![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
https://www.facebook.com/HaqueIsOne
রাজনীতি বড় জিনিস এবং বড় জটিল জিনিস। অনেক প্যাঁচ, বহু গিঁট, অজস্র জট। রাজনীতিতে তত্ত্ব আছে, আদর্শ আছে, তবে সবার উপরে স্বার্থ। সহজাত নীতিবুদ্ধি বলে, স্বার্থ থাকা উচিত, যখন তা জাতীয়। থাকা উচিত নয়, যখন তেমন নয়। তবে আমাদের স্বার্থবুদ্ধি সাধারণত ব্যাক্তিক, বড়জোর গৌষ্ঠিক। বক্তৃতায় গণতন্ত্রের তুবড়ি ফোটে, কিন্তু ক্ষুদ্র স্বার্থতন্ত্র, হীন দলতন্ত্র ও ছদ্ম স্বৈরতন্ত্রে আমাদের রাজনীতিকরা এমনই গ্রস্ত যে, সত্যি সত্যি জাতীয় উন্নতি নিয়ে ভাবনার নিষ্ঠা ও অবকাশ তাদের মোটেই জোটে কি না ঠিক বলা যায় না। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনীতি নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনার দরকার কী, তাতে লাভই বা কার – সেই প্রশ্ন হতাশাজনক হলেও অসঙ্গত নিশ্চয়ই নয়।
দারিদ্র্যপীড়িত দেশ আমাদের, আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত। দারিদ্র্য সমস্যা, কিন্তু দুর্নীতি অপরাধ। এ দুই ভেদবৈশিষ্ট্যে এদেশের শাসকশ্রেণী ও শাসিতশ্রেণী বিভক্ত। দুর্নীতি করে সরকার, আর তার বিষফল ভোগ করেন দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষ। কৃষক-রিকশাচালকেরা, এমনকী যে- ভিখিরি দিনমান দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে কয়েকটি টাকা কুড়োয়, সেও দেশের কাজে তা থেকে একটি অংশ সরকারকে দেয় – দেশের কাজ যেটুক না-দেখালে চলে না, তা বাদে বেশিভাগ অর্থই যায় লুট হয়ে। সরকারদলীয় ক্ষমতাবানেরা আগে অর্থ লুট করত কিছুটা রেখেঢেকে, এখন করে খোলাখুলি চুরি-ডাকাতি। 'মাননীয়' মন্ত্রীরা একসময় ঘুষ খেত – এখন ব্যাংক খায়, রেলগাড়ি খায়, সেতু খায় – কিন্তু হায়, তাদের মন্ত্রীগিরি তবু কি যায়? যায় না। উল্টো দেশপ্রেমিকের তকমা জোটে!
এমন নষ্টরা যেখানে সমাজপতি, শান্তির স্বপ্ন সেখানে সুদূর। দলান্ধ ও স্বার্থান্ধরা যেখানে আইনপ্রণেতা, স্বাভাবিকভাবেই আইন সেখানে দলবৃত্তির সেবক এবং গোষ্ঠীস্বার্থের চরিতার্থক। ব্যাবসায় যেভাবে পুঁজি খাটানো হয়, দুঃশাসকচক্র তেমনি জাতীয় আবেগ বিনিয়োগ করে দলীয় স্বার্থ হাসিল করতে চেষ্টা করে। বাঙলাদেশে এই চেষ্টা সবসময়ই ছিল, এখন আছে চরমভাবে। বর্তমান সরকার দেশ চালাচ্ছে আওয়ামিতন্ত্রে। স্বাধীনতার চেতনাকে তারা ব্যবহার করছে বিভাজন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে। এ তাদের দলীয় অস্ত্র। অস্ত্রটা তারা শানাচ্ছে, কোপাচ্ছে, জাতিকে দ্বিখণ্ডিত করেছে, দেশ জুড়ে রক্তারক্তি বাধিয়েছে, পাশব নৃশংসতায় গায়ে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে গুলি করে মানুষ মারছে। প্রতিবাদ উঠছে, লাশ পড়ছে, গ্রেফতার চলছে। সরকারের বেনজির দুর্নীতি ও লুটপাটের চিত্র ভয়াল হুলস্থূলে চাপা পড়ে যাচ্ছে। বিদেশি ইন্ধনে তৈরি হয়েছে নৈতিকতাবিরোধী জাগরণমঞ্চ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরাশক্তির তাবেদার পত্রিকা-টিভি যেভাবে এ মঞ্চের প্রচারে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, একে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা খাওয়ার দায় শোধ ছাড়া আর কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। যুদ্ধাপরাধের বিচার নয়, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা এ মঞ্চের প্রকৃত লক্ষ্য বোঝা যায় এর ক্রীড়নকদের দিকে তাকালে, কিছু মদ্যপ লম্পট বখাটে যুবক, নেপথ্যের নির্দেশে এরা এদেশের নব্বইভাগ জনগণের