![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিরু আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। ক্লাস নাইনে উঠার পর আজকেই প্রথম সকাল উঠেছে মায়ের নিরু নিরু ডাক কিংবা বকবকানি না শোনে। আজকের সকাল নিরুর কাছে হতে যাচ্ছে এক স্মৃতিময় সকাল। নয়টা হওয়ার সাথে সাথেই নিরু স্কুলে যেতে হবে। সেখানে ফারহান ওর জন্য অপেক্ষা করছে। আজ থেকে দুই সপ্তাহ আগে ফারহান জানিয়েছিল, সে নিরুকে ভালবেসে। নিরু সে উত্তর দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় নিয়েছিল। কিন্তু আজ দুই সপ্তাহ পর নিরু সে উত্তর জানানোর জন্য ফারহানের কাছে যাচ্ছে। এই দুই সপ্তাহ নিরু ঘুমায় নি। পড়তে পারে নি। সাধারণত ক্লাস নাইনে পড়ুয়া মেয়েরা কোন ছেলের প্রপোজ প্রত্যাখ্যান করে সে ছেলে খারাপ কিংবা দেখতে সুন্দর নয় তার উপর নির্ভর করে নয়। প্রত্যাখ্যানের বড় কারণ হলো ওরা তখনো পরিবারের শাসন কিংবা নিয়ম থেকে বেরোতে পারে না বলে। পরিবারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রেম করার মতো সে সাহস তখনো অর্জন করতে পারে না বলে। প্রেম হয়ে যাওয়ার পর যখন ওরা বিপরীত লিঙ্গের তাড়নায় একান্তে আলাপ করতে ক্যাম্পাসের কোন গোপন জায়গায় বসে থাকে তখন তাদের এই আলাপ কেমন আছ, কি করছো এমন কিছু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর বাকি সময় কেটে যায় তাদের এই একান্ত দেখা করার দৃশ্য টা অন্যকেউ দেখে ফেলছে কি না সে ভয়ে ভয়ে। তারা একজন আরেকজনের হাত ধরে, শরীর স্পর্শ করে উষ্ণ শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য নয়, প্রেম করলে হাত ধরতে হয়, স্পর্শ করতে হয় এগুলো নাটক সিনেমায় দেখে দেখে।
নিরুও আজ ফারহান কে বলতে যাচ্ছে সে ফারহান কে ভালবাসে। এতদিনে ওর পরিবারের শাসন ডিঙ্গানোর মতো সাহস অর্জন করেছে। মাকে কি কৈফিয়ত দিবে সে ক্ষুরাযুক্তি গুলো মনের মধ্যে তৈরি করেছে। ঘুম থেকে উঠেই নিরু খুব সুন্দর করে সেজেছে। এই মুহূর্তে ঘরের মধ্যে ওর সবচাইতে প্রিয় জায়গা হলো আয়নার সামনে। মেয়েরা নিজের প্রথম লজ্জা ভাঙ্গে আয়নার সামনে নিজেকে বারবার অন্যরূপে কল্পনা করে। আয়নায় নিজেকে অন্যরূপে কল্পনা করে তারা যেভাবে লজ্জা পায় ততোটা লজ্জা একজন পুরুষের কাছে গিয়েও পায় না। নিরু আজ আয়নার সামনে নিজেকে একজন প্রেমিকা হিশেবে কল্পনা করে সে লজ্জা টাই পাচ্ছে যে লজ্জা একজন প্রেমিকা তার প্রথম প্রেমে পায়। প্রথম প্রেম এক অদ্ভুত প্রেম। এই প্রেমে যতটা সুখ তার চাইতে কষ্ট বেশি। জীবনের প্রথম প্রেমকে পাওয়ার গন্ডি পেড়িয়ে শেষ জীবন পর্যন্ত সুখি হয়েছেন এমন মানুষ নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান।
নিরু ভালভাবে সাজগোজ করে তাড়াতাড়ি স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। স্কুলে যেতে আধঘণ্টা লাগবে। এই আধঘণ্টা আজ নিরুর কাছে আটঘন্টা সম। নিরুর ধারণা ফারহান অনেক আগেই স্কুলের ক্যাম্পাসে এসে গেছে। শেষ যেদিন ফারহানের সাথে নিরুর দেখা হয়েছিল সেদিন ফারহান বলেছিল, নিরুর উত্তরের আসায় সে প্রতি সকাল স্কুল ক্যাম্পাসের বড় বটগাছ টির নিচে অপেক্ষা করবে।
নিরু আধঘণ্টার রাস্তা পেড়িয়ে এই মুহূর্তে স্কুল ক্যাম্পাসে। সে ডান পাশের ভবনের দিকে আলতো করে উঁকি দিয়ে দেখলো রাগী রাগী চেহারার ম্যাথ টিচার টা সকালের বেইজের স্টুডেন্টস দের বোর্ডে অংক করাচ্ছেন। ফারহান সেখানে নেই। তারমানে বটগাছটির নিচে নিশ্চয়ই বসে আছে। সে অংক টিচারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বটগাছটির কাছে গেলো। দেখলো ফারহান সত্যি সত্যি সেখানে বসে আছে কিন্তু নিরু ফারহানের সামনে যাওয়ার মতো সাহস বা শক্তি দুটোই হারিয়ে ফেলেছে। এই মুহূর্তে ফারহানের সামনে গিয়ে ফারহান কে বিব্রত করার মতো শক্তি পাচ্ছে না ও। ফারহান এই মুহূর্তে সামিয়ার হাত ধরে বসে আছে। সামিয়া আর নিরু একি শাখায় পড়ে ঠিক কিন্তু ঘনিষ্ঠতা তেমন নেই। দেখা হলে কথা হত তারপর দুদিক হয়ে দুজন চলে যেতো এই টুকুই সম্পর্ক। এই সামিয়াই ফারহানের হয়ে নিরুর কাছে প্রথম বলেছিল ফারহান নিরুকে ভালবাসে। সামিয়া কয়েকদিন নিরুকে খুব জ্বালিয়েওছে যাতে ফারহান আর নিরুর রিলেশন টা হয়ে যায়। কিন্তু নিরু হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো সাহস ছিল না তাই কয়েকদিন সময় নিয়েছল। কিন্তু এরই মধ্যে ফারহানের সাথে সামিয়ার রিলেশন হয়ে গেছে।
নিরু আর সামনে না গিয়ে পিছু হাঁটতে লাগলো। বিষন্ন মনে রৌদ্রপোড়া কালো চেহারা নিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ি চলে এলো। ঘরের বারান্দায় একটি খাঁচায় বন্দি টিয়া পাখি রাখা। নিরু খাঁচায় হাত দিয়ে বললো, টিয়া পাখি আমি তকে খুব ভালবাসি, তুই আমাকে ভালবাসিস ত?? । টিয়া পাখিটি নতুন কথা বলা শিখেছে, সাথে সাথেই টিয়া পাখিটি নিরুর কথা কপি করে বলে উঠলো, ভালবাসি, ভালবাসি। নিরুর মন অদ্ভুতভাবে ভাল হয়ে গেলো, সে তার মনের ডায়রিতে লিখে রাখলো "আমার প্রথম প্রেম খাঁচায় বন্দী এক টিয়া পাখি"
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০২
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ।।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪৭
ঋতো আহমেদ বলেছেন: খুবই সাদামাটা । গল্প পাচ্ছিলাম না । তবে শেষে এসে -আমার প্রথম প্রেম খাঁচায় বন্দী এক টিয়া পাখি" - এটুকু ভালো লেগেছে । শুভ কামনা ।