নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ- বৃষ্টময় এক রাতে.......

২০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:১১

রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই। প্রচন্ড জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সাথে ব্জ্রপাত হয়ে তুফান শুরু হয়েছে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে। অয়ন টেবিল থেকে মোমবাতি জ্বালাতেই দরজায় কেউ কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলো। অয়ন তেমন কান দিলো না। ঝড় বাজলির রাতে এমন শব্দ হতেই পারে। প্রচন্ড বাতাসে দরজায় এরকম অনেক শব্দ হয়। অয়ন মোমবাতি জ্বালিয়ে বিছানায় হেলান দিতে যাবে তখন দরজায় আবার শব্দ হলো। শব্দ টা খুব দ্রুত হচ্ছে। মনে হচ্ছে দরজায় কেউ তাবাচ্ছে। অয়ন দরজার কাছে গেলে দরজায় ধাক্কা দেয়ার সাথে কারো কথার আওয়াজ ও শুনতে পাচ্ছে। হালকা করে কথার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। বাইরে ঝড়ের আওয়াজে ভিতর থেকে কিছু শুনা যায় না। কেউ একজন বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে চিকন গলায় বলছে, " কেউ কি ভিতরে আছেন?? কেউ কি ভিতরে আছেন?? এনিওয়ান প্লিজ হেল্প মি। আই এম ইন ডেঞ্জার।"
কন্ঠ্য শুনে বুঝা যাচ্ছে কন্ঠ্যটি মহিলা কেউ একজনের। তারপরও অয়ন স্পষ্ট করে বললো, " কে বলছেন আপনি?? কে আপনি??
দরজার বাহির থেকে, আবার কেউ বললো, আমি অরনা।
"কি চাই??"
"খুব বিপদে পড়েছি। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। ঝড়ের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছি। আমাকে একটু জায়গা দিবেন?? আমার ইমিডিয়েটলি একটা শেল্টারের প্রয়োজন।"
অয়ন হঠাৎ বিস্মিত হলো। এতো রাতে একজন মহিলা?? আজকালকার সময় ও ভাল না। আশ্রিতা সেজে যে কোন ক্ষতি করতে আসে নি তার ই বা প্রমাণ কি??
অয়ন ভিতর থেকে উচ্চস্বরে বললো, আমি দরজা খুলতে পারবো না। আপনি অন্যজায়গায় যান।
"এখানে আর কোন বাড়ি ঘর নেই। আমি কোথায় যাব??"
" তা আমি কিভাবে বলবো?? আপনার যেখানে খুশি সেখানে যান।"
আয়নের ছোট্ট একটা ঘর। ঘরে একটাই রুম। একা থাকে। গ্রামের একটা বেসরকারি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করে।
একলা একটা রুমে এমন ঝড়-বাজলীর রাতে কাওকে আশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না। এই ভেবে সে দরজা খুললো না।
দরজায় অনেক্ষণ ডাকাডাকির পর হঠাৎ করেই দরজার বাহির থেকে আর কোন শব্দ আসছে না।
অয়ন মনে মনে বলছে। যাক আপদ বিদায় হয়েছে।
কিন্তু অয়নের মনে ক্ষুতক্ষুত করছে। সত্যি বিপদে পড়ে নি ত। অয়ন কিছুক্ষণ পর দরজা খুললো। দেখল একজন ২২/২৩ বছরের একটি মেয়ে এখনো ওর ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। ঝড়ের দাপটে বৃষ্টির পানি এসে মেয়েটিকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটির সারা শরীর ভিজে যাওয়ায় শীতে কাঁপছে।
অয়ন হালকা সংকোচিত গলায় বললো, এই যে শুনুন।
মেয়েটি অয়নের দিকে তাকালো। মেয়েটি কে দেখে অয়নের খুব মায়া হলো।
"ভিতরে আসুন" অয়ন বললো।
মেয়েটি আস্তে আস্তে ঘরের ভিতরে ঢুকলো।
ঘরে ঢুকে অয়ন প্রশ্ন করলো, কি ব্যাপার আপনি এত রাত্রে?? এই ঝড়ের মধ্যে কিভাবে আসলেন??
"আমি ঢাকা থেকে এসেছি" একা ড্রাইভ করে এসেছি। আমার বড় দাদার বাড়ি এই গ্রামের পাশের গ্রাম। কিন্তু ঝড়- তুফানের মধ্যে গাড়ি নিয়ে এগুনো যাচ্ছে না।"
" আপনার গাড়ি কোথায়??"
"বাইরে "এখানেই।
বৃষ্টি আর রাতের আঁধারের জন্য গাড়ি দেখতে পায় নি অয়ন। অবশ্য দেখার কথাও না। অয়ন আশপাশ ভাল করে তাকায় নি।
অয়ন আবার জিজ্ঞেস করলো, আপনার নাম?? আগে ঠিক মতো শুনতে পাই নি।
"আমার নাম অরনা।
অরনা কাঁপছে। অনেকক্ষণ ভিজার কারণে অরনার খুব জ্বর উঠেছে।
অরনা বললো, আপনার নাম??
