নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

" একদা গরুর বাজারে"

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৪

গরু বাজারে গিয়েছিলাম গরু আর গরু কেনা দেখতে। বাজারে ঢুকতেই কিছুক্ষণ পর পায়ের অবস্থা গরুর পায়ের অবস্থা থেকেই বাদ হয়ে গেলো। বৃষ্টি হওয়ায় মাঠে কাঁদা জমে এটা আর বাজার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পুকুরের পানি পাম্প দিয়ে সরানো হয়েছে আর কিছু পিচ্ছি পোলাপান সেই পুকুরের কাঁদায় মাছ ধরছে। কেউ মাগুর, কৈ, পুটি আবার কেউ কেউ মনে হচ্ছে পুকুরেই ইলিশা ধরছে। যাই হোক পায়ের দিকে আর নজর দিলাম না কারণ সবার পায়ের একই অবস্থা। অন্যের এই অবস্থা দেখে নিজের দুরবস্থা কিছুটা সামলে নিলাম। অন্যের সুখ দেখলে মানুষ নিজেকে দুঃখী মনে করে কিন্তু অন্যের দুঃখ দেখলে মানুষ নিজেকে সুখী মনে করে। অনেকের প্যান্টের পিছনে এমনভাবে কাঁদা লাগানো যে দেখে বুঝা মুশকিল এটা প্যান্ট নাকি প্যান্টের নিচের পা। আর দুপা বাড়াতেই মাইক থেকে ভেসে আসলো...সাবধান......সাবধান.... টাকা আর মোবাইল ফোন নিজ দায়িত্বে সাথে রাখুন। চুরি কিংবা হারিয়ে গেলে কতৃপক্ষ দায়ী নয়। আমিও একটু নড়েচড়ে পকেটে হাত দিলাম। মোবাইল টা আছে কিন্তু টাকা টা পাচ্ছি না। সামনের পকেট চেক করলাম, শার্টের পকেট চেক করলাম। না টাকাটা পাচ্ছি না। শেষে অনেক খুঁজাখুঁজির পর প্যান্টের পিছনের পকেটের এক কোণায় টাকাটা পেলাম। পঞ্চাশ টাকার একটা নোট। চানাচুর খাবো বলে মায়ের কাছ থেকে নিয়েছিলাম। যাক হারিয়ে যায় নি। পঞ্চাশ টাকার নোট টি আবার প্যান্টের পিছনের পকেটে যত্ন করে ঢুকিয়ে রাখলাম। বাজারে যতই হাঁটছি ততই ঘাসের মধ্যে পা পিছলে যাচ্ছে। কাঁদায় নয় গোবরে। গরুদের কিছুক্ষণ পর পর খাওয়ানো হচ্ছে আর গরুরা কিছুক্ষণ পর পর প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিচ্ছে। নির্লজ্জ গরু গুলো লেজ তুলেই হাম্বা করে ইচ্ছামত কাজ সারছে। গরুদের জন্য প্রস্রাব-পায়খানা করার জন্য শৌচাগার বানালে ভাল হত।একটি একটি করে লাইন ধরে টয়লেটে যেত।
তবে গরুগুলো যদি ভারত থেকে আনানো হয় তাহলে গরুর জন্য টয়লেট করার পদক্ষেপ টা বৃথা যাবে। গরুরা প্রশ্ন তুলতে পারে, আমাদের মুনিব রা যদি খোলা মাঠে পায়খানা করতে পারে তাহলে আমরা কেন কষ্ট করে লুকিয়ে পায়খানা করতে হবে। আগে আমাদের মুনিব রা ঠিক হোক তারপর আমরা গরু সমাজ ভেবে দেখবো এ বিষয়ে।
আশপাশ থাকানোর পর লক্ষ্য করলাম এক লোক গরুর মুখ জোর করে খুলে গরুর আক্কল আছে কিনা দেখছেন। ঘটনা টা আরও পরিষ্কার হওয়ার জন্য একটু কাছে গেলাম। না আক্কল না, দাত দেখানো হচ্ছে। কোরবানির গরুর আবার দাত থাকতে হয়। চামড়া সুন্দর হতে হয়, কোন ক্ষুত থাকতে পারবে না। এই ক্ষুত-ক্ষাত ধরাধরির কাজ গুলো দুটি সময় ঘটে।
১) কোরবানির গরু কিনতে
২) পাত্রী দেখতে।
