক্ষা করল বৃটেন আর ফ্রান্স কি বলে শোনার জন্য।
পরদিনই ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড দালাদিয়ের শান্তির নিশ্চয়তা চাইলেন, ফরাসী প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের
আর ৫ দিন পর ১২ ই অক্টোবর ১৯৩৯ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেইন বললেন শান্তির ব্যাপারে মুখের কথায় হবেনা বাস্তবে দেখাতে হবে!
ওদিকে জার্মান সেনাবাহিনীর সি.ইন.সি জেনারেল ওয়ালথার ফন ব্রাউচিৎস আর চীফ অফ জেনারেল স্টাফ জেনারেল হালডের ৭ ই অক্টোবর ১৯৩৯ হিটলারের সাথে দেখা করে যুদ্ধটা একটু পেছাতে বললেন। হিটলার অনড়। হিটলারের সাথে ব্রাউচিৎস এর ছবি নীচে:
তিনি একবারে ১২ ই নভেম্বর ১৯৩৯ ফ্রান্স আক্রমনের তারিখই ঠিক করে ফেললেন, উদ্দেশ্য কাছের বেলজিয়াম, হল্যান্ড ও ফ্রান্সের উত্তর ভাগ দখল করে মূল ফ্রান্স আক্রমনের বেস তৈরী করবেন।
(বাকিটা আগামীবার, ধন্যবাদ)
১১ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২
ঢাকাবাসী বলেছেন: পড়বার জন্য কৃতজ্ঞ, আর ধন্যবাদ নিন।
২| ১১ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২
জেকলেট বলেছেন: Thank u for a handsome start. In our country we don't have enough writers on various topics like: History, Science, IT, Geography etc.
১১ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:১১
ঢাকাবাসী বলেছেন: আপনার আন্তরিক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নিন। লেখক নিশ্চই আছেন তবে পাঠক থাকলেই লেখক সৃস্টি হয়, তাইনা? রবিন্দ্রনাথ সক্রেটিস বা জীবন দর্শন নিয়ে লিখলে কি পাঠক পড়েন? সামুতেই খেয়াল করে দেখুন, পাঠক খুব একটা তো দেখি না।
৩| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:২৭
জিপসি মেহেদি বলেছেন: বেশ ভাল লাগছে। প্লিজ চালিয়ে যান...
১৩ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৮
ঢাকাবাসী বলেছেন: পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা আর আন্তরিক ধন্যবাদ। শেষ পর্বটাও ছেড়ে দিয়েছি, পড়েছেন?
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
আমি শুধুই পাঠক বলেছেন: বাহ, লেখা সুপাঠ্য হইছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।