নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ- "অকৃতকার্য"

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১০

বলতো রতন Tense কতপ্রকার ও কি কি??
স্যার দুই প্রকার, (১) লন টেনিস (২) টেবিল টেনিস।
উফফ! আমি টেনিস খেলার কথা বলি নি। আমি বলছি গ্রামারের টেন্স এর কথা। এ কথা বলার পর মোবারক আলী হাত দিয়ে কপাল ঘষালেন।
মোবারক আলী প্রায় আড়াই বছর ধরে রতন কে প্রাইভেট পড়েচ্ছেন। রতন ক্লাস এইটে পড়ে। পাঁচ বছর ধরে একই ক্লাসে ফেল করে আসছে। রতনকে মোবারক আলী পড়ানোর আগে অন্য আরেক জন টিচার তিন বছর পড়িয়েছেন। তখনও রতন ক্লাস এইটে পড়তো। তিন বছর ফেল করার পর পুরাতন টিচার বাদ দিয়ে মোবারক আলীকে ধরা হয়। মোবারক আলীর কাছেও রতন দুই বছর ক্লাস এইটে ফেল করেছে। সব মিলিয়ে রতন মোট পাঁচ বছর ধরে একই ক্লাসে রয়ে গেছে।
মোবারক আলীর টিউশন সেলামী এখন মাস শেষে এক হাজার টাকা। দুই বছর আগে যখন মোবারক আলী রতন কে প্রথম পড়ানো শুরু করেন তখন টিউশন সেলামী ছিল দুই হাজার টাকা।
রতন মোবারক আলীর কাছে পড়ার পর যখন প্রথম ফেল করে তখন দুই হাজার টাকা থেকে পাঁচশ টাকা কাটা হয়। তখন সেলামী হয় পনেরশ টাকা। ঠিক তার পরের বছর ফেল করার পর মোবারক আলীর কাছ থেকে আরও পাঁচশ টাকা কেটে রাখা হয়। তারপর থেকে মোবারক আলীর টিউশন সেলামী এখন এক হাজার টাকা। যদি রতন এই বছর মানে তৃতীয় বছরও ফেল করে তাহলে এক হাজার টাকা সেলামী কাটা হবে। অর্থাৎ টাকার এমাউন্ট গিয়ে দাঁড়াবে জিরো। মানে টানা তিন বছর ফেল করলে সে টিচার আর পড়ানোর সুযোগ থাকছে না। তবে বিনা বেতনে যদি কেউ পড়াতে চায় সেটা হলো অন্যকথা। মানুষ মাগনা পেতে পছন্দ করে, মাগনা দিতে পছন্দ করে না। আগের টিচার সে নিয়ম অনুযায়ী তিন বছর পর চলে গিয়েছিলেন।
'আচ্ছা রতন তোমাকে বিজ্ঞান থেকে একটা সহজ প্রশ্ন করি। পারবে ত??'
'স্যার সহজ না খুব সহজ?? '
'খুব সহজ'
'আচ্ছা স্যার বলেন'
'বিদ্যুৎ কে আবিষ্কার করেছে??'
'স্যার এটা ত অতি সহজ প্রশ্ন'
'ঠিক আছে, এই অতি সহজ প্রশ্নের উত্তর দাও।'
'স্যার সুমন ভাই বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছেন'
'সুমন ভাই কে?? '
' আমাদের লাইট ফিউজ হলে উনি ঠিক করে দেন। আমাদের ঘরে উনি ই প্রথম বিদ্যুৎ এনে দিয়েছিলেন। সবাই উনারে কারেন্ট সুমন বলে ডাকে। স্যার আপনি উনারে চিনেন না??'
' না। আমার চেনার ও দরকার নাই। এই তোমার পড়াশোনার নমুনা??'
' স্যার নমুনা কি??'
'নমুনা হলো কিছুনা। চুপচাপ পড়ো।'
পরেরদিন রতন মুখ ভার করে পড়তে বসেছে।
মোবারক আলীঃ- কি হয়েছে?? আজকে পড়া শিখো নি??
রতনঃ- শিখেছি স্যার।
মোবারক আলীঃ- তাহলে কি সমস্যা??
রতনঃ- আজকে স্কুলের হেড টিচার আমাকে একটা নোটিশ দিয়েছেন।
মোবারকঃ- কি নোটিশ?? এবারো পাশ করবে না??
রতনঃ- স্যার এবার পাশ ত দূরের কথা ফেল নিয়ে টানাটানি হয়ে যাচ্ছে।
মোবারক আলীঃ- ফেল নিয়ে কেন??
রতনঃ- স্যার বলেছেন, এবার যদি ফেল করি তাহলে আমাকে আর এই ক্লাসেও রাখবে না। নিচের ক্লাসে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হতে হবে।
মোবারক আলীঃ- ভালই ত। আদু ভাইকে চেনো?? তোমার অবস্থাও সেই আদু ভাইয়ের মতো হবে।