ধর্মবিশ্বাসে ঘৃণ্য ও উস্কানিমূলক হামলা চালাচ্ছে। সরকারি নিরাপত্তা ও অর্থায়নে এরা ধর্মীয় নেতাদের হত্যা ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের শ্লোগান দিচ্ছে। প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ, ঈমান রক্ষার আন্দোলনে লাখ লাখ মানুষ গুলি-গ্রেফতারের ভয় তুচ্ছ করে পথে নেমে এসেছে। ইসলামের মর্যাদা রক্ষার এ প্রাণপণ আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়েছে 'হেফাযতে ইসলাম' নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ধূর্তরা আন্দোলনটাকে অঙ্কুরেই গোড়া কেটে ফেলতে একে জামায়াতে ইসলামীর 'মোড়ক' বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সাধারণ মুসলিম জনগণ যেন এ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হন, সেজন্যে জামায়াত ও হেফাযতে মিল ও অমিল কী কী প্রসঙ্গে, অমিলগুলি ডিঙিয়ে এ দুটি সংগঠন এক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না – বিষয়টা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা সকলের জন্যেই দরকারি ও উপকারী বলে মনে হয়।
জামায়াতে ইসলামী ও হেফাযতে ইসলামের মধ্যে বিশ্বাসগত, আদর্শগত ও আচরণগত বহু সাদৃশ্য যেমন আছে, তেমনি অলঙ্ঘ্য কিছু অমিলও আছে। ঐতিহ্যগত ও চরিত্রগত দিক থেকে দুয়ের ঠাঁই দুই মেরুতে। তফাতটা এমনই দুস্তর যে, একশো বছর এক মঞ্চে আন্দোলন করলেও এরা কখনো স্থায়ীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে বলে মনে হয় না। এখানে জামায়াত যে একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল এবং হেফাযত একটি অরাজনৈতিক ও নতুন সংগঠন – এসব বাহ্যিক সাদামাটা তফাত গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা এ দুয়ের অন্তর্গত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ফারাকটা দেখাতে চাচ্ছি, যেন কেউ উভয়কে গুলিয়ে না ফেলেন। স্বীকার্য যে, জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী ছিলেন সমকালীন উপমহাদেশের শক্তিমান চিন্তাবিদ, দার্শনিক, বক্তা, লেখক ও সংগঠক – নিজের প্রতিভার বলে ও কীর্তির ফলে সাধারণভাবে সারা মুসলিম বিশ্বে তিনি আদৃত ও সম্মানিত হলেও ব্রিটিশ ভারতের ঐতিহ্যবাহী দেওবন্দকেন্দ্রিক উলামা প্রথমত রাজনৈতিক ও পরবর্তীকালে অন্যান্য কয়েকটি ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্নে এমনই কঠিন আপত্তি উত্থাপন করেন, যেসবের মীমাংসা আজ অবধি হয় নি এবং অদূরভবিষ্যতেও হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। হেফাযতে ইসলাম যেহেতু কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন, যেহেতু বাঙলাদেশের সমস্ত কওমি মাদরাসা ভারতের দেওবন্দ মাদরাসার উত্তরসূরি এবং যেহেতু দেওবন্দের আলিমগণ মাওলানা মওদূদীর কিছু চিন্তা ও রচনাকে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা এবং জামায়াতে ইসলামীকে একটি বিভ্রান্ত রাজনৈতিক দল বলে মনে করেন, সে কারণে কওমিভিত্তিক হেফাযতের সঙ্গে মওদূদীসূচিত জামায়াতের প্রকৃত ঐক্য আদৌ সম্ভব নয়। জামায়াতের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা দূরের কথা, জামায়াত এদেশে শক্তিশালী হোক এবং ক্ষমতায় যাক, কওমি আলিমরা এক মুহূর্তের জন্যেও এমনটি কামনা করতে পারেন না। বরং তাঁরা ইসলামের শুদ্ধতা রক্ষার স্বার্থে ধর্মীয় অবস্থান থেকে জামায়াতের যথাসাধ্য বিরোধিতা করা তাদের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করেন। অধিকন্তু কওমি ঘরানার চরমপন্থী একশ্রেণীর মৌলভি জামায়াত-সমর্থকদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক রাখাও না-জায়িয বলে ফতোয়া দিয়ে থাকেন। তাঁদের মতে জামায়াত আদৌ কোনো 'ইসলামী' দলই নয়, বরং তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ইসলামের নাম ব্যবহার করে মাত্র। মূলত, নবীগণ নিষ্পাপ এবং সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি কি না, এমন কিছু অতি স্পর্শকাতর বিষয়ে শক্ত মতপার্থক্যই এ ধরনের চরম প্রান্তিক ধারণার কারণ। কাজেই বিশ্বাসগতভাবে আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন অথবা খিলাফা আলা মিনহাজ আন-নুবুওয়্যাহ তথা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে বাঙলাদেশের কওমি ঘরানা ও অন্যান্য সমস্ত ইসলামী আদর্শের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একাত্ম হলেও জামায়াতের ব্যাখ্যাকৃত ও অনুসৃত ইসলামত্ত্ব তাদের চোখে স্পষ্ট বিভ্রান্তি বলে প্রতীয়মান হওয়ায় এবং এসব বিভ্রান্তি সংশোধনে অতীতের সব চেষ্টা ব্যর্থ ও আগামীতেও তেমন সদিচ্ছা সফল হওয়ার সম্ভাবনা না-থাকায় হেফাযতসহ কওমি ঘরানার কোনো দলই জামায়াতের সঙ্গে কার্যত একাত্ম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবশ্য বিচ্ছিন্ন প্রসঙ্গ আলাদা। যেমন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল। হেফাযতসহ কওমির কেউ নীতিগতভাবে যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরোধী নন, তবু তাঁরা আওয়ামি লীগ কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের উদ্দেশ্যে গঠিত এই একপেশে ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচারকার্য সমর্থন করেন না। এই জায়গায় জামায়াতের সঙ্গে হেফাযতের ঐকমত্য থাকতে পারে, যেমন আছে বিএনপিসহ অন্য অনেকের সঙ্গেই। প্রচারমাধ্যম এ ঐকমত্য দেখেই হেফাযতকে জামায়াতের মোড়ক বলে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। অথচ এটা হয়তো হাস্যকর স্থূলতা, নয়তো পরিকল্পিত চক্রান্ত। কারণ আওয়ামি সরকারের গঠিত এ ট্রাইব্যুনাল নামে 'মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল' হলেও নিরপেক্ষ মানবিক দৃষ্টিতে সেটি 'মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল'। গোঁড়া আওয়ামি সমর্থক ও অন্ধ জামায়াত-বিদ্বেষী ছাড়া দেশের এবং বিশ্বের আর কোনো দেশ, সংস্থা, দল, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি একে স্বীকৃতি দেয় নি। খোদ জাতিসংঘ, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ দুনিয়ার সকল মানবাধিকার সংস্থাই এর কঠোর সমালোচনা করছে, বিশ্বের বৃহত্তম প্রচারমাধ্যম বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি ও এপি এ ট্রাইব্যুনালকে 'বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল' বলে মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাহলে কি জাতিসংঘ জামায়াতের মোড়ক? ইউরোপীয় ইউনিয়ন জামায়াতের মোড়ক? ওআইসি জামায়াতের মোড়ক? গোটা মধ্যপ্রাচ্য জামায়াতের মোড়ক? অ্যামনেস্টি জামায়াতের মোড়ক? তুরস্ক-মালয়েশিয়া-ইরান প্রভৃতি বিরোধিতাকারী সব দেশ জামায়াতের মোড়ক? না, দালাল প্রচারমাধ্যমের এ মোড়কতত্ত্ব ধোপে টেকে নি, টিকবার নয়। দেশের বিবেকবান নাগরিকদের চোখ-কান খোলা আছে। তারা কি সবকিছু দেখে-শুনে ইসলাম, দেশ ও মানবতার শত্রুদের জল ঘোলা করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকারের সুযোগ দেবে?
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০০
মামুন,চৌ:হাট বলেছেন: খুবই ভাল লেখছেন। একেবারে সত্য কথা বলেছেন।