![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈশিতা.... এই ঈশিতা.. ঈশিতা বলে ডাকতে ডাকতে এক লোক রিধির পিছনে ঝাপটে ধরলো। রিধি হঠাৎ চিৎকার করে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখলো, একটি মাঝবয়সী পাগল মাথার চুল, গালের দাড়ি অনেক লম্বা লম্বা। কিছুক্ষণ পর পাগল টা আবার রিধির হাত চেপে ধরে। রিধির আরও জোরে চিৎকার দেয় তখন রাস্তার মানুষজন পাগল টাকে মারতে থাকেন। তখন পাগলের এক বন্ধু নাম শাহেদ। ওকে এদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। পাগল টাকে দেখে রিধির অনেক মায়া হলো ও শাহেদকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলো কিভাবে উনার এই অবস্থা হলো।
শাহেদ তখন কিছু বলতে রাজি হলো না। বরং বললো, ম্যাডাম আপনি নীল শাড়ি পরে আর এ দিকে আসবেন না, নীল রঙের শাড়ি পরুয়া কাউকে দেখলেই ও ঈশিতা ঈশিতা বলে এমন করে।
রিধি কথা গুলো শুনে পাগলটির সম্পর্কে জানার জন্য ওর ইন্টারেস্ট আরও বেড়ে গেল। শাহেদ কে অনুরোধ করলো সব টা খুলে বলার জন্য। এবং অবশেষে শাহেদ পাগলটি সম্পর্কে সব বলতে রাজী হলো। ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। শাহেদ দু কাপ কফির অর্ডার দিয়ে রিধির কাছে সব ঘটনা বলতে শুরু করলো।
.,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
- ও আগে পাগল ছিল না। শিক্ষিত, ভদ্র, স্মার্ট একটা স্বাভাবিক ছেলে ছিল। অন্য আট দশ টা ছেলের মতো ও সব সময় বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেতে থাকতো। আজ থেকে দুই বছর আগে ওর মোবাইলে একটা ফোন আসে। ও রিসিভ করে শুনলো একটা মেয়ের কণ্ঠ। কথা বলার পর জানলো রং নাম্বার। তারপর ফোন রেখে দিলো মেয়েটা। কিন্তু সে ঘটনা এখানেই শেষ হলে ভাল হতো। বরং সেদিন সে আবার ইচ্ছা করেই আবার মেয়েটিকে ফোন দেয়। এভাবে চলতে চলতে কয়েকদিন পর আমাকে জানালো ঐ মেয়েটার সাথে ওর প্রেম হয়ে গেছে। সে মেয়েটির ছবি দেখে নি কোনদিন। তবে নাম জানতো। নাম ছিল ঈশিতা। একদিন ওরা ঠিক করলো ওরা দুজনে দেখা করবে। ও পরবে আকাশী কালারের পাঞ্জাবি আর মেয়েটি পরবে নীল শাড়ী।
তখন রিধি বললো, ওদের কি দেখা হয়েছিল??
শাহেদ হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, দেখা হলে ত হতই। সেদিন দেখা হয় নি। সেদিন ঘটেছিল এক নির্মম ঘটনা। মেয়েটি রাস্তায় আসার সময় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।
রিধি বললো, এক্সিডেন্টের ব্যপার টা ও কিভাবে জানলো?? ও কি লাশ টা দেখতে গিয়েছিল??