আমার নাম অয়ন।
"আর কাউকে দেখছি না যে??"
আর কেউ নেই। আমি একা থাকি।
অরনা চোখে মুখে ভয়ের সৃষ্টি হলো।
অয়ন বিছানা থেকে কাঁথা দিয়ে বললো, আপনি কাঁপছেন। আপনার নিশ্চয়ই শীত করছে।
অরনা বললো, না ঠিক আছে।
অয়ন মোমবাতিটি ধরে অরনার পাশে দাঁড়ালো। আঁধার ঘরে মোমবাতির আলোয় অরনার মুখ স্পষ্ট করে ভেসে উঠলো। অয়নের মনে হলো এ যেন কল্পনার রূপকথায় হঠাৎ এক পরী। সে এক পরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অয়ন বললো, আপনার নিশ্চয়ই এত রাতে ক্ষিদে লেগেছে। আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করছি।
অরনা বললো, আমি খেয়েছি। আমি কিছু খাবো না।
অরনার প্রচণ্ড জ্বর উঠেছে। শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। অরনা একটু ঘুমোতে চাচ্ছে কিন্তু একলা একা ঘরে তাও আবার একটা ছেলে ঘরে। ভেবেই যেন অরনা ঘুমোতে পাড়ছে না।
কিন্তু অতিরিক্ত জ্বর উঠার কারণে অরনা অনেক টা সেন্সলেসের মতো হয়েই ঘুমিয়ে পড়লো।
কিন্তু অরনার শরীর এখনো কাঁপছে। অয়ন বিছানা থেকে অরনার গায়ে কাঁথা দিল যাতে শীত না লাগে।
অয়ন অরনার কপালে হাত দিয়ে দেখলো অরনার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। ইমিডিয়েটলি একজন ডাক্তার দেখানো উচিৎ কিন্তু এতরাতে ডাক্তার ডাকা সম্ভব নয়।
অয়ন কি করবে বুঝতে পারছে না। একে এভাবে ফেলে রাখাও ঠিক হবে না। সে একটা বাটিতে পানি আর একটুকরো কাপর কে পট্টিবাজ করে অরনার কপালে জলপট্টি দিচ্ছে।
ঘুমন্ত অবস্থায় অরনার মাথা একটু তুলে জ্বরের ঔষধ খাইয়েছে। প্রায় প্রতি সচেতন ঘরেই জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথার ঔষধ আলাদা করে রাখা হয়। এগুলো বিপদের বন্ধু। জ্বর, সর্দি এগুলো কমন অসুখ। কোন ইঙ্গিত না দিয়েই এসব রোগ শরীরে গা ঘেসে। এই রোগ গুলো হলো দাওয়াত ছাড়া মেহমান।
অয়ন জলপট্টি দিতে দিতে ওর একধরণের অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। এর আগে এভাবে সে কাওকে সেবা করে নি।
অরনা ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের মুখ নিষ্পাপের মতো লাগে। কোন রাগ, অভিনান, হিংসা, বিদ্বেষ সব কিছু দূরে চলে যায়। ঘুমন্ত অবস্থায় আঁধার আবছা রুমে মোমবাতির আলোয় কাওকে যে এত সুন্দর লাগতে পারে তা অয়নের জানা ছিল না।
অয়ন মনে মনে ভাবছে, মানুষ এত সুন্দর হয় কিভাবে।
কয়েক মুহূর্তের দেখায় অয়ন অরনাকে ভালবেসে ফেলেছে। কিন্তু অরনা?? ভেসে আসা এক পানির স্রোত। সে ভেসে যাবে।
রাত বাড়ছে অয়ন অরনার মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়েছে চেয়ারে। প্রতিটা প্রানীরি বিশ্রাম নিতে হয়। বিশ্রাম না নিতে চাইলে তার এমনিতেই বিশ্রামের জন্য হাত-পা, মাংস-পেশী, চোখ-মুখ গিজগিজ করবে। সে অসুস্থ হবে। তারপর শেষমেশ তাকে সেই বিশ্রামেই যেতে হবে। অরনার মাথায় এখনো জলপট্টির কাপর রাখা। অয়ন কখন ঘুমিয়েছে সে নিজেউ জানে না।
হঠাৎ অরনার জ্ঞান ফিরলো। আচমকা ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে ভয় পেয়ে গেল। লাফ দিয়ে উঠতেই কপাল থেকে জলপট্টির কাপর বিছানায় পড়লো। বিছানার পাশেই জলপট্টি ভিজানোর জন্য পানির বাটি।
অরনার জ্বর অনেকটা কমে গিয়েছে। শরীর ঘামছে। প্রচন্ড জ্বরের পর ঘাম হওয়া জ্বর কমার লক্ষণ।
অরনা ঘুম থেকে উঠে প্রথমে নিজের শরীরের দিকে তাকালো। কুমারী মেয়েদের সব চাইতে ভয়ের কারণ টা হলো ওদের শরীর। একলা একটা নির্জন রুমে একটি অচেনা ছেলের সাথে এক ই রুমে তাও অজ্ঞানের মতো অসুস্থ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লে যেকেউ পুরুষ মানুষ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভুলবে না। বাঘ কে মানুষ খেতে শিখাতে হয় না। গন্ধ পেলেই খেতে উশখুশ করে।
