![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক...
বাইরের বারিন্দার পাশের একটা রুমে রহিমা বেগম খক খক শব্দ করে কাশছেন। বাহির থেকে ভিতরে সে শব্দ টা এসে ভিতরের পাশের রুমে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ভিতরে এক নব দম্পতি ভালবেসে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আদরে খুনসুটি করছে। নব দম্পতির নাম শাহেদ-নীলিমা। নীলিমা কাশির খকখকানি শব্দ শোনে শাহেদ কে বললো, যাও ত বাইরের এই মহিলাটিকে বলো এমন করে বিশ্রী শব্দ করে না কাশতে। কাশতে হলে মুখ চেপে ধরে কাশতে।
সম্পর্কে, বাইরের এই মহিলাটি শাহেদের "মা"। আপন মা, জন্মদাত্রী মা। নীলিমার শাশুড়ি।
শাহেদ বারিন্দার পাশের রুমে ঢুকেই নাক তুলা দিয়ে বললো, ইশ, ছি.. ছি.. ছি.. এই রুমে পা রাখার মত না। কত্ত বিশ্রী। চারপাশে কাশ, থুথু, বমির দুর্গন্ধ। শাহেদ নাক টিপা দিয়ে ওর মাকে বললো, কি হয়েছে এমনভাবে শব্দ করে লোকদেখানো কাশি কাশছ কেন?? যাতে লোকে বলে শাহেদ ওর মা কে দেখে না, বউএর কথায় চলে। আমি খারাপ তুমি কি সেটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছ??
না রে বাপ..দুইদিন ধইরা আমার খুব.....
কথা শেষ হওয়ার আগেই শাহেদ মায়ের কথা থামিয়ে বললো, হয়েছে হয়েছে.. বাছ্, আমি বুঝে গেছি এখন তুমি কি বলবে। বলবে, আমার খুব জ্বর হয়েছে, কাশি হয়েছে, গা জ্বলে যাচ্ছে যত্তসব নেকাপনা করে টাকা চাইবে। ইচ্ছা করেই এসব আনহাইজেনিক কাজ করে একটা কিছু বাঁধাবে আর বেহায়াপনা করে টাকা চাইবে....।
পকেট থেকে একশো টাকা বের করে বাইরে থেকে ছুরে ফেলে দিয়ে বললো, এই নাও, পাশের বাড়ির মুন্সি কবিরাজের বাড়ি গিয়ে ঔষধ কিনে খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো। আর হে যে কথা বলতে এসেছিলাম, এমন শব্দ করে কাশবে না, দরকার হলে মুখ বন্ধ করে কাশবে। নীলিমার অসুবিধা হচ্ছে। নীলিমার কাছে প্রতিদিন তোমার জন্য আমাকে হেয় হতে হয়। আর কত?? আমি জাস্ট নিতে পারছি না আর এই ঝামেলা উফ ডিজগাস্টিং.....।
দুই..
নীলিমা অনেক সাজগোজ করেছে আজ। নিলীমার দিকে চেয়ে শাহেদ আজ চোখ ফিরাতে পারছে না। শাহেদ ও সুট কোর্ট পড়েছে। সিনেমা দেখতে যাবে ওরা। বিয়ের পর এই প্রথম কোথায় বেড়াতে যাচ্ছে। সিনেমা..নাম্বার ওয়ান শাকিব খান। এই শাকিব খান কে শাহেদ দুচোক্ষে দেখতে পারে না। ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়, নাচলে ভুরি উড়নার মতো দুলে। কেমন জানি মেয়ে মেয়ে লাগে। কিন্তু নীলিমা শাকিব খানের একনিষ্ঠ ভক্ত তা শাহেদ প্রথমেই ই বুঝে গিয়েছিল যখন বাসর রাতে নীলিমা শাহেদ কে জড়িয়ে ধরে বলেছিল তুমি আমার প্রাণের শাকিব খান। তখন থেকেই শাহেদ শাকিব খান কে ফলো করা শুরু করছে। সে সুবাধে ঠোঁটে লিপস্টিক আর ভুঁড়ি বাড়ানোর চেষ্টায় আছে। তাকে পুরোপুরি শাকিব খান হতে হবে। তবেই নীলিমা অপু বিশ্বাস যেভাবে শাকিব খান কে জড়িয়ে ধরে ভালবাসে সেরূপ নিলীমাও শাহেদ কে জড়িয়ে ধরবে।
এরূপ কাল্পনিক করতে করতে শাহেদ হঠাৎ নীলিমার উফ মার্কা হালকা চিৎকারে ঘোর কাটলো। নীলিমা শাড়ী ঠিক করার সময় শাড়ির সাথে ব্লাউজ আটকে দেয়ার জন্য আলপিন গিঁথার সময় ঘারের কাছে চামরায় আলপিন গিঁথে রক্ত বের হচ্ছে। শাহেদ নীলিমার রক্ত দেখে অস্থির হয়ে গিয়েছে। রক্ত বন্ধ হওয়ার জন্য এক টুকরো কাপর খুজঁছে কিন্তু আশে পাশে নীলিমার সব দামী দামী শাড়ি তাই বাইরে খোঁজ করতে গেল। দেখলো উঠানের এক কোণায় ওর মায়ের সাদা শাড়ি রোদে শোকানো হচ্ছে।ত শাহেদ মায়ের শাড়ির আচল ছিঁড়ে নীলিমার আলপিন ফুটে যাওয়া অংশে চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ওর মায়ের দুই টা শাড়ি ছিল। একটা পরলে আরেকটা রোদে শুকাতে দিতেন। দুইটার মধ্যে এটাই তুলনামূলক ভাল শাড়ি ছিল। কিন্তু এখন সে ভাল শাড়ি টাও রইলো না।
তিন...
