![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিশোর শরীর দিয়ে ঝরঝর করে ঘাম পড়ছে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে হাপাচ্ছে। এমনভাবে হাপাচ্ছে যেন মৃত্যুশয্যায় কোন মুমূর্ষু রোগী হাপাচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় নিশো নয়। নিশোর পাশেই নিচে ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সাদিয়া। সাদিয়া আর নিশো সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। বিয়ের মাত্র ৬/৭ মাস হয়েছে। নিশোর হাতের ধারালো চাপাতির কোপে নিস্তেজ হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে সাদিয়া।
ওদের সংসার তেমন ভাল চলছিল না। ৬/ ৭ মাসের সংসারে নিশো সাদিয়ার সাথে ভাল করে কথাও বলে নি। নিশো অফিস থেকে ফিরার পর ভালই ছিল। যখন সাদিয়া হঠাৎ করে নিশোর কানে কানে বললো যে, শি ইজ প্রেগন্যান্ট। সে মা হতে চলেছে। ওদের সংসারে নতুন সদস্য আসছে তখন থেকেই নিশো অস্থির হয়ে যায়। মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। নিশো যাকে কোনদিন ছুঁয়ে দেখি নি সে বলছে সে মা হতে চলেছে আর সে সন্তানের বাবা নিশো। সাদিয়া কে আশ্চর্য করে নিশো বলে উঠলো, তোমাকে এই সন্তান নষ্ট করতে হবে। সাদিয়ার তখন অবাক দৃষ্টিতে নিশোর দিকে চেয়ে না থেকে কথাটার প্রতিবাদ করলো আর তার কারণ জানতে চাইলো।
নিশো ঠিকঠাক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারলো না সে কথার। শুধু ফোর্স করতে লাগলো যে বাচ্ছা টা নষ্ট করতে হবে। সাদিয়া কিছুতেই নিশোর কথা মানতে রাজি হলো না। সাদিয়ার জীবনের প্রথম মা হওয়ার সুযোগ টা সে হারাতে পারবে না। শুরু হয় তীব্র কথা কাটাকাটি কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নিশো সাদিয়া কে হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে মারতে লাগলো।
ঘটনাটা যখন বড় পর্যায়ে চলে যায় তখন নিশো রান্নাঘর থেকে চাপাতি এনে সাদিয়া কে কোপাতে শুরু করে। ওর হাত,পা, শরীর কোপের আঘাতে রক্তাক্ত করতে থাকে।
নিশো কোনদিন ও মেয়েদের দেখতে পারতো না। আত্মীয়স্বজন দের চাপে পড়ে সাদিয়ার সাথে নিশোর বিয়ে হয়। মেয়েদের প্রতি নিশোর তীব্র ঘৃণার কারণ টা হলো আজ থেকে বাইশ বছর আগের একটা কাহিনী।
.
বাইশ বছর আগে নিশোর বয়স যখন আট বছর তখন নিশোর বাবা আর নিশোর মায়ের মাঝে প্রচুর ঝগড়া হতো। সে ঝগড়া গুলো কোন সাধারণ ঝগড়া ছিল না। সে ঝগড়ার কারণ ও ছিল অস্বাভাবিক। নিশোর বাবা যখন রাত্রে অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেন তখন নিশোর মা প্রায় সময় ই বাড়ি থাকতেন না। নিশোর মা কোন জব করতেন না। ওয়েস্টার্ন কালচারে বড় হওয়া নিশোর মায়ের বাবা ছিলেন অনেক বড়লোক। আর নিশোর বাবার যদিও টাকা পয়সা ছিল তবে নিশোর মায়ের বাবার সম্পত্তির তুলনায় খুব কম ছিল। নিশোর মা উনার বাবার কাছ থেকে টাকা আনিয়ে রাত্রে বিভিন্ন ক্লাবে অথবা পার্টি তে রাত কাটিয়ে আসতেন। নিশো একলা বাড়িতে বুয়ার কাছে থাকতো। বুয়া চলে গেলে বাড়িতে একা থাকতো। নিশোর বাবা সেটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারতেন না। নিশোর মা কে ওর বাবা অনেক বারণ করার পরও ওর মা সেটা মানতেন না।
একবার নিশোর বাবা ৬ মাসের জন্য অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলে। ৬ মাস উনার বাড়ি ফিরা হয় নি। ৬ মাস পর যখন বাড়ি ফিরলেন তখন শুনলেন যে নিশোর মা তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। নিশোর মায়ের সাথে ওর বাবার সেদিন তুমুল ঝগড়া হয়। নিশো সেদিন ওদের রুমেই ছিল। শিশু অবস্থায় তখন নিশো সে ঝগড়া থামানোর কোন উপায় ছিল না। ঝগড়ার এক পর্যায়ে নিশোর বাবা নিশোর সামনেই ওর মাকে শ্বাসরুদ্ধ করে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। নিশোই শুধু তার মা হত্যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিল। নিশোর বাবা বুঝেছিলেন যে নিশো এটা সবাইকে বলে দিবে কিন্তু নিশো সেদিন ওর বাবাকে ধরিয়ে না দিয়ে ওল্টো ঘটনাটা চাপা দিতে সাহায্য করেছিল। আর ওল্টো ওর মা য়ের সাথে সমস্ত নারীকুল কে ঘৃণার চোখে দেখা শুরু করলো।
.
