![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই সেমেস্টারে আমি "মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন" নামে একটি কোর্স করছি। স্বভাবতই সম্পর্ক ও যোগাযোগ নিয়ে এত এত তত্ত্ব কথা পড়তে হচ্ছে। আমি আঁতেল না হলেও (যদিও বন্ধুরা তা ভাবে না!), এই কোর্সটি পড়তে আমার ভালোই লাগে। অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে অনেক উদাহরণ টানতে পারি। তো এমনই একটি প্রশ্ন ছিল, সম্পর্কের স্থায়ীত্ব ও দীর্ঘসূত্রিতার জন্য ভালো যোগাযোগ এর দরকার কেন?
আমি ভাবলাম, আর যাই কোথায়! দেই আমার কোন বন্ধুর সাথে আমার সম্পর্কের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে! যেই ভাবা, সেই কাজ। দিলাম বান্ধবী হৃদির সাথে আমার সম্পর্কের উদাহরণ। কিছুদিন পর কোনো কারণে আবারো ওই একই প্রশ্নের উত্তর আমাকে লিখতে হল, এবং লিখতে গিয়ে দেখলাম যে আমি আবারো হৃদির কথাই ভাবছি!
এবার আমার অবাক হবার পালা, আরে আজব! এই মেয়ে তো আমার মাথা থেকেই যায় না! অন্য কারো নাম আসতে পারতো মাথায়! যাদের সাথে আমার দশ-বারো বছরের বন্ধুত্ব, অথবা যাদের সাথে নিয়মিত ঘোরাঘুরি করি! এই মেয়ে কে চিনি মাত্র ২বছর ধরে, তাও এর সাথে ঘুরি না আমি সবসময়। যায় না কেন মাথা থেকে! বেয়াদব মেয়ে!
ভাবতে বসলাম একদম ডেইলি সোপ স্টাইলে, কেন যায় না? যায় না কেন? কেন? কেন? কেন?
প্রথম কবে দেখলাম?
ডিপার্টমেন্ট এর প্রথম দিনে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
কি মনে হয়েছিল? আরে এত মডার্ণ! আর আমি একটা ক্ষেত! এর সাথে আমার মিলবে না, এর ধারেকাছেও হাঁটবো না।
তারপর?
ঠিকই হাঁটলাম, শুধু ধারে কাছে না, হাত ধরে হাঁটলাম একসাথে। টানা ৬মাস। এরপর কি হল? কেন যেন হাঁটাহাঁটি কমে গেল! অন্যদের সাথে ভীড়ে গেলাম। ওই মেয়েও অন্যদের সাথে ভীড়ে গেল। আলাদা, আলাদা! আমি-তুমি!
কিন্তু এই ৬মাসে কি শিখলাম? কি জানলাম?
ক্ষেতগিরি কমে গেল আমার, অসামাজিক থেকে সামাজিক হলাম। মানুষের সাথে কথা বলতে শিখলাম, ফালতু জোকসের ভাবুক গভীরতা বুঝে প্রাণ খুলে হাসতে শিখলাম। এখানে এটা করা যাবে না, সেখানে সেটা করা যাবে তা শিখলাম। নিজের মধ্যে যে ইনফিরিয়রিটি কম্পলেক্স ছিল তা আস্তে আস্তে কেটে গেল। সবচেয়ে বড় কথা নিজে নিজে চলতে শিখলাম। বাচ্চা থেকে বড় হলাম হঠাত করেই কিন্তু অনেক ফূর্তির ভিতর দিয়ে, দৌড়াতে দৌড়াতে, হাসতে হাসতে।
আরে! এত কিছু কে শেখালো?
কেউ ধরে শেখায়নি। কিন্তু বান্দর মেয়েটা এইসব করে বেড়ায়, আমিও নকলবাজের মত সব নকল করে ফেলেছি!
৬মাস পরে কি যোগাযোগ এর সুতা কেটে গেল?