শাহেদ আর নীলিমা সিনেমা দেখার পর ডিনার করে বাড়িতে আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যায়। রাতের পরিবেশ টা এমনেতেই শান্ত তার চাইতে বেশি শান্ত শাহেদের বাড়ি। নিশ্চুপ, অন্ধকার। বাড়িতে পা দিয়ে এমন অন্ধকার দেখে নীলিমা শাহেদ কে বললো, কি ব্যাপার আজকে কি বুড়ি মহিলাটি আলো জ্বালায় নি?? নাকি মরে গেছে।
শাহেদের কাছ থেকে এই কথার কোন প্রতুত্তোর পায় নি নিলীমা।
তারপর ঘরে ঢুকে সেদিন ওরা ঘুমিয়ে পরে।
পরের দিন সকালে গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। কিন্তু বাইরের বারান্দার রুম থেকে কোন কাশির শব্দ না পেয়ে সন্দেহের বশে শাহেদ ওর মায়ের রুমে যায়। গিয়ে দেখলো ওর মা নিশ্চুপ ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে আছে। কয়েকটা মাছি গায়ের উপর ভনভন করে উড়াউড়ি করছে।
শাহেদ কয়েকবার মা..মা..মা.. বলে ডাকলো কিন্তু কোন সাড়া পেলো না। সাড়া না পেয়ে ভিতরে ঢুকে মা কে ঘেন্না ঘেন্না মনে নাক উশকে শরীরে টাচ করেই বুঝলো, ওর মা আর নেই। তারপর ও লোকদেখানো কিছু কাজের নৈমিত্তে একজন ডাক্তার ডেকে আনে। ডাক্তার ওর মাকে দেখে বললো, গতকাল রাত্রেই উনি মারা গেছেন। লাশ পুরনো হয়ে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্বব দাফনের কাজ টা সম্পন্ন করে ফেলতে। সেদিন লোক দেখানো কিছু কান্না ছাড়া শাহেদ মন থেকে এক ফোটা চোখের জল ও ফেলে নি।
চার...
কয়েকদিন পর, একটা এনজিও থেকে কয়েকজন লোক শাহেদের খোঁজে বাড়িতে আসলো। শাহেদ এদের ঘরে নিয়ে বসালো। ওকে খোঁজার কারণ জানতে চাইলে ওরা জানালো যে ওরা একটা এন.জি.ও থেকে এসেছে। রহিমা বেগম একটা আজীবন মেয়াদী একটি ডিপোজিট করে রেখেছিলেন। রহিমা বেগম স্পষ্ট করে গিয়েছিলেন যে, উনার মৃত্যুর পর উনার ছেলে শায়েদ এই টাকা টা পাবে। শাহেদের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, ওর মা অসুখের নাম করে যে টাকা টা নিতেন সে টাকা দিয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে ঔষধ না খেয়ে ওর জন্য এন.জি.ও তে জমিয়ে রাখতেন।
শাহেদ প্রথবারের মতো ওর মাকে মিস করতে লাগলো। প্রথমবারের মতো মায়ের জন্য চোখের জল ফেলতে লাগলো। নিজেকে ধিক্কার জানাতে লাগলো। মায়ের জন্য খুব কষ্ট লাগছে, এই মা কে সে কটা টাকা দেয়ার দায়ে কত কটু কথাই না বলেছে।
পাঁচ...
শাহেদের মতো নীলিমাও নিজের ভুল বুঝতে পারে যেদিন নীলিমার বড় বোন ফোন দিয়ে বলে যে, নীলিমার মাকে ওর ভাই বউ এর কথায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে আর ওর মা ওর বড় বোনের বাসায় উঠায় বড় বোন মাকে আপদ বলে সেও ওর মাকে বিদায় করে দেয় আর ওর মা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষার জন্য বের হয়।
......শাহেদ আর নীলিমা দুজনেই ওদের ভুল বুঝতে পেরে। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা অনুভব করতে পেরে প্রথম বারের মতো সেদিন রহিমা বেগমের কবরে জিয়ারত করতে যায়।
গল্পঃ- "মা"
লেখকঃ- হাবিব শুভ
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৫০
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৫২
সুমন কর বলেছেন: মন খারাপ করার মতো লেখা। লেখায় প্লাস।
ভালো লিখেছেন।