আজকে বাইশ বছর পর আবার সে ঘটনা অন্যভাবে রিপিট হলো সাদিয়া আর নিশোর মধ্যে। নিশোর মনে তীব্র ঘৃণা হচ্ছে ওর মায়ের মতো সাদিয়ার জন্য। সাদিয়া নিস্তেজ অবস্থায় ইশারা দিয়ে এটাই বুঝাচ্ছিল যে, সে কোন অন্যায় করে নি। এই সন্তানের বাবা নিশো। কিন্তু সাদিয়া যতো বারি ইশারা করছিল ততো বারি ই নিশো ওর শরীরে আরও বেশী করে চাপাতি দিয়ে কোপ দিচ্ছিল। সাদিয়ার রক্তে সাদা টাইলসের ফ্লোরে রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। তবুও সাদিয়ার প্রতি নিশোর কোন মায়া জন্মাচ্ছে না। যখন নিশো সাদিয়ার গর্ভের সন্তান কে লক্ষ্য করে ওর পেটে চাপাতি দিয়ে কোপ দিলো তখন সাদিয়া আর কোন ইশারাও করতে পারলো না। সাদিয়া ঢলে পড়ে মৃত্যুর দিকে।
সাদিয়াকে হত্যার চেষ্টার পর নিশো ও একরকম অস্থির হয়ে পড়লো। সে অস্থিরতা সাদিয়ার ডেড বডি ফেলে পালিয়ে যাবার জন্য নয়। সে অস্থিরতা মন থেকে অনুভব করলো। যখন সে বিছানায় ওর হাত রাখলো তখন হাতের স্পর্শ গিয়ে পড়ে সাদিয়ার মোবাইলের উপড়ে। এবং মোবাইলের পাওয়ার বাটনে ক্লিক পড়ে স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠলো। নিশো মোবাইলের সে আলোতে চোখ রাখতেই মনে হলো ও চোখে মুখে ঝাপসা দেখছে। সাদিয়ার মোবাইলের স্ক্রিনের ওয়ালপেপার হলো তাদের একটা অন্তরঙ্গ ছবি। কিন্তু এমব অন্তরঙ্গ অবস্থায় একসাথে দাঁড়িয়ে সাদিয়ার সাথে নিশো কোন সেলফি তুলেছে বলেছে ওর মনে হচ্ছে না। নিশো কিছুই মনে করতে পারছে না। শুধু মাথায় ঝাপসা ঝাপসা কিছু স্মৃতি মনে হচ্ছে। সে ঝাপসা স্মৃতিতে নিশোর মনে হচ্ছে সে কাউকে আদর করছে। কারো কাছে গিয়েছিল কোনদিন। কিন্তু কার কাছাকাছি গিয়েছিল সে সেটা মনে করতে পারছে না।
অনেকক্ষণ যাওয়ার পর নিশোর মনে পড়ছে কিছু কথা। সেদিন ছিল পূর্ণিমার এক রাত। নিশো ড্রিংক করে বাড়ি ফিরেছিল। চারিদিকে আলোর ঝলসানিতে সাদিয়ার রূপে সে আলোর ঝলসানি আরো বেড়ে গিয়েছিল। ড্রিংকের নেশা কেটে যাওয়ার আগে নিশোর মনে সাদিয়ার রূপে আরেকটা নেশা লেগেছিল। আর সেদিন সে কারো খুব কাছাকাছি গিয়েছিল। সে মানুষ টা হলো সাদিয়া। আর তার ফল সাদিয়ার পেটে নিশোর সন্তানের আবির্ভাব।
সাদিয়া নিষ্পাপ ছিল। হঠাৎ করে নিশো স্তব্ধ হয়ে গেলো। হাতের চাপাতি ফেলে দিয়ে সাদিয়ার নিস্তেজ শরীর ধরে বারবার সাদিয়ার নাম ধরে ডাকতে লাগলো কিন্তু সাদিয়ার নিথর শরীর তখন আর কোন সারা দিচ্ছিল না। কারণ মৃত শরীর আর কোন উত্তর দেয় না। শুধু বুঝিয়ে দেয় সে চলে গেছে। অনেক দূরে চলে গেছে। সাদিয়ার নিথর শরীর থেকে যখন কোন নিশো কোন সাড়া পাচ্ছিল না। তখন সেও বুঝতে পারলো সাদিয়া আর এই পৃথিবীতে নেই। আর এর কারণ হলো সে। তখন যে চাপাতি তে সাদিয়ার রক্ত লেগে আছে সে চাপাতি নিজেই নিজের গলায় চালিয়ে নিজে কে সে শেষ করে লুটিয়ে পড়ে সাদিয়ার মৃত শরীরের উপর।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ। এটা সাইকো নিয়ে প্রথম চেষ্টা করেছিলাম।
২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬
সুমন কর বলেছেন: খারাপ লাগেনি। ছোট গল্প হিসেবে ভালোই হয়েছে।
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৮
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:১৫
কালীদাস বলেছেন: ছোট গল্প হিসাবে কাহিনীর গভীরতা ভালই। সাইকো হিসাবে এটা কিছুই হয়নি, স্যরি।
ব্যাপার না, আরও পড়ুন এবং চেষ্টা চালিয়ে যান
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:১২
নোমান প্রধান বলেছেন: ড্রিংকস করার পর কিছু ঘটিয়ে ভুলে যাওয়া, ঠিক যাচ্ছে না।
পুরোপুরি সাইকো গল্প না হলেও ভালো চেষ্টা ছিলো ।