উহু, একটুও কাটেনি! বরং বেড়েছে। একসাথে ঘুরি না, কিন্তু সমস্যায় পড়লে কার কাছে আগে বলতে যাই! এই মেয়ের কাছেই তো যাই! হৃদি বলো তো এই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেসে, কী করবো! হৃদি দেখো তো ও আমাকে গালি দিসে! কী করবো! হৃদি এই হইসে! হৃদি ওই হইসে! হৃদি আমার জন্মদিন, সবাইকে ট্রিট দিবো, বলতো কোথায় যাওয়া যায়! হৃদি তুমি নিয়ে যায়ো প্লিজ! হৃদি কনফারেন্সে পেপার দিবো, তুমি-আমি প্লিজ! আর কেউকে কেন বললাম না! আজব!
ক্লাসে বসে হাসি আসলে কার দিকে তাকাই! আরে! এই মেয়ের দিকে! হালিমা এইটা! হালিমা ওইটা কে বলে! এই হৃদিই তো! ধূর! মেয়ে এত কিউট কেন! সুতা কাটে না কেন! মাঞ্জা মাইরা রাখসে সুতায়! এহ! ও একা নাকি! আমিও মারছি মাঞ্জা
কীভাবে? আমি কীভাবে সুতায় মাঞ্জা মারলাম!
হালিমা তোমাকে একটা কথা বলতাম, বলো তো এটা কিভাবে করবো! হালিমা তোমার জন্য সবার চেয়ে আলাদা কানের দুল কিনলাম! তোমার কানই তো ফোড়ানো না! হালিমা তোমার জন্মদিনের কেকটা কিন্তু আমি আনবো! হালিমা তুমি ছাড়া যাবো না ইন্টারভিউ দিতে। আরে চলো তো এফবিএস এ গিয়া খায়া দেই! চলো তো হালিমা ওইখানে এপ্লাই করি!
আরে কি বলতেসি! মাঞ্জা তো হৃদিই মারলো! আমি কই!
না না আমিও আছি! কীভাবে?
সুতায় যে মাঞ্জা আছে এটা খেয়াল করলো কে শুনি! এই আমিই তো! এই আমিই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি! এই আমিই তো ঘ্যান ঘ্যান করি! মাঞ্জা আমিও দিসি
এখন মাঞ্জার কি অবস্থা?
এত কাঁচ দেয়া আছে যে কেউ আসার সাহস ও পায় না! অন্য অনেককে দেখি (যারা নিজেদেরকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে দাবি করে! অনেক বছরের বন্ধুত্ব আর ঘনিষ্টতার কারণে) আমার সাফল্যে চোখে বিষাদ নিয়ে তাকিয়ে থেকে মুখে হাসে। নিজের অসাফল্যে কষ্ট না পেয়ে, আমার সাফল্যে কষ্ট পায়। আবার আমার অসাফল্যে মুচকি হেসে তারপর বলে, হায় রাম! হালিমা তুই তো গেলি! তাদের প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই, কারণ তারা আমার খারাপ চায় না তা জানি, শুধু নিজের ভালোটা চায়। তাদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে, ঘুরতে ভালো লাগে, নিজের কাছে চ্যালেঞ্জ এর মত লাগে যে আমি আমার চেয়ে বিপরীতধর্মী কারো সাথে মিলিয়ে চলতে পারি। কিন্তু কেন যেন তাদের কাছে নিজেকে খুলতে পারি না। খুলি এসে এই হৃদির কাছেই! (আপাতত)
কারণ?বন্ধুত্ব এমন না! বন্ধুত্ব মানে একসাথে ঘোরা বা আড্ডা দেয়া না। বন্ধুত্ব মানে নিজে অসাফল্যে কষ্ট পাওয়া আর বন্ধুর সাফল্যে খুশি হওয়া। বন্ধুত্ব মানে নিজের জান দেয়া না, বন্ধুত্ব মানে নিজের জান বাঁচিয়ে বন্ধুরটাও বাঁচানোর জন্য হাত বাড়ানো। কারণ আমি যদি মরেই যাই, আমার বন্ধু একা বেঁচে থেকে করবে টা কি! বন্ধুর জন্য মরতে হয় না, বন্ধুর সাথে বাঁচতে হয়।
বন্ধুত্বে নিঃস্বার্থ হওয়া লাগে না। জান ও দেয়া লাগে না। শুধু ভাবতে হয় কে কি করলো আমি থোড়াই কেয়ার করি! আমি নিজের জ্বালায় বাঁচি না! অন্যের ভালো হোক, তাতে আমি খুশি। সাথে আমারও খারাপ না হোক।
আরে! বলাই শেষ হয় না! মেয়ে কত্ত কিছু করে ফেলেছে মাত্র ২বছরে! সামনে না জানি কি করে! আনপ্রেডিক্টেবল! আমি মহামানবী হয়ে যাবো মনে হয়!
ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা! আমার প্রশ্নের উত্তর!
এবং এভাবেই ভালো যোগাযোগ, বোঝা-পড়া ও একই রকম চিন্তা-ভাবনা ভালো ও সফল সম্পর্ক গড়ে তোলে। যেখানে বিশ্বাস-ভালোবাসা-ভালোলাগা-হাসি-বিরক্তি-খোঁচাখুঁচি মিশে থাকে আর অনেক অনেক স্বার্থ থাকে, যোগাযোগের প্রোডাক্টিভিটি থাকে সর্বোচ্চ।
বন্ধুত্ব কেমন হয়! বন্ধুত্ব এমন হয়!
হৃদির মত, এক দমকে আসে, আরেক দমকে যায় কিন্তু স্থায়ীত্ব কীভাবে যেন বেশি হয়ে যায়! মিরাকল রে ভাই! মিরাকল!
"আবেগের চেয়ে যুক্তি বড়, যুক্তি-আবেগ একসাথে আরো বড়! কে যুক্তি আর কে আবেগ! আমি না তুমি!"
(বিঃদ্রঃ হৃদি এই লেখা দেখলে বলবে, ওরে হালিমা গো! কী লিখলা! চোখে পানি এনে দিলা! আর আমি বলি, আমি তেল দেই, কিন্তু খাঁটি তেল, ভেজাল নেই কোনো। বন্ধুত্ব এমনও হয়, সুতায় মাঞ্জার সাথে তেলও (!) দিতে হয় মাঝে মাঝে, মানে প্রকাশ করতে হয় আর কি!)
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২৬
হালিমা সাদিয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন মন্তব্য অনুপ্রেরণা যোগায়
২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৫৮
জাফরুল মবীন বলেছেন: বন্ধত্ব মানে নিজের জান বাঁচিয়ে বন্ধুরটাও বাঁচানোর জন্য হাত বাড়ানো। কারণ আমি যদি মরেই যাই, আমার বন্ধু একা বেঁচে থেকে করবে টা কি! বন্ধুর জন্য মরতে হয় না, বন্ধুর সাথে বাঁচতে হয় - বেশ ভালো লাগল কথাটা।
ধন্যবাদ আপনার অনুভূত কথাগুলো শেয়ার করার জন্য।
শুভকামনা জানবেন।
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৩১
হালিমা সাদিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০৩
মনিরা সুলতানা বলেছেন: থাকে এমন একজন সারা বছর দেখা না হলেও ঠিক ঠিক বিপদে পেয়ে যাই..
আপনাদের বন্ধুতা অটুট থাক
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০
হালিমা সাদিয়া বলেছেন: হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছেন, থাকে একজন...... ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১১
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লেগেছে।
সুতার প্রকারভেদ বিদ্যমান।
জানেন তো?
সুতার মাঞ্জা কথাটা ভালো লেগেছে। সাবলীল লেখনী।