নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যার্থ ভেলার মাঝি

অসহায় ছেলে হাসিব

অসহায় ছেলে হাসিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি শিক্ষা মূলক গল্প।

২০ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:২০


এক শহরে বাস করতো এক স্বর্ণকার।
লোকটা ছিল বেশ ধার্মিক ও সৎ।
প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই সে তার
কাজে চলে যেত। তার দোকান ছিল
শাসকের প্রাসাদের সামনে। দোকান
খোলার আগে প্রতিদিন ওই স্বর্ণকার
আকাশের দিকে দু’হাত তুলে
মোনাজাত করে বলতো: ‘হে
মহাজ্ঞানী, রিযিকদাতা! হে
ক্ষমাকারী! তুমি তো অসীম ক্ষমতার
অধিকারী! সকল কিছুর ওপরে তুমি
সর্বশক্তিমান। সমুদ্রের তলায়ও যদি
কোনো কিছু পড়ে তুমি তাকে শুষ্ক
অবস্থায়
ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি রাখো!’ এই
দোয়া করে দোকানের দরোজা খুলতো
সে।
বাদশার প্রাসাদ যেহেতু কাছেই
ছিল সে কারণে স্বর্ণকারের দোয়ার
শব্দে বাদশার মজার ঘুম ভেঙে যেত
প্রতিদিন, কেননা প্রাসাদের
জানালা খোলাই থাকতো। একদিন
বাদশার ঘুম ভাঙতেই বাদশা
রেগেমেগে চীৎকার করে বললো: কে
এই লোক প্রতিদিন
সকালবেলা আমার আরামের ঘুম
হারাম করে দেয় আর ভেঙে দেয়
চমৎকার স্বপ্ন?
বাদশা তার এক চাকরকে ডেকে
জিজ্ঞেস
করে জানতে পারলো যে এটা এক
স্বর্ণকারের কাজ। আর তার দোকান
হচ্ছে প্রাসাদের সামনে। এ
কারণে ওই স্বর্ণকারকে ‘উচিত’ শিক্ষা
দেওয়ার
চিন্তা করলো বাদশা। উজিরকে
ডেকে একটা হীরার
আংটি নিলো এবং প্রাসাদ থেকে
বেরিয়ে দুজনেই স্বর্ণকারের
দোকানের দিকে পা বাড়ালো।
স্বর্ণকার বাদশাকে তার দোকানের
সামনে দেখে থ’ মেরে গেল।
বাদশা মূল্যবান ওই
আংটিটা স্বর্ণকারকে দেখিয়ে
বললো:
‘এই আংটিতে একটা ইয়াকুত পাথর
বা রুবি আছে যার দাম কয়েক হাজার
স্বর্ণমুদ্রা। আমি খুব ভয় পাচ্ছি এই মূল্যবান
পাথরটি হারিয়ে না যায়। সে
কারণেই তোমার কাছে এলাম।
তুমি রঙিন একটা কাঁচ দিয়ে হুবহু এই
রুবি পাথরের মতো আরেকটি পাথর
বানাবে। আমি ওই নকল আংটিটাই
সবসময় পরবো। আর বিশেষ বিশেষ
অনুষ্ঠানাদিতে আসল রুবির
আংটিটা পরবো’। এই বলে বাদশা
আংটিটা স্বর্ণকারের হাতে দিয়ে
বললো:আংটিটা সাবধানে রেখো
কিন্তু!
স্বর্ণকার আংটিটা নিলো এবং ছোট্ট
একটা বাক্সে ঢুকিয়ে সিন্দুকের
ভেতরে রাখলো এবং সিন্দুকের
দরোজা বন্ধ করে দিলো। বাদশা
স্বর্ণকারকে বললো: এক গ্লাস পানি
দাও তো!
স্বর্ণকার তাড়াতাড়ি করে চলে গেল
বাদশার জন্য পানি আনতে।
বাদশা এই ফাঁকে সিন্দুকের
দরোজা খুলে আংটিটা পকেটে
ঢুকিয়ে নিলো।
স্বর্ণকারও
এসে পৌঁছলো পানি নিয়ে।
বাদশাকে পানি দিলো।
বাদশা স্বর্ণকারকে বললো:
আমি যাবার আগেই সিন্দুকের
দরোজাটা ভালো বন্ধ করো।
স্বর্ণকার তাই করলো। শেষ পর্যন্ত
বাদশা বললো: ‘তোমাকে তিন দিন সময়
দেওয়া হলো। তিনদিনের
মধ্যে আমার আংটি চাই। চতুর্থ দিন
সকালে নকল আংটি আর আসল
আংটি একসাথে তোমার কাছ
থেকে বুঝে নেবো। সাবধান। আবারো
বলছি সাবধান! আমার আংটি হারালে
কিন্তু তোমার গর্দা যাবে।’ এই বলে
বাদশা উজিরসহ
সেখান থেকে চলে গেল সমুদ্রের
দিকে।
বলছিলাম বাদশা এবং উজির
স্বর্ণকারের কাছ থেকে চলে গেল
সমুদ্রের দিকে। সমুদ্রের
পাড়ে গিয়ে একটা নৌকায় চড়লো।
নৌকা সমুদ্রের তীর থেকে বেশ
খানিকটা দূরে যাবার পর বাদশা তার
আসল
আংটিটা পানিতে ফেলে দিলো।
এরপর নৌকা তীরে ভিড়িয়ে বাদশা
এবং তার
উজির ফিরে গেল প্রাসাদে।
স্বর্ণকার তার দোকান বন্ধ করে বাসায়
ফিরে গিয়ে তার স্ত্রীকে পুরো ঘটনা
