নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেউ চিরদিন বেঁচে থাকে না তবু কেউ কেউ বেঁচে থাকে।

হাবিব শুভ

হাবিব শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মনিরেপক্ষতার নামে সাম্প্রদায়ীকতা অতঃপর সংখ্যালঘু হিশেবে নিজেকে ভুল ব্যখ্যা

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

যারা যারা ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে কথা বলেন অথবা সংখ্যা লঘু হিশেবে নিজেকে ভুল ব্যখ্যা দেন তাদের অধিকাংশই জানে না বা বুঝার চেষ্টা অথবা মানতে রাজি হয় না ধর্ম নিরপেক্ষতার মূল কাজ। সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির পিছনে পরোক্ষভাবে সব চাইতে বড় ভূমিকা পালন করে সংখ্যা লঘুরাই। যেমন বাংলাদেশের হিন্দু, ভারতের মুসলমান ইত্যাদি। বাংলাদেশে হিন্দু যেমন সংখ্যালঘু, ভারতে ঠিক তেমনি মুসলাম সংখ্যা লঘু।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকেই যারা সংখ্যায় কম তারা নিজেকে সংখ্যা লঘু ভাবে। এখন প্রশ্নটা হলো, বাংলাদেশে হিন্দুরা(সংখ্যালঘু) কতটা নিরাপদ ?? আর ভারতে মুসলমানরা(সংখ্যালঘু) কতটা নিরাপদ??
এখন ভারতের কথা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কথায় আসা যাক।
পাকিস্তানের কাছ থেকে যখন বাংলাদেশের মানুষেরা স্বাধীনতা পেতে হিন্দু, মুসলিম বা অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা যৌথভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশ সব ধর্মের অবাধ বসবাসের জায়গা। এ দেশের সম্প্রতির বিষয়ে বিদেশেও সুনাম রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই সম্প্রতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ দেশ তথা বিশ্বের দরবারেও। এ দেশের দাঙ্গা এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছেছে। আর এই দাঙ্গার শিরনাম দেয়া হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অথবা সংখ্যালঘু দের উপর অত্যাচার।
পাকিস্তান ছিল মুসলিম অধিভুক্ত এক রাষ্ট্র। পূর্বপাকিস্তান ছিল তার একটা অঙ্গরাজ্য। কিন্তু পূর্বপাকিস্তানে ছিল সব ধর্মের মানুষের সম্প্রতি। ছিল অন্যান্য ধর্মের মানুষের স্বাধীনতা। যা মুসলিম ভুক্ত দেশ পশ্চিম পাকিস্থানেরা মেনে নিতে পারে নি। অঙ্গরাজ্য হয়েও তাদের কালচারের সাথে না মিলায় শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের ঐক্যের উপর আঘাত। আস্তে আস্তে যা যুদ্ধে পরিণত হয়। এ দেশে কখনোই সংখ্যায় কম জাত বা বর্ণ কে সংখ্যালঘু হিশেবে দেখে নি বরং সংখ্যালঘুর জন্য নিজেকে উজার করে দিয়েছে। যার বড় প্রমাণ হলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য ধর্মের লোকেরা মুসলমান কে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে নি। বরং এ দেশের মুসলমানরাই সাহায্য করেছে এ দেশে সংখ্যালঘুকে সংখ্যাগরিষ্ঠের হাত থেকে রক্ষা করতে।
এ দেশে সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত করলে মুসলমান তথা সংখ্যাগরিষ্ঠরাই এর প্রতিবাদ করেছে। পূজায় মণ্ডপ ভাঙ্গা, মূর্তি ভাঙ্গা এ গুলো কোন এক গোঁড়া মুসলমান রা করে থাকলেও এর প্রতিবাধে অংশ নেয় হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের এক বিরাট অংশ। রাস্তায় নেমে এক হয়ে এর প্রতিবাদ করে। কিন্তু যখন মুসলমানদের ধর্মানুভূতি তে আঘাত আনা হয় তখন সেই সংখ্যালঘু রা কখনোই মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়ায় না। যখন দাঁড়িওয়ালা লোক কিংবা হিজাব পরনেওয়ালা মেয়েদের বিরুদ্ধে আইন করা হয়। দাঁড়িওয়ালা দেখলেই পুলিশ ধরে নিয়ে যেত তখন দুঃখের বিষয় কোন সংখ্যালঘু বা হিন্দুরা এর উপর