![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১১ বৈশাখ ১৪২০. বুধ বার । সকাল থেকে সূর্যটা কেমন যেন একটু ভয়ংকর। তার ভয়ংকর প্রভা পূর্বাহ্নের শুরু থেকে পৃথিবীকে উওপ্ত করে তুলেছে । শহরের মহা ব্যস্তময় রাস্তা গুলু আজ অনেকটাই ফাঁকা । জন -মানব গরিষ্ঠ রাস্তায় দু'চারটি লরি আর কিছু রিক্সা চাড়া বলার মত তেমন কিছু নেই । নেই ছাত্র -ছাত্রী দের নাম করা সব স্কুলে যাওয়ার বাড়তি চাপ ।
তবুও কিছু মানুষ ঘর ছাড়া, জিবীকার অন্বেষনে । তাদেরওত স্বপ্ন আছে । সংসার আছে । আছে বাচ্ছাদের সাথে কাটানোর অলস বিকেলের কিছুটা সান্ত সময়, সন্ধ্যা প্রদিপ জ্বালানোর পূর্ব পযন্ত ।
এই কর্ম ব্যাস্ততা হীন মধ্যহ্নে শাহাবুদ্দিন চলেছে তার কাজে । তার কাজটা সাধারনের মাঝে পড়ে । সাধারন হলেও দায়িত্বটা অনেক । যে করেই হোক ছাত্রীকে সবার চেও বেশি নাম্বার পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে ।
শাহাবুদ্দিনের বাসাটা মিরপুরের ১০ নাম্বার সেকসনে। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র । বেশির ভাগ সময় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থাকে । মহামান্য বিরোধী দলীয় নেত্রীর জঘন্য সিদ্ধান্তের কারনে সে দু'দিনের ছুটি পেয়েছে।
রাস্তার পাশে প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর বিশ্ববিদ্যালয় গামি একটি বাসের সন্ধান মিলে । সাখানে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় । বসার মতো জায়গা নেই । তাই বাধ্য হয়ে দাড়িয়ে থাকতে হলো তাকে ।
ঢাকার রাস্তাগুলু দিন ভর মহা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় কাটায় । সেখানে থাকে কর্মজীবি মানুষ আর লাইসেন্স বিহীন অসংখ বাসের ভয়ংকর সব শব্দ । আজ তেমন কিছু নেই । রাস্তা ফাঁকা । তিতাস চলছে যমুনার গতিতে ।
অর্ধেক পথ এসে বাস থেমে গেল । থেমে যায়নি, বাধ্য হয়ে থামতে হলো । কিছু মানুষ সামনে দাড়ি্য়ে ট্রাফিকের কঠিন দায়িত্বটা নিজের কাধে তুলে নিয়েছে । ফিরিয়ে দিচ্ছে ঢাকা থেকে আসা বাস গুলু কে । তাই বাধ্য হয়ে সবার মত শাহাবুদ্দিনও রাস্তার এক পাশ ধরে হাটছে । রাস্তার দু'পাশ জুড়ে মানুষের ভিড় । সেখানে কয়েকটি উচ্ছ শব্দকারি এম্বুলেন্স আর পুলিশের ভ্যান ছাড়া যানবাহন বলতে কিছু নেই । আতংকিত মানুষ গুলু একে অপরের মুখ চাওয়া-চায়ী করছে । জানিনা সেখানে তারা কি খুঁজছে । হতে পারে একটু খানি অভয় ।
রাস্তা যতই কমে আসছে মানুষ ততই বাড়ছে । এম্বুলেন্সের ভয়ংকর শব্দ গুলু আরো নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে । শাহাবুদ্দিনের কৌহলপূর্ন মন নতুন কিছু দেখার প্রত্যাশায় পা ফেলছে । একটু পর সে আবিষ্কার করলো , সে এক অদ্ভুত ধরনের গন্ধ পাচ্ছে । গন্ধটা ঘোলাটে হবার কারনে সে ঠিক অনুভব করতে পারছেনা , যে তা কিসের গন্ধ ? তবে তার মনেহয় গন্ধটা আতর লোবান মিশ্রিত ধূপ শিখার কালো ধোয়ার মত । কিন্তু অস্পষ্টতার কারনে তাও ঢেকে যাচ্ছে ।
শাহাবুদ্দিনের পড়ানোর সময় ঠিক তিনটায় । এখনো মেলা সময় বাকি । সে নিশ্চিন্ত মনে হাটছে মানুষের ভিড়ে ।
মানুষের ভিড় দেখে মনে হয় বিরোধী দলের ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে মিচিল করছে সবাই । স্লোগানের শব্দ নেই । নেই গাড়ি ভাংচূর করার প্রবল ইচ্ছা । আছে এক তালে চলা চটির কিছু শব্দ আর মানুষের মুখ ভরা আতঙ্ক ।
আশ্চর্য্য ! মিডিয়ার কিছু কর্মী মাইক্রফোন হাতে ছুটা ছুটি করতে লাগলো । তাদের দেখে মনে হয় জাতিসঙ্গের মহাসচিব একটু পর বাঙ্গালী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিবে । আর তারা তা সরাসরি জাতির কাছে পৌছে দিবে।
সংবাদ কর্মী দের ছুটা ছুটি দেখে শাহাবুদ্দিনের খুব ইচ্ছে হলো তার পাশের মানুষটাকে জিঙ্গাস করবে,
দাদা সামনে কি হচ্ছে ?