খুলে বললো।
স্ত্রী তাকে বললো: ‘তাড়াতাড়ি
দোকানে ফিরে যাও!
নকল আংটি বানানোর আগে এভাবে
বাদশার
আংটি সিন্দুকে রেখে আসা ঠিক না।
বাদশা না বললো...ওই আংটি হারালে
তোমার গর্দান
যাবে? তাড়াতাড়ি ফিরে যাও! এক
মুহূর্তের জন্যও বাদশার আংটি থেকে
আলাদা হবে না’।
স্বর্ণকার বৌয়ের
কথা শুনে তাড়াতাড়ি ফিরে গেল
দোকানে। সিন্দুকের
দরোজা খুলে ছোট্ট বাক্সটা বের
করে আনলো। খুলে দেখলো বাক্স
খালি, কিছুই নেই ভেতরে। স্বর্ণকার
আশ্চর্য হয়ে গেল। কোথায় গেল আংটি!
কীভাবে গেল!
তক্ষুণি স্বর্ণকারের বৌ স্বামীর
জন্য খাবার নিয়ে এলো দোকানে।
এসে দেখে স্বর্ণকার ভীষণ উদ্বিগ্ন।
স্বর্ণকার বৌকে বললো আংটি নেই
সিন্দুকে। বৌ নিজ গালে চড় মেরে
কান্নাকাটি হা হুতাশ
করে সারাটা দিন স্বামীর সাথে
আংটি খুঁজে বেড়ালো কিন্তু
কোনো কাজ হলো না। এভাবে তিন
দিন চলে গেল। ওই তিনদিন বাদশা
স্বর্ণকারের দোয়াও
শোনে নি, বাদশার ঘুমেরও ডিস্টার্ব হয়
নি। বাদশা তার উজিরকে ডেকে
বললো: আমার
প্লানটা কাজে লেগেছে। স্বর্ণকার
আর সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙাতে
আসে না।
কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে আগের
মতোই বাদশার ঘুম ভাঙলো স্বর্ণকারের
দু’হাত
তোলা দোয়ার শব্দে। বাদশা
রেগেমেগে স্বর্ণকারের
দোকানে গেল। তার সাথে তলোয়ার
হাতে তার এক সেপাইও গেল। বাদশা
গিয়ে দেখে স্বর্ণকার বেশ
হাসিখুশি। বাদশার রাগ চড়ায়
উঠে গেল এ অবস্থা দেখে।
স্বর্ণকারকে বললো: তিন দিন শেষ
হয়ে গেছে। আংটি দুটো দাও নৈলে
তোমার গর্দান যাবে।
স্বর্ণকার অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে
সিন্দুকের দরোজা খুলে বাক্সটা বের
করে বাদশার হাতে দুটি আংটিই
বুঝিয়ে দিলো। বাদশা আশ্চর্য
হয়ে বললো: অসম্ভব! অবিশ্বাস্য! কী করে
এই আংটি পেলে তুমি? আমি নিজে
যে আংটিটা সমুদ্রে ফেলে দিলাম তুই
কী করে ঠিক সেরকম
আংটি তৈরি করলি?
স্বর্ণকার বললো: আমি এবং আমার
বৌ যখন আংটি পাবার
ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়লাম,
দোকানে যেতে পারলাম না, ঘরেই
বসে থাকলাম।
খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
আমার বৌ বাজারে গিয়ে একটা বড়
মাছ কিনে আনলো। মাছের পেটের
ভেতর তোমার সেই মহামূল্যবান
আংটিটা পাওয়া গেল। আমি দেখেই
চিনে ফেললাম এটা বাদশার সেই
আংটিটাই। তাড়াতাড়ি আংটিটা
নিয়ে দোকানে গিয়ে কাজ
শুরু করে দিলাম। ব্যস! তুমি যেরকম
চেয়েছিলে সেরকম আংটি বানিয়ে
ফেললাম। কাজ শেষ
হবার পর আমি আবার সেই
দোয়াটি পড়লাম যে দোয়াটি তুমি
শোনো প্রতিদিন।
বাদশার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
দু’হাত
বাড়িয়ে স্বর্ণকারকে বুকে জড়িয়ে
নিয়ে বললো:
সুবহান আল্লাহ! তুমি আসলেই এক
নেককার বান্দা!
আমি তোমাকে বিপদে ফেলার জন্য
যা যা করেছি সেসবের জন্য
ক্ষমা চাচ্ছি। এরপর
বাদশা তাড়াতাড়ি তার
সেপাইকে বললো স্বর্ণকারের জন্য
বিরাট
একটা থলি ভর্তি করে দিনার নিয়ে
আসতে। সেপাই তাই করলো। বাদশা
সেগুলো স্বর্ণকারকে দিয়ে বললো:
আজ থেকে প্রতিদিন
সকালে তুমি খালেস দোয়ার মধ্য
দিয়ে আমাকে জাগাবে। দোয়া
করবে: ‘হে মহাজ্ঞানী, রিযিকদাতা!
হে ক্ষমাকারী!
তুমি তো অসীম ক্ষমতার অধিকারী!
সকল কিছুর
ওপরে তুমি সর্বশক্তিমান। সমুদ্রের
তলায়ও যদি কোনো কিছু
পড়ে তুমি তাকে শুষ্ক অবস্থায়
ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি রাখো!’#
ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.