নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্পঃ- শেষ চিঠিটার উত্তর দিও

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪

নিসানের খুব গরম লাগছে। অফিসে বসে আছে। পাঁচ তলা ভবনটির চার আর পাঁচ তলায় হল নিসানদের কোম্পানি । আর এর মধ্যে নিসানের অফিসরুম হলো পাঁচ তলায়। নিসান কোম্পানিটির ম্যানেজার। ম্যানেজারদের অফিসরুম উপরে থাকে। এরা অন্য কর্মকর্তা থেকে আলাদা। ম্যানেজার দের অফিসে গরম লাগার কথা না। অফিসরুমে এ.সি থাকে। সেজন্য ওদের চৈত্রমমাসেও মাঘমাসের শীত লাগে। কেউ কেউ ভুলেই যান এখন চৈত্র না মাঘমাস। কিন্তু নিসানের খুব গরম লাগছে। মাথার উপর সিলিং ফ্যান ঘুরঘুর ঘুরঘুর করে ঘুরছে। নিসানের অফিসরুমে এ.সি আছে। কিন্তু চলছে না । ও জয়েন করার ২ দিন আগে এ.সি নষ্ট হয়ে গেছে। নিসান এক সপ্তাহ হলো অফিসে নতুন জয়েন করেছে। কথিত আছে নিসান কোন জায়গায় যাওয়ার আগে এইরকম কোনকিছু ঘটলে ওর অলক্ষ্মী লাগে। সে জায়গায় বেশিদিন থাকতে পারে না। তাই মনে হচ্ছে এখানেও অলক্ষ্মী লেগেছে এ.সি নষ্ট হয়ে। তা না হলে ভাল এ.সি টা নষ্ট হবে কেন?? প্রশ্ন টা নিসান তার নিজের মন কেই করল। নতুন হলে কি হবে ইতিমধ্যে দুজন স্টাফের সাথে ভাল মজে গেছে। মজে গেছে মানে খুব ভালভাবে পরিচিত হয়ে গেছে। এদেরমধ্যে একজন হলো পিয়ন বারিক মিয়া আর আরেকজন সহকারী ম্যানেজার শিহাবের সাথে।
যখন যা লাগে তা ফটাফট এনে দেয়া বারিক মিয়ার একটা আলাদা গুণ। সব পিয়নরা এমন হয় না। বেয়াড়া গুয়ার টাইপের হয়। আর সব চাইতে বড় কথা হলো অলস টাইপের হয়। পিয়নের চা-নাস্তা এনে দেয়া ছাড়া আর তেমন কোন কাজ থাকে না বলে এদের শরীরে একরকম চুয়িংগামের আঁটার মতো চেয়ারের সাথে লেগে যায়। তখন বস ডাকলেও সেই আঁটা ছাড়তে লেইট হয়। সে দিক থেকে বারিক মিয়া খুব ই একটিভ একজন মানুষ। তবে মাঝে মাঝে তুঁতলানোর সমস্যা আছে। "স্যার" বলতে গিয়ে "মার" বলে ফেলে। প্রথম নিসান পুরাই টাস্কি খেয়ে গিয়েছিল। স্যারের বদলে মার বলার সময়। মনে মনে ভেবেছিল শেষমেশ অফিসের প্রথম দিনেই পিয়নের হাতে মার খেতে হবে। কি লজ্জা, কি লজ্জার! তবে না কিছুক্ষণ পর শিহাব এসে সব কনফিউশন দূর করে দিয়েছে। স্যার আসবো বলেই কোন রেসপন্সের তুয়াক্কা না করে সোজা রুমে ডুকে গিয়েছিল। নিসান কিছু বলার আগেই শিহাব নিসানের দিকে ওর ডান হাত বাড়িয়ে বললো, Nice to meet you sir. I m shihab...your assistant manager. নিসান একটু নাক উঁচু করে আড় চোখে চেয়ে নিসানের সাথে হ্যান্ডশেক করে শিহাবের সাথে গ্রেটিং করল। নিসান ভাবছিল কি গায়ে পড়া লোক। আল্লাহ জানে এরা কোন গ্রহের বাসিন্দা। কিন্তু না কয়েক দিনেই নিসান বুঝতে পারলো। There are Different. অন্যরকম ফ্রাংক্লি পারসন। এদের সাথে চলা যায়। শিহাব অনেকদিন ধরে এই অফিসে আছে বলে সে তার অনেক এক্সপেরিয়েন্স আছে যেগুলা নিসানের নেই। নিসান সেগুলা শিহাবের কাছ থেকে শিখে নিতে চাইছে। সে উদ্দেশ্যে নিসানও আস্তে আস্তে শিহাবের ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে নিসানের সাথে শিহাবের ভাল ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গিয়েছে। দুজন প্রায় সমবয়সী থাকার কারণে ফ্রেন্ডশিপের বন্ডিং টা ইজিলি হয়ে গিয়েছে। শিহাব নতুন বিয়ে করেছে এক মাস হয়েছে। জিনিশ টা প্রথম দিন ই নিসান ধরতে পেরেছিল যে শিহাবের নতুন বিয়ে হয়েছে। হাতের গাঢ় মেহেদীর রঙ টাই তার প্রমাণ। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ছেলেরা নিজের বিয়ে ছাড়া খুব একটা মেহেদী দেয় না। মেহেদী দেওয়াটা মেয়েদের কাজ। মেয়েরা হাতের কনুই পর্যন্ত মেহেদী দেয়। এটা কোন উপলক্ষ বা উপলক্ষ ছাড়া যেকোনটি হতে পারে। শিহাব একদিন হঠাৎ বায়না ধরে বসলো নিসান ওর বাড়িতে দাওয়াত খেতে। নতুন বউয়ের রান্না খুব ভাল হয়। সবাই গুণাগুণ করছে। সে গুণের কিছুটা পরশ যাতে নিসান পায় সে জন্যই এত বায়না ধরে ইনভাইটেশন। নিসানের নতুন ফ্রেন্ড শিহাব। ইনভাইটেশন এক্সেপ্ট করতে কিছুটা হেজিটেশন করলেও না করতে পারলো না। ইনভাইটেশনের তারখ হলো আগামী শুক্রবারের জুম্মার নামাজের পর মধ্যাহ্ন ভোজন। শিহাবের ইচ্ছা নিসান জুম্মার নামাজ টা ওদের বাসার পাশের মসজিদেই করে। তারপর নামাজ পড়ে একসাথে ফ্ল্যাটে যাবে। শিহাব নিসানের প্রিয় খাবারের লিস্ট নিল নিসানের কাছ থেকে। তারপর বাজার থেকে আগের দিন সে জিনিশ পত্র কিনে নিয়ে স্ত্রী শান্তার কাছে দিয়েছে। বলেছে সব আইটেম জুম্মার আগে তৈরি করে দিতে।
আজ শুক্রবার। শান্তা প্রতিটা আইটেম খুব মনোযোগ দিয়ে বানাচ্ছে। নিজের গুণের যাতে কোন ক্ষয় না হয় আর স্বামী যাতে বন্ধুর কাছে স্ত্রীর জন্য ছোট না হয় সেটাও খেয়াল করছে। কিন্তু এসবের পরেও শান্তা একটু অন্যরকম মন দিয়ে রান্না গুলো করছে। আইটেম গুলো ওর খুব পরিচিত। বিয়ের আগে শিখেছে নিজ থেকে আলাদা করে। সেজন্য বাজার থেকে রান্না শিখার বই পড়তে হয়েছিল। নিসান আর শিহাব জুম্মার নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় ধাক্কাধাক্কি লেগে নিসানের শার্টের পকেট থেকে একটা চিঠি আর পাসপোর্ট সাইজের ছবি মাটিতে পড়ে যায়। অন্যদিন হলে নিসান পাঞ্জাবী পরে জুম্মায় যেত। কিন্তু আজ আলাদা ব্যাপার তাই কেন জানি শার্ট পরে এসেছে জুম্মায়। শিহাব মাটি থেকে ছবিটি তুলে দেয়ার আগে নিসান খাবলা মেরে চিঠি আর ছবিটি তুলে নিয়েছে। চিঠিটার সাথে ছবিটি স্ট্যাপলারের পিন দিয়ে লাগানো ছিল। শিহাব ক্ষাণিক টা অবাক হলো। এই একইরকম চিঠি শিহাব আরেকদিন নিসানের শার্টের পকেটে দেখেছিল অফিসে। ছবিটি স্পষ্ট দেখতে পেলো না। তবে বুঝাই যাচ্ছিলো বেশ আগের ছবি আর চিঠিটা। মলিন হয়ে গিয়েছে। কি আছে এই চিঠিতে যা নিসান সাথে নিয়ে ঘুরে। শিহাব প্রশ্ন করতে গিয়ে আর করে নি।
নিসান ছবিটি আবার পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে লাগলো। ওরা দুজনেই হাঁটছে। মসজিদের পাশেই বাসা। তাই আর রিকশা ধরে নি।
দুই মিনিট হাঁটার পর। ওরা বাসায় গেলো। ওরা ফ্ল্যাটের দুইতলায় থাকে। শিহাব ক্রলিংবেল টিপতেই একজন সুন্দরী রমণী এসে দরজা টা খুললো। নিসান শান্তার দিকে একবার চেয়ে তারপর কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সুন্দরী মেয়েদের উপর বেশি ক্রাশ খেলে এদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু এ ত সুন্দরী রমণী। বিবাহিতা তাও আবার বন্ধুর স্ত্রী। অনেক ব্যাপার-স্যাপার আছে সেখানে।
শিহাব বললো, নিসান কি হলো তুমি রুমে ঢুকছো না কেন? আর এভাবে নিচু হয়েই বা আছো না কেন।
শিহাব আর নিসানের মধ্যে বন্ধুত্ব ভাল কিন্তু কথা হতো আপনি সম্মোদনে। হঠাৎ করে আপনি থেকে তুমি। শিহাব ও ভেবে উঠতে পারলো না তার কারণ।
বন্ধুত্বে তুমি না, তুই ই সর্বগ্রাহ্য। কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব "তুই" হবে না। শতহোক অফিসের স্যার।
শিহাবের নাড়ানোতে হঠাৎ নিসানের ধ্যান ফিরলো। নিসান যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। নিসান বললো, না কিছুনা। তারপর দুজনেই ভিতরে ডুকলো।
নিসান ভিতরে ঢুকে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো সেই সুন্দরী রমণী নেই। সে মনে মনে জিহব্বা চাপা দিয়ে বললো, "ইশ"!
সুন্দরী মেয়েদের প্রতি প্রথম দৃষ্টি দেয়ার পর সেই মেয়েটি তাকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া করলো তা না দেখলে ছেলেটির কয়টা রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে সে নিজেও জানবে না। মনে মনে আফসোস করছে।
তারপর আবার নিজে নিজেকে গালি দিয়ে বলছে, কি সব আজেবাজে বলছি, সে আমার বন্ধুর স্ত্রী। She is married.
২য় পর্ব.....