শাহেদ বললো - না। ওর এক বান্ধবী পরের দিন যখন ফোন দিয়ে ঘটনা টা বললো। তখন মেয়েটিকে কবর দেয়া হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনা টা সে ঠিক মতো এক্সসেপ্ট করতে পারে নি। খুব ভালবাসতো মেয়েটিকে। ওর সেদিন ব্রেইন স্ট্রক করেছিল। কয়েকদিন পর যখন ওর জ্ঞান ফিরলো তখন সে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বদ্ধ পাগল। পাগলা গারদে ছিল। কিন্তু সেখান থেকে গত দুই মাস আগে পালিয়ে এসেছে। আর সেই জায়গায় বসে থাকে যেখানে ঐ মেয়েটার সাথে ওর দেখা করার কথা ছিল। ওর মনে এখন নীল শাড়ি পরুয়া ঐ মেয়েটার কথা ছাড়া আর কিছুই মনে নেই। তাই নীল শাড়ি পরা কাউকে দেখলেই সে ঝাপটে ধরে ঈশিতা.. ঈশিতা বলে।
.,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ঘটনা টা রিধির খুব পরিচিত লাগছে। আজ থেকে দুই বছর আগে এমন একটা ঘটনার সাথে ও নিজেকে জড়িয়েছিল। এমন একটা ছেলের মোবাইলে রং নাম্বারে ওর কল গিয়েছিল। ও ছেলেটাকে সরি বলে সেদিন ফোন কেটে দিয়েছিল। কিন্তু ছেলেটি সেদিনের পর থেকে রোজ কল দেয়া শুরু করে। অনেক বুঝানোর পরও ছেলেটি বুঝতে রাজী হয় নি। ঘটনা টা ওর এক বান্ধবী কে বলার পর, ঐ বান্ধবী বললো চল ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দেই। বান্ধবী বললো, ছেলেটার সাথে কিছুদিন প্রেম প্রেম খেলা যাক। তারপর ওকে একটা শিক্ষা দিয়ে সিম চেঞ্জ করে দিবো। তারপর শুরু হলো ছেলেটার সাথে প্রেম। ছেলেটাকে একটা ফেইক নাম বলে। বলেছিল ওর নাম ঈশিতা। দিন রাত কথা হতো। একদিন হুট করে ছেলেটা বললো, দেখা করার কথা। কিন্তু ও দেখা করে ঝামেলায় ঝড়াতে চায় নি। কারণ নেক্সট ইয়ারে রিধির বিয়ে ঠিক ছিল। বিয়েটা ওর পছন্দের পাত্রের সাথেই হচ্ছে। কিন্তু রংনাম্বারের ছেলেটা ওকে দেখা করার জন্য পাগল করে ফেলছে।
তখন ও একটা প্ল্যান করলো। ছেলেটাকে বলে একটা টাইম ও জায়গা ঠিক করলো দেখা করার জন্য। সেদিন রিধি ঠিক করলো যে আজকের পর থেকে আর কোনদিন ছেলেটার সাথে কথা বলবে না সে। তাই ও একটা নিউ সিম কিনলো এবং সিম টা চেঞ্জ করে ওর সেই বান্ধবী কে দিয়ে ছেলেটার মোবাইলে কল দিয়ে বলতে বলে যে, ঈশিতা দেখা করতে আসার সময় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। আর ছেলেটার সাথে কথা হয় নি রিধির। কোন খোঁজও জানে না আর। ঐ ছেলেটার নাম ছিল আসিফ।
.,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
রিধি শাহেদকে বললো, আচ্ছা আপনার বন্ধুটির নাম কি??
- ওর নাম আসিফ।
রিধির আসিফের নাম শুনেই মনে একটা ধাক্কা খেলো। ওর বুঝতে বাকি রইলো না। এই পাগল টি ই সেই ছেলে যার সাথে ওর কথা হয়েছিল রংনাম্বারে। আর বলিয়েছিল ও মরে গেছে। ওর জন্যই আজকে এই ছেলেটা পাগল সেটা ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ও কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
তখনি ওর মোবাইলে রুদ্র নামে সেভ করা একটা ছেলের নাম্বার থেকে কল আসে। রিধি ফোন রিসিভ করলো। ফোনের ওপাশ থেকে রুদ্র বললো, রিধি তুমি কোথায়?? কতক্ষণ ধরে গাড়িতে বসে ওয়েইট করছি।
রিধি রুদ্রকে বললো , একটু অপেক্ষা করো আমি তাড়াতাড়ি আসছি।
তারপর রিধি শাহেদকে বললো, আমার স্বামী গাড়িতে আমার জন্য ওয়েইট করছে। কিছু মনে করবেন না, যাচ্ছি আমি।
শাহেদ বললো, কফি ত ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। খেলেন না কেন। দাঁড়ান আমি আরেক কাপ কফি অর্ডার করছি। খেয়ে যান।
রিধি বললো, ঠিক আছে। অন্যকোন দিন দেখা হলে খাবো। আজ আর নয়। ও আমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।
শাহেদ বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর রিধি চোখ থেকে জল মুছতে মুছতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২০
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০১
রিকতা মুখাজীর্র্ বলেছেন: শেষ দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল ল্যাপটপের কি-বোর্ডে.........................ভালো লাগল।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৯
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২০
সুমন কর বলেছেন: হুম, টাচি গল্প। ভালো লাগল।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০০
হাবিব শুভ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৯
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এমনটা হওয়া উচিৎ নয় । ভাল লাগল গল্প।