পাত্রী দেখতে আমাদের বরের মা-খালারা পাত্রীকে এমন পাবে কষ্টিপাথরে যাচাই করেন যেন কোরবানির গরু কিনছেন।
পার্থক্য শুধু একটাই পাত্রী পরীক্ষা করে দেখে মহিলারা আর গরু পরীক্ষা করে দেখে পুরুষরা।
লোকটি দাত দেখার পর দাম জিজ্ঞেস করলো, গরুর মালিক বললেন ভাই দাম চাইলে দেড় লাখ চাইতাম কিন্তু আপনার জন্য "এক লাখ বিশ হাজার" টাকা হলে দিয়ে দিবো।
ক্রেতা বললেন, না। এত পারবো না। আর ও একটু কম বলেন।
গরুর মালিক বললেন, ভাই এক লাখ দাম হয়ে গেছে। আপনাকে ভাল লাগছে তাই কমে দিয়া দিবো।
আমি সেখান থেকে চলে গেলাম, বুঝলাম এখানে গরু নয়, হাতি কেনা-বেচা হচ্ছে।
আমি আরও কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছে তাই বাজার থেকে বের হওয়ার গেইটের সামনে এলাম। দেখলাম সেখানে গরু বিক্রির রশিদ কাটার জন্য মাইক দিয়ে এনাউন্স করছে। আর রশিদ না করলে জরিমানা দেয়ার জন্য সর্তক করে দিচ্ছে।
আমি আরও একটু সামনে গেলাম। দেখলাম এক লোক কে ধরা হয়েছে যিনি গরু কেনার রশিদ না করে লুকিয়ে গরু নিয়ে চলে যাওয়ার অপরাধে ধরে আনা হয়েছে। উনাকে পাঁচ হাজার জরিমানা করা হচ্ছে। এক লোক মাঝখান থেকে উঠে বললো, এদের এভাবে জরিমানাই করা উচিৎ। কোরবানির গরু কেনা হয় আল্লাহর পথে ত্যাগ করার জন্য। রশিদের টাকাটাও সে কুরবানির অংশ। এটা কুরবানির হক। লুকিয়ে রশিদের টাকা না দিয়ে চলে গেলে সে কুরবানি জায়েজ হবে না। তারপর আমি দেখলাম সেই লোকটি রশিদ কাটার মেম্বারের হাতে লুকিয়ে পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে নিজেই নিজের গরু কেনার রশিদের টাকা না দিয়ে গরু নিয়ে বাইরে চলে গেলো।
আমিও বাইরে চলে এলাম। পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট টি বের করে চানাচুরওয়ালার কাছ থেকে দশ টাকার চানাচুর কেনে বাকি টাকা পকেটে ঢুকালাম। আমি চানাচুর মুখে দিচ্ছি আর দেখছি, লোকটি গরুর সাথে সেলফি তুলতে তুলতে বাড়ি যাচ্ছে। নিশ্চয়ই ফেইসবুকে ছবি আপ্লুড দিয়ে ক্যাপশন দিবে "কাউফি" এই মাত্র কিনলাম এক লক্ষ টাকা দিয়ে। তারপর আমিও চানাচুর খেতে খেতে বাড়ি চলে আসলাম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৩০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: মজা পাইলাম।

রশিদ না করা কী জ্ঞানই না দিল - পরে সবই গরুর গোবরের সাথে গায়েব!

তবে গরুগুলো যদি ভারত থেকে আনানো হয় তাহলে গরুর জন্য টয়লেট করার পদক্ষেপ টা বৃথা যাবে। গরুরা প্রশ্ন তুলতে পারে, আমাদের মুনিব রা যদি খোলা মাঠে পায়খানা করতে পারে তাহলে আমরা কেন কষ্ট করে লুকিয়ে পায়খানা করতে হবে। আগে আমাদের মুনিব রা ঠিক হোক তারপর আমরা গরু সমাজ ভেবে দেখবো এ বিষয়ে।
বেশি জোস!

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫

হাবিব শুভ বলেছেন: :P ভারতের অধিকাংশ লোক ই খোলা মাঠে পায়খানা করে :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.