নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ- " রংধনু ভালবাসা"

২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৫৬

মিরা রাত্রের সব কাজ শেষ করে বিছানায় ঘুমাতে যাবে ঠিক তখন একটা ফোন আসে। প্রথমবার রিং হয়ে কেটে যায়। তারপর আবার রিং আসলে মিরা ফোন রিসিভ করে। কিন্তু ফোনে কেউ কথা বলছে না। সে অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করলো কিন্তু কোন সাড়া নেই। মিরা ফোন রেখে দিবে তখন হঠাৎ করে ফোনের ওপাশ থেকে একটা নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পায়। খুব পরিচিত নিঃশ্বাসের শব্দ। কতদিন এই নিশ্বাস মিরার ঠোঁট দিয়ে ভিতরে গিয়ে শরীরে মিশে গেছে মিরা নিজেও জানে না। জানার কথাও না। মানুষ সুখের দিনগুলো গুনে রাখতে চায় না। টাকা গুনলে কমে যায় বলে একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে ঠিক সেরকম সুখ গুনলেও কমে যায়। দুঃখের দিন কষ্টের মাঝে দিয়ে যায় তাই মানুষ দুঃখের দিন ক্যালেন্ডারে, ডায়রিতে লিখে রেখে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়। আজ সে নিশ্বাস মিরার কাছে সিগারেটের ধোঁয়ার মতো বিষাক্ত লাগছে। ওর মনে হচ্ছে হেমলক গাছের বিষাক্ত রস পান করলেউ সে বেঁচে যাবে কিন্তু এই নিশ্বাসের শব্দ সে আর কিছু সময় শুনলে মরে যাবে। কোন কথার শব্দ না পেয়ে সে ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন আসে। সে ফোন ধরে হেলো বলতেই, ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এলো "হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ মিরা"। রাত তখন ঠিক ১২ টা। বাতাসের স্নিগ্ধতা মন কে যেভাবে শীতল করে তুলে মিরার মনও ঠিক সেভাবে কিছুক্ষণ শীতল হয়ে গিয়েছে। গলার স্বর ও খুব ভালভাবেই চিনতে পেরেছে। প্রজাপতি কে যেমন ফুল দেখিয়ে বলে দিতে হয় না এটা কোন ফুলের গন্ধ, কয়েক কিঃমিঃ দূর থেকেই বুঝে যায় এটা কোন ফুল ঠিক সেরকম বিশেষ কারো কন্ঠ্য শুনে আলাদা করে বুঝার প্রয়োজন হয় না এটা কার গলার স্বর।
মিরা চিনতে পেরেও বললো, ধন্যবাদ। তবে আপনাকে ঠিক চিনতে পারি নি।
" আমি অয়ন"
" অহ"
"কেমন আছো?"
"ভাল। কি জন্য ফোন দিয়েছ??"
" আজকে তোমার জন্মদিন তাই সবার আগে উইশ করবো বলে ফোন দিয়েছি"
"আমার জন্মদিন বলেই কি ফোন দিতে হবে?? আমি ফোন রাখছি। আমাকে এভাবে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবে না"
তারপর অয়ন ই ফোন কেটে দিয়েছে। মিরা এভাবে ফোন রেখে দেওয়ার কথা বললেও কোনদিন আগে ফোন কাটে না। মুখের উপর অয়নের ফোন কেটে দেওয়ার মতো মিরার দুঃসাহস নেই। কোনদিন ছিল না। এই কাজ টা যে করতো সে অয়ন।