_______
শান্তা আবার এলো নিসানের সামনে। হাতে শরবত আর বিস্কুট নিয়ে। একটু পর লাঞ্চ করবে তাই গরম থেকে আসার জন্য শান্তা শরবত নিয়ে এলো। অতিথি আপ্যায়নের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। মেহমান সকালে আসলে আগে চা দিতে হবে, বিকাল আর সন্ধ্যা নাগাত কেও আসলে চা,শরবতের সাথে নুডুলস কিংবা সেমাই ও দিতে হবে। দুপুর বেলা খাবারের টাইম।তখন হাবিজাবি নাস্তা দিয়ে পেট না ভরিয়ে ভাত খাওয়ানো টাই বেটার। শরবত দুই গ্লাস ছিল। নিসান আর শিহাবের জন্য। শিহাব শরবতের গ্লাস নিয়ে গপগপ করে পান করে নিল। কিন্তু নিসান সেভাবে পারছে না। নিসান এখানে গেস্ট। নিসান শিহাবের মতো পান করতে পারবে না। ও কে কিছু ফর্মালিটি দেখাতে হবে। মেহমান বাড়িতে ম্যানার একটা বড় জিনিশ। সেটা কে কিভাবে শো অফ করবে সেটা তার পারসোনালিটির উপর ডিপেন্ড করে। নিসান গ্লাসে মুখ দেয়ার আগে শান্তা কে ছোট্ট করে একটা ধন্যবাদ জানালো।
শান্তা কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিল। এই হাসি টাকেই রেসপন্স ধরে নিতে হবে। যাদের হাসি সুন্দর তারা অনেক কথার রেসপন্স একটা হাসি দিয়েই দেয়। তাদের ধারণা থাকে মুখে রেসপন্স না দিয়ে হাসলেই ভাল রেসপন্স হবে।
নিসান আস্তে আস্তে শরবত খেয়ে নিল। এদিকে শান্তা ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি করছে। শান্তা একাই সব করছে। কাজের মেয়েটি ছুটিতে গিয়েছে। নিসানের বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে। তাই একাই সব সামাল দিতে হচ্ছে।
খাবার রেডি করে শান্তা শিহাব কে বললো, তোমরা খেতে আসো।
অন্যদিন হলে লাঞ্চ দেড়িতে করা যায়। কিন্তু শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর লাঞ্চ তাড়াতাড়ি করে নিতে হয়। কেন জানি আগেই পেটে বুক লেগে যায়।
শিহাব আর নিসান খেতে বসেছে। শান্তা দাঁড়িয়ে আছে। খাবার বেড়ে দেয়ার জন্য। কেউ খেতে বসলে একজন টেবিলের কাছে থাকা উচিৎ ডিশ সার্ভ করার জন্য। ঘরে যেহেতু আর কেউ নেই তাই শান্তাকেই তা করতে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর শান্তাও নিসানের সাথে একটু ফ্রি হয়েছে।
নিসানের গ্রামের বাড়ি কোথায়, আগে কি করতো, বাড়িতে কে কে আছেন সব জানবার চেষ্টা করছে।
নিসান প্রতিটা কথার উত্তর দিচ্ছে আর শান্তা একটু একটু করে চমকে যাচ্ছে।
শান্তার চমকে যাওয়ার ভাব টা শিহাবের চোখে পরছে না কিন্তু নিসানের চোখে পড়ছে। ক্ষাণিক টা হলেও চোখে পড়ছে। শিহাব আর নিসান ডাইনিং টেবিলের পাশাপাশি চেয়ারে না বসে মুখামুখি চেয়ারে বসেছে। এতে গল্প করতে সুবিধা হয়। শান্তা শিহাবের পিছনে দাঁড়িয়ে যা নিসানের মুখোমুখি। শান্তা শিহাবের পিছনে থাকার জন্যই শিহাব কিছু দেখতে বা বুঝতে পারছে না। কিন্তু নিসান বুঝতে পারছে, শান্তা কেন জানি একটু নার্রভাস ফিল করছে, নিসানের প্রতিটা কথায় একটু অন্যরকম ভাব করছে। নিসান সেটা বুঝতে দেয় নি শান্তার নার্ভাস ফিল টা ওর চোখ এড়ায় নি।
ওরা খাবার শেষ করে ড্রয়িংরুমের সুফায় গিয়ে বসলো।
নিসান সুফায় বসে আছে কিন্তু শিহাব সেখান থেকে উঠে কি জন্য ওর বেডরুমে গিয়েছে।
শিহাব বেডরুমে যাওয়ার পর ড্রয়িংরুমে সে একা বসে আছে। শান্তা কিচেনরুমে কাজ করছে। ডাইনিং টেবিল পরিষ্কার করছে।
নিসান পকেট থেকে সেই মলিন চিঠি,ছবি, আর একটা কলম বের করলো। তারপর পুরনো চিঠির অক্ষরের নিচে নতুন করে কিছু লিখতে বসলো।
লিখা শেষ করে আবার পকেটে ঢুকানোর সময় শিহাব এসে হাজির। শিহাবের চোখ এবারো এড়ায় নি চিঠি টা। শিহাবের মনে চিঠিটা কিউরিসিটির সৃষ্টি হয়েছে। এক জিনিশ বারবার দেখলে কিউরিসিটির সাথে সন্দেহ জানে। নিষিদ্ধ জিনিশের প্রতি যেমন আকর্ষণ থাকে ঠিক সেরকম আকর্ষণ থেকেই শিহাবের মনে কিউরিসিটির জন্ম দিয়েছে। শিহাব এবারো কারণ টা জিজ্ঞেস করতে গিয়ে আটকে গেল। আফটারল আজ কে নিসান ওর বাড়িতে গেস্ট। কোন কথায় নিসান বিব্রতহোক সেটা শিহাব চায় না।
ভাবলো আগামীকাল অফিসে কোন একসময় প্রশ্নটা করে নেয়া যাবে।