কিন্তু সে তার ইচ্ছাকে লজ্জার কাছে বিসর্জন দিলো । সে ধিরে ধিরে হাটছে মানুষ গুলুর সাথে । সেই অদ্ভুত গন্ধটা তার কাছে আরো স্পষ্ট হতে লাগলো ।
শাহাবুদ্দিন দাড়িয়ে আছে সাভারে নবনির্মিত আট তলা বিশিষ্ট ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে । তার চার দিকে শত শত মানুষের ভিড় , আর আর্তনাদের করুন ধ্বনি । কিছু উদ্ধার কর্মী তাদের উদ্ধারের কাজে ব্যাস্ত । আইন শৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা সাধারন মানুষ গুলুকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে । কিছু মা তার সন্তানের নাম ধরে উচ্ছ স্বরে কাঁদছে । কিছু বোন তার ভাইয়ের ফঁটো বুকে চেপে বিলাপ করছে । কিছু সহকর্মী নিজেদের বাঁচিয়ে অন্যদের বাঁচানোর জন্য সাহায্য চাইছে । আর কিছু স্বামী তাদের স্ত্রীর ফেরার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে ।
শাহাবুদ্দিনের বুঝতে বাকি নাই শত শত গামেন্টর্স কর্মীর রক্তে রন্জিত হয়ে উঠলো এই রানা প্লাজা । কোন ভূমিকম্প নয় । নয় কোন প্রাকৃতিক দূযর্গ । শুধু কিছু অর্থলুভী মানুষের অলোসতার কারনে প্রণ দিতে হয়েছে অসংখ্য গামেন্টর্স কর্মীকে ।
কে নিবে এদের দায় ?
কে ফিরিয়ে দিবে অবুঝ সন্তানের বুকে তার বাবাকে ?
কে পৌঁচে দিবে অসুস্থ মায়ের কোলে তার এক মাত্র উপার্জন কারি কন্যাকে ?
কে সান্তনা দিবে সদ্য স্বামি হারা ফা্রিয়া নুর কে ?
