![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চিত্রার আজকে খুব সকাল ঘুম ভেঙ্গেছে। সকাল নয় টা বাজে। সকাল নয় টা খুব বেশি সকাল নয়। ভোরের শেষের দিক আর দুপুর শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মাত্র। কিন্তু চিত্রার কাছে সকাল নয় টা হলো খুব সকাল। ওর কাছে সকাল মানে দুপুর "বার টা"। আজকে একটা বিশেষ দিন, চিত্রাকে বরপক্ষ দেখতে আসবে। তাই আজকে অনেক কাজ। সারাগায়ে হলুদ মাখতে হবে। হলুদ মাখা শেষ হলে গোলাপ জলের পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। চিত্রার মা রোকসানা বেগম দুই দিন আগে অর্ডার করে দ্বিগুণ টাকা বেশি দিয়ে বাগানের টাটকা গোলাপ ফুল আনিয়েছেন। পাত্র বড়লোক, ইউরোপ কান্ট্রির মতো একটা দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং রেংকে জব করছে। সে দেশের সিটিজেন, বিয়ের পর বউ নিয়ে যাবে। যদিও রোকসানা বেগমের ইচ্ছে নেই একমাত্র মেয়েকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়ার। কিন্তু মেয়েকে আদর করে কাছে রাখলে হবে না। মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে যখন তখন ত দূরে যেতেই হবে। সেটা দেশ হোক কিংবা বিদেশ। পাত্রপক্ষ রা যাতে মেয়েকে দেখে অপছন্দ না করে সে জন্য এত আয়োজন। কোনভাবেই এই পাত্র হাত ছাড়া করা চলবে না। এর আগে আরও ভাল ভাল পাত্র হাত ছাড়া চিত্রার হেয়ালীপনার জন্য। তাই এবার তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব কাজ করছেন।
বরযাত্রী রা মাইক্রোবাস করে আসছেন। মাইক্রোবাস টি সিলেট টু ঢাকা যাবে। আনন্দঘন সময়। বরের ফেমিলির সব আসছেন। আজকে বউ পছন্দ করা হবে। গাড়িতে উঠার আগে বর আয়নার সামনে আধঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল চুল আছড়াতে। কনে পছন্দ করতে গিয়ে যদি বর পছন্দ না হয় তাহলে সেটা বেশির লজ্জার হয়ে যাবে। গাড়িতে উঠার সময় বরের মা কনের মা রোকসানা বেগম কে জানিয়ে দিয়েছেন যে ওরা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছে। রোকসানা বেগম আগেই বরের সব পছন্দের খাবার জেনে নিয়ে সে রুচিমত খাবার তৈরি করেছেন।
যদিও বিয়ে নিয়ে চিত্রার মনে তেমন কোন উদ্রেক নেই তবুও চিত্রাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে আজ খুব ই উৎফুল্ল। আগের রাত হয়তো অনেক স্বপ্ন দেখেছে গুটি গুটি পায়ে চিত্রা হবু বরের সামনে হেঁটে যাচ্ছে, বরের মা, বোনরা একজন একজন করে চিত্রাকে দেখছেন। কিন্তু এ সময় মেয়েদের মনে যথেষ্ট ভয় ও থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত বরপক্ষ কনেকে পছন্দ করলো কি না সেটার উপর বিয়েটা নির্ভর করে। যদি পছন্দ হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি পছন্দ না হয় তাহলে শুনতে হয় নাউজুবিল্লা।
বরেরা রওয়ানা দিয়ে দিয়েছেন শুনে রোকসানা বেগম যেন আরও উদ্রেক হয়ে গেলেন। বাড়ির কাজের বোয়াদের ধমক দিতে লাগলেন, এতক্ষণ ধরে কাজ শেষ হচ্ছে না কেন??
মনে মনে বলতে লাগলেন, আমি মহিলা মানুষ হয়ে আর কত দিক সামলাবো।
চিত্রার বাবার কথা মনে করে কিছুক্ষণ পর পর ই চোখ রাঙ্গিয়ে বলছেন, ঘরে আদা ছিল না। সেজন্য বাজারে একটু আদা আনার জন্য পাঠিয়েছিলাম এখনো আসার নাম নেই। বরের মাইক্রোবাস টি প্রায় আধ রাস্তায় চলে এসেছে। বরের পাশে বরের দুইভাই বসে আছে। বড় ভাইয়ের বিয়ে মানে আনলিমিটেড এনজয়। হাসি টাট্টা করে করেই যাচ্ছে তারা। কিন্তু সব আনন্দ যে সবার কপালে থাকে না। তা কিছুক্ষণ পরেই প্রমাণ হলো। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের আট যাত্রী নিহত হলেন। এর মধ্যে বরসহ বরের দুই ভাই আরও অনেকে একসঙ্গে নিহত হলেন। মুহূর্তেই পালটে গেলো বিয়ে বাড়ির চিত্র। ঘটনা টা শোনার পর বরের বাড়িতে শুরু হলো হাহাকার। রোকসানা বেগমের হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেলো কাচের জগ। কনে চিত্রা কিছু বলতে পারছে না। হাতে মেহেদীর লাল রঙ লাগার আগেই জীবনে রক্তের দাগ গেল। সবকিছু নির্বাক। স্তম্ভিত গ্রামবাসী।
______
এ ঘটনা কোন কাল্পনিক গল্প নয়। সত্যের মিশ্রণে একটি বানানো কাহিনী। শুধু চরিত্র গুলো কাল্পনিক।আজকে শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার শশই এলাকায় আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় বর সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রুপশপুর গ্রামের। আমার পাশের গ্রামের চিত্র। আমার আপন খালাতো ভাই বরের সাথে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু শেষমেশ যাওয়া হয় নি। আল্লাহ ওকে রক্ষা করবছেন।
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২১
হাবিব শুভ বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: খুবই ট্রাজিক ঘটনা।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!
জীবনটা আসলিই অনিশ্চয়তায় ভরা---------------
উভয় পরিবারকে আল্লাহ শোক সইবার শক্তি দিন