নিসান আর শিহাব একসাথে আড্ডা দিচ্ছে সুফায় বসে। শিহাব নিসান কে এক্ষণি যেতে দিচ্ছে না। গল্পগুজব করে আড্ডা দিয়ে তারপর বিকালে এক কাপ চা না খেয়ে যেতে দিবে না বলেছে শিহাব। অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়ার পর শান্তা তাদের আড্ডায় যোগ দিল। শান্তা সুন্দর করে সেজে এসেছে। ঘরে গেস্ট আসলে মেয়েরা বা মহিলারা একটু স্পেশাল সাজগোজ করে। মহিলারা স্বামীদের উপর চড়াও হন যদি এতে বাঁধা দেয়া হয়। গেস্ট যদি মহিলাদের কোন বান্ধবী হয় তাহলে বউদের সাথে স্বামীদেরও হ্যান্ডসাম হয়ে থাকে হবে। ছেলেরা যতটা তার বউ কে তার বন্ধুদের সামনে লুকাতে চায়, বউরা তার উল্টো। বউরা তার স্বামীকে ঠিক ততটা হ্যান্ডসাম করে তাদের বান্ধবীর সামনে প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু শান্তা একা হাতে সব কাজ সামলিয়েছে বলে আগে সাজগোজ করে উঠতে পারে নি। তাই সব কাজ সামলিয়ে তারপর সেজেগোজে সামনে এসেছে।
শান্তার সাজগোজ দেখে নিসান যতটা না মুগ্ধ হয়েছে তারচেয়ে মুগ্ধ হয়েছে শিহাব। মূলত নিসান মুগ্ধ হলেও তা প্রকাশের কোন অধিকার নেই। বন্ধুর বউএর প্রতি এত মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই। বন্ধুর বউএর প্রতি মগ্ধতা বন্ধুত্ব নষ্ট করে। অনধিকারচর্চার সামিল। অনধিকারচর্চা সম্পর্ক কে বিষিয়ে তুলে। নিজের প্রতি নিজের ও একটা লিমিটেশন আছে। লিমিটেশন ক্রস করা ঠিক না।
শিহাব শান্তার রূপে মুগ্ধ হয়ে ওকে হাত ধরে সুফায় ওর কাছে এনে বসালো। নিসান সেখানে নিরব ভূমিকা পালন করছে। শুধু একবার দুজনের দিকে চেয়ে একটা মুচকি হেসে বললো। নাইস কপল। বেশি কথা বলা যেমন বিব্রতকর ঠিক তেমনি একেবারে কম কথা বলাটাও অস্বস্তিকর।
(৩য় পর্ব)
_________________________
শিহাব শান্তার সাথে কথা বলছে কিন্তু শান্তার চোখ-মুখ যেন অন্যকিছু ভাবছে। মুখের ভাষা সবাই শুনতে আর বুঝতে পারে। কিন্তু চোখের ভাষা কেউ বুঝতে পারে না। চোখের ভাষা বুঝতে হলে আলাদা করে ভাবতে হয়। সেই আলাদা করে ভাবার জন্য আবার আলাদা মনের দরকার হয়। একজনের মনের সাথে আরেকজনের মনের ভাবনা মিলে গেলেই মানুষ তাকে নিয়ে ভাবতে বসে। আর তখন মানুষ সেই মানুষটার চোখের ভাষা বুঝতে পারে।
শান্তা কি ভাবছে?? মনে মনে বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছে নিসান।
শিহাব একটু সংকোচববোধ করে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের পকেট বের করে নিসান কে প্রশ্ন করলো সে খাবে কি না,
নিসান বললো, না আমি এসব খাই না।
শান্তা আবার একটু চমকে গিয়ে বলে উঠলো, সে কি আপনি সিগারেট খান না??
নিসান বললো, "না"।
সিগারেট কোন তিন বেলার খাবার না, এটা না খেলে কোন সমস্যাও হওয়ার কথাও না। বরং খেলে সমস্যা হয়। কিন্তু শান্তা সিগারেট না খাওয়া নিয়ে এমন চমকে গেলো কেন।
শিহাব, নিসান আর শান্তা কে বললো, তোমরা গল্প করো। ও একটু আলাদা গিয়ে সিগারেট খেয়ে আসুক। ভাত খাওয়ার কিছুক্ষণ পর সিগারেট না খেলে শিহাবের ভাত হজম হয় না। তারপর শিহাব পাশের রুমের বারান্দায় চলে গেল গ্যাসলাইট দিয়ে সিগারেটের আগুন ধরাতে ধরাতে।
শিহাব চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শান্তাও চলে গিয়েছে। কিন্তু শান্তা চলে যাওয়ার কথা নয়। এতক্ষণ ওর চোখ বলছিল ও নিসানকে কিছু একটা বলতে চায়। খুব একা করে বলতে চায়। তাহলে এখন একা পেয়ে চলে গেল কেন?? নিসান সে কথা ভাবতে ভাবতে আবার প্যান্টের পকেট থেকে চিঠিটা বের করে তাতে আবার কিছু লিখতে লাগলো। লিখা শেষ করার পর আবার নিসান চিঠিটি নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিল।
শিহাব এখনো আসে নি। নিসানের মনে হচ্ছে শিহাব ঘুমিয়ে পড়েছে। সিগারেটের ধোঁয়া টানতে টানতে ঘুমিয়ে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এখন শিহাব কে ঘুমিয়ে পড়লে হবে না। নিসান কে চলে যেতে হবে আর সেটা শিহাবের অনুমতিসাপেক্ষে। তা না হলে অভদ্রতা হয়ে যায়।
নিসান একা বসে আছে। পাশের রুম থেকে কেউ আসার শব্দ হচ্ছে। নিসানের ধারণা শান্তা আসছে। আগে যে কথাগুলো বলতে পারে নি এখন নিশ্চয়ই সে কথা টা বলতে আসছে।
রুমে শান্তা ঢুকলো। নিসানের ধারণা ভুল ছিল না।
শান্তা এবার স্ট্রেটকাট বললো, আপনি আসলে কে?? আপনার সাথে কি আমার কোন পরিচয় ছিল?? বা কোন ঘটনাক্রমে আপনার সাথে আমার কোন কথা হয়েছিল??
নিসান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নিসানের চুপ থাকা দেখে শান্তা আরও একটু অস্বস্তিবোধ হলো আর বললো, দেখুন চুপ করে থাকবেন না আমি এখন অনেক ভেবেছি, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও দেখা বা কথা হয়েছিল আগে। কিন্তু সেটা কখন সেটা মনে করতে পারছি না।
নিসান এবারো চুপ।
শান্তা খুব বিরক্ত আর রেগেও গেলো। সে এবার রাগের স্বরে বললো, আপনি কি আমার কথার উত্তর দিবেন না??