প্রতিবাদ করে বলে নি এটা ঠিক নয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসলিম দের হাতে হাত রেখে বলে নি আমরা আপনাদের পাশে আছি। চলুন একসাথে প্রতিবাদ করি এই আইনের বিরুদ্ধে। যদি এই কাজ গুলো কোন হিন্দুরা করতো তাহলে ব্যপার টা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত?? মুসলমান রা আর কোন মন্ডপ ভাঙ্গতে গিয়ে পাঁচ মিনিট ভাবতো। ভাবতো যারা আমাদের হাতে হাত রেখে আমাদের ধর্মের জন্য নিরপেক্ষভাবে লড়ে গেছে আমরা তাদের ধর্মে আঘাত আনবো?? একটা সময় দেখা যেত আর কোন মন্ডপে কোন ভাঙচুর হতো না। কিন্তু কোন সংখ্যালঘু এই কাজটা করে না। বরং জঙ্গি বলে উষ্কে দিয়েছে।
মন্দিরে মন্ডপ ভাঙ্গায় কিংবা পুরোহিত হত্যায় অথবা হিন্দুদের মালাউন বলায় এ দেশের গণজাগরণ মঞ্চ জেগে উঠেছে। কিন্তু মসজিদের হুজুর হত্যা কিংবা দাড়িওয়ালা দের জঙ্গি বলায় গণজাগরণ মঞ্চ নিরব থাকলো কেন?? তাহলে কি দাঁড়ায়?? কারা এই গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র, সদস্য?? অবশ্যই তারাও মুসলমান। তবে মুসলমান হয়ে কেন মুসলমানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত আনলে গণজাগরণ মঞ্চ জেগে উঠে না?? এর নাম কি ধর্ম নিরপেক্ষতা?? যখন বিদেশে মুসলমানকে হেনস্থা করা হয়, হিজাব নিষিদ্ধ করা হয় তখন অনেক সংখ্যালঘু কেই বলতে শুনি যে হিজাব পরলে আমেরিকা, লন্ডন যাওয়ার কি দরকার যাও সৌদি,পাকিস্থানে যাও। মুসলমানরা তাদের ধর্মের জন্য আন্দোলন করলে দেখতে পাই অনেকেই লিখে, যাও তোমরা পাকিস্তান যাও।
শুধু মুসলমান হয়ে হিন্দুদের মন্ডপে অথবা হিন্দু হিয়ে ঈদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেই ধর্মনিরপেক্ষতা হয়ে যায়?? মুসলমানের বিপদে হিন্দু অথবা হিন্দুদের বিপদে মুসলমান রা এগিয়ে আসার নাম ই ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মের বিরুদ্ধে লিখলেই মুক্তমনা হওয়া যায় না। মুক্ত মনা হতে হলে নিজের দোষ নিয়েও মুক্ত ভাবে সমালোচনা করতে হবে।
মসজিদে আজান হচ্ছে অথচ তুমি মুসলিম হয়েও তোমার একই সময় নামাজ পড়ার বদলে মন্ডপে ঘুরছ। অথবা এখন তোমার পূজার সময় কিন্তু তুমি পূজায় না গিয়ে ঈদের অনুষ্ঠানে আনন্দ করতে ব্যস্ত। এটাও ধর্ম নিরপেক্ষতা হয় না। তুমি এমন কাজ করবে না যেটায় তোমার ধর্মের অপমান হয় এবং এমন কাজও করা ঠিক না যেটায় অন্য ধর্মের ধর্মানুভূতিতে আঘাত আনে। তোমাকে দুইটাকে মেইনটেইন করে চলতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার মানে এই নয় যে আমি মুসলিম হয়েও তোমার সাথে পাটার মাংস খাবো অথবা তুমি হিন্দু হয়ে আমার সাথে গরুর মাংস খাবো। একই টেবিলে আমি গরুর মাংস খাব আর আমার হিন্দু বন্ধু একই সাথে অন্য প্লেটে পাটার মাংস খাওয়া অথচ কেউ কারো খাওয়াতে হস্তক্ষেপ বা বিদ্বেষ পোষণ না করাটাই ধর্ম নিরপেক্ষতা। আমার হিন্দু বন্ধু রাম আর আমি রহিম বলবো। আমাকে যদি কেউ বলে রহিম না বলে আমি রাম বলতে এটা যেমন অন্যায় আবার আমার হিন্দু বন্ধু কে কেউ যদি জোর করে রহিম বলাতে চায় সেটাও অন্যায়। এখানে উভয়পক্ষই একজনের জন্য আরেকজন প্রতিবাদ করতে হবে। আমি সংখ্যাগরিষ্ট আর তুমি সংখ্যালঘিষ্ঠ এই কথা টা মনে আনলেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব চলে আসবে। প্রত্যেক সংখ্যালঘুদের বলছি, সংখ্যালঘু বলে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা না করে সব ধর্মের অপমানের প্রতিবাদ করুন। শুধু নিজ ধর্মের জন্য নয়। সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগরিষ্ঠ বারবার উল্লেখ করে সাম্প্রদায়িক মনোভাব তুলে ধরা বন্ধ করুন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.