কিন্তু অয়ন তেমন না। সেটা অরনা ওর সুরক্ষিত শরীরের দিকে তাকিয়েই বুঝলো। অরনার খুব জ্বর জ্বর লাগছিল। শরীর ঘুমে দুলছিল শুধু এইটুকুই মনে আছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। ওর এখন জ্বর প্রায় সম্পূর্ণ টা সেরে গিয়েছে আর সেটা কার উছিলায় সেটা অরনা ভাল করে বুঝতে পারলো যখন দেখল ওর বিছানার পাশে জলপট্টি আর কিছু ঔষধ দেখে। অয়নের প্রতি অরনার একরকম কৃতজ্ঞতা জন্মনিল। পৃথিবীতে অসৎ মানুষ বেশি কিন্তু ভাল মানুষও এখনো আছে। তা না হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতো। সেটা অরনা অয়ন কে দেখেই বুঝতে পারছে।
অয়ন চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। অরনা ওর গা থেকে কাঁথা সরিয়ে অয়নের গায়ে দিলো।
অরনা এক দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগে। এতে জীবন সার্থক হয়েছে মনে হয়। অয়নের দিখে তাকিয়ে ওর যে অনুভূতি হচ্ছে তা আর কোনদিন কারো জন্য হয় নি।
অরনা নিজের মন কে প্রশ্ন করলো, আমি কি ওকে ভালবেসে ফেলেছি??
পরক্ষণেই নিজেকে নিজে উত্তর দিলো, আমি পথিক, এসেছি শরতের শিশির হয়ে বেলা শেষে চলে যাবো। কিছু পিছুটান পাছে ফেলতে হয়, তা না হলে নিজেকে পাছে পড়ে থাকতে হয়। কিছু অনুভূতি মেঘের মতো, ঝড়ে গেলেই শেষ।
মোমবাতির আলো নিভে যাচ্ছে। আঁধারও কেটে যাচ্ছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করছে।
ভোরের হালকা আলোয় যখন অয়নের ঘুম ভাঙ্গে তখনো অরনা অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে অরনার সেদিকে লক্ষ্য নেই। পৃথিবীর সবকিছু দৃশ্যায়ন নয় কিন্তু যা দৃশ্যায়ন তা থেকে চোখ ফেরাবার নয়। অয়নের নাড়াচাড়ায় অরনার ঘোর ভাঙ্গলো। অরনা সরে গিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
কাউকে অসুস্থ অবস্থায় সেবা করতে গিয়ে সে নিজে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে কথা ভাবতেই অয়নের লজ্জা হচ্ছে।
অয়ন বললো, আপনার জ্বর কমেছে??
"জ্বি কমেছে। আপনার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবো না। ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই"
" না এটা আমার কর্তব্য ছিল"
"তবুও এই কর্তব্য টুকু কজন করে"
এবার তাহলে যাই। ভোরের আলো এখনো স্পষ্ট করে দেখা দেয় নি। লোকজন ও জেগে উঠে নি। কেউ দেখার আগে চলে না গেলে দুজন কেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে" এই বলে অরনা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
অয়ন নিশ্চুপ হয়ে কাতর নয়নে শুধু একবার হালকা গম্ভীর গলায় বললো, "হুম্ম"
অরনার যেন একপা এগোলে দুপা পিছনে নিতে ইচ্ছে করছে। না বলা কিছু কথা যেন দুজন কেই বুকে দংশন করছে। কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারো কিছু বলার অধিকার নেই। কেউ কিছু বলতে চাচ্ছে আরেকজন তা শুনতে চাচ্ছে। তবু একটু দাঁড়াবার সময় নেই।
অরনা আস্তে আস্তে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আবার অয়নের দিকে তাকালো। দুজনেই এক মিথ্যে হাসিতে বিদায় নিলো। বৃষ্টিময় একরাত্রির বিনিময়ে এক জীবনের চাপা পড়া কষ্টের সৃষ্টি।
বৃষ্টি চলে যায়, পাখি উড়ে যায়,
রঙধনু মিশে যায় আকাশে,
ফুল পঁচে যায়, সুভাষ হারিয়ে যায় বাতাসে।
তুমি ক্ষণিকা, তুমি ক্ষণিকা,
ক্ষণিকের লাগি এসেছিলে মোর প্রদেশে,
তুমি যাওয়ার ছিলে তাই চলে গেলে তব স্বদেশে।
___________সমাপ্ত_________________

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:১৮

হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.