নিসান এবার ওর পকেট থেকে একখানা মলিন চিঠি বের করে শান্তার হাতে দিল। আর বললো আমি চলে যাওয়ার পর এই চিঠি টা পড়বেন। কিন্তু চিঠি টা আপনি খুব একা পড়বেন, নিরিবিলি কোন এক জায়গায়।
(৪র্থ পর্ব)
__________________________
চিঠি হাতে পেয়ে শান্তা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বলার আগেই শিহাব চলে আসে। শান্তা আর কিছু বলতে পারলো না। শান্তা চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে এলো। তারপর ওরা চা খেলো এবং নিসান, শিহাব আর শান্তাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
নিসান চলে যাওয়ার পর শান্তা চিঠিটি নিয়ে ছাদে গেল। চিঠিটা ওর খুব পরিচিত লাগছে। চিঠি খুলতেই দেখলো চিঠির উপরে স্ট্যাপলারের পিন দিয়ে লাগানো শান্তার ছবি। শান্তা নিসান কে চিনতে আর বাকি রইলো না। এই সেই নিসান যার সাথে শান্তার পরিচয় হয়েছিল ভুল ঠিকানায় চিঠির অদলবদলের সময়। শান্তা বান্ধবী কে চিঠি লিখে পোস্ট করার সময় ভুল করে নিসানের ঠিকানায় চলে যায়। নিসান সেই ভুল করে আসা চিঠির উত্তর দেয়। সেখান থেকে ওদের পরিচয়। একটার পর একটা চিঠির অদলবদল। পরিচয় থেকে ভালোলাগা, আর ভালোলাগা থেকে ভালবাসা। সেই ভালবাসা থেকে কয়েকবছরের প্রেম। না দেখা প্রেম। না দেখা প্রেম গুলো পবিত্র হয়। সে প্রেমে কোন অশ্লীলতা থাকে না। সারাক্ষণ শুধু স্বপ্নের মতো ভাবা হয়। যাকে তুমি ভালোবাসো সে কি রকম, কি রকম তার চোখ, মুখ, ঠোঁট। কি রকম করে সে হাসে, অভিমান করলে তাকে কি রকম লাগে সবকিছুর মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি থাকে। নিসান আর শান্তা একটার পর একটা চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। এখন চিঠির যুগ না। তবুও ওরা চিঠি দিয়ে কথা বলতো। চিঠির মধ্যে অপেক্ষা থাকে আর সে অপেক্ষা ভালবাসার পরিমান বাড়িয়ে দেয়।
এভাবে চিঠির অদলবদলে চলে গিয়েছে কয়েকবছর। হঠাৎ শান্তাকে নিসান চিঠি লিখা বন্ধ করে দেয়। শান্তা একটার পর একটা চিঠি পাঠিয়েছে কিন্তু নিসান কোন উত্তর দেয় নি। শান্তা কোন উত্তর না পেয়ে, শেষমেশ একটা চিঠি লিখেছিল আর চিঠির সাথে ওর একটা ছবি আর ঠিকানা লিখে দিয়েছিল। চিঠির স্পষ্ট করে লিখা ছিল, "আমি আর তোমাকে কোনদিন চিঠি দিবো না। তোমার জীবনে আমি দাবী নিয়ে আসবো না। তুমি ভাল থেকো, সুখে থেকো। কিন্তু কোনদিন দেখা হোক আর না হোক "এই শেষ চিঠিটার উত্তর দিও" জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি সেই চিঠির উত্তরের আশায় থাকবো।
ইতি,
তোমার ভালবাসার শান্তা"।
কিন্তু কোনদিন সেই চিঠির উত্তর দেয় নি নিসান।
শান্তার সেই চিঠির নিচের ও অপর অংশে নতুন করে নিসান উত্তর লিখে আজ শান্তাকে দিয়েছে।
প্রিয় শান্তা,
জীবনের কিছু আশা কিছু প্রতিক্ষা পূরণ হয় না। আমাদেরও হয় নি। আমি তোমার প্রতিটা চিঠির উত্তর লিখে বারবার ছিঁড়ে ফেলেছি। যেখানে মানুষটাই আর কিছুদিন পর এই পৃথিবীতে থাকছে না সেখানে চিঠি থেকে কি হবে। আমার প্রায় ই মাথা ব্যথা হতো। একদিন সেই মাথাব্যথা অসহ্যকর অবস্থায় পৌঁছালে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরি। সেখান থেকে আমাকে কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে জানতে পারি আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অপারেশন করলে ভাল হতেউ পারি আবার এতে বিপরীতও হতে পারে। ডাক্তার রিস্ক নিতে চায় নি। এমন অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে জড়াতে চাই নি। তখন থেকেই তোমাকে চিঠি লিখা বন্ধ করে দেই। আমার চাকরির পোস্টিং যখন তোমার ঠিকানার পাশেই হয় তখন আশা করেছিলাম হয়তো তোমার সাথে আমার দেখা হবে। আর সে জন্যই চিঠিটা সবসময় সাথে রাখতাম তোমার শেষ চিঠির উত্তর দিতে। দরজায় দাঁড়িয়ে যখন আমি তোমাকে প্রথম দেখি তখন ই তোমাকে চিনতে পেরেছিলাম। আমার ধারণা তুমিও কিছুক্ষণ পর আমাকে চিনেফেলেছিলে কিন্তু ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছিলে না। আমার প্রতিটা কথায় তুমি চমকে যাওয়ার এটাই কারণ ছিল। তুমি এই নিসানের সাথে তোমার চিঠির সেই নিসান কে খুঁজে পাচ্ছিলে। আমি এখানে আসার আগে জানতাম না তুমি ইতিমধ্যে অন্যকারো জীবন সাথী হয়ে গিয়েছে। শিহাব খুব ভাল ছেলে। তুমি সুখে থাকবে। শিহাব তোমাকে অনেক ভালবাসে হয়তো আমার থেকেউ বেশি বাসে। তোমার চোখে মুখেউ আমি শিহাবের জন্য অনেক ভালবাসা দেখেছি।
আশা করি তুমি তোমার শেষ চিঠির উত্তর পেয়েছ। সাথে তোমার ছবিও দিয়ে দিলাম। কারণ প্রজাপতি কে বনে উড়তে দেয়াই ভাল। ধরতে গেলে বনের কাঁটায় বুক ছিঁড়ে যায়। জীবনের এমন পর্যায়ে এসে আর কাউকে ধরে রাখতে চাই না।আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও।
ইতি,
হারিয়ে যাওয়া এক ছেলে (নিসান)।
