নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিচ্ছু নেই বলার মতো।এলোমেলো জীবন।যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াই।\'ভালো লাগা\'টাকেই প্রাধান্য দেই।

দূরের পথযাত্রী

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!!

দূরের পথযাত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একেই বলে ঘুম!!

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

প্রায় সব স্কুলেই কিছু শিক্ষক থাকে যারা ক্লাসে ঘুমাতে খুব পছন্দ করেন।শিক্ষক হিসেবে তাঁরা তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করেন সে আলোচনা করবো না।তবে তাদের ক্লাসে এসেই বই খুলে রিডিং পড়তে দিয়ে চেয়ারে বসে ঢুলা আর মাঝে মধ্যে হু হা করে ঘন্টা পড়লে চলে যাওয়া তখন উপভোগ করলেও এখন প্রতিবাদ করিনি বলে আপসোস হয়।

আমাদের স্কুলের একজন স্যার ছিল ধরা যাক তাঁর নাম আফতাব।তো এই আফতাব স্যার আমাদের ক্লাস সেভেনে থাকতে সমাজ পড়াতেন।দুপুর তিনটার ক্লাস।প্রচন্ড গরম।তার উপর টিফিনের খাওয়ার পর ক্লাস।তাই উনি প্রায়ই ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়তেন।আমাদেরকে এর আগের দিনের পড়া ধরতেন অটোমেটিক সিস্টেমে।যেকোন এক কর্নার থেকে শুরু হবে পড়া বলা।একজন বললে পরেরজন।আমরা যারা মোটমুটি মানের ছাত্র তারা ঠিকঠাক পড়া বলে গেলেও কিছু দুষ্টু বন্ধু ছিল,যারা স্যারকে ট্রল করতো।কেউ ভেংচি কাটতো,কেউ শুধু বিড়বিড় করতো,কেউ পড়া না বলেই বলতো,'স্যার বলছি'।স্যার ঘুমের মধ্যে থেকেই বলতেন,'হু"।রসিকরা আবার জোরে বলতো ''স্যার,বলছিইইইই'।তখন স্যার হুড়মুড় করে উঠে ধমক দিয়ে উঠতেন,'এই ডিস্টার্ব করে ক্যাডা!!"।যারা সাহসী ছিল তারা প্রায়ই গালি দিতো,''এই ব্যাটা বাসায় কি করিছ। রাতে চুরি করিস নাকি!!'',''ওই আফতাব,ওই।ঘুমাস ক্যান।' কিংবা ''স্যার,হেড মিস্ট্রেস আসছে ক্লাসে।''
শেষেরটা টনিকের মতো কাজ করতো।স্যার তৎক্ষণাৎ চেয়ার ফেলে উঠে দাঁড়াতেন আর ব্যাপার টের পেয়ে আকামটা কে করছে জানার চেষ্টা করতেন।বরাবরের মতোই আমারা মিটিমিটি হাসতাম আর মুখে কুলুপ এঁটে রাখতাম।নাম বললে যে ক্লাস শেষে ধোলাই খেতে হবে!!ফলশ্রুতিতে ক্লাসের সবাই মার খেতো।

যাই হোক,ছয় মাস পর হঠাৎ একদিন আর স্যারকে দেখা গেলো না। সিনিয়র এক স্যার এলেন।এনার নাম ধরি আজাদ।এই স্যার ছিলেন আমাদের পাওয়া অন্যতম সেরা একজন শিক্ষক।ইনি এসেই বললেন যে এখন থেকে তিনি আমাদের সমাজের বাকি অংশ পড়াবেন।ঊনার পড়ার ধরন ছিল অসাধারণ। ইতিহাসকে গল্পের মতো বলতেন।সবাই তন্ময় হয়ে শুনতাম।আর চোখের সামনে ভাসতো পুরা ইতিহাস।এখনো আমার মনে আছে স্যার বলছেন,' লক্ষন সেন দুপুরের খাবার খেতে বসলেন।খাবারে একটু বেশিই ঝাল হয়ে গেছে বলে উনার মন খারাপ।উল্টাপাল্টা ধমকাচ্ছেন সবাইকে।এদিকে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি প্রাসাদের সীমানায় সতেরো জন সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হলেন।মাত্র সতেরো জন।চোখে নতুন রাজ্য জয়ের নেশা।বুকে অসীম সাহস।তীব্র হুংকার দিয়ে প্রাসাদে ঢুকে পড়লো তারা . . . . . . . ''।