তিন বছর আগে ব্রেক আপ হয়েছে। দুই বছর সম্পর্ক ছিল। সব মিলিয়ে পাঁচ বছর তাদের একজন আরেকজনের চেনা জানা। এই দুই বছরের সম্পর্ক টা খুব বেশি মধুর ছিল তেমন টাও না। তারপরেও এই দুই বছরে অনেক স্বপ্ন দেখা হয়ে হয়েছিল। একটা সম্পর্কের প্রথমে স্বপ্ন দেখায় ছেলে আর স্বপ্ন দেখে মেয়ে। সম্পর্ক যখন গভীর হয় তখন আস্তে আস্তে দুজনেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে, দুজনেই স্বপ্ন দেখানো শুরু করে। তারপর একটা সময় এসে স্বপ্ন শীতল হয়ে যায়। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্বপ্ন ও শেষ হয়ে যায়। কেউ কেউ এটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যায় আবার কেউ কেউ সেই দুঃস্বপ্ন প্রতিদিন দেখে। সে দুঃস্বপ্ন তার পিছু ছাড়ে না। শুরু হয় বুক চাপা ব্যথা আর চোখ টিপে কান্না। সেগুলো একলা রুমের দেয়াল আর বিছানার বালিশ ছাড়া কেউ দেখে না।
তারাও স্বপ্ন দেখেছিল। লাল-নীল রংধনু স্বপ্ন। হাত ধরে হেঁটে যাওয়ার স্বপ্ন। একটা পরিবারের স্বপ্ন। হয়তো এর মধ্যে বাচ্ছা-কাচ্ছা, নাতি-নাতনীর স্বপ্নও দেখে ফেলেছিল। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রেমে পড়লে মানুষ সব অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখে যেমনঃ- মেঘের দেশে উড়ছে, চাঁদের দেশে ঘুরছে, চাঁদের বুড়ি তাদের দেখে সুতা কাটা বাদ দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে এনে দিয়ে বলবে খুব গরম পড়েছে তোমরা এক গ্লাস শরবত ভাগাভাগি করে খেয়ে নাও এখানে লেবুর স্বল্পতা আছে। ইত্যাদি সব হাবিজাবি স্বপ্ন। কিন্তু তাদের এই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয় নি প্রেমের ভাইরাস পোকা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর সন্দেহ। যথাসময়ে এন্টিপ্রেম সফটওয়্যার ব্যবহার না করায় ক্ষুদ্র জিনিশ বৃহৎ হয়ে যায়। একজন ডানে বললে আরেকজন বামে বলে। একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার আগ মুহূর্তে যেটা ঘটে সেটা হলো ঘন ঘন মতের অমিল। মিরা আর অয়নের ঠিক সেটাই হয়েছিল। দুজন দুজনকেই ভালবেসেছিল। তাদের এই সম্পর্কে ভালবাসার যেমন কমতি ছিল না ঠিক তেমনি মতের অমিলেরও কমতি ছিল না। যার কারণে সম্পর্কের তিক্ততা নিয়ে তাদের মধ্যে ব্রেক আপ হয়। অয়ন অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছ কিন্তু মিরা বুক চাপা ব্যথা নিয়ে বারবার ই অয়ন কে প্রত্যাখ্যান করে। অয়ন ফোন দিলে কথা বলতে ইচ্ছে করবে ভেবে সিম চেঞ্জ করে ফেলে। আজ কে মিরার বার্থডে। মিরা জানে আজ অয়ন ফোন দিবে। সবার আগে উইশ করবে। সে জন্য বছরের প্রথম দিন অয়নের কন্ঠ্য শুনে শুরু করার জন্য মিরা এই রাতে অল্প সময়ের জন্য আগের সিম কার্ড একটিভ করে অয়নের ফোনের জন্য অপেক্ষা করে। যদিও অয়ন ফোন দিলে মিরা সেই আগের মতো রাগ রাগ কন্ঠ্য নিয়ে একটা কথাই বলে, কেন ফোন দিয়েছ?? ফোন রাখ।
তারপর অয়ন বার্থডে উইশ করে প্রতিবারের মতো ফোন রেখে দেয়। আর মিরাও তার সিম কার্ড টা আবার এক বছরের জন্য বন্ধ করে দেয়।
অয়নের অপেক্ষা আবারও এক বছর পর মিরার সাথে কথা বলবে আর মিরার অপেক্ষা আবার পরের নতুন বছর অয়নের কন্ঠ্য শুনে শুরু করা। মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরার পর আকাশে রংধনু উঠা। এ যেন এক রংধনু ভালবাসা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.