শান্তার চোখে জল নেই কিন্তু বুকে কি যেন একটা ভর দিয়ে বসলো। নিসান এই পৃথিবী তে থাকবে না কিন্তু ও থাকবে এটা শান্তা মেনে নিতে পারছে না।
শান্তার মন অস্থির লাগছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। নিসানের সাথে একবার কথা বলতেই হবে। কিন্তু ওর কাছে না আছে নিসানের মোবাইল নম্বর বা না আছে ঠিকানা।
শিহাবের কাছে কি জিজ্ঞেস করবো নিসানের ঠিকানা?? যদি কিছু মনে করে?? সন্দেহ করে?? প্রশ্ন গুলো নিজের মন কেই করলো শান্তা।
অনেক ভাবার পর ঠিক করলো, যা হবার হবে কিন্তু নিসানের সাথে একবার দেখা করতেই হবে।
শান্তা চিঠিটি লুকিয়ে ছাদ থেকে রুমে গেলো। দেখলো শিহাব বিছানায় এ কাঁত হতে ও কাঁত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ঘুম আসছে না। শিহাব বিকেলে একটু ঘুমায়। কিন্তু নিসান থাকার কারণে আজ বিকেলে ঘুমাতে লেইট হয়ে গিয়েছে। তাই ঘুম আসছে না। প্রতিটা জিনিশের ই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সে সময় ছাড়া সেটা করতে আর ভাল লাগে না।ক্ষুধা লাগার সময়ে কিছু না খেলে পরে আর ক্ষিধা লাগে না। ঠিক সেরকম ঘুমানোর সময়ে না ঘুমালে পরে ঘুম ও লাগে না।
শান্তা বেডরুম থেকে লুকিয়ে শিহাবের মোবাইল থেকে নিসানের নম্বর নেয়। তারপর নিসান কে ওর নাম্বার থেকে কল দেয়। কিন্তু ফোন টি বারবার ই সুয়িচড অফ দেখায়।
শান্তা বারবার মোবাইলে কল দেয় কিন্তু প্রতিবার সুয়িচড অফ দেখায়।
বিকেলে ঘুমানোর পর যখন শিহাব ঘুম থেকে উঠে তখন শান্তা শিহাব কে ওর বন্ধু নিসানের খোজ নিতে বলে,
শিহাব ফোন করেউ নম্বর সুয়িচড অফ পায়।
শান্তা শিহাব কে বললো, তোমার বন্ধু থাকেন কোথায়?? একবার সেখানে খোজ নিতে পারো।
শিহাব বললো, ঠিকানা এখনো জানা হয় নি কাল অফিস গেলে ত এমনিতেই দেখা হবে।
শান্তা একটু রেগে গিয়ে বললো, তোমার বন্ধু আর তুমি ঠিকানা জানো না। আশ্চর্য!!
শিহাব শান্তার এমন রেগে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস না করেই ড্রয়িংরুমে গিয়ে নিউজের চ্যানেল অন করলো।
(৫ম পর্ব)
__________________________
শান্তা কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলো না। রাতে ঘুমাতে পারছিলো না। মনের মধ্যে চিন্তা থাকলে ঘুমানো যায় কিন্তু দুঃচিন্তা থাকলে ঘুমানো যায় না। শান্তার মনে দুঃচিন্তা বাসা বেঁধেছে। নিসান শান্তার খুব প্রিয় কেউ কারণ চিন্তা সবার জন্য করা যায় কিন্তু দুঃচিন্তা কোন বিশেষ কারো জন্য ছাড়া করা যায় না। শিহাব আরাম করে ঘুমাচ্ছে কারণ শিহাবের জীবনে নিসান কোন বিশেষ কেউ না। কিন্তু শান্তার জীবনের একটা অংশ নিসান। যেটা তাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। এভাবে সারারাত কাটলো।
পরের দিন সকাল.......
শিহাব কে শান্তা তাড়াহুড়ো করেই অফিস পাঠিয়ে দিয়েছে। শান্তার ধারণা আজকে কোন একটা অঘটন ঘটতে চলেছে। কারণ আজকে ঘুম থেকে উঠতেই শান্তার বাম চোখের নিচের অংশটা কাঁপছে। যেদিন ওর বামচোখের নিচের অংশটা কাঁপে সেদিন অঘটন ঘটে। ছোটবেলায় একবার ওর বাম চোখ কেঁপেছিল তারপর ওর বাবার কোন এক কারণে হার্ট এট্যাক হয়েছিল। আজ কে শান্তার চোখটা ঠিক সেরকম ই কাঁপছে। শান্তা অঘটনের চিহ্ন টা নিসানের দিকেই নিচ্ছে।
কিছু হলো না ত নিসানের?? ফোন বন্ধ কেন?? হঠাৎ করে এভাবে ফোন কেন বন্ধ থাকবে?? আচ্ছা মাথার ব্রেইন টিউমার থেকে কি আবার কিছু হয়েছে??
বিভিন্ন দুঃচিন্তা শান্তার মনে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কোন দুঃচিন্তাকেই ছোট করে দেখতে পারছে না। ধ্বংস হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়া কাঠ, জীবজন্তুর হাড় বহুবছর পর মাটির নিচে কয়লা হয়ে হঠাৎ ভূচাপের ফলে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি ভুল বুঝে ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কের বহুবছর পর সেই ভুল বুঝতে পারলে মন থেকে অনুশোচনার চাপে ভালবাসার মাত্রা বেড়ে যায়। শান্তা নিসানকে ভুল বুঝেছিল আর আজ সত্যটা জানতে পেরে ও অনুশোচনায় ভুগছে। ওর এই অনুশোচনাটা ভালবাসা মিশ্রিত। সব অনুশোচনায় ভালবাসা থাকে না।
এদিকে শিহাব কখন বেড়িয়ে গিয়েছে কিন্তু কোন খবর দিচ্ছে না।
নিসান কি অফিসে এসেছে?? ভাবতে ভাবতে শান্তা ফোন টা হাতে নিলো শিহাব কে ফোন দিতে কিন্তু কল বাটনে ক্লিক করেউ আবার রিং হওয়ার আগে কেটে দিয়েছে।
শিহাব অফিসে ঢুকেছে। কিন্তু চারপাশের পরিবেশ টা শান্ত। সবাই নিশ্চুপ বোবার মতো হয়ে আছে। কেউ কথা বলছে না। দেখে মনে হচ্ছে সবাই বোবা হওয়ার প্রেক্টিস করছে নয়তোবা অফিসে বোবা হয়ে স্ট্রাইক করছে। শিহাব ওর অফিস সিটে গিয়ে বসলো। অফিসের পিয়ন বারিক মিয়া পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন শিহাব হঠাৎ উনাকে ঢেকে বললেন,
কি বারিক মিয়া তোমাদের নিসান স্যার আসেন নি?? আর আজ অফিস এত শান্ত কেন??
