![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। সব সময় জানতে চাই এবং জানাতে চাই,আমি ছোট এবং ক্ষুদ্র। পছন্দের মানুষ দের কখনো কষ্ট দিতে চাইনা। স্বপ্ন দেখি জীবনে বড় কিছু হতে, স্বপ্ন দেখতে মানা আছে কোথায়??
জুমুআহ শব্দটি জমা শব্দ থেকে উৎপত্তি। জমা অর্থ হলো একত্র হওয়া বা একত্র করা। জমা শব্দের আরেক অর্থ হলো বহু, জুমুআহ মানে হলো একত্র হওয়ার স্থান বা সময়। ইসলামে শুক্রবারকে ইয়াওমুল জুমুআহ বা জুমুআহ দিবস বলা হয়। জুমুআহর দিনে মুসলিমগণ নির্দিষ্ট মসজিদে একত্র হন। শুক্রবার জুমুআহ অনুষ্ঠিত হয় বলে শুক্রবারকে জুমুআহবার বলা হয়। যে মসজিদে জুমুআহ অনুষ্ঠিত হয়, তাকে আল-জামে তথা জামে মসজিদ বা জুমুআহ মসজিদ বলা হয়। যেসব মসজিদে জুমুআহ অনুষ্ঠিত হয় না, সেগুলোকে পাঞ্জেগানা মসজিদ বা ওয়াক্তিয়া মসজিদ বলা হয়। জুমুআহ শব্দটির সঙ্গে জমাআহ বা জমাআত শব্দের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, জমাআত ছাড়া জুমুআহ হয় না।
কোরআন মজিদে সুরা জুমুআহ নামে একটি সুরা বা অধ্যায় রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমুআহর দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণ পানে ত্বরা করো (দ্রুত দৌড়াও) এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো। অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমুআহ, আয়াত: ৯-১০)।
জুমুআহর তাৎপর্য
তাফসিরবিদেরা বলেন, সুরা জুমুআহর আগের সুরার নাম হলো সুরা ‘সফ’। সফ অর্থ কাতার বা সারি। জুমুআহর নামাজ সারিবদ্ধভাবে আদায় করা হয় এবং এতে ঐক্য ও শৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, এতে এই ইঙ্গিত রয়েছে। সুরা জুমুআহর পরের সুরা হলো সুরা ‘মুনাফিকুন’। এতে এই ইঙ্গিত বিদ্যমান যে জুমুআহ তরক করা মুনাফিকের লক্ষণ। জুমুআহর নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা জুমুআহ ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মুনাফিকুন পড়া সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা কারণে জুমুআহ পরিত্যাগ করল, তাকে মুনাফিক হিসেবে তালিকাভুক্ত ও লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (মিশকাত)।
হজরত উমর (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা শুনেছি রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যারা কয়েকটি জুমুআহ ধারাবাহিকভাবে পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তাদের অন্তরে সিলমোহর করে দেবেন; অতঃপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)। হজরত আবুজাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অবজ্ঞা বা অবহেলা করে তিন জুমুআহ পরিত্যাগ করল, আল্লাহ তার অন্তরে সিলমোহর করে দেবেন।’ (তিরমিজি)।
মসজিদে নীরবতা
হজরত মুআজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআহর দিনে মানুষের ঘাড়ের ওপর দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করল, কিয়ামতের দিন তাকে জাহান্নামের পুল বানানো হবে।’ (তিরমিজি)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমুআহর দিনে ইমামের খুতবা প্রদানের সময় যে কথা বলল, সে যেন গাধার মতো বোঝা ওঠায়। যে তাকে বলল চুপ করো, তারও জুমুআহ নেই।’ (আহমাদ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমুআহর দিনে ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় যখন তুমি তোমার ভাইকে বললে, চুপ করো; তখন তুমিও বেহুদা কথা বললে।’ (বুখারি)।
জুমুআহর গুরুত্ব
হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমুআহ জামাতের সঙ্গে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ফরজ কর্তব্য; চার প্রকার লোক ছাড়া। ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি।’ (আবুদাউদ)। হজরত সালমান (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমুআহর দিনে যে গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, সুগন্ধি ব্যবহার করল এবং মসজিদে গিয়ে কাউকে না ডিঙিয়ে বসল, নীরবে ইমামের খুতবা শুনল, অতঃপর নির্ধারিত নামাজ আদায় করল; আল্লাহ তাআলা তার দুই জুমুআহর মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআহর দিনে ভালোভাবে অজু করল, অতঃপর জুমুআহয় এল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল ও চুপচাপ থাকল, তার এক জুমুআহ থেকে আরেক জুমুআহ পর্যন্ত গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরও তিন দিনের। আর যে খুতবা সময় অকারণ নড়াচড়া করল, সে–ও কথা বলল।’ (মুসলিম)।