রতনঃ- স্যার আদু ভাই ত খুব ব্রিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট ছিলেন। উনাকে চিনবো না কেন?? আপনি যে ফ্ল্যাট টা ক্রস করে আমাদের ফ্ল্যাটে ডুকেন উনাদের বাসা সেখানে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছেন এবার।
মোবারক আলী আবারও কপাল ঘষালেন রতনের উত্তর শুনে।
দেখতে দেখতে কয়েক মাস চলে গেছে। রতন ষষ্ট বারের মতো ক্লাস এইটের পরিক্ষা দিয়ে ফেলেছে। আজ কে সেই পরিক্ষার রেজাল্ট বের হবে। মোবারক আলী রতন দের বাসার ড্রয়িংরুমে সুভায় বসে আছেন। প্রচন্ড গরম পড়েছে। মোবারক আলী ঘামছেন। রতনের মা মোবারক আলীকে একগ্লাস শরবত আর পিরিচে করে বিস্কুট দিয়ে গেছেন। কোন কথা বলেন নি। শরবত দিয়ে বলেও যান নি খেয়ে নিতে। রেখেই চলে গেছেন। অন্য কোনদিন হলে খাবার জন্য কিছুই দিতেন না। আজকে দিচ্ছেন তার কারণ টা হলো আজকে শেষদিন। শেষদিনের দিন সবার মনেই মায়া জন্মে। তবে রতনের মায়ের মনে মায়া নয় ভদ্রতা জন্মেছে। রতনের মায়ের মন খুব খারাপ দেখাচ্ছে। খারাপ থাকার ই কথা, এমন ছেলে যার পেটে জন্মেছে সে কখনোই ভাল থাকার কথা নয়। বরং প্রতিদিন আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে মন খারাপ করে কান্নার কথা যাতে আল্লাহ সহায় হন।
রতন কিছুক্ষণ পর ঘরে ঢুকলো। তাকে বেশ হাসি খুশি লাগছে। অন্যবারের চাইতে ঠিক উল্টোটা। মানুষ স্বভাবত খুশি হলে হাসে আর দুঃখ পেলে মন খারাপ করে থাকে। কিন্তু পাগলের মস্তিষ্ক বিকৃত থাকে তাই তারা অকারণে হাসে। রতন পাগল নয় তাই নিশ্চয়ই আনন্দ পেয়েই হাসছে। আর আজকের দিনে ওর আনন্দের একটাই কারণ থাকতে পারে সেটা হলো ওর রেজাল্ট ভাল হওয়া মানে পাশ করা।
রতন ঘরে ঢুকতেই ওর মা জিজ্ঞেস করলেন, কি রে তর রেজাল্ট কি??
রতন জবাব না দিয়ে মোবারক আলীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,
মোবারক আলীঃ- তোমাকে ত বেশ হাসি খুশি লাগছে। তোমার রেজাল্ট কি?? পাশ করেছ??
রতনঃ- স্যার পাশ করতে পারি নি....।
মোবারক আলীঃ- তাহলে এবারো ফেল। টানা ষষ্টবার ফেল। আবার হেসে হেসে ঘরে ঢুকছ??
রতনঃ- স্যার, আমাকে হেড টিচার বলেছিলেন আমি ফেল করলে নিচের ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দেবে। আমি আজকে স্যারের হাতে-পায়ে ধরে কোনমতে আবার এই ক্লাসে থাকার সুযোগ পেয়েছি। তাই আমি খুব খুশি।
তারপর মোবারক আলী রতনের গালে ঠাশ করে একটা চর মেরে চলে গেছেন। শরবত টুকুও আর খেয়ে যান নি।
শোনা গেছে মোবারক আলী চলে যাওয়ার পর রতন কে পড়ানোর জন্য তিন বছর মেয়াদী আর কোন টিচার খুঁজে পাওয়া যায় নি তাই রতনের মা আবার বাধ্য হয়ে মোবারক আলীর খুজ করতে লাগলেন। কিন্তু মোবারক আলী ততদিনে অন্য জায়গায় শিফট হয়ে গেছেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৮

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল্লাগে নাই।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৫

হাবিব শুভ বলেছেন: আগামীতে চেষ্টা করবো যাতে ভাল লাগার। পাশে থাকুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.