বারিক মিয়াঃ- আপনে কিছু জানেন স্যার ??
শিহাবঃ- না তো, কি হয়েছে??
বারিক মিয়াঃ- নিসান স্যার ত কাল উনার বাসায় মাথা ঘুড়ে পরে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছেন। ডাক্তার বলেছে মাথায় কি যেন এক টিউমার হয়েছে। অপারেশন করতে নিয়ে গেছে। তবে...
শিহাবঃ- তবে কি??
বারিক মিয়াঃ- স্যার মনে হয় আর বাঁচবো না।
কথাটা শোনার পর শিহাব আঁতকে উঠলো। বারিক মিয়ার কাছ থেকে হস্পিটেলের ঠিকানা নিয়ে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো। শিহাব গাড়ি নিজে ড্রাইব করে চালাচ্ছিল। শিহাবের যেন পথ ফুরাচ্ছেনা। তাই গাড়ির স্পিড আরও বাড়ালো। শিহাবের ইচ্ছে হচ্ছে আসামের ম্যাজিশিয়ানদের মতো উধাও হয়ে হস্পিটেল চলে যেতে কিংবা মায়ারাজ্যের কোন পাখা ওয়ালা পরীর মতো ডানা মেলে উড়ে চলে যেতে। শিহাবের আশপাশ দিয়ে অনেক গাড়ি যাচ্ছে। শিহাব এসবের তুয়াক্কা না করে গাড়ির স্পিড আরও বাড়ালো।
কয়েক মিনিট পর শিহাব হাসপাতালে পৌঁছালো। কয়েকজন মানুষ ওকে অন্যগাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। শিহাবের সারা গায়ে রক্ত। শিহাব অতিরিক্ত স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলো আর তখন সামনের দিক থেকে একটা বড় ট্রাক আসছিল। শিহাবের গাড়ি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে। শিহাব গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে। শিহাবের মুখ চেনা যাচ্ছে না। আহত রক্তাক্ত অবস্থায় শিহাব কে যারা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে একজন শিহাব কে চিনতো। শিহাবের বিয়ের পর অনেকবার বাসায় গিয়েছে বলে শিহাবের স্ত্রীর সাথেও পরিচয় ছিল।
লোকটি শিহাবের পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে শান্তাকে কল দেয়। শান্তার নাম্বার শিহাবের মোবাইলের ডায়েল বাটনেই ছিল। প্রিয় মানুষদের নাম্বার সবসময় ডায়েল বাটনেই থাকে। শান্তার নাম্বার শিহাব "শান্তা" লিখে সেভ করেছিল। তাই আর নাম্বার পেতে দেরি হয় নি। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর কল কেটে গিয়েছে। কেউ রিসিভ করে নি। লোকটি আবার কল দিলো। শান্তা ফোন পিক আপ করে হেলো বলতেই লোকটি বললো, আপনি শান্তা, শিহাবের স্ত্রী বলছেন???
"হে"
আপনি তাড়াতাড়ি স্কয়ার হাসপাতালে চলে আসেন, শিহাব এক্সিডেন্ট করেছে। আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
"মানে???"
এখন কথা বলার সময় নয়। শিহাবের অবস্থা ভাল নয় ওকে অপারেশন থিয়েটারে এক্ষণি নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ভিতরে আরেকজনের অপারেশন হচ্ছে। এক্ষণি অপারেশন শেষ হলে শিহাবকে অপারেশন থিয়াটারে নিয়া যাওয়া হবে। কিছু বলা যাচ্ছে না।
হঠাৎ করে যেন শান্তার মাথা ঘুড়ে গেলো।
হাত থেকে মাটিতে ফোন পড়ে গেলো।
শান্তা তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে হাসপাতালে পৌঁছালো। গিয়ে দেখলো একটা রুমে শিহাব কে রাখা হয়েছে অক্সিজেন দিয়ে। রুমের ভিতরে ডাক্তার কাওকে এলাউ করছে না।
শান্তা হাসপাতালের ভিতরে একটা ব্রেঞ্চে বসে আছে। একজনের অপারেশন শেষ করে ডাক্তার রা বের হয়েছেন। বের হওয়ার পর ডাক্তার কেউ একজনের সাথে রোগী সম্পর্কে কথা বলছেন। ডাক্তার যার সাথে কথা বলছেন উনি সম্ভবত রোগীর পরিচিত কেউ হবে। রোগী কে যখন শান্তার পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন শান্তা আরও অবাক হলো, কারণ এক্ষণি যার অপারেশন শেষ হলো সে নিসান।
(শেষ পর্ব)
_____________________
শান্তা নিসান কে এমন অবস্থায় দেখে আরও ভেঙ্গে পড়লো। এ যেন ঘূর্ণিঝড়ের সাথে বজ্রের প্রলয় খেলা।
শান্তা ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে ওর??
ডাক্তারঃ- উনার মাথায় ব্রেইন টিউমার হয়েছিল। সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। হয়তো এই ব্রেইন টিউমারের জন্য মারাও যেতে পারতেন কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমরা টিউমার টির সফল অস্রোপাচার করেছি। ইটস মিরাকল। হি ইজ নাও আউট অফ ডেঞ্জার। এখন উনি কয়েকদিন বেড রেস্টে থাকলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।
একদিকে নিসান কে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে নেয়া হয়েছে অপরদিকে শিহাব কে অপারেশন থিয়াটারের ভিতরে নেয়া হচ্ছে। শান্তার বাকরোধ হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত কষ্টে মানুষ বোবা মূর্তি হয়ে যায়। তখন তার আশেপাশে কি হচ্ছে বুঝতে পারে না।
খবর পেয়ে অফিসের অন্যান্য কলিগ রাউ এসেছেন।
বারিক মিয়া অপারেশন থিয়েটারের পাশে বসে আছেন। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর শান্তা বুঝতে পারলো উনি হয়তো শিহাবের অফিসের কেউ হবেন। শান্তা উনার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছিল?? শিহাব এমন করে গাড়ি চালালো কেন??