মাঝেমধ্যে আজাদ স্যার ক্লাসে এসেই আগের পড়া ধরতেন।বেশিরভাগই পারতো না।অজুহাত ছিল আফতাব স্যার কিছু পড়ান নি।এই শুনে স্যার একদিন জিগ্যেস করলো,'স্যার পড়ান নাই মানে কি।তবে করছেনটা কি!।'' এইবার আমরা বলে ফেললাম উনার ঘুমের কাহিনি।শুনে আজাদ স্যার চুপ করে ছিলেন কিছুক্ষন।তারপর বললেন,'তাহলতো তোদের আগের পড়াগুলোও পড়াতে হবে'।আমাদেরও আপত্তি নেই।ক্লাসে হাসিঠাট্টা করা, কৌতুক বলা,নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করা,বন্ধুর মত আচরন ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে স্যারকে জনপ্রিয় করে তুলছে।স্যার বেশিক্ষন পড়ালে আমাদেরই মজা।
'তবে তার আগে ছোট্ট একটা গল্প শেয়ার করি',স্যার গলা খাঁকারি দিলেন আর গল্পটা শুরু করলেন।
'একবার এক স্কুলে এক টিচার ছিলেন যিনি তোদের আফতাব স্যারের মতোই ক্লাসে ঘুমাতেন।অতিরিক্ত টিউশনি কিংবা খাতা টাতা দেখা ছাড়াও নানা কারণে উনি রাতে ঘুমাতে পারতেন না।ক্লাসে তার উসুল নিতেন।প্রতিদিনই চলতো তার একাজ।আর ছাত্ররা তখন চিল্লাচিল্লি হইহল্লা করতো।ক্লাসরুম দূরে হওয়ায় অন্যরা কেউ টের পেতো না স্যারের এই ঘুমের ব্যাপার।কিন্তু প্রতিটা স্কুলেই বছরে দুই একবার অডিট আসতো।ঘটনাচক্রে একদিন অডিটের লোকেরা হুট করে চলে এলো আর স্কুলের হেডমাস্টারসহ রাঊন্ড দিতে বের হলেন।অডিট যে স্কুলে এসেছে তা ক্লাসে থাকা স্যাররা জানতো না।ওই স্যারও জানতো না এবং যথারীতি উনি ঘুমাচ্ছেন চেয়ারে ঢুলে ঢুলে।আর এমন সময় সব ক্লাস পেরিয়ে অডিটররা এই ক্লাসের সামনে এলেন।কিছু ছাত্র ব্যাপার টের পেয়ে স্যারকে সতর্ক করার চেষ্টা করলো।
তবে ইনি আবার অনেক বুদ্ধিমান।ক্লাসে ঘুমিয়ে ছাত্রদের ক্ষতি করলেও মাথায় যথেষ্ট চোরা বুদ্ধি রাখেন।ক্লাস হঠাৎ নীরব হয়ে যাওয়া আরা ছাত্রদের সতর্কতা টের পেয়ে অবস্থা বুঝে গেলেন।এবং সাথে সাথে ঘুম থেকে না উঠে চুপ করে আগের মতো পড়ে রইলেন।এরপর যেই অডিটররা ক্লাসে ঢুকে উনাকে ঘুমাতে দেখে মুখ খুলতে যাবেন উনি তিরিং করে পুরাপুরি উঠে দাঁড়ালেন আর বললেন।

'বুঝলে ছাত্ররা,একেই বলে ঘুম!! ',সেই সাথে মুখে আকর্ণ হাসি।

অডিটররা তো মহাখুশি।বাহ! এতো দেখছি অতি উঁচু মানের শিক্ষক। ঘুমও প্র্যাক্টিক্যালি শিখাচ্ছেন।এ বছরের সেরা শিক্ষকের পুরস্কারের জন্যে এই স্যারকে মনোনীত করে এবং স্কুলের হেডমাস্টারের উপর খুশি হয়ে উনারা চলে গেলেন।


এ ঘটনা আজাদ স্যার কল্পনা থেকে বলেছেন না কোথাও শুনে বলেছেন জানিনা।তবে আমাদের দেশে সত্যিই এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল। যেখানে এক রাজনীতিবিদ বলেছিলেন,'আমি তো মঞ্চে ঘুমাইনা।চোখ বন্ধ করে দেশের কথা ভাবি!"।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: একজন শিক্ষকের ক্লাসের ঘুমের সঙ্গে চোরদের ঘুমের তুলনা করা কি ঠিক হলো ?

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪

দূরের পথযাত্রী বলেছেন: এখানে আমি তুলনা করি নাই।ছাত্ররাই এমন মন্তব্য করতো। যেটা বাস্তবে ঘটে সেটাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা আমার নেই।এতো সিরিয়াসলি না নিলেই পারেন।লক্ষ্য করবেন আমি 'তাঁর' শব্দটা ব্যবহার করেছি।শিক্ষকদের অসম্মান করার উদ্দেশ্যে আমি লেখাটা লিখি নাই।মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: সরস লেখনী। ভালো লাগলো।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৬

দূরের পথযাত্রী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.