শুরু হয়ে গেলো রাজনীতি । নেতাদের লম্বা লাইন । এক দিকে সরকার পক্ষ অন্য দিকে বিরোধী দল । মিডিয়া কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না । উদ্ধার কর্মী আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানুষ উদ্ধার না করে চেয়ার আনা আর দেহ রক্ষার কাজে ব্যস্ত । পথের পাশের শিশুটির বাবা বাবা বলা চিৎকারের ধ্বনি কারো কান পযন্ত গিয়ে পৌঁছায় নি । মিডিয়া মুখর পরিবেশে সবাই তাদের চেহারা দেখাতে ব্যাস্ত ।
সরকার পক্ষের কেউ একজন উছু গলায় বললো,
""সর্ব শেষ লাস উদ্ধার না হওয়া পযন্ত আমাদের উদ্ধার কাজ চলবে""
বিরোধী দলের কেউ একজন বললো,
''"এটা এই সরকারের ব্যার্থতার ফসল, এর দায় ভার নিতে হবে এই স্বৈরাচারী সরকারকেই ""
শাহাবুদ্দিন এই রাজনীতিবিদ দের কথা শুনে খুবই বিস্মৃত হচ্ছে , এত শত মৃত মানুষের সামনে দাড়িয়ে কেউ করছে এই মৃত মানুষ গুলুর রাজনীতি। আবার কেউ করছে সরকার পতনের আন্দলন ।
আহত কোন ব্যাক্তি দুর থেকে চিৎকার করে বলছে, ভাই ওদেরকে বাঁচান, ওরা সবাই এখণো মরেনি । তাদের কথায় কান না দিয়ে এক দল সবাই কে মৃত ঘোষনা করে তাদের রাজনীতিকে চাঙ্গা করছে । আর অন্য দল , তাদেরকে পূজি করে সরকার বিরোধী আন্দলন কে আরো বেগবান করে তুলছে । সাধারন জনগন কি করবে বুঝতে পারছে না ।
এই নেতাদের কাছে মনে হয় গামেন্টর্স কর্মীদের জন্মই হয়েছে অকাল মৃত্যর স্বাদ গ্রহন করার জন্য । মূলত তারা মানুষ না, গামেন্টর্স কর্মী । এদের কাজই হচ্ছে অকালে জীবন বিলিন করে দেশের রাজনীতির শিকড়ে তাজা রক্ত ডেলে আরো শক্তিশালি করে তোলা ।
রাজনীতিবিদ দের এই মৃত মানুষ গুলু নিয়ে যতটুকু মাথা ব্যাথা, তার চেও বেশি তাদের রাজনীতি নিয়ে। রাজনীতির কাছে এই মৃত মানুষ গুলু নিতান্তই তুচ্ছ ।
তারা অল্পের জন্য হলেও ভূলে গেছে এদের জন্যই আজ তারা , এম.পি, মন্ত্রী, নেতা । মানুষ রক্ষা্য় নিজেকে সমহিত না করে মিডিয়ার সামনে গলা ফাটিয়ে বলছে,
"আমরা আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে গভীর শোকাহত"
আজব মানুষ ! আজব সব রাজনীতি !
শাহাবুদ্দিন দেখছে চার পাঁচ জন উদ্ধার কর্মী একজন আহত লোককে এম্বুলেন্সে টেনে তুলছে। লোকটি বলছে,,
''''প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, ওদেরকে বাঁচান । ওরা আমার চেও
বেশি ক্ষতিগ্রস্থ । দয়াকরে আমাদের গামেন্টর্স কর্মী ভাববেন না,
একটু সময়ের জন্য হলেও মানুষ ভাবেন। প্লিজ ভাই প্লিজ........
তার গলা ফাটানো করুন এই আবেগময়ী শব্দ গুলু তার কাছেই থেকে গেল । জনগন জানতেও পারলোনা, শুনতেও পারলোনা । হা্য়! কি দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য আমাদের জাতির । মিডিয়ার লোক গুলু ব্যাস্ত এদেশের সকল রাজনীতিবিদ দের নিয়ে ।
শাহাবুদ্দিন আজ নিজকে প্রশ্ন করছে,
এভাবে আর কত দিন চলবে, এই মৃত মানুষের রাজনীতি ? তার কি কোথাও শেষ আছে ? প্রশ্ন আজ সবার কাছে ।
সে দেখছে, উদ্ধার কর্মীরা আরো একজন কে টেনে হেচড়ে নিয়ে আসছে । তার শরির ময়লায় ঢাকা । চুল গুলু বেশ লম্বা । পরনে নোংরা সেলোয়ার কামিজ । তার বুক থেকে হাটু পযন্ত ময়লা কাপড় দিয়ে বাঁধা । তার মাঝে কোন সাড়া শব্দ নেই । নিস্পাপ মুখটা তার মৃত্যর শাক্ষ বইছে।
আশ্চর্য্য ! মানুষটার শরির থেকে সেই উদ্ভট গন্ধটা আসছে । তাহলে কি তা মৃত মানুষের গন্ধ ? যা আজ সারা দেশের আকাশে বাতাসে বইছে । বুঝতে পারছেনা শাহাবুদ্দিন ।
©somewhere in net ltd.