বারিক মিয়াঃ- আমি কিচ্ছু জানিনা। নিসান স্যারের অসুখের কথা শুনে উনি তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে যান। আর তারপর শুনি.. দুজন খুব ভাল বন্ধু ছিল.....
তারপর বারিক মিয়া আর কিছু বলতে পারলেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন।
শান্তার চোখেউ জল টলোমলো করছে। হাতের কনুই য়ের এক অংশ কেটে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে। শিহাবের এক্সিডেন্টের কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে বেরতে গিয়ে দরজায় লেগে ফেটে গেছে। কিন্তু শান্তা খেয়াল ই করে নি। যখন বড় বিপদ সামনে আসে তখন ছোট বিপদ মানুষ উপেক্ষা করে।
অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে শিহাবের অপারেশন চলছে। হঠাৎ অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন ডাক্তার বের হলেন তাড়াহুড়ো করে। শান্তা ডাক্তার কে বললো, শিহাব কেমন আছে এখন??
"উনার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। আগ বাড়িয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না"।
এ কথা বলে ডাক্তার চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর আবার আরেকজন ডাক্তার নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন।
যখন সিচুয়েশন কন্ট্রোলের বাইরে চলে যায় তখন বাইরে থেকে নতুন ডাক্তার আনা হয়। তাহলে কি???
শান্তা কিছু ভাবতে পারছে না। শান্তা আবার ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলো। শিহাবের কলিগ রা শান্তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু শান্তার মন মানছে না। কিছু বুঝতে চাইছে না। যে যেটা হারায় সেই বুঝতে পারে সে কি হারিয়েছে। অন্যরা শুধু সহানুভূতি দেখায় কষ্টটা বুঝে না।
আধাঘণ্টা পর ডাক্তার আবার বের হলেন। শান্তা ডাক্তারের কাছে ছুটে চলে যায় আর শিহাবের কথা জিজ্ঞেস করে,
ডাক্তার বললো, আপনি ওনার কে হন??
শান্তা বললো, স্ত্রী।
মিসেস শিহাব একচুয়েলি উই আর সরি হি ইজ নো মোর। হি ইজ ডেড। আমাদের আর কিছু করার ছিল না। আমারা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু উই আর সরি।
শান্তার মনে হচ্ছে ওর পৃথিবী উলটে যাচ্ছে।
শান্তা দৌঁড়ে শিহাবের মৃত শরীরটার পাশে যায়। শিহাবের বুকে বারবার মাথা রেখে ওকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উঠার কথা বলছে। কিন্তু শিহাবের নিথর শরীর থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।
হঠাৎ পিছন থেকে একজন নার্স শান্তা কে একটি রক্ত মাখা চিঠি দিয়ে বলে চিঠিটি শিহাবের শার্টের পকেটে পাওয়া গিয়েছে। তারপর নার্স চলে যায়।
শান্তা আস্তে আস্তে চিঠিটি খুলে পড়তে লাগলো,
শান্তা,
আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তুমি আমার জীবনের খুব কাছের একজন। কাছের মানুষের সব কিছু কাছের মনে হয়। তখন সে যদি কিছু লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে তবুও পারে না। তুমিও লুকিয়ে রাখতে পারো নি তোমার গোপন কথা গুলো। আমি সব জানি। নিসানের সাথে তোমার একটা সম্পর্ক ছিল যাকে বহুদিন আগে কবর দিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ নিসান কে দেখে সেই কবর করে রাখা ভালবাসা আবার নতুন করে তোমার মনে বাতাস দিচ্ছে। যে বাতাসে আমি ধূলিকণা মাত্র। ভাবছো কিভাবে আমি জানলাম এতকিছু?? তুমি যখন আমার মোবাইল থেকে নিসানের নম্বার নাও আমি তখন দেখেছিলাম। নিসানের জন্য তোমার অস্থিরতা আমার মনে সন্দেহ ঢুকুয়েছিল। তারপর তোমাকে দেয়া নিসানের শেষ চিঠিটি পড়লাম তখন আর কিছু বুঝার বাকি রইলো না। মাত্র কয়টা দিন ই ত হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। এরমধ্যে আমি তোমাকে এত ভালবেসে ফেললাম আর তোমরা অনেকদদিন ধরে একে অপর কে ভালোবাসো। চিঠি পড়ে জানতে পারলাম নিসান আর বাঁচবে না। যদি সে কোনদিন ভাল হয়ে যায়, বেঁচে থাকে এই পৃথিবীতে তাহলে আমি নিজে তোমাকে ওর হাতে তুলে দিতাম। তোমাকে লিখা আমার এটি প্রথম চিঠি হয়তোবা শেষ চিঠি। তুমি এই চিঠি কোনদিন হাতে পাবে কি না তাও জানি না। তবু বলছি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি, অনেক ভালবাসি, অনেক ভালবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসো ত শান্তা?? যদি কোনদিন এই চিঠিটা তুমি হাতে পাও তাহলে এই শেষ চিঠির প্রশ্নের উত্তর দিও।
ইতি,
তোমার স্বামী শিহাব।
শান্তা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। শিহাবের মৃত শরীর টাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরলো। পৃথিবীর চারপাশ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। শান্তার মনে হচ্ছে কেন পৃথিবীর সব আলো নিভিয়ে ফেলেছে। ও আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
একবছর পর...............
আজকে শিহাবের মৃত্যুবার্ষিকী। শিহাবের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শান্তা আর নিসানের বিয়ে হয় কারণ শিহাব চেয়েছিল নিসান বেঁচে থাকলে শান্তার সাথে নিসানের যাতে বিয়ে হয়।
নিসান আর শান্তা শিহাবের কবর জিয়ারত করে কয়েকটা বেলুন একসাথে করব সুতোয় একখানা চিঠি লাগিয়ে আকাশের ঠিকানায় উড়িয়ে দিয়েছে শিহাবের চিঠির শেষ উত্তর লিখে। চিঠিতে স্পষ্ট করে নিসান আর শান্তা দুজনেই লিখে দিয়েছে, "আমরাও তোমাকে অনেক ভালবাসি"
___________সমাপ্ত__________________

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.