জুমুআহয় প্রতি কদমে এক বছরের নামাজ ও রোজার সওয়াব
হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআহর দিন জামাকাপড় ধুয়ে গোসল করে সকাল সকাল মসজিদে গেল, হেঁটে মসজিদে গমনাগমন করল, বাহনে আরোহণ করল না, ইমামের কাছে বসল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, অযথা কাজ করল না, তার প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছরের রোজা ও এক বছরের নামাজের সওয়াব প্রাপ্ত হবে।’ (তিরমিজি)।
জুমুআহর খুতবা
জুমুআহর অন্যতম প্রধান বিষয় হলো খুতবা বা ভাষণ। হাদিস শরিফে আছে, হজরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি খুতবা দিতেন, দুই খুতবার মাঝে বসতেন; খুতবা ও নামাজ উভয়ই হতো সমান। (মুসলিম)। প্রথম যুগে জুমুআহর নামাজের পরে খুতবা দেওয়া হতো। একদা নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় বাণিজ্য কাফেলা এলে অনেকে উঠে চলে যান। ৭ জন মহিলাসহ ১৯ জন বসে থাকেন, এই ১৯ জনের মধ্যে আশারা মুবাশশারা বা বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন ছিলেন। তখন সুরা জুমুআহর শেষ আয়াত নাজিল হয়। ‘তারা যখন কোনো ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে, তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। বলুন, আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উত্কৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা জুমুআহ, আয়াত: ১১)। এরপর থেকে নবীজি (সা.) খুতবা পূর্বেই প্রদান করেন। (হাশিয়ায়ে জালালাঈন ও মাআরিফুল কুরআন)।
জুমুআহর দিনের নামাজসমূহ
জুমুআহর মূল নামাজ দুই রাকাত। জুমুআহর দিনে জোহর ওয়াক্তে জোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুমুআহর নামাজ আদায় করা ফরজ। এর আগে চার রাকাত (কাবলাল জুমুআহ) ও পরে ৪ রাকাত (বাদাল জুমুআহ) পড়া সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমুআহর আগে (কাবলাল জুমুআহ) চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন এবং জুমুআহর পরে (বাদাল জুমুআহ) চার রাকআত নামাজ আদায় করতেন। (তাবরানি)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা যখন জুমুআহর নামাজ আদায় করবে, তারপর (বাদাল জুমুআহ) চার রাকআত নামাজ আদায় করবে। (মুসলিম)। অজুর সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই রাকাত (তাহিয়্যাতুল অজু) ও মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত দুই রাকাত (তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ) জুমুআহর দিনে বেশি পড়া হয়। জুমুআহ ফরজের শর্ত পূর্ণ হয়েছে কি না, এই সংশয়ে অনেকে চার রাকাত ওয়াক্তিয়া জুহর এবং দুই রাকাত আখেরি জোহরও আদায় করেন। দুই রাকাত নফল পড়েন আবার শোকরিয়া নামাজ দুই রাকাতও পড়েন অনেকে। সলাতুত তাসবিহ চার রাকাতও কেউ কেউ পড়ে থাকেন শুক্রবারে।
জুমুআহর দিনের সুন্নতসমূহ
জুমুআহর দিনের সুন্নত আমলসমূহ হলো: শবে জুমুআহ বা বৃহস্পতিবার দিবাগত শুক্রবার রাতে ঘুমানোর আগে সুরমা ব্যবহার করা, শুক্রবার খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা, কোরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে সুরা কাহাফ ও সুরা জুমুআহ তিলাওয়াত করা, জিকির আজকার বেশি করা, দরুদ শরিফ বেশি বেশি পাঠ করা, নফল ইবাদত বেশি করা, শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া ও ক্ষৌরকর্ম করা, গোঁফ কেটে ছোট করা, নখ কাটা, সকালে জুমুআহর জন্য গোসল করা, গায়ে ও মাথায় তেল ব্যবহার করা, নতুন কাপড় বা উত্তম কাপড় পরিধান করা, টুপি ও পাগড়ি পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া, যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানে বসা, সম্ভব হলে ইমামের কাছাকাছি বসা, নীরবে খুতবা শোনা, বেহুদা কথাবার্তা না বলা, অযথা নড়াচড়া না করা, সব মুসলমানের জন্য দোয়া করা, দান-খয়রাত করা, সদুপদেশ দেওয়া, কবর জিয়ারত করা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করা, পাড়া-প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া ইত্যাদি।
©somewhere in net ltd.