| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবদুল হক
https://www.facebook.com/HaqueIsOne
আজকের সকল দৈনিক পত্রিকাই সাভার বিপর্যয় নিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছে। তাতে ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৭ দিন চাপা পড়ে থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া রেশমার কথা ঠাঁই পেয়েছে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে। ঘটনা একই, তবে একেকটি পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি ও উপস্থাপনা একেক রকম। কেউ বলছে এটা আল্লাহর কুদরত। কেউ অলৌকিক ঘটনা। কেউ আবার অতি সতর্কতার সঙ্গে ‘আল্লাহ’ শব্দটি উচ্চারণের বিপদ এড়িয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে!
দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় শিরোনাম: ‘'আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন'’। পত্রিকাটি লিখেছে: “"অবিশ্বাস্যভাবে পরিত্যক্ত ও পঁচা-বাসি খাবার খাইয়া, নিচে জমানো বৃষ্টির পানি পান করিয়া এবং বীম ও দেয়ালের ফাঁক-ফোকর দিয়া প্রবেশ করা বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করিয়া তিনি আল্লাহর অশেষ রহমতে বাঁচিয়া যান। বাঁচা-মরার চরম অনিশ্চয়তার সময় তিনি কেবল আল্লাহকে ডাকিতে থাকেন। কেননা বিপদের সময় তিনিই একমাত্র সহায়। অন্যদিকে তাহার আত্মীয়-স্বজনরাও আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তাহার পর সবাইকে অবাক করিয়া তিনি উদ্ধারকর্মীদের উসিলায় উদ্ধার পান। তাহাকে জীবিত ও অক্ষত উদ্ধার করিতে পারায় বিস্মিত উদ্ধারকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে বলিয়া উঠেন, 'আল্লাহু আকবার'। তাহারা এজন্য একযোগে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। ... আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে শত বিপর্যয় ও বাধা-বিপত্তির মুখেও মানুষের বাঁচিয়া থাকার স্বপ্ন ও সংগ্রাম জোরদার হইতেছে। উপরোক্ত ঘটনা আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত ছাড়া আর কিছু নহে। প্রকৃতপক্ষে তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির- নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাহার কুদরত ও নেয়ামত ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও বাঁচিয়া থাকা কঠিন। আমরা রেশমার জীবিত উদ্ধারে সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করি।"”
দৈনিক প্রথম আলো আপাদমস্তক প্রগতিশীল। পত্রিকাটি বলছে: "“রেশমা ও তাঁদের উদ্ধারকারীরা যে জীবনীশক্তি নিয়ে মৃত্যুকে পরাজিত করেছেন, সেই রকম শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের এখন ঘুরে দাঁড়ানো প্রয়োজন।"
সম্ভবত মতিউর সাহেবের ধারণা – মৃত্যু হচ্ছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো, ঠিকমতো যুদ্ধ করতে পারলে তাকে হারানো যায়! তবে উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহে উদাসীনতার জন্যে তিনি সরকারকে কঠিন ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেছেন: “"কী মর্মান্তিক পরিহাস, যে দেশে একসঙ্গে শুধু রাশিয়া থেকেই আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনা হয়, সে দেশে স্বেচ্ছাসেবকেরা মান্ধাতার আমলের প্রযুক্তি নিয়ে বিরাট ভবনধস মোকাবিলা করতে বাধ্য হন। সমরাস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনায় এর বাইরেও ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ। বাস্তব জীবনের হুমকি মোকাবিলায় যে রাষ্ট্র নিরস্ত্র, কল্পিত শত্রু মোকাবিলায় সেই রাষ্ট্রের আকাশচুম্বী সামরিক ব্যয়ের চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে? এসব অস্ত্র কার কাজে লাগবে? দুর্মুখেরা বলে ‘টয়েজ ফর বয়েজ’ — বালকদের যুদ্ধখেলার খেলনা মাত্র।”"
দৈনিক কালের কণ্ঠ বড়ই সংযমী। রেশমা উদ্ধারের ঘটনায় তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা বা মৃত্যুর প্রতি হুমকিও নেই। তবে সরকার-তোষণ আছে। একেবারে গদগদে ভক্তি! সমস্ত প্রশংসা আওয়ামী লীগ সরকারের -- সে উদ্ধার-সরঞ্জাম আগেভাগে কিনে না রাখলে সর্বনাশ হয়ে যেত: "“তবু ভালো, বর্তমান সরকার ৫০ কোটি টাকায় উদ্ধার সরঞ্জাম কিনেছিল। তা না হলে সাভার ট্র্যাজেডির উদ্ধারকাজ আরো কতটা বিপর্যস্ত হতো, তা কল্পনা করাও কষ্টকর।"”
দৈনিক সমকাল কী বলবে, ভেবেচিন্তে ঠিক করতে পারে নি। নিরুপায় হয়ে দেশের ঘটনা কীভাবে বর্ণনা করা যায় তার জন্যে সে তাকিয়েছে বিদেশের পত্রিকার দিকে। দেখা গেছে, ইংরেজি পত্রপত্রিকা রেশমাকে বলছে ‘'মিরাকল গার্ল’'। দেখাদেখি গোলাম সাহেবও বলেছেন: "‘রেশমাকে জীবিত উদ্ধার শুধু বিস্ময়কর নয়, রীতিমত অলৌকিক"’ কাণ্ড। এ মন্তব্য পড়ে ধর্মান্ধরা ভাববে, ‘অলৌকিক’ মানে যা এই লোকের নয়, যা মানুষের সাধ্য নয় -- তাহলে কোন্ লোকের? ইহলোকে কে ঘটায়, কীভাবে ঘটায় অন্যলোকের ঘটনা?
১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৪
আবদুল হক বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ৯:২০
মোমের মানুষ বলেছেন: যারা বলে সেখানে সংগ্রাম করে বেচে ছিল তাদের সেখানে কিছু খাবার দিয়ে ঢুকিয়ে দিলে তারা বুঝত অন্ধকারে নির্জন একাকী পানি-ও খাবার ছাড়া সেখানে বেচে থাকাটা কেবলই সৃষ্টীকর্তার দয়